সমুদ্র দর্শন এর উদ্দেশ্যে কুয়াকাটা ভ্রমন (শেষ-পর্ব)। ১০% সাই-ফক্স।
দুদিন ঘোরাফেরার পর শেষ দিন আর তেমন কোথাও যাইনি। সকালের দিকে সৈকতে গিয়েছিলাম। তারপর ফেরার জন্য গোছগাছ করছিলাম। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা দেরি হওয়ার কারণে আমরা দুপুরের বাসটা মিস করি। তারপর টিকিট কেটে সন্ধ্যার বাসে আমরা ফিরে আসি। দেখতে দেখতে চোখের পলকে প্রায় তিনটি দিন কেটে গেলো। দৈনন্দিন জীবন থেকে ছুটি নিয়ে তিনটি দিন বেশ আরামেই কাটিয়েছি। ঘোরাফেরা খাওয়া দাওয়া সবকিছু মিলিয়ে চমৎকার কেটেছে দিনগুলো।
এখন আমি আপনাদের কে এই ট্যুর এর সমস্ত খুঁটিনাটি তুলে ধরবো। কোথায় থাকবেন, কি খাবেন, কোথায় ঘুরবেন, কেমন খরচ হবে। এ সমস্ত কিছু সম্বন্ধে আপনাদের একটি ধারণা দেবো। যাতে আপনারা কেউ কুয়াকাটায় ঘুরতে আসলে এই তথ্যগুলি আপনাদের কাজে লাগে।
যাতায়াত ব্যবস্থা |
---|
যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে আসলে নতুন করে বলার কিছু নেই যেখান থেকে যেভাবে আসা যায় আপনারা সেভাবেই আসবেন। তবে আমরা গিয়েছিলাম বাসে করে।আমাদের শহর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত কোন এসি বাস পায়নি। তাই আমরা নন এসি বাসেই গিয়েছিলাম। আমাদের শহর থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার। আমাদের ভাড়া পড়েছিল ৬০০ টাকা সিট প্রতি। আপনি বাংলাদেশের যে প্রান্ত থেকে এখানে আসতে চান দূরত্ব অনুযায়ী আপনাকে ভাড়া দিতে হবে।
কোথায় থাকবেন |
---|
কুয়াকাটায় থাকার জন্য প্রচুর হোটেল-মোটেল রিসোর্ট এগুলি রয়েছে। বিভিন্ন প্রাইস রেঞ্জ এর হোটেল রয়েছে আপনাদের জন্য এখানে। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত রুমের হোটেল রয়েছে। তবে কুয়াকাটায় আমি যে জিনিসটি দেখেছি সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের অন্য জায়গা থেকে এখানকার হোটেল ভাড়া তুলনামূলক কম। আপনি এখান দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকার ভিতরে ভালো মানের রুম পেয়ে যাবেন। আমরা যে রুমে ছিলাম রুমটি বেশ বড়ো ছিলো।সেখানে দুটো সেমি ডাবল বেড ছিলো। রুমে এসি ছিলো, বাথরুমে ঠান্ডা পানি গরম পানির ব্যবস্থা ছিলো। রুমের ভাড়া পড়েছিল মাত্র ১৩০০ টাকা। যদিও অফ সিজন হওয়ার কারণে আমরা এত কম ভাড়ায় এরকম একটা রুমে থাকতে পেরেছি। পিক সিজনে এই রুমের ভাড়া গুনতে হবে আপনাকে ৩০০০ টাকা। কোথাও ঘুরতে গেলে এই ব্যপারটা জানা খুব জরুরী। আপনি যদি পিক সিজন এ কোথাও যান তখন আপনাকে অনেক বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে। সবকিছুর দাম আপনাকে বেশি দিতে হবে তখন। কিন্তু অফ পিকে গেলে তখন আপনি সবকিছুতেই অনেক ছাড় পাবেন। আমার কাছে বাংলাদেশের মানুষ জনের একটি অভ্যাস খুবই অদ্ভুত লাগে। তারা সমুদ্রের পাড়ে ঘুরতে যায় শীতের সময়। আমার কাছে মনে হয় সমুদ্র পাড়ে ঘোরার সবচাইতে ভালো সময় হচ্ছে গরমের সময়টা। কারণ তখন আপনি সমুদ্রের পাড়ে বসে অনেক মজা পাবেন। আর সমুদ্রে দীর্ঘক্ষন গোসল করতে পারবেন। যদিও এটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত।
কি এবং কোথায় খাবেন |
---|
