জেনারেল রাইটিং - মায়া এবং এক হিজড়ার গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ9 days ago (edited)

আসালামুআলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি কথা বলব মায়া এবং ভালোবাসা নিয়ে।


pexels-pixabay-34761.jpg

Photo by Pixabay

আমি যে ফার্মেসিতে কাজ করি সেখানে প্রতি সপ্তাহে একজন হিজড়া সাপ্তাহিক চাঁদা কালেকশনের জন্য আসে। দীর্ঘদিন আসার ফলে তার সাথে আমাদের একটা ভালো সম্পর্ক হয়। তিনি আমাদের দোকানে বসে গল্প-সল্প করেন। একদিন তার পরিবার সম্পর্কে কথা হয়। তিনি জানান মাঝেমধ্যে তিনি তার গ্রামের বাড়িতে যান। সেখানে তার বাবা-মা থাকেন। তাদের সাথে দেখা করেই তিনি চলে আসেন। এখানে আসলে চমকপ্রদ কিছুই নেই। চমকপ্রদ বিষয়টা হচ্ছে তার স্বামী নিয়ে।

একজন হিজড়ার স্বামী আছে এটাই অনেক বিস্ময়কর একটি তথ্য। কিন্তু যখন জানতে পারি তাদের সংসার জীবন বহু বছরের তখন অবাক হয়ে যাই। তিনি আমাদের সাথে আরো অনেক কথাই শেয়ার করেছেন। তিনি তার স্বামীকে অনুরোধ করেছেন আরো একটি বিয়ে করার জন্য। কারণ তিনি সন্তান জন্মদানে অক্ষম। তবুও তার স্বামী বিয়ে করেনি।

তার স্বামী যে বসে বসে তার আয় ভোগ করে এমনটাও নয়। তার স্বামী একজন নাপিত। নিজেই আয়-রোজগার কতেন। তারা একসাথেই থাকে। যখন জানতে চাইলাম, আপনার স্বামী কেন আরেকটা বিয়ে করতে আগ্রহী নয়? তখন তিনি বলনে, তিনি আসলে জানেন না। তার স্বামীর হয়তো তার প্রতি এক ধরনের মায়া জন্মে গেছে। এটা তাদের দীর্ঘদিন একসাথে থাকার ফল।

এমনটাই তো হয়। যখন কারো প্রতি কারো মায়া কিংবা ভালোবাসা কাজ করে তখন নিজের সুবিধা-অসুবিধার কথা মানুষের মাথায় আসেনা। নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দেয় মায়া-মমতার খাতিরে। মায়া খুব অদ্ভুত জিনিস। যখন কারো প্রতি কারো মায়া কাজ করে, তখন অন্য কোন নিয়ম, আইন-কানুন, বিধি-নিষেধ কাজ করে না। মায়া আছে বলেই পৃথিবী এখনো টিকে আছে, মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক, মানবতা টিকে রয়েছে। সবার অবশ্য সমান মায়া নয়। কেউ কিছুটা রুক্ষ, বদ মেজাজি কিংবা মনে হয় তার কোন দয়া মায়া নেই। কিন্তু খোঁজ নিলে জানা যায় অন্য কোন কিছুর প্রতি তার মায়া রয়েছে। সেটা হয়তো মানুষ নয়, অন্য কোন প্রাণী। কিংবা কোন জড় বস্তু।

আমি একজন গাড়িচালককে চিনি যিনি পরবর্তীতে অনেকগুলো গাড়ির মালিক হয়েছেন। কিন্তু তিনি তার প্রথম গাড়িটি বিক্রি করেননি। তা তিনি তার নিজ বাসভবনে রেখে দিয়েছেন। গাড়িটি এখন আর কোন কোন কাজে লাগে না মনে হয় যেন জাদুঘরে তুলে রাখা কোন বিষয়। এ বিষয়ে তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই গাড়িটির কারণেই তার এত কিছু হয়েছে। গাড়িটিকে তিনি খুব ভালোবাসেন। তিনি চান তার মৃত্যুর সময় যেন গাড়িটি তার সামনেই থাকে। এজন্য তিনি গাড়িটিকে হাতছাড়া করতে চান না। গাড়িটি বিক্রি করে কত টাকাই বা তিনি পাবেন? কিন্তু তার চেয়ে বেশি তাকে এই গাড়িটি দিয়েছে। বস্তুত তার সবকিছুই এই গাড়িটি তাকে দিয়েছে। এ কারণে তিনি গাড়িটি বিক্রি না করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন।

এমন উদাহরণ পৃথিবীতে হাজার হাজার রয়েছে। অতিরিক্ত মায়ার কারণে সন্তান বখে গিয়েছে; পিতা মাতার কোন কথা শোনে না, তাদেরকে মানে না। কিন্তু তারপরও পিতা মাতা সে সন্তানের বিপক্ষে যায় না, তাকে হাতছাড়া করতে চায় না। এটাই মায়া, এটাই ভালোবাসা। মায়ার কাছে কোন আইন নেই, বিচার নেই, অভিযোগ নেই। কেবল আছে অপরিসীম ভালোবাসা।


file-Xir2RQ6EoSNYI6Jd4joBoqzk.webp

নিজের সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
Sort:  
 8 days ago 

ভাইয়া আপনার লেখায় কিছু ছোট ছোট ভুল আছে, আশা করছি এগুলো আরেকবার দেখে ঠিক করে নিবেন। আসলে মায়া এমন একটা জিনিস যেটা কোনো কিছুই মানে না। একটা মানুষ যেরকমই হোক না কেন, তার প্রতি যদি মায়া একবার জন্মে যায়, তাহলে তাকে আর ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। আপনি যে হিজড়ার গল্পটা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন, তার কথা শুনে আমার নিজের কাছেও অদ্ভুত লেগেছে বিষয়টা। অনেক ভালো লাগলো আপনার এই পোস্ট পুরোপুরি পড়তে।

 8 days ago 

ধন্যবাদ আপু ভুলের বিষয়টি উল্লেখ করার জন্য। আমি চেষ্টা করি রিভিশন দেয়ার। তবুও কিছু ভুল নজরে আসেনা।

আমার লেখা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। সুন্দর মন্তব্য করেছেন।