ঢাকা শহর এবং কালো পানির বুড়িগঙ্গা ও অন্যান্য তিন নদী।
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে একটি হতাশাজনক বিষয় নিয়ে কথা বলব। তা হচ্ছে আমাদের ঢাকা শহরের চারপাশের দূষিত নদী এবং আমাদের সকলের প্রিয় ঢাকা শহর।
আপনি পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোন বড় শহর দেখাতে পারবেন না, যেই শহর কোন নদী বা সমুদ্রের তীরে অবস্থিত নয়। অর্থাৎ, পৃথিবীতে যতগুলো বড় শহর রয়েছে সবগুলো শহর কোন না কোন নদী অথবা সমুদ্রের তীরে অবস্থিত। এর অন্যতম একটি বড় কারণ হচ্ছে, জলপথ দিয়ে যাতায়ত সুবিধা এবং সমুদ্র থেকে জীবিকা আহরণ করার অফুরন্ত সুযোগ। এদুটি কারণে নদী এবং সমুদ্রের প্রয়োজনীয়তা বহুকাল আগে থেকেই মানুষের মধ্যে রয়েছে। তাই নদী/সমুদ্রের তীরেই বসতি গড়ে উঠেছে।
এবার চলুন আমাদের রাজধানীর ঢাকা শহরের দিকে তাকাই। ঢাকা শহর একটি কিংবা দুটি নয়, বরং চার-চারটি নদী দ্বারা বেষ্টিত। বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা এবং তুরাগ; এই চারটি নদী চারদিক থেকে ঢাকা শহরকে ঘিরে রয়েছে। ঢাকা শহরের ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি স্থান এবং বাজারের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে যেকটির নাম আমাদের মনেপড়ে তা হচ্ছে, কেরানীগঞ্জ, বউবাজার, বাবুবাজার, চকবাজার, গাবতলী, টঙ্গী, ইত্যাদি। খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, এই সবগুলো স্থানই কিন্তু কোন না কোন নদীর তীরে অবস্থিত। অর্থাৎ এই বাজারগুলো নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরেই সেখানে আনাগোনা রয়েছে মানুষের।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, যারা এই নদীর সুফল ভোগ করছে তারাই নদীগুলোকে মেরে ফেলতে সবার আগে রয়েছে। আমরা যদি নদীগুলোর দিকে তাকাই, বিশেষ করে ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গার দিকে যদি তাকাই তাহলে বেশ হতাশ হতে হয়। কেবলমাত্র ঢাকা কেন, সমগ্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক ঘাঁটি এই বুড়িগঙ্গা নদীর তীর। এমন কোন জিনিস নেই বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরে পাওয়া যায়না। এই বুড়িগঙ্গা নদীরই কোন যত্ন নেওয়া হয়না। বুড়িগঙ্গা নদীর পানির দিকে তাকালে আপনার মনেহবে হয়তো এগুলো আলকাতরা। আমার ধারণা, আলকাতরাও এত কালো হয় না যতটুকু কালো বুড়িগঙ্গার পানি। ডাস্টবিন থেকেও এত গন্ধ আসে না যতটুকু গন্ধ বুড়িগঙ্গা নদীর পানি থেকে আসে। বুড়িগঙ্গা নদীতে আমার মনে হয়না গত কয়েক শতাব্দী ধরে কোন মাছ রয়েছে। এত নোংরা পানিতে কোন মাছ থাকার প্রশ্নই আসেনা! পানির উপরের সারফেস থেকে নিচের দিকে দু-ফুট পর্যন্ত সূর্যের আলো এবং অক্সিজেন পৌঁছায় কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।
একই অবস্থা ছিল পার্শ্ববর্তী শীতলক্ষ্যা নদী এবং টঙ্গীর তুরাগ নদীর। যদিও কয়েক বছর আগে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদী এবং গাবতলীর বুড়িগঙ্গা নদী কিছুটা পরিষ্কার করা হয়, কিন্তু মূল বুড়িগঙ্গাকে পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। সরকারি উদ্যোগগুলো বারবার বিফল হয়েছে।
যে নদী আমাদের জীবন বাঁচায়, যে নদী আমাদের জীবনযাত্রাকে উন্নতির পথে নিয়ে যায়, সে নদীকে আমরা বাঁচানোর চেষ্টা করিনা। বরং, বেশিরভাগ মানুষেরই মনেহয় এই নদীগুলা না থাকলেই যেন আমাদের জন্য ভালো হতো। একবারও কি তারা ভেবে দেখেনি, এই নদীগুলো যখন থাকবে না তখন কেমন হবে আমাদের দেশ? কেমন হবে আমাদের জীবনযাত্রা?
নদী গুলির নাব্যতা বৃদ্ধি করে তার শুদ্ধিকরণ করা দরকার বলেই আমার মনে হয়। আসলে নদী যদি মরে যায় তাহলে শহরের মধ্যেও সেই দূষণ আসতে শুরু করে। আর প্রত্যেকটি নদী থেকে শহরের মানুষেরা অনেক সুফল লাভ করতে পারে। তাই শহরের পাশে প্রত্যেকটি নদীকে পরিষ্কার করেই রাখা উচিত। সেক্ষেত্রে বাস্তুতন্ত্র রক্ষা হয়। কলকাতায় গঙ্গার ধারে অবস্থিত। যদিও কলকাতা পৌরসভা থেকে গঙ্গা দূষণ রোধ করতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই গঙ্গায় জল এখনো পরিষ্কার আছে।
আমাদের দেশেও উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশাল বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এর পর আর না বলি। পরে কমিউনিটির রুলসের বাইরে চলে যাবে কথা।
বর্তমান সময়ে বুড়িগঙ্গা নদীর মতো ঐতিহ্যবাহী নদী গুলো অব্যবস্থাপনার কারণে দিন দিন এ সমস্ত নদী নব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে এ সমস্ত নদীর পানি একেবারেই দূষিত হওয়ার পরে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের দেশের সরকারে উচিত আমাদের দেশের এরকম গুরুত্বপূর্ণ নদী গুলো বাঁচানোর জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একই সাথে আমাদের সকলকে আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিত। যাতে এরকম নদী গুলো পূর্বের মতো তার প্রাণ ফিরে পায়।
ঠিক বলেছেন ভাই। সরকার এবং আমাদের পজিটিভ মনোভাবই নদীগুলোকে রক্ষা করতে পারে। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।