'তোমাকে ছোঁয়ার সাধ্য আমার নেই' গল্পের নবম পর্ব।

in আমার বাংলা ব্লগ17 hours ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে 'তোমাকে ছোঁয়ার সাধ্য আমার নেই' গল্পের নবম পর্ব উপস্থাপন করছি। আশা করি, গল্পের নবম পর্বটি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-vjapratama-935824.jpg
সোর্স


এয়ারপোর্ট থেকে বাড়িতে আসে রাজু ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নেয়। এদিকে মেঘা ভাবতে থাকে এত বছর পর দাদা দেশে ফিরল আমি সৃষ্টিকে বললাম তবুও সে এলোনা কিন্তু আমাকে বলেছিল সে আসবে। মেঘা আবারো সৃষ্টিকে ফোন দেয় কিন্তু মেঘা আবারো ব্যর্থ হয় কারণ সৃষ্টির ফোন এখনো অফ রয়েছে। মেঘা কিছুতেই বুঝতে পারছিল না যে সৃষ্টির ফোন অফ কেন হয়েছে। বেশ কিছুদিন হয়ে গেল সৃষ্টির কোন খবর পাওয়া গেল না। একদিন রাজু মেঘাকে বলে কি হয়েছে তোর বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি তুই কিছু একটা নিয়ে চিন্তা করছিস। মেঘা বলে, তেমন কিছু না। রাজু বলে, আমি তোকে ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমার কাছ থেকে লোক আবার চেষ্টা করিস না কি হয়েছে আমাকে খুলে বল। মেঘা বলে,দাদা তুই যখন দেশে আসার কথা বলিস। আমি তখন সৃষ্টিকে এই বিষয়টি জানাই। সৃষ্টি আমাকে বলেছিল এয়ারপোর্টে সে আসবে কিন্তু সে এলো না। রাজু বলে, হয়তোবা তার কোন জরুরী কাজ বেঁধে গিয়েছিল। মেঘা বলে, হতে পারে তার কাজ বেঁধে গিয়েছিল আসতে পারেনি কিন্তু ফোন বন্ধ করে রাখার কি কারন আছে। রাজু বলে, কেউ যেন বিরক্ত না করে তার জন্য হয়তো বা ফোন অফ করে রেখেছিল। এই নিয়ে এত চিন্তা করার কি আছে। মেঘা বলে, আমি তোর কথা সব মানছি কিন্তু সেদিনের পর থেকে ১ মাসের মতন ওর ফোনটি অফ রয়েছে। দাদা আমার মনে হয় ও কোন প্রবলেমে পড়েছে। আমি আজ ওদের বাড়িতে যাব। তুই আমাকে একটু এগিয়ে দিবি ওদের বাড়িতে? রাজু বলে, আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোকে সৃষ্টিদের বাড়িতে পৌঁছে দিব।


বিকালের দিকে মেঘা সৃষ্টি দের বাড়িতে যায়। সৃষ্টিদের বাড়িতে কলিং বেল বাজাতেই সৃষ্টির মা দরজাটি খুলে দিল। মেঘা বলে, আন্টি সৃষ্টির কি হয়েছে বেশ কিছুদিন ওর ফোনটি অফ রয়েছে আমি ওকে অনেকবার ট্রাই করেছি। খুব চিন্তা হচ্ছিল এমনটি কোন সময় হয় না তাই চলে এলাম ও কোথায় আছে? সৃষ্টির মা বলে, সৃষ্টি ওর রুমে শুয়ে আছে তুমি যাও আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। মেঘা সোজা চলে যায় সৃষ্টির রুমে। রুমে যে দেখতে পায় সৃষ্টি শুয়ে আছে। মেঘা রাগান্বিত কন্ঠে সৃষ্টিকে বলে, কি ব্যাপার শাহাজাদী বেশতো বলেছিলি আমার দাদাকে খুব ভালোবাসিস। দাদা ফিরে আসার কথা শুনে একটা বারও তো তাকে দেখতে এলিনা। এই নাকি তোর ভালোবাসা? দাদা যেদিন দেশে ফিরল সেদিনের পর থেকে তোর ফোনটি অফ রয়েছে কি ব্যাপার। আসলে দাদা ঠিকই বলে, তোর ভিতরে দাদার প্রতি কোন ভালোবাসাই নেই শুধু আমার সামনে ভালোবাসার অভিনয় করতি। তোর সব অভিনয় আমার কাছে ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তাই নিজেকে আড়াল রেখে কোন লাভ নেই । তুই এখনও শুয়ে আছিস কেন ওঠ বলছি।


