জেনারেল রাইটিং || স্মৃতিচারণ : হীরা স্যারের কাছে মার খাওয়ার গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ6 days ago

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই ভালো আছো। আমিও ভালো আছি।

businessman-607788_1280.png

ইমেজ সোর্স

বন্ধুরা, আজকের নতুন একটি ব্লগে তোমাদের সবাইকে স্বাগতম। আজকের এই ব্লগে তোমাদের সাথে স্মৃতিচারণমূলক একটি পোস্ট আমি শেয়ার করবো। আমাদের আসলে অনেক স্মৃতি জমা থাকে। মাঝে মাঝে সেই স্মৃতিগুলো মনে করতে সবারই কম বেশি ভালো লাগে। যদিও আমরা যদি ইচ্ছে করি আমরা অতীতে ফিরে যেতে পারবো না। তবে সেগুলো মনে করলে মনের ভেতর একটু ভালো লাগা কাজ করে, কোন সময় আফসোস লাগা কাজ করে আবার কোন কোন সময় একটু খারাপও লাগে। আমাদের জীবনে আসলে মিশ্র অনুভূতি রয়েছে। এজন্য একেক সময় একেক অনুভূতি আমরা পেয়ে থাকি।

আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন আমার এক টিচারের নাম ছিল হীরা স্যার। সেই স্যার ফেমাস ছিল স্টুডেন্টদের মারার জন্য। অর্থাৎ সেই স্যারের মার খায়নি আমাদের ক্লাসে কেউই ছিল না। শুধু আমাদের ক্লাসে বললে ভুল হবে, সেই টিচারটা যেদিন যে ক্লাসে ক্লাস করাতো সব ছাত্ররাই উনার হাতে মার খেয়েছে। উনি ছিলেন অংকের টিচার। আমি জানিনা আগেও শুনেছি, অংকের টিচাররা নাকি একটু রাগী হয় এবং মারধর করে থাকে। যাইহোক, আমার এই টিচার খুব রাগী ছিল। তাছাড়া আমার এই টিচারের সাথে কোন দুশমনি না থাকলেও এই টিচার আমাকে একটু অন্য চোখে দেখতো। অর্থাৎ কোন কিছু দুষ্টুমি হয়েছে, এরকম হলেই প্রথমে আমাকে ধরতো।

তাছাড়া আরও কয়েকজন টার্গেট করা ছিল স্যারের। কোন কিছু হলেই সেই গ্রুপটাকে দোষারোপ করা হতো। আমরা বন্ধুরা মিলে একবার প্ল্যান করেছিলাম স্যার যখন কিছু স্টুডেন্টকে টার্গেট করে রেখেছে তাই আমরা এবার থেকে দুষ্টুমি করলে সকল স্টুডেন্টরাই দুষ্টুমি করবো। যার ফলে টিচার কাউকেই মারতে পারবে না। তাছাড়া আমাদের ক্লাসের সবার ভিতর সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। যাইহোক, এই টিচার একবার ক্লাসে ক্লাস করাচ্ছিলো, সেদিন তিনি গণিত বোঝাচ্ছিল বোর্ডের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। হঠাৎ করে ক্লাসের সামনে অন্য সেকশন থেকে আমাদের প্রিয় একটি টিচার চলে আসে। সেই টিচারকে দেখে আমরা সবাই মিলে চিৎকার করে উঠি একসাথে।

এই বিষয়টা এই হীরা স্যারের একদমই ভালো লাগেনা। আমরা আসলে একটু আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিলাম। যাইহোক, ওই স্যারের যা কথা ছিল তা বলে যখন উনি চলে যায় তখন হীরা স্যার সবাইকেই বেঞ্চের উপরে দাঁড় করিয়ে দেয় এবং প্রথমে জিজ্ঞেস করে, প্রথম আওয়াজটা কে করেছিল। কিন্তু কেউই স্বীকার করতে চায় না যে প্রথম আওয়াজটা কে করেছে। আসলে সেদিন ঘটনাটা ঘটেছিল প্রথমে একজন জোরে আওয়াজ করে উঠেছিল আর সাথে সাথে অন্য সবাই মিলে আওয়াজ করে উঠেছিল। গ্রুপে আওয়াজ করার কারনে একটা অন্যরকম পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারপর কেউ যখন স্বীকার করে না তখন স্যার মোটা বেত নিয়ে এসে সবাইকেই মারধর করে। সেদিন মার খেয়ে বাড়ি আসার পর আমি পায়ের নিচে দেখি অনেকটা কেটে গেছে। আসলে স্যার প্রচন্ড জোরেই মারতো।

এখনকার টিচাররা হয়তো মারে না। কিন্তু আমাদের সময় আমরা অনেক মারই খেয়েছি। আর সেদিন ক্লাসে প্রত্যেকেই মার খেয়েছিল ভালো খারাপ সব স্টুডেন্ট। এই দিনটি আমাদের সবার কাছেই একটি স্মরণীয় দিন ছিল। কারণ এই দিনে স্যারের হাত থেকে কেউই রক্ষা পায়নি আমরা। স্যার হয়তো রাগের কারণেই এই কাজটা করেছিল কিন্তু যারা নির্দোষ ছিল তারাও এই মার খাওয়া শিকার হয়েছিল। এই ঘটনা স্কুলেও ছড়িয়ে যায় আর স্যারের ইমেজটা খারাপ হয় তখন। যাইহোক, তারপর থেকে কিছুদিন সবাই আমরা শান্ত ছিলাম এই স্যারের ক্লাসে। অনেকে আবার এই স্যারের ক্লাস করতেও চাইতো না কিন্তু না করলেও বিপদ ছিল। সেদিন স্যারের কাছে যে মারটা খেয়েছিলাম অনেক বছর ধরে সেই দাগটা ছিল। হঠাৎ করে আজ সেই স্যারের কথা মনে পড়ল তারপর সেই স্যারের মার খাওয়ার গল্পটা মনে পড়ে গেল। তাই তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম এই ঘটনাটা।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আজকের এই ব্লগটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Cztq4BXWMFDxHzEZ2QSjxVFnsLBz27bskZMejC9cirzQ85MEJGtsm5hWaJuVngdv1B8bhQpR5JgyziewifDDtchB1uutEvCix5Baq3Kow4...HrFndeckgAdeTczZ2yUT7qZT9QggvS7DoC3cSHRK8Lzudd6HuVHjDihDS6QPqWcngTpkHr1F52teScwfJVJxW9smoQ3vTKGFmo3gcczEtpXXewE2NrM7wpofj.webp

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.