অসহায় নারীর সংগ্রামী জীবন - মুভি রিভিউ - সারেং বউ

in আমার বাংলা ব্লগ18 hours ago

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার প্রিয় একটি বাংলা মুভির রিভিউ শেয়ার করব। মুভিটির নাম সারেং বউ। চলুন শুরুতেই এক নজরে মুভিটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।

মুভির নামসারেং বউ
পরিচালকআবদুল্লাহ আল মামুন
চিত্রনাট্যজহির রায়হানের স্বনামের গ্রন্থ থেকে নেয়া
অভিনয়েফারুক
কবরী
আরিফুল হক
প্রযোজকএ.বি.এম. প্রোডাকশন
ভাষাবাংলা
মুক্তি১৯৭৮
দেশবাংলাদেশ

এই মুভিটি মূলত নারী কেন্দ্রিক মুভি। যাইহোক, আমি সংক্ষেপে মুভির ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। কদম নামের যুবক সারেং সমুদ্র থেকে গ্রামে আসে। সে ছিল একা। তার বাবা-মা ছিল না। সে তার চাচার সাথে থাকতো। গ্রামে এসে, মা মরা পিতার একমাত্র কন্যা নবীতুনকে তার ভালো লাগে। নবীতুনও কদমকে পছন্দ করত। কদম নবীতুনের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে, তার বাবার রাজি হয়। তাদের বিয়ে হয়।


az_recorder_20250118_004112.jpg

ইউটিউব থেকে নেয়া স্ক্রিনশট

বিয়ের পর নবীতুন চেয়েছিল কদম যেন আর সমুদ্রে না যায়। কিন্তু কদম একজন সারেং। সে সমুদ্রের ডাক উপেক্ষা করতে পারে না। তাই নবীতুনের শত বাধা সত্বেও সে আবারও সমুদ্রে চলে যায়। যাওয়ার পর কয়েক মাস ঠিকঠাক মত সে নবীতুনকে টাকা পাঠাতো। এরমধ্যে তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। তাদের দিন ভালোই যাচ্ছিল। হঠাৎ করে কয়েক বছর আর কদমের কোন খোঁজ মিলে না। শুরু হয় নবীতুনের একক সংগ্রামী জীবন।

একা, অর্থাভাবে জর্জরিত, কোন সাহায্যকারী নেই, এমন একজন নারীর জীবন কেমন হতে পারে সেই চিত্রই খুব দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুভিটিতে। নবীতুন হচ্ছে সারেং বাড়ির বউ। সারেং বউরা অন্যদের বাড়িতে কাজ করেনা। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বেশ কষ্টে তার জীবন কেটে যাচ্ছিলো। নিজের বাড়িতে মানুষের ধান ভেঙ্গে কোনরকমে দিনযাপন করত। কিন্তু তার সেই কষ্টের জীবন আরও কষ্টকর হয় যখন বাজারে ধান ভাঙ্গার অত্যাধুনিক মেশিন চলে আসে। খুব কম খরচে, কম সময়ে মানুষ তাদের ধান ভাঙতে পারতো। এজন্য কেউই আর নবীতুনের কাছে ভাঙ্গানোর জন্য ধান পাঠাতোনা। নবীতুনের আয় রোজগারের পথও বন্ধ হয়ে যায়।


az_recorder_20250118_010201.jpg

ইউটিউব থেকে নেয়া স্ক্রিনশট

তার একমাত্র শুভাকাঙ্ক্ষী ছিল কদমের চাচাতো বোন। সে মাঝেমাঝে নিজেদের ঘর থেকে চাল চুরি করে এনে নবীতুনকে দিত। মাঝেমাঝে ধান ভানতেও সাহায্য করত। আর ছিলো কদমের এক বন্ধু। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? নবীতুন শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে উপায় না পেয়ে জমিদারের বাড়িতে কাজ নেয়। তখন নবীতুনের উপর নজর পড়ে গ্রামের মাতবরের। সে নবীতুনের নিরীহ অবস্থার কথা জানত। এক বুড়িকে দিয়ে প্রায়ই নবীতুনকে নানা রকমের কুপ্রস্তাব পাঠাতো। কিন্তু নবীতুন কোন ভাবেই সেসব প্রস্তাবে রাজি হয়নি।

