স্মৃতিচারণ: শৈশবের স্কুল জীবনের প্রথম শিক্ষা সফর।।

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে শৈশবের প্রথম শিক্ষা সফর যাওয়ার স্মৃতি শেয়ার করবো ।আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

Source

ছোটবেলার স্কুল জীবন মানেই অনেক খুনসুটি, হাসি, দুষ্টুমি আর রঙিন অভিজ্ঞতার গল্প। কিন্তু সেইসব স্মৃতির মধ্যে প্রথম শিক্ষা সফরের কথা আজও মনে পড়লে হৃদয়ে একটা আলাদা উষ্ণতা জেগে ওঠে। আমি তখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। একদিন ক্লাসে শিক্ষক জানালেন, আমরা শিক্ষা সফরে যাব। ‘শিক্ষা সফর’ শব্দটা তখন খুব বেশি বোঝার মতো বয়স ছিল না, কিন্তু সেটা যে ভ্রমণের মতো কিছু একটা, এটা সবাই বুঝে গিয়েছিলাম। শিক্ষকের মুখ থেকে যখন গন্তব্যস্থলের নাম শুনলাম একটি স্থানীয় পার্ক এবং একটি ছোট যাদুঘর তখন যেন আমাদের আনন্দের সীমা রইল না।

সফরের আগের দিন রাতেই ঘুম আসছিল না। বারবার ব্যাগ খুলে দেখে নিচ্ছিলাম কিছু ভুলে গেছি কিনা। মা আগেভাগেই আমার জন্য একটা ছোট ব্যাগে জামা, খাবার, জল বোতল আর হ্যান্ডকর্চিফ গুছিয়ে দিয়েছিলেন। সকালে মা খিচুড়ি, ডিম ভাজি আর চটপটি রান্না করলেন, যেন আমার পুরো দিনের শক্তি একবেলা খাবারে জোগাড় করে দিতে চান। স্কুলে পৌঁছেই দেখলাম সবাই ইতোমধ্যেই চলে এসেছে। নতুন জামা পরে, মুখে হাসি আর চোখে আলো নিয়ে বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে। বাস আসার সঙ্গে সঙ্গে হৈ চৈ শুরু।

পার্কে পৌঁছে যেন মুক্ত আকাশে পাখির মতো উড়ে গেলাম। স্কুলের মাঠে তো সবসময় নিয়ম-কানুন মানতে হয়, কিন্তু এখানে যেন আমরা সত্যিকারের স্বাধীন! কেউ দোলনায় দুলছে, কেউ দৌড়ঝাঁপ করছে, আবার কেউ বালির ওপর বসে ছবি আঁকছে। ছোট্ট একটা কৃত্রিম পাহাড়ে উঠে ছবি তোলা হয়েছিল, সেই ছবি এখনো একটা অ্যালবামে আছে, দেখলেই চোখে জল আসে। শিক্ষকরা আমাদের চোখের আড়াল হতে দিচ্ছিলেন না, বারবার বলছিলেন সাবধানে খেলতে। আমরা সবাই তাদের কথার একটুও তোয়াক্কা না করে মজা করছিলাম।

এরপর আমরা যাদুঘরে গেলাম। বাইরের খোলা প্রকৃতির আনন্দের পর হঠাৎ করে গম্ভীর পরিবেশে ঢুকে একটু চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলাম। যাদুঘরের ভেতরে ঢুকেই দেখি, চারপাশে পুরনো দিনের জিনিসে ভরা। মাটির পাত্র, রাজাদের ব্যবহৃত তলোয়ার, সোনার মুদ্রা, প্রাচীন পালকির অংশ যেন ইতিহাস চোখের সামনে ফুটে উঠছে। একটা বিশাল ডাইনোসরের কঙ্কাল দেখেই থমকে গিয়েছিলাম। শিক্ষক ধৈর্য ধরে সবকিছুর ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। তখন না বুঝলেও এখন বুঝি, ওটাই ছিল ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখার প্রথম সুযোগ।

বেলা গড়িয়ে বিকেল হল। ফেরার সময় এল। বাসে ওঠার সময় ক্লান্তি ছিল, কিন্তু মনটা তৃপ্তিতে ভরা। সবাই নিজেদের আনা খাবার ভাগ করে খাচ্ছিল। আমিও আমার মায়ের বানানো চটপটি বন্ধুদের খেতে দিলাম, আর ওদের আনা চানাচুর খেতে খেতে হাসতে লাগলাম। কিছুজন গানের তালে তালে হাততালি দিচ্ছিল, আর কেউ কেউ জানালার বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতিকে বিদায় জানাচ্ছিল। বন্ধুরা সেদিন আরও কাছের হয়ে উঠেছিল। আমরা সকলেই মিলে দারুন একটি সময় উপভোগ করেছিলাম।

আজ এত বছর পরেও সেই স্মৃতি মনের অন্দরমহলে গেঁথে আছে। স্কুল জীবনের হাজার স্মৃতির ভিড়ে প্রথম শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা আজও মনে পড়ে, যেন গতকালকের ঘটনা। এখন যখন ছোটদের স্কুল বাসে যেতে দেখি বা কোনো পার্কে ঘুরতে দেখি, নিজের সেই শৈশব ফিরে পাওয়ার একটা ইচ্ছা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। মনে হয়, আহা! যদি আর একবার ফিরে যাওয়া যেত সেই নির্ভেজাল আনন্দের জগতে, যেখানে ছিল না কোনো দায়িত্ব, শুধু ছিল সাদামাটা খুশির ঝলক। আজ ও মনে পড়ে সেই শৈশবের স্মৃতি গুলো।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।