কুয়াকাটায় খাবারের খুব বেশি বৈচিত্র নেই। এখানে মাঝারি মানের বেশ কিছু হোটেল রেস্টুরেন্ট আছে। সেখান থেকেই আপনাদেরকে খেতে হবে। হোটেল গুলোতে সাধারণ খাবারই বেশি পাওয়া যায়। যেমন ভাত, মাছ, মাংস, খিচুড়ি, বিরিয়ানি এগুলি। অবশ্য আমি চলতি পথে একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টও দেখেছি। আবার এখানে কিছু ভালো মানের হোটেল আছে যাদের নিজেদের রেস্টুরেন্ট আছে। সেখান থেকেও আপনারা খেতে পারেন। তবে বাইরের মাঝারি মানের হোটেল গুলো থেকে খেতে আপনার একবেলায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হবে। অবশ্য এর থেকে কমে খাওয়ারও ব্যবস্থা আছে। আবার আপনি চাইলে ভালোমানের কোন হোটেলের রেস্টুরেন্ট থেকে এর থেকে বেশি খরচেও খেতে পারেন।
কোথায় ঘুরবেন এবং কেমন খরচ হবে |
---|
এখানেও একই কথা প্রযোজ্য। এটা অনেকটা নির্ভর করে আপনি কখন যাচ্ছেন তার উপরে। যদি আপনি আমাদের মত অফ-সিজনে যান তাহলে অনেক কম টাকায় ঘুরে আসতে পারবেন। আর যদি পিক সিজনে যান তাহলে আপনাকে একটু বেশি টাকা খরচ করতে হবে। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখার তিনটি ব্যবস্থা আছে। তবে যে বাহন এর মাধ্যমে ঘুরতে চান আপনাদেরকে তাদের সঙ্গে চুক্তি করে যেতে হবে। তারা আপনাকে দর্শনীয় স্থান গুলির একটি চার্ট দেখাবে। তারপর আপনাকে তাদের সাথে দরদাম করতে হবে। সেখানে পর্যটকরা সাধারণত মোটরসাইকেল, অটো এবং ইঞ্জিন চালিত ভ্যানে করে ঘুরে থাকে। একটি মোটরসাইকেল আপনারা ৮০০ থেকে বারোশো টাকা হলে ভাড়া করতে পারবেন। যে মোটরসাইকেলে করে আপনি কুয়াকাটার সবগুলো দর্শনীয় ঘুরে আসতে পারবেন। অটো ও ভ্যানে কিছুটা কম খরচ পড়বে। কুয়াকাটার গাইডরা আপনাকে অনেকগুলি দর্শনীয় স্থানের কথা বলবে। আসলে এটা অনেকটাই ফাঁকা বুলির মতো।এরা আপনাকে বিচ ধরে একদিকে নিয়ে যাবে আর এক একটা অংশের তারা এক একরকম নাম বলবে। সেগুলোকেই তারা পর্যটন স্পট হিসেবে দাবি করছে। সেখানে যে জায়গাগুলো আপনাদের ভাল লাগতে পারে সেগুলো হচ্ছে লাল কাকড়ার চর, লেবুর চর, তিন নদীর মোহনা, আর ঝাউবন। এছাড়া আছে ফাতরার বন নামের একটি জায়গা। কিন্তু সেখানে আমার যাওয়া হয়নি। যার ফলে সে জায়গা সম্বন্ধে আমার খুব একটা ধারণা নেই। তবে শুনেছি সেখানে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার করে যেতে হয়। আরো কিছু দর্শনীয় স্থান আছে সেটা আপনার কুয়াকাটা গেলেই জানতে পারবেন।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য |
---|
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আপনি সময় কাটাতে চাইলে আপনাকে চেয়ার ভাড়া করতে হবে। সেখানকার নরমাল কাঠের চেয়ার আছে। যেগুলো ৩০ টাকা ঘন্টা হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়। আর কিছু চেয়ার আছে যেগুলো কাঠের উপরে এক ধরনের গদি দেয়া আছে। সেগুলোর ভাড়া ঘণ্টাপ্রতি ৪০ টাকা। এই চেয়ারগুলো বেশ আরামদায়ক। এখানে বসে আপনি সন্ধ্যার পরে বা বিকাল বেলায় সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সৈকতের এই চেয়ারগুলোর ঠিক পেছনেই রয়েছে ফিশ ফ্রাই এর দোকান গুলি। সেখানে সন্ধার পরে বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে পর্যটকদের আনাগোনায়। সেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দমত মাছ ভেজে খেতে। পারেন বিচ এর আশেপাশেই বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করার দোকান পেয়ে যাবেন। আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন সেখানে পাবেন। তেমনি আদিবাসীদের তৈরি নানা রকম জিনিসপত্রও সেখানে পাবেন। সেখানে বিভিন্ন রকম চকলেট, আচার শামুক ঝিনুক দিয়ে বানানো বিভিন্ন রকমের গহনা আরো অনেক কিছু পাবেন। দাম মোটামুটি সাধ্যের ভেতরে। তবে আপনারা কেউ কুয়াকাটা যেতে চাইলে চেষ্টা করবেন সমুদ্র সৈকতের সবচাইতে কাছের হোটেল গুলিতে থাকতে। তাহলে আপনাদের ভ্রমণটা আরও বেশি উপভোগ্য হবে।
