শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো' গল্পের চতুর্থ পর্ব
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে 'শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো' গল্পের চতুর্থ পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।
সোর্স
বেশ কয়েকটা বছর কেটে যায় রাতুল ভুলে গিয়েছিল সুলতানার কথা। রাতুল এখন বর্তমান সরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় একটি পদে চাকরি করে। যথেষ্ট বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে বাড়ি থেকেও অনেকটা চাপ আসতে শুরু করে বিবাহর জন্য। কিন্তু রাতুল বিবাহ করতে চায় না। রাতুলের বাবা মা অনেক জোর করে কিন্তু রাতুল কোনমতে বিবাহতে রাজি হয় না। রাতুলের একমাত্র ইচ্ছা ছিল যদি কাউকে বিবাহ করতে হয় তাহলে সে সুলতানা কে করবে কিন্তু এটা ছিল তার মনের মিথ্যা স্বপ্ন। কারণ রাতুল ছিল হিন্দু আর সুলতানা ছিল মুসলমান এটা কোনদিনও হত না। আর এটা যদি হয়ে ও থাকতো তাহলে সমাজ কোনদিন তাদের মেনে নিত না। কিন্তু এসবের আগেই সুলতানার বিবাহ হয়ে যায় রাতুল তার মনের কথা সুলতানা কে বলতে পারে না। রাতুল অনেকটা বার চেষ্টা করেছে সুলতানার সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু সে যোগাযোগ করতে পারেনি। সুলতানার বাবা জিয়া বাবুর সঙ্গেও রাতুল আলাপ করেছিল কিন্তু জিয়া বাবু তার ঠিকানা দিতে অস্বীকার হয়। কারণ সুলতানা রাতুলকে তার বর্তমান ঠিকানা দিতে বারণ করেছিল। যার জন্য রাতুল হাজার চেষ্টার পরেও সুলতানার সঙ্গে কোন রকম যোগাযোগ করতে পারেনি।
অফিসে রাতুলের এক ক্লিক রাতুল কে পছন্দ করত। কিন্তু রাতুল সেটি বুঝতে পেরে ও তার ফাঁদে পা দিত না। ক্লিকের নাম ছিল সুইটি। সুইটি দেখতে অনেকটা সুন্দর ছিল কিন্তু রাতুল তার দিকে কোন সময় ফিরেও দেখতো না। একদিন অবশেষে সুইটি রাতুলকে জানায় তাকে সে পছন্দ করে এবং ভালোবাসে। রাতুল এ কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে সুইটির উপর রেগে যায়। অফিসের ভিতর তাকে অপমান করে। সবার মাঝে অপমানিত হয়ে সুইটি অফিসে আসা বন্ধ করে দেয়। অনেকদিন অফিসে না আসার কারণে রাতুল সুইটিকে ফোন দেয়।
রাতুল: সুইটি তুমি কোথায় আছো?
সুইটি: সেটা শুনে আপনার কি দরকার।
রাতুল: আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই?
সুইটি: অফিসের ভিতরে অপমান করেছেন তারপরও আপনার শান্তি হয়নি। এখন কি বাইরে মানুষের সামনে আমাকে অপমান করবেন।
রাতুল: আমি খুবই লজ্জিত। আমি চাই এর মীমাংসা করতে। তুমি প্লিজ আমার সাথে দেখা করো।
সুইটি: আচ্ছা ঠিক আছে আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব।
সেদিনই সুইটি এবং রাতুল তারা দুজনে একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করে। রাতুল আগে থেকেই রেস্টুরেন্টে সুইটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সুইটি রেস্টুরেন্টে ঢুকেই দেখতে পায় রাতুল বসে আছে। রাতুলের কাছে যেতেই রাতুল একটি ফুলের তোড়া সুইটিকে দেয়। সুইটি খুবই খুশি হয় আর সঙ্গে সঙ্গে রাতুলকে বলে।
সুইটি: কি ব্যাপার হঠাৎ করে ফুল দিলেন?
রাতুল: তোমাকে দিতে ইচ্ছা করলো তাই তোমাকে দিলাম। আর সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি খুবই লজ্জিত। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
সুইটি: এসব আপনি কি কথা বলছেন। এখানে আপনার কোন দোষ নেই দোষটা ছিল আমার। আমি না বুঝেই আমার মনের কথাটা আপনাকে বলেছি। যেটা আমার বলা উচিত ছিল না।
রাতুল: দেখো তুমি যেটা আমাকে বলেছ সেটা তুমি বাদে অন্য কেউ আমাকে বলতে পারতো। এতে করে তোমার কোন দোষ নেই। তোমার আমাকে ভালো লাগতেই পারে স্বাভাবিক। কিন্তু তোমার জানাটা দরকার যে আমি তোমাকে পছন্দ করি কিনা। দেখো আমার একটা অতীত আছে।
সুইটি: কি সেই অতীত আমি কি জানতে পারি?
