SBD recovery case #1 : beneficiary rme [round 07]

This post is made for recovering lost SBD : 1470

Recovered so far : 0.00 SBD


গল্প (রক্ত তৃষা) - পর্ব ০৬


vampire-2115396_1280.jpg
Copyright Free Image Source : PixaBay


ঘরটা বেশ বড় । দক্ষিণদিকে এক সারি জানালা রয়েছে । একটা জানালার পাল্লা খোলা, আর বাকিগুলো বন্ধ । বন্ধ পাল্লাগুলো ভারী পর্দা দিয়ে ঢাকা । ঘরের পুব দিকে মস্ত একটা বহু পুরোনো পালঙ্ক রয়েছে । ধবধবে সাদা বিছানার চাদর পাতা তাতে । পালঙ্কের পাশেই একটা মস্ত আয়না লাগানো সাজগোজের ডেস্ক । পালঙ্কের পায়ের কাছে একটা পিতলের প্রকান্ড বাতিদান । তাতে বেশ বড় একটি ঘীয়ের প্রদীপ জ্বলছে । বাতাসে মৃদু ঘী পোড়ার মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে । ঘরের পশ্চিমপ্রান্তে একটা কাঠের ভারী আলমারি রয়েছে দেখা গেলো । পাল্লা আধখোলা ।

মেঝে পরিষ্কার ঝকঝকে । খাটের ঠিক নিচেই রয়েছে লাল গালিচার একটি ছোট্ট খণ্ডিত অংশ । এ ছাড়া পুরো ঘরে একটা জলের কুঁজো ছাড়া আর কিছুই নেই । মেয়েটি মোমবাতিটা ডেস্কের ওপর রাখলো । তারপর রমেশবাবুকে পালঙ্কে বসার জন্য অনুরোধ করলো । রমেশবাবু একটু ইতস্ততকরে শেষমেশ পালঙ্কে বসলেন পা ঝুলিয়ে । একটা অচেনা মেয়ের শোবার ঘরে ঢুকে তার খাটে বসা বেশ অস্বস্তিকর যে কোনো পুরুষ মানুষের কাছেই ।

মেয়েটি এবারে মৃদু হাস্যে রমেশবাবুকে বললো, "আপনি এখন এই খাটে শুয়ে জিরিয়ে নিন বাবু । ঘরে জলের কুঁজো আছে মাথার কাছের মেঝেতে । তেষ্টা পেলে খাবেন । আমি এখন আপনার জন্য রান্না করতে গেলুম বাবু । আমার নাম মহুয়া । কোনো কিছুর দরকার হলে বারান্দায় গিয়ে একটু জোরে আমার নাম ধরে ডাক দেবেন । তাহলেই আমি চলে আসবো । এখন আপনি নিশ্চিন্ত মনে একটু বিশ্রাম নিন । দরকার হলে একটু ঘুমিয়েও নিতে পারেন । আমি তাহলে এখন আসি বাবু ?"

রমেশবাবু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন । মহুয়া জলতরঙ্গের মতো শব্দ তুলে একটুখানি হেসে চলে গেলো । মহুয়ার প্রস্থান পথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে থম মেরে বসে রইলেন রমেশবাবু । রাত আরো গভীর হচ্ছে । চারিদিক অস্বাভাবিক ভাবে নিঃস্তব্দ । গ্রামে গাঁয়ে রাতের বেলা স্তব্ধ হলেও ব্যাঙ বা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যায় । কিন্তু, এ কী ভীষণ নিঃস্তব্ধতা । এ যে অসহ্য ! কোথাও কোনো অতি মৃদু শব্দ অব্দি নেই । শুধু রমেশবাবুর নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোথাও সামান্য শব্দটুকুও নেই । নিঃস্তব্ধতাও যে কানে এমন অসহ্য লাগে সেটা এর আগে জানা ছিল না রমেশবাবুর ।

