এলোমেলো পরিস্থিতি
আসসালামু আলাইকুম
আমি @sajjadsohan from 🇧🇩.
১৯শে অক্টোবর, শনিবার।
আ মার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি, আজকে নিজের কিছু মনের কথায় লিখে দেয়ার চেষ্টা করব, নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করব।
বেশ অনেকদিন সবকিছু থেকে নিজেকে বেশ গুটিয়ে রেখেছিলাম, সবকিছুতেই অনিহার, ডিপ্রেশন, একাকীত্বতা ছেয়ে গেছিলো আমাকে, সবেমাত্র পড়াশোনা শেষ করে নিজের ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাব ঠিক ওই সময়ই আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষটি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি হলেন আমার নানী। কখনো তিনি তার সমস্যার কথা খুলে বলত না হঠাৎ যখন তার অবস্থা সিরিয়াস হয়ে যায় তখন বিভিন্ন ডাক্তার দেখানো শুরু করি।
এই টেস্ট সেই টেস্ট করতে করতে প্রায় তিন চার মাস পার হয়ে যায়, আমরা দুই তিনজন নিজেদের পার্সোনাল লাইফ ভুলে গিয়ে সম্পূর্ণভাবে এই মানুষটাকে সুস্থ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি, আপ্রাণ চেষ্টা করি এই মানুষটা আরো কিছুটা দিন আমাদের সাথে থাকুক। তিনি জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন এখন তার আরাম আয়েশ করার সময় আসছে, এখন আমরা স্টাবলিশ হব আমরা যারা এতদিন তার উপর নির্ভরশীল ছিলাম এখন আমরা চেষ্টা করব তার পাশে থাকার জন্য এই সময়ে তার গুরুতর একটা রোগে আক্রান্ত হয়, বিভিন্ন ডাক্তার টেস্ট এভাবেই কেটে গেল দুই তিন মাস পরবর্তীতে আমরা জানতে পারলাম তার স্টমাক ক্যান্সার হয়েছে, তো অপারেশন করাতে গিয়েও আরো বেশ কয়েকটি টেস্টের সম্মুখীন হতে হল।
অনাব্রত বাসায় এবং হসপিটাল করতে করতে আমরা প্রায় রোবট হয়ে গেছি, অপারেশন সাকসেস আমরা কি পরিমান খুশি হয়েছিলাম সেটা বলে বোঝানোর মত নয়। নানী আমাদের মাঝে ফিরে আসে, তাকে সাপোর্ট দিয়ে বসানো যাচ্ছে তাকে খাওয়ানো যাচ্ছে সবাই খুশি, ঠিক ৩-৪ দিন পর থেকে তিনি আবার অসুস্থ হওয়া শুরু করলো। ওই অবস্থাতে আবার ডাক্তার আবার হসপিটাল একটার পর একটা অপশন পরিবর্তন করছি কিন্তু অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না।
বাড়িতে ছেলে মানুষ নেই বললেই চলে এবং আমিও হঠাৎ কোন ডিসিশন নিতে পারছি না, ডাক্তারের ওষুধ যখন খেতে পারছিল না এভাবে কয়েকদিন গেল আমি সিদ্ধান্ত নিলাম হসপিটালে ভর্তি করি রাখাটা ভালো হবে বিকেলেই বেরিয়ে পড়লাম, আজকে নতুন আরেকটি ক্যান্সার হসপিটালে যোগাযোগ করা হয়েছে সেখানে ভর্তি করার জন্য, ডক্টর দেখেই তাকে বলল আইসিওতে ভর্তি করতে হবে, তবে তাদের এখানে খালি নেই, অক্সিজেন লাগিয়ে আমরা সবাই মাত্র অ্যাম্বুলেন্সে উঠলাম ঢাকা মেডিকেলে যাব বলে, গাড়ি স্টার্ট দিয়েই বুঝতে পারলাম নানি আর আমাদের মধ্যে নেই, সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে ইমারজেন্সিতে গেলাম এবং ডাক্তাররা কনফার্ম করলো তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই।
আমরা মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম তিনি আরো কয়েকটা দিন আমাদের সাথে থাকুক, কিন্তু যাই হোক সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তার ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদেরকে যেতে হবে এটাই চিরন্তন সত্য।
হসপিটালের ফর্মালিটিজ পালন করছিলাম, আর বুঝতে পারছিলাম আমার চারপাশটা হালকা ঘোলা হয়ে যাচ্ছে, চোখের কোনে পানি জমতে শুরু করেছে। নিজেকে শক্ত করে বাকি সবাইকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছি, তবে আমরা জানি আমরা প্রত্যেকেই ভিতর থেকে ভেঙে গেছে। গত ১০ তারিখ বৃহস্পতিবার রাতে তিনি আমাদের ছেড়ে পরকালে চলে যান, সবাই তার জন্য দোয়া করবেন এবং আমরা সবাই যেন স্বাভাবিক হতে পারি তার জন্য দোয়া করবেন।
আমি সাজ্জাদ সোহান
আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন শিক্ষার্থী। আমি ঢাকাতে বসবাস করি। আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে মুভি দেখি, ফটোগ্রাফি করি, গান করি। আমি একটু চাপা স্বভাবের তাই কম কথা বলি কিন্তু আমি একজন ভালো শ্রোতা। ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

VOTE @bangla.witness as witness

OR
কয়েক মাস আগে সম্ভবত আপনার নানির ক্যান্সার এমন একটা পোস্ট পড়েছিলাম। পরবর্তীতে আর কোন খোঁজ পাইনি। তবে আজকে এমন একটা নিউজ পাব ভাবিনি। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ধৈর্য্য ধারণ করার মতো শক্ত দিক।
কিছু কিছু মানুষ সারাজীবন কষ্টই করে যায়। সুখের সময় আসলে তারা পরপারে পাড়ি জমায়। আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তা পরিবর্তন করার সাধ্য কারো নেই। এজন্যইতো আপনার নানীর চিকিৎসার এত চেষ্টা করার পরেও অপারেশন সাকসেসফুল হলো তারপরও তিনি চলে গেলেন। এসব পরিস্থিতিতে সান্তনা দেয়ার ভাষা থাকে না। যাই হোক আপনার নানীর জন্য দোয়া রইলো আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করেন।
আল্লাহ্ তাকে জান্নাত বাসী করুক এই দোয়া করি
আল্লাহ তায়ালা আপনার নানীকে যাতে জান্নাত নসিব করেন, সেই কামনা করছি। আসলে ওপার থেকে ডাক চলে আসলে যতই ডাক্তার দেখানো হোক না কেনো,কাউকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। আপনারা তো তাহলে খুবই কঠিন সময় পার করছেন। যাইহোক আপনাদের জন্য শুভকামনা রইলো।