az_recorder_20250118_005945.jpg

ইউটিউব থেকে নেয়া স্ক্রিনশট

সবাই ভেবেছে কদম মারা গেছে। আর কখনো ফিরে আসবে না। কিন্তু নবীতুন বিশ্বাস করত, কদম অবশ্যই একদিন না একদিন ফিরে আসবেই। তাই সে সকল প্রকার কুপ্রস্তাব, এমনকি বিয়ের প্রস্তাবও না করে দেয়। এদিকে জমিদারতো আছেই। তার চারিত্রিক কিছু সমস্যা ছিল। সেও নবীতুনকে নানা রকম কুপ্রস্তাবনা দিত। পেট বাঁচানোর তাগিদে নবীতুন মুখ বুঝে সব সহ্য করতে। তার আর কোন উপায় ছিল না।

এদিকে, হঠাৎ করেই কদমকে দেখা যায় সে জেলখানায় বন্দি। মাদক চোরাচালানে ধরা খেয়ে বাঁচার জন্য এক মাদক কারবারি তাকে ফাঁসিয়ে দেয়। যার কারণে বিনা দোষে দীর্ঘ পাঁচ বছর কদম জেলখানায় বন্দি থাকে। সে জানতেও পারেনি নবীতুনের জীবনে কি বিপর্যয় যাচ্ছে! জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সবাই তাকে বলেছিল, গ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্য। কারণ নবীতুন হয়তো তার জন্য এখনও অপেক্ষা করছে। কিন্তু কদম ঠিক করেছে কিছু পয়সা-কড়ি নিয়েই সে ফিরে যাবে। তাই আবারো জাহাজে কাজ নেয়।


az_recorder_20250118_010247.jpg

ইউটিউব থেকে নেয়া স্ক্রিনশট

এদিকে সেই মাতবর নবীতুনকে ধ*নের চেষ্টা করে। নবীতুন তাকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে দেয়। সে ছিলো কদমের দূর সম্পর্কের মামা। এলাকায় ছিঃ ছিঃ পড়ে যাওয়ার ভয়ে সে বিষয়টা চেপে যায়। কিন্তু প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ হয়ে যায়। এজন্য নবীতুনকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। কদমের চাচাকে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে রাজি করায় তার ছেলের সাথে নবীতুনের বিয়ে দেওয়ার জন্য। কদমের চাচা আক্ষরিক অর্থে নবীতুনেরও অভিভাবক ছিলো। কিন্তু নবীতুন সে প্রস্তাবে রাজি হয়না। তখন মাতবরের প্ররোচনায় একটি শালিশ বসে। সেখানে নবীতুনের মতামত না নিয়েই কদমের চাচাতো ভাইয়ের সাথে নবীতুনের বিয়ে ঠিক করা হয়।

az_recorder_20250118_004449.jpg

ইউটিউব থেকে নেয়া স্ক্রিনশট

এদিকে ঘটে আরেক কান্ড। কদম নতুন করে জাহাজে চাকরি নিয়ে আবারো নবীতুনকে টাকা পাঠায়। পোস্টমাস্টার ঘটনাটা মাতবরকে জানায়। মাতবর ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু সে ফন্দি করে বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য। পাঠানো টাকা তারা দুজন ভাগ-বাটোয়ারা করে খেয়ে ফেলে। নবীতুনের সাথে কদমের চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের দিনও ঘনিয়ে আসে।

az_recorder_20250118_010553.jpg

ইউটিউব থেকে নেয়া স্ক্রিনশট

কিন্তু কথায় আছে সব দুঃসময়েরই শেষ আছে। তেমনটাই হয় নবীতুনের জীবনে। যেদিন তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, তার আগের রাতে কদম ফিরে আসে। পরদিন সকালে সবাই কদমকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। নবীতুন, তার মেয়ে এবং কদমের চাচাতো বোনের মুখে হাসি। তারাই কেবল খুশি হয় কদমে ফিরে আসায়।

