প্রিয় উপন্যাস হাজার বছর ধরে নিয়ে আমার অনুভূতি।
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে চলছে একুশে বইমেলা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুরো মাসে আমি আমার বাংলা ব্লগে শুধুমাত্র বই নিয়ে লিখব। তারই ধারাবাহিকতায় আজ লেখব আমার অন্যতম একটি প্রিয় বই হাজার বছর ধরে নিয়ে।
![Zahir_Raihan_(1935–1972).jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmU5iLtRCPZ9E58p7SZX2yiYUedJxEH4Q11ZLG9gsbsvig/Zahir_Raihan_(1935%E2%80%931972).jpg)
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথপ্রদর্শক জহির রায়হানের অমূল্য সৃষ্টি হাজার বছর ধরে। উপন্যাসটি আমি প্রথম পড়েছিলাম নবম-দশম শ্রেণীতে আমাদের সহপাঠ হিসেবে। তখন চিন্তাশক্তি এত ভাল ছিলনা। যার কারণে উপন্যাসটি পড়লেও তার মর্মার্থ উদ্ধারে আমি ব্যর্থ হই। যার কারনে যুবক মন্তু, যুবতী টুনি এবং তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, মকবুলের একাধিক বিয়ে, তার ভাই আবুলের বউকে পেটানো; এসব কিছুই আমাকে তেমন ভাবে নাড়া দেয়নি। কিন্তু যখন নির্দিষ্ট বয়সে এসে পড়লাম, তখন হাজার বছর ধরে উপন্যাসের গভীরতা উপলব্ধি করে আমি বেশ অবাক হই, মুগ্ধ হয়ে যাই জহির রায়হানের লেখায়। একই সাথে তিনি কতগুলো বিষয় আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছিলেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে।
মন্তু এবং টুনির সম্পর্ক ছিল দেবর-ভাবি। উপন্যাসের প্রধান দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র তারা। তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই নিয়ে বেশ কিছু মানুষ সমালোচনা করেছে। তাদের বক্তব্য, এখানে পরকীয়াকে প্রমোট করা হয়েছে। আসলে মূল বস্তু তা নয়। টুনি ছিল মকবুলের তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী। তাদের বয়সের ফারাক যথেষ্ট ছিল। তাদের বয়সের পার্থক্য এমনটাই যে মকবুলের মেয়ে আর টুনি ছিল বান্ধবী। স্বাভাবিক হবে এই বুড়ো মকবুলের সাথে তার সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীসুলভ হওয়ার কথা নয়। বরং সমবয়সী মন্তুকেই টুনির বেশি ভালো লাগার কথা। মূলত এই বিষয়টিই জহির রায়হান এখানে বুঝাতে চেয়েছিলে।
কলেরা মহামারিকে তারা ওলা বিবি বলে চিহ্নিত করা এবং এর সমর্থনে গাল-গল্পের আশ্রয় নেয়া প্রমাণ করে কুসংস্কারে আবদ্ধ থাকার পরিচয়। মহামারিতে আক্রান্তরা ডাক্তারের কাছে না গিয়ে, ওষুধ না খেয়ে কবিরাজের শরণাপন্ন হয়। যার ফলে অনেকেই জীবন হারায়। এদিয়ে জহির রায়হান তৎকালীন সময়ের কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন।
আবুলের নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছেন। তার নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে আগের এক বউয়ের চলে যাওয়া, এক স্ত্রীর মারা যাওয়া এবং বর্তমান বউয়ের ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা প্রমাণ করে তৎকালীন সময়ের নারী নির্যাতনের চিত্র। সন্তান না হওয়ায় করিম শেখের স্ত্রী করিম শেখকে নতুন করে বিয়ে দিয়ে নিজে আত্মহত্যা করে। এটাও এক ধরনের নারী নিপীড়নের চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে।
মকবুলের মেয়ের বিয়ে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যৌতুকের চর্চা এবং বাল্যবিবাহ। নিজের বাবার বাড়িতে টুনির দুরন্তপনা এবং আম্বিয়ার সাথে মন্তুর বিয়ের কথা শুনে তার হিংসা হওয়া স্বভাবজাত নারীর চরিত্র ফুটিয়ে তোলে। ভালোবাসার মানুষকে কে হারাতে চায়?
এমন একটি স্বার্থক উপন্যাস রচনার জন্য যেখানে জহির রায়হানকে নিয়ে মাতামাতি করার প্রয়োজন ছিল, সেখানে আমরা যথাযথভাবে তা করতে পারিনি। পাঠক হিসেবে এটা আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু উপন্যাসের এমন রচনা শৈলী এবং একসাথে এতগুলো দৃশ্যপট আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য এই উপন্যাসটি আমার অন্যতম প্রিয় একটি উপন্যাস।
![puss_mini_banner13.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmcZhKbQPMvmahSoDMcrS4Yz8RpDJg8CcXuGxTECwGDULD/puss_mini_banner13.png)
CMC Post Link
Twitter Link