তিনি ধীরে স্থির পায়ে খোলা জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন । বাইরে একদম কালিগোলা অন্ধকার যাকে বলে । দক্ষিণদিক, তাই বিন্দুমাত্র হাওয়া নেই, তবে বেশ শীত শীত লাগছে রমেশবাবুর । হেমন্তের শুরুতে কলকাতায় আগুনে গরম, অথচ পাড়াগাঁয়ে বেশ হিম পড়ে এইসময়টায় । হঠাৎ, রমেশবাবু ক্ষীণ একটা আলোর রেখা দেখতে পেলেন বাড়ির সামনেটায়, যেখানে একটা ভাঙাচোরা পুরোনো ফোয়ারা আছে । কে হতে পারে ? বুড়োটা ? নাকি মেয়েটা ? এতদূর থেকে স্পষ্ট কিছুই বোঝা যাচ্ছে না । তার ওপর নিশ্ছিদ্র অন্ধকার চারিদিকে ।

তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখতে পেলেন আলোর শিখাটা এদিক ওদিক মৃদু দুলছে । আর সেই সাথে খুব মৃদু একটা চাপা অস্পষ্ট জান্তব গর্জন শুনতে পেলেন নীচ থেকে । কেমন জানি ভালো লাগলো না সেই অস্পষ্ট শব্দটা রমেশবাবুর কাছে । একটা অশুভ সঙ্কেত মনে হলো তাঁর কাছে । কিসের জানি একটা অজানা ভয়ে সহসা শিউরে উঠলেন রমেশবাবু ।

[চলবে]

Sort:  
 8 months ago 

এই বুঝি শুরু হলো অশুভ আতঙ্কের শুরু।কি দারুণ যে লিখছেন দাদা,সত্যিই।জাস্ট অসাধারণ।মনে হচ্ছে এর পরের পর্বেই ভয়ানক কিছু পাবো।

 8 months ago 

চারিদিক একেবারে নিস্তব্ধ থাকলে, তখন নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ কেমন যেনো অদ্ভুত লাগে। রমেশ বাবু তো ভয়ে একেবারে শেষ। এবার তো মনে হচ্ছে রমেশ বাবুর সাথে বাজে কিছু ঘটবে। পরবর্তী পর্ব পড়ার আগ্রহ অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে দাদা। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। যাইহোক এতো সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 8 months ago 

পুরো পরিবেশটাই রমেশবাবুকে দুর্বল করে দিয়েছে, মানসিকভাবে অনেকটাই আতংকগ্রস্থ হয়ে গেছেন এখন। এমন পরিবেশে সত্যি ভয়ানক একটা অনুভূতি জাগ্রত হবে সেটাই স্বাভাবিক, বেশ কঠিন জায়গায় আজকের পর্বটি শেষ হয়েছে।

 8 months ago 

ভাই রে ভাই, এই রমেশ বাবুর যে কি হবে, কে জানে তা। যতই পড়ছি ততই যেন গল্পের ভিতরে ডুবিয়ে যাচ্ছি। বেচারার জন্য এখন নিজেরই খারাপ লাগছে। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্ব।

 8 months ago 

আমার নাম মহুয়া ।

অবশেষে গল্পের সেই মেয়েটির নাম জানা গিয়েছে।
রমেশবাবু বাইরে ছিল একটা আলোর রেখা দেখতে পেলেন তারপর থেকেই গল্পটা পড়ে আরো গা ছমছমে অবস্থা হচ্ছিল যাই হোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।

Posted using SteemPro Mobile

 8 months ago 

এই বুড়ো আর তার মেয়েই অশুভ শক্তি হবে। তাদের চাল চলন স্বাভাবিক হলেও এর মধ্যে কিছু একটা রয়েছে মনে হচ্ছে। তাছাড়া এরকম পুরনো বাড়িতে কেউ থাকে নাকি। দেখা যাক কি হয়। অপেক্ষায় রইলাম দাদা পরের পর্বের।

 8 months ago 

গল্পের মধ্যকার প্রত্যেকটা বিষয়ের সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা গুলো বেশ মজা পাচ্ছি । গল্পে যে পরিবেশ তুলে ধরেছেন তাতে পাঠক হিসেবে ভালোই আটকে গেছি। পর্বগুলো সব একসাথে পড়ে ফেলার তীব্র আগ্রহ জাগছে। মজার মুহূর্তেই যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে । কি আর করার, অপেক্ষায় রইলাম।