az_recorder_20250118_010649.jpg

ইউটিউব থেকে নেয়া স্ক্রিনশট

কিন্তু মাতবর প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ হয়ে যায়। সে কদমের চাচাতো ভাইকে লোভ দেখিয়েছিল যাতে বিয়ের পর নবীতুনের সাথে সে অবৈধ সম্পর্ক করতে পারে। যখন হয়নি তাই সে কদমের কাছে নানা রকমের মিথ্যা কথা বলে নবীতুনের নামে। নবীতুন জমিদার বাড়িতে কাজ করেছিল। সে কদমকে বলে নবীতুন তখন জমিদারের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করেছে। কদম এ কথা শুনে রেগে যায় এবং নবীতুনকে জিজ্ঞাসা করে। নবীতুন কোন কথারই জবাব দেয় না। কদম জানতে চায় কেন সে জমিদার বাড়িতে কাজ করেছে? কারণ সে প্রতি মাসে টাকা পাঠাতো। নবীতুন কখনোই বলেনি যে সে কোন টাকাই পায়নি গত পাঁচ বছর ধরে। কারণ তার ধারণা ছিল কদম জানে কেন সে জমিদারের বাড়িতে কাজ করেছিল। কিন্তু কদম জানতো না তার পাঠানো টাকা নবীতুনের কাছে এসে পৌঁছায়নি। তাদের মধ্যে দিনকে দিন দূরত্ব তৈরি হয়।

তাছাড়া কদম আসার পর নবীতুন গর্ভবতী হয়। তখন মাতবর কদমকে বলে, এ সন্তান কদমের না, বরং জমিদারের। কদম রেগে যায় আর নবীতুনকে মার-ধর শুরু করে। সেদিন রাতে বেশ বড় রকমের একটি জলোচ্ছ্বাস হানা দেয় উপকূলে। সবাই জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচার জন্য নানান দিকে ছুটে যায়। নবীতুন,কদম এবং তাদের মেয়ে একটা গাছের ডালে আশ্রয় নেয়। সেরাতে তারা ভেবেছিল তাদের জীবনের শেষ রাত। তখন নবীতুন সব ঘটনা কদমকে খুলে বলে। তখন কদম বুঝতে পারে কি ভুলটাই না সে করেছে নবীতুনকে বিশ্বাস না করে। সে সিদ্ধান্ত নেয়, বেঁচে থাকলে মাতবরকে নিজের হাতে খুন করবে। কিন্তু তার আর দরকার হয় না। জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাতবরের দোতলা বাড়িতে একটি সাপ উঠে। বিষাক্ত সাপের ছোবলে মাতবর মারা যায়। পরদিন সকালে লাশের পর লাশ পড়ে থাকে। নবীতুন কাউকেই খুঁজে পায় না। খুঁজতে খুঁজতে একসময় কদমকে জীবিত খুঁজে পায়। তাদের একমাত্র মেয়ে হয়তো কোথাও ভেসে চলে গিয়েছে। তারা দুজন আবার নতুন করে জীবন শুরু।

সারেং বউ মুভিটি নানা কারণে আমার কাছে ভালো লেগেছে। তৎকালীন সময়ে, সারেংদের উপর ভিত্তি করে মুভিটি নির্মাণ করা হলেও বর্তমানেও এই মুভিটির গল্পের কোন পরিবর্তন হয়নি। সারেংদের জায়গায় আমরা কেবল প্রবাসীদেরকে বসালেই, বর্তমান সমাজে মুভিটির অর্থবহতা এবং বাস্তবতা খুঁজে পাব। অসাধারণ একটি মুভি সারেং বউ। আপনার হাতে যদি সময় থাকে তাহলে ইউটিউব থেকে মুভিটি দেখতে পারবেন। এই মুভিটির কোন ট্রেইলার ইউটিউবে নেই। যার কারনে তার সোর্স এখানে দিতে পারছিনা। তবে নাম লিখে সার্চ করলেই মুভিটির লিংক আপনারা পেয়ে যাবেন।


gif.gif

নিজের সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
Sort:  
 18 hours ago 


az_recorder_20250118_011559.jpg

Tweet from own a/c


az_recorder_20250118_011620.jpg

CoinMarketCap Post


az_recorder_20250118_011638.jpg

DEX + Others Vote Screenshot

 11 hours ago 

অসহায় নারীর সংগ্রামী জীবন - মুভি রিভিউ করেছেন দেখে বেশ ভালো লাগলো। আপনার রিভিউটি পড়ে মনে হচ্ছিল যেন আমি মুভিটি লাইভ দেখতেছি। আপনার রিভিউটি পড়ে মনে হচ্ছে যে মুভির কাহিনী অনেক সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর। এতো সুন্দর একটি মুভি রিভিউ শেয়ার করেছেন এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।