মায়ের ঋণ গল্পের তৃতীয় পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ17 hours ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনার সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে এই গল্পের তৃতীয় পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-theweddingfog-2995347.jpg
সোর্স

মায়া অসুস্থ হয়ে পড়ার জন্য বেশ কিছু দিন সে কাজ করতে যেতে পারেনি। যার জন্য মায়াকে অনেক কথা শুনতে হয় এইসব কথা বিজয় শুনতে পায়। বিজয় মায়ের কাছে এসে মায়ের দুটো হাত ধরে বলে মাগো, আমি একদিন অনেক বড় হব তোমার দুঃখ কষ্ট সব দূর করব। আমাকে একটু বড় হতে দাও। মায়া বলে আমি তো জানি তুমি অনেক বড় হবে অনেক টাকা-পয়সা হবে তোমার। আমি তো সেই দিনটি দেখার জন্যই বসে আছি। মায়া বলে বড় হতে গেলে তো পড়াশোনা করতে হবে তুমি যাও পড়তে বসো। বিজয় বলে আমি তোমার কাছে থাকি মা। তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি ঈশ্বরের কাছে সব সময় প্রার্থনা করেছি যেন আমার মা দূরত্ব সুস্থ হয়ে ওঠে। মা আর ছেলের ভালবাসার দিনগুলো এমন ভাবেই চলতে থাকে।


দশটা বছর পার হয়ে গেল। বিজয়ও অনেক বড় হয়ে গেল এদিকে মায়া ও অনেক বাড়িতে কাজ করতে শুরু করলো। মায়ার একমাত্র চিন্তা ছিল বিজয় বড় হয়েছে আর নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে। মেধাবী ছাত্র বিজয় তাই তার পড়াশোনার জন্য অনেক টাকা পয়সার প্রয়োজন। তার জন্য মায়ার কষ্ট হলেও কাজ করতে থাকে। অনেক বাড়িতে কাজ করলে অনেক টাকা হবে যাতে পরবর্তীতে বিজয়ের পড়াশুনোর কোন ব্যাঘাত না ঘটে। বিজয়ের কলেজে অনেক বন্ধু-বান্ধব হয়। একদিন বিজয়ের বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয় তিন দিনের ভ্রমণে বের হবে। তার জন্য এক একজনের ৫০০০ টাকারে দিতে হবে। বিজয়ের পক্ষে এত টাকা দেওয়াটা সম্ভব নয় তাই বিজয় সবার সিদ্ধান্তে সাড়া দিতে পারে না। বিজয়ের বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে একটি মেয়ে ছিল নাম মিরা। মিরা বিজয়কে পছন্দ করত কিন্তু বিজয় কোন সময় সেটা পাত্তা দিত না। কারণ বিজয় জানে সে গরিবের ছেলে ভালোবাসা তার সাজেনা। বিজয় যখন মুখ ভার ছিল তখন মিরা বিজয়কে বলে কি নিয়ে এত চিন্তা করছো? বিজয় মিরাকে বলে আমি এত টাকা দিতে পারব না। তখন মিরা বলে বিজয় তুমি সবসময় এত কৃপণতা দেখাও কেনো? তোমার একার জন্য আমরা বন্ধু-বান্ধবরা কোথাও যেতে পারি না।


যেহেতু আমরা বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা তিন দিনের ভ্রমণে বের হব সে হেতু তোমাকেও যেতে হবে। তোমার টাকা আমি দিয়ে দিব তুমি সময় মতন চলে আসবে। বিজয় বলে মিরা এটা হয় না তুমি কেন আমার টাকা দিতে যাবে তোমরা যাও আমি যাব না। তখন বিজয়ের বন্ধুরা বিজয়কে বলে মিরা যখন তোর টাকা দিয়ে দিচ্ছে তাহলে তুই আর না করিস না রাজি হয়ে যা। বন্ধুরা জোর করার কারণে বিজয় অবশেষে রাজি হয়। বিজয় বাড়িতে চলে আসে বাড়িতে এসে মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। সন্ধ্যার সময় মায়া বাড়িতে আসে তখন বিজয় ডাক দিয়ে বলে মা তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে?তখন মায়া বিজয়কে বলে বলো কি বলতে চাও? তখন বিজয় মাকে বলে মা আমার বন্ধুরা তিন দিনের ভ্রমণে যাচ্ছে আমিও যাব। মায়া বলে ঠিক আছে যাও কিন্তু সাবধানে যাবে। বিজয় বলে আমাকে ৭০০০ টাকা দিতে পারবে? মায়া বলে এত টাকা? বিজয় বলে মাত্র ৭০০০ টাকা তাও তোমার কাছে এত টাকা মনে হচ্ছে। তুমি জানো আমার বন্ধুবান্ধবরা কত টাকা প্রতিদিন ব্যয় করে সেই তুলনায় তো আমি কিছুই করতে পারি না। ওরা সবসময় আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। আমি কিছু শুনতে চাই না বুঝতে চাই না আমার ৭০০০ টাকা দিতেই হবে।


মায়া বলে আচ্ছা ঠিক আছে আমি দিবো তোমাকে বিজয় বলে রাতে দিবে আমি সকালে রওনা দিব। মায়া বলে এত দ্রুত এত টাকা কিভাবে জোগাড় কর। তখন বিজয়ের আগান্বিত কন্ঠে মাকে বলে ছোটবেলা থেকেই আমি তোমার কাছে কোন কিছু চেয়ে পাইনি। কোথাও যেতে ইচ্ছা করলে সব সময় না করেছ,না কোন ভাল পোশাক পড়তে দিয়েছ,না কোন বন্ধুকে খাওয়াতে পেরেছি । আমি আর পারছি না মা,অসহ্য লাগছে। বিজয়ের চিৎকার শুনে দাদু ছুটে চলে আসে। আরে সে বিজয়কে বলে ইদানিং কি হয়েছে তোমার এত চিৎকার করে কেন কথা বল? বড় হচ্ছো আর অভদ্র হয়ে হচ্ছ মায়ের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় ভুলে যাচ্ছ। তখন মায়া বলে দাদু তুমি চুপ করো। বিজয় ঠিকই বলেছে ছোটবেলা থেকে আমি ওকে কিছুই দিতে পারিনি। এখন বড় হয়েছে অনেক বন্ধু হয়েছে তাদের সাথে মিলেমিশে থাকতে হলে ওর তো টাকার প্রয়োজন হবে। মায়া বিজয়কে বলে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ো সকাল হলেই আমি তোমাকে টাকা দিয়ে দিব। এই কথাটা শুনে বিজয় খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পরে। বিজয় চলে যাওয়ার পর দাদু মায়াকে বলে বিজয় বড় হচ্ছে আর অমানুষ হয়ে যাচ্ছে। দাদু আমারই ভুল ওর যেটা প্রয়োজন সেটা আমি কোনদিন ওকে দিতে পারিনি আর এখন বড় হয়েছে ভালো-মন্দ সবই বুঝতে পারে। তুমি এ নিয়ে চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।

আজ গল্পের পর্বটি এখানে শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।