মেঘা সৃষ্টিকে হাত ধরে টান দেয়। এরপর সৃষ্টি মেঘা কে দুহাত দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করে। আর বলে, মেঘা তুই কোথায় আমি তোকে খুঁজে পাচ্ছি না কেন? তখনই সৃষ্টির মা চলে আসে রুমে। মেঘা সৃষ্টির মাকে বলে, আন্টি সৃষ্টির কি হয়েছে ও কি সব বলছে ও আমাকে খুঁজে পাচ্ছে না আমি তো ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সৃষ্টির মা কান্নায় ভেঙে পড়ে। মেঘা বলে, আন্টি আপনি কান্না করছেন কেন কি হয়েছে আমাকে খুলে বলুন? মা বলে, এক মাস আগে সৃষ্টির গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়। রাস্তার মানুষ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। তারপর আমরা সেখানে যাই পরবর্তীতে ডাক্তার আমাদের বলে তার দু চোখে কাচ প্রবেশ করার কারণে সে চিরদিনের জন্য আর দেখতে পারবে না 😭😭। এ কথাটি শোনার পর মেঘা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তখন সৃষ্টি মেঘাকে বলে, আরে পাগলি কান্না কেন করছিস? আমি তো মরে যাইনি জাস্ট কিছু দেখতে পাচ্ছি না। মেঘা বলে, আমি না জেনে না বুঝে তোকে কত কিছু বললাম আমাকে ক্ষমা করে দে তুই। সৃষ্টি বলে, তোর ফোনের পর সেদিন আমি অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ি হঠাৎ কোথা থেকে একটি লরি এসে আমাদের গাড়িটি ধাক্কা দেয় তারপর আমি কিছুই জানি না। পরবর্তীতে জানতে পারলাম আমি আর কোনদিন চোখে দেখতে পারবো না। আমার কপালটা সত্যিই খারাপ না পেলাম ভালোবাসা, না পেলাম ভালোবাসার মানুষটাকে দেখার সুযোগ। মেঘা বলে, এমন ভাবে বলিস না আমি তো রয়েছি সব ঠিক হয়ে যাবে। সৃষ্টি বলে, এখন আর কোনো কিছু ঠিক হবার নেই কারণ আমার পৃথিবীটা এখন অন্ধকার। মেঘা, তোর দাদাকে এখন দেখতে খুব সুন্দর লাগছে তাই নারে? খুব ইচ্ছা করছিল তাকে একটা বার দেখার জন্য কিন্তু আমি আর তাকে আর দেখতে পাবো না। এখন আমার চার দেয়ালের ভিতরে বসবাস। আমার অন্ধকার খুব ভয় করতো কিন্তু এখন সব সময় আমার অন্ধকারে থাকতে হয় 😭😭😭। মেঘা সৃষ্টির কথা সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে চলে যায়। তখন সৃষ্টি তার মাকে বলে, মেঘা চলে গেল বুঝি, যাবেই তো অন্ধের সঙ্গে বকবক করার সময় আছে নাকি 😊😊।

আজ গল্পের পর্বটি এখানে শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 15 hours ago 

আজকে দেখতে দেখতে আপনি তোমাকে ছোঁয়ার সাধ্য আমার নেই' গল্পের নবম পর্ব শেয়ার করলেন।এই পর্বে চরিত্রগুলোর মানসিক দ্বন্দ্ব এবং তাঁদের সম্পর্কের গভীরতা খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে মূল চরিত্রের আবেগপ্রবণ মনোভাব এবং তাঁর ভাবনাগুলো আমাদেরকে গল্পের সঙ্গে আরও বেশি জড়িয়ে ফেলেছে।গল্পের মাধ্যমে প্রেম, বিচ্ছেদ এবং মানবিক সম্পর্কের জটিলতা খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এটি শুধু একটি গল্পই নয়, বরং জীবনের একটি দর্শনও বটে।

 1 hour ago 

এই গল্পের প্রতিটা পর্ব পড়া হয়েছে আমার, তবে এর আগের পর্বটা পড়া হয়নি। আজকে এই পর্বটা পড়ে এটা বুঝতে পারলাম রাজু দেশে ফিরে আসার পর সৃষ্টি আর তাকে দেখার সুযোগ পেল না। কারণ এক্সিডেন্টে তার দুইটা চোখ সে হারিয়েছে। এখন দেখা যাক কি হয় পরবর্তীতে। অন্ধ সৃষ্টির কপালে কি আছে দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।