রাতুল: অবশ্যই তুমি জানতে পারো।
সুইটি: তাহলে বলুন।
রাতুল: আমি একটা মেয়েকে অসম্ভব পরিমাণে ভালবাসতাম। মেয়েটি ছিল মুসলমান কিন্তু তবুও আমার কোন অসুবিধা ছিল না। স্কুল জীবন থেকেই আমি ওকে পছন্দ করতাম। স্কুলে কারো সঙ্গেই ও মেলামেশা করত না আমার সঙ্গেই প্রথম বন্ধুত্ব হয়। আর এই বন্ধুত্ব থেকেই আস্তে আস্তে ভালোবাসার পরিণত হয়। কিন্তু আমি তাকে কখনো বলতে পারিনি।
সুইটি: আপনি কেন তাকে বলতে পারেননি কোনো প্রবলেম হয়েছিল কি?
রাতুল: কোন এক কারণে আমি কলেজে যাওয়া অফ করে দেই। হঠাৎ করে আমার কাছে তার একটি চিঠি আসে। চিঠিটি পেয়ে আমি পরের দিন কলেজে যাই। কলেজে যে জানতে পারি আমার সেই পছন্দের মানুষটির বিয়ের কথা চলছে। সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়িতে চলে যাই বাড়িতে যে দেখতে পারি সে বিবাহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার চোখের সামনে আমার ভালোবাসার মানুষটি অন্য কারো হয়ে গেল। আমি কিছুই বলতে পারলাম না আমি তাকে জানাতে পারলাম না যে আমি তাকে ভালোবাসি।
সুইটি: বিয়ের পরেও তো আপনি তাকে আপনার মনের কথাটা বলতে পারতেন।
রাতুল: সে চেষ্টাও আমি করেছি কিন্তু আমি তার ঠিকানা পায়নি। তার বাবার থেকেও অনেক চেষ্টা করেছি ঠিকানা পাওয়ার জন্য কিন্তু তার বাবা আমাকে জানিয়েছে আমাকে তার ঠিকানা দিতে মানা করেছে।
সুইটি: আপনার কথা শুনে বুঝতে পারলাম আপনি শুধু তাকে ভালবেসেছেন কিন্তু আপনাকে সে ভালোবাসে নি। যদি সে আপনাকে ভালোবাসতো তাহলে অবশ্যই তার ঠিকানা দিতে আপনাকে মানা করত না।
রাতুল: আমি এখনো তাকে খুঁজছি যদি কোনদিন তাকে খুঁজে পাই তাহলে সেদিনই আমি আমার মনের কথাগুলো তাকে বলবো।
সুইটি: তার জন্য আপনার জীবনটা আপনি নষ্ট করছেন কেন?
রাতুল: আমি যে এখনো তাকে খুব ভালোবাসি তাকে তো ভুলতে পারছি না।
সুইটি: তাকে যদি আমি ভুলিয়ে দেই।
রাতুল: তার মানে?
সুইটি: মানে কিছুই না আমরা তো ভালো বন্ধু হতে পারি তাই বলছি আর কি।
রাতুল: হ্যাঁ যেহেতু আমরা একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করি সে হেতু আমরা বন্ধু হতেই পারি।
সুইটি: আপনার বন্ধু হওয়াটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।
রাতুল: আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।
সুইটি: আপনার কিছু বুঝতে হবে না। আপনার মন থাকলে অবশ্যই আপনি বুঝতে পারতেন কিন্তু সেটা আপনার নাই।
কথা বলতে বলতে তারা অনেকটা সময় পার করে। সেদিনের পর থেকে তারা ভালো একটি বন্ধু হয়ে যায়। বিপদে-আপদে সব সময় একে অপরের পাশে থাকার চেষ্টা করে।
অনেক সুন্দর করে আপনি এই গল্পের চতুর্থ পর্ব আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আমার কাছে এই পর্ব টাও খুব ভালো লেগেছে। রাতুল দেখছি এখনো সুলতানা কে অনেক বেশি ভালোবাসে। অন্যদিকে আবার সুইটি ও রাতুল কে পছন্দ করে। সবশেষে তো রাতুল আর সুইটি খুব ভালো বন্ধু হয়েছে। কিন্তু সুইটি তো তাকে এখনো ভালোবাসে। দেখা যাক তাদের বন্ধুত্ব ভালবাসায় পরিণত হয় কিনা। তবে রাতুলের উচিত সুলতানা কে ভুলে যাওয়া। অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী পর্বের জন্য।
খুব শীঘ্রই পরবর্তী পর্বটি উপস্থাপন করব।
ভাই বানানটা মনে হয় কলিগ হবে। যাইহোক সুইটি এবং রাতুলের যেহেতু বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে, ধীরে ধীরে হয়তোবা রাতুলও সুইটিকে পছন্দ করতে শুরু করবে। তাছাড়া সুলতানার কথা ভেবে ভেবে রাতুল কেনো তার জীবনটা নষ্ট করবে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই।