ডিপার্টমেন্ট থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ- পর্ব ১
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসি, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন। আজ আপনাদের সাথে আমার একটি ভ্রমণের ঘটনা শেয়ার করবো। সেটা হচ্ছে আমার সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ নিয়ে।

ঠিক কবে গিয়েছিলাম সে কথা আমার মনে নেই। তবে এটা মনে আছে, যে রাতে বার্সেলোনা পিএসজির সাথে ৬-১ গোলের ব্যবধানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচটি জিতেছিল, সেদিন সকাল বেলা আমরা সেন্টমার্টিন গিয়েছিলাম। মূলত, আমাদের কলেজ থেকে, আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে আমরা ট্যুরে গিয়েছিলাম। সেদিন ছিল বাস চালকদের ধর্মঘট। তাই আমাদেরকে খুব ভোরে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে দুটি বাসে করে আমরা সেবার মোট ৮০ জন ট্যুরে গিয়েছিলাম।
সকালবেলা কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে আমরা যেখানে লবণ তৈরি করে সেখানে খানিক বিরতি নিয়েছিলাম। যেহেতু আমরা রসায়ন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী, লবণ তৈরির প্রক্রিয়াটি আমাদের জানা থাকা ভালো। এ কারণেই আমাদের শিক্ষকরা সেখানে খানিকক্ষণ যাত্রা বিরতি নিয়েছিলেন।
টেকনাফ থেকে যে জাহাজে করে আমরা সেন্টমার্টিন গিয়েছিলাম নামটি মনে নেই। তবে সেটি টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন-গামী সবচেয়ে বড় জাহাজ। যাহোক যখন নাফ নদী দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তার দুপাশে শত শত পাখি উড়ছিল। জাহাজের বারান্দা থেকে তাদেরকে চিপস দেওয়া হচ্ছিলো। সেই চিপস পানিতে পড়ার আগেই তারা মুখে নিয়ে নেয়। অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম, নিজেরাও কিছু চিপস ছিটালাম। ভালোই লাগলো। একটি চিপসও পানিতে পড়েনি। কোন না কোন পাখি সেগুলো খেয়ে ফেলেছে, হঠাৎ ধরতে পেরেছে।
একপাশে মায়ানমারের সীমান্ত। নয়নাভিরাম দৃশ্য। সমুদ্রের ঠিক পাশেই বিশাল বিশাল পাহাড়, সবুজে ঘেরা। দেখেই মন ভালো হয়ে যাওয়ার মতো দৃশ্য। কিন্তু খুব আফসোস লাগলো আমাদের। ওপারে কেউ ঘুরতে যায় না। নিজেদের মধ্যকার অস্থির পরিবেশের জন্য। এক সময় আমরা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়লাম। সমুদ্রের ঢেউ টের পেলাম। বঙ্গোপসাগর সম্ভবত সব সময় উত্তাল থাকে। আমরা সেটা বেশ ভালোভাবে টের পেলাম। ততক্ষণে পাখিরা সব ফিরে গেছে। তাদের কাজ শেষ। তারা নাফ নদী পর্যন্তই থাকে।

কতক্ষণ সময় গিয়েছে জানা নেই। একসময় ছোট্ট একটি বিন্দু আকারে সেন্টমার্টিন আমাদের সামনে ধরা দিল। একটু একটু করে এগোতে থাকলাম আর সেন্ট মার্টিনও বড় হতে থাকলো। এটিও মনে রাখার মত একটি দৃশ্য। একসময় সেন্টমার্টিনে বানানো ইট-পাথরের জাহাজ ঘাটে জাহাজ ভিড়লো। আমরা সেখান থেকে নামলাম।
আমাদের জন্য পূর্বনির্ধারিত হোটেলটা ছিল জাহাজ ঘাটের ঠিক বিপরীত দিকে। রাস্তায় যেতে সব মিলিয়ে দুই কিলোমিটারের মত পথ। তবে আমি হিসাবটাই নিশ্চিত না। আরো কমও হতে পারে, আরো বেশিও হতে পারে। মোটামুটি সবগুলো রিকশাই সেন্ট মার্টিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হোটেলগুলোর উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমরা সাত-আট জন ছিলাম যারা হয় ইচ্ছা করেই উঠেনি, না হয় শেষ পর্যন্ত কোন রিকশাই পাইনি। অগত্যা হেঁটে হেঁটে আমরা হোটেলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি।
হাঁটতে বেশ ভালই লাগছিল। চারদিকের পরিবেশ অনেক সুন্দর, ছবির মত সুন্দর! একটিমাত্র স্কুল যা আবার দালান করা, দোতলা। একটি ছোট বাজার। বাজারে একটি নলকূপ রয়েছে। যা একমাত্র সুপেয় পানির উৎস। বাজারটি দ্বীপের ঠিক মধ্যখানে। প্রতিদিন সকালবেলা টেকনাফ থেকে সেখানে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। মানুষজন এখান থেকেই নিজেদের চাহিদা মেটায়। একসময় একদম শেষ প্রান্তে আগে থেকে নির্ধারিত করা হোটেলে আমরা পৌছালাম। সেটি ছিল একটি দোতলা হোটেল। আমাদের বরাদ্দকৃত রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। বাকি ঘটনা আরেকটি পর্বে সমাপ্ত করব।
বেশ আগের ট্যুর ছিল এটি। ট্যুরের পর আমি আমার মোবাইলটি হারিয়ে ফেলেছি। কিছু ছবি ফেসবুকে আপলোড করা ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার সেই আইডিটিও গায়েব হয়ে গিয়েছে। টুইটারে কয়েকটি ফটো রাখা ছিল সেই কয়েকটি ফটোই এখন সম্বল। এমনকি আমার ল্যাপটপে ব্যাকআপ হিসেবে রাখা ছবিগুলো windows দেওয়ার সময় হারিয়ে গিয়েছে। মোদ্দা কথা টুইটারে থাকা সামান্য কয়েকটা ছবি ব্যতীত আমার কাছে আর কোন রিসোর্স নেই। তাই আমি এক পর্বেই ঘটনাগুলো শেয়ার করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু এক পর্বে শেয়ার করা সম্ভবত অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়েই পরের পর্বে যেতে হল। ধন্যবাদ।

Link 1: https://x.com/akib_66/status/1925836851622896114
Link 2: https://x.com/akib_66/status/1925822314639229072
Link 3: https://x.com/akib_66/status/1924889325600469416