আজকের মতো এখানে শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | কুয়াকাটা |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
শেষ পর্বে এত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিবেন সেটা জানতাম না। আসলে কোথাও গেলে আমরা কিভাবে চলব কোথায় উঠবো কেমন হোটেলে যাব কিভাবে কোথায় গেলে ভালো খাবার পাব এগুলো নিয়ে একটু বেশি দুশ্চিন্তা করতে হয়। কিন্তু কুয়াকাটা গেলে আমার মনে হয় দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। কারণ সব তথ্য আপনার মাধ্যমেই পেয়েছি। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর তথ্যগুলো শেয়ার করার জন্য।
আপনাদের যাতে কাজে লাগে সে জন্যই এই তথ্যগুলো দিয়েছি। আশা করি এই পোস্টটা ভালোভাবে পড়লে কুয়াকাটায় গিয়ে আপনাদের কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের আজকে খুঁটিনাটি বর্ণনাগুলো শুনে আমরা বেশ উপকৃত হলাম। আপনার এই গাইডলাইন ফলো করে আমরা অনায়াসেই সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ করে আসতে পারবো আমার তো মনে হয় আমার কোন গাইড এর প্রয়োজন হবে না। আপনার পোস্টটি ফলো করলে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের দর্শনীয় স্থান গুলো খুজে পাব। আপনার কথাগুলো পড়ে যেটা বুঝতে পারলাম অফ পিকে সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যাওয়াটাই ভালো হবে। মাত্র ১৩০০ টাকায় আপনি অনেক ভাল রুম পেয়েছিলেন। আজকের এই পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আমার হিসাবে শীতের দিনে না গিয়ে গরমের দিন সমুদ্র ভ্রমণে যাওয়ার জন্য সবচাইতে ভালো সময়।
অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন ভাই। যদি কখনো কুয়াকাটা যাই কাজে লাগবে। এই পোস্ট টা বুকমার্ক করে রাখলাম। অফ পিক হলেও এসি রুম হিসেবে অনেক কমই পরেছে বলা যায়। আমর সামনে টুর দেওয়ার ইচ্ছা আছে। আপনার অনেক তথ্য কাজে আসবে।
এই পোস্ট করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কুয়াকাটা যারা ঘুরতে যেতে চায় তারা যেন একটা ভাল ধারণা পায়। কুয়াকাটায় হোটেল ভাড়া খুবই কম।
নতুন কোন জায়গায় বেড়াতে গেলে কোথায় থাকা হবে কি খাওয়া হবে এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তা হয়। আপনার দেয়া তথ্যগুলো কুয়াকাটা গেলে অনেকটা ভোগান্তি কমাবে। ধন্যবাদ ভাইয়া এই তথ্যগুলো শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
কোন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই উচিত সে জায়গা সম্বন্ধে যতটুকু পারা যায় তথ্য সংগ্রহ করা। তাহলে ভ্রমণটা অনেক সুন্দর হয়।
শেষের পর্বে আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা শেয়ার করেছেন ভাই। আসলেই এগুলো তাদের জানা উচিত যারা কুয়াকাটা যেতে চায়। আপনার পোস্টটি খুবই ভালো লেগেছে। আর সেখানে গেলে অবশ্যই অফ সিজনে চলে যেতে হবে তাহলে কিন্তু ভালো হবে - যতটুকু আপনার পোস্ট পড়ে বুঝলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই পোস্ট টি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আর আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল।
এই পোস্টটা এভাবে সাজানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে। যারা এই পোস্টটি পড়বে তারা যেন উপকৃত হয়।