কুঞ্জবিহারীর নিকুঞ্জ - পর্ব ০৫

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


copyright free image source pixabay

চতুর্থ পর্বের পর


পাঁচ


কুঞ্জবাবুদের বাড়ির পিছনদিকটা ।

এদিকটা মূল বাড়ির থেকে বেশ কিছুটা বিচ্ছিন্ন এবং ঘন গাছগাছালি আচ্ছাদিত । আসলে এক সময় এটা বিশাল একটি বাগান ছিল । পুরোনো জমিদার বাড়িতে যেমনটা থাকে । কুঞ্জবাবুর ঠাকুরদা তো ছিলেন ডাকসাইটে জমিদার । তিনিই এই বিশাল বাগানটা দেড়মানুষ সমান উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন । তাঁর মৃত্যুর পর আর সে ভাবে বাগানের পরিচর্যা করার কেউ না থাকাতে এখন এটি একটি ছোটোখাটো জঙ্গলে পরিণত হয়ে গিয়েছে ।

এই বাগানটির ঠিক মাঝখানে রয়েছে বিশাল একটি প্রাচীন পুকুর । অবশ্য পুকুর না বলে তাকে দীঘি বলাই সমীচীন হবে । বিশাল দীঘির এক পাড়ে খুবই জরাজীর্ণ বিশাল একটি বাঁধানো ঘাট রয়েছে । ঘাটটি এখন পরিত্যক্ত । অপর তিন পাড় অসংখ্য ঝোঁপঝাড়ে ছেয়ে রয়েছে । দীঘির পশ্চিমপাড়ে একটি বিশাল বুড়ো বট তার অসংখ্য ঝুরি নামিয়ে ডাল পালা বিস্তার করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার তলেই রয়েছে ছোট্ট একটা একতলা টালির ছাদ দেওয়া ঘর । এটি একসময় ছিলো বাগানের মালীদের থাকবার ঘর । এখন সে-খানা কিছুটা সাফসুতরো হয়ে কুঞ্জবাবুর ল্যাবরেটরী হিসাবে রূপান্তরিত হয়েছে ।

বাপ হরনাথবাবুর ভয়ে এই স্থলে আমাদের ক্ষণজন্মা বিজ্ঞানসাধক কুঞ্জবাবু তার মারাত্মক সব বৈজ্ঞানিক এক্সপেরিমেন্ট আর আবিষ্কারগুলি নিরিবিলিতে করে থাকেন । ভারী নিরিবিলি জায়গা । কাজকর্মে কোনো বিঘ্ন হওয়ার ভয় থাকে না । কুঞ্জবাবু একমনে রাত সাড়ে ন'টা অব্দি এখানে নানান ধরণের এক্সপেরিমেন্ট চালান ।তাঁর অবশ্য খুবই ইচ্ছে অনেক গভীর রাত পর্যন্ত বিজ্ঞান সাধনা করা । কারণ তিনি বইয়ে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা রাত জেগে ল্যাবরেটরী-তে কাজ করেন । কিন্তু, বাপ হরনাথবাবুর ভয়ে সেই কাজটি এখনো পর্যন্ত করে উঠতে পারেননি । হরনাথবাবুর কড়া শাসন - রাত দশটায় ঘুমিয়ে পড়তে হবে । তাই মনের ব্যাথা মনেই চেপে রাত সাড়ে ন'টা অব্দি একমনে বিজ্ঞান সাধনা করে দুটি নাকে মুখে গুঁজে শুয়ে পড়েন ।

আজ কিন্তু ব্যতিক্রম হলো । রাত ১১ টা বাজে । প্রকান্ড একটা টেবিলের উপরে নির্জীবের মতো কুকুরটা পড়ে আছে । তার ঠিক উপরে কড়া বৈদ্যুতিক আলো ঝুলছে । টেবিলটা ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন হরনাথ বাবু, কুঞ্জবাবু, গায়ের একমাত্র আলোপ্যাথ ডাক্তার বাবুলাল মিত্তির আর হারান মাস্টার ।

বাবুলাল তন্নতন্ন করে খুঁজেও কুকুরটির দেহের মধ্যে কোথাও বুলেটের অস্ত্বিত্ব খুঁজে পায়নি । তার মানে চারটে গুলিই দেহ ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে । একটি গুলি পাঁজরার ফাক দিয়ে ঢুকে লাংস ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে । খুবই মারাত্মক আঘাত । মৃত্যু হওয়ার কথা সঙ্গে সঙ্গেই । কিন্তু, কি আশ্চর্য প্রাণশক্তি এই কুকুরটির ।

উপরন্তু বাবুলাল বুলেটের বদলে একটি কম্পিউটার চিপ বের করে আনলো ক্ষতস্থানের গভীর থেকে । চিমটে দিয়ে যখন সে টেনে বের করছিলো প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন ওটা বুলেটের কোনো অংশ । কিন্তু, সম্পূর্ণ বের করে আনার পর রক্তমাখা জিনিসটা একপলক দেখেই সবাই বুঝতে পারলেন সেটা আর যাই হোক কোনো বুলেটের অংশ নয় । হরনাথ বাবু আর্মির একজন প্রাক্তন কর্নেল । আগ্নেয়াস্ত্র ভালোই চেনেন । তিনিই দেখার সঙ্গে সঙ্গে বলে দিলেন জিনিসটা আর যাইহোক কোনো বুলেট বা বোমার স্প্লিন্টারের অংশ নয় ।

ভীষণ উত্তেজিত হয়ে কুঞ্জবাবু বলে উঠলেন -

"আরে ! এ দেখছি একটি মাইক্রো চিপ !!"

"মাইক্রো চিপ !!! সেটি আবার কি বস্তু ?" - হরনাথ বাবু শুধোলেন ।

"আজ্ঞে বাবা, এটি একটি কম্পিউটার এর ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ । দাঁড়ান আপনাদের দেখাচ্ছি ।" - এই বলেই কুঞ্জবাবু বইয়ের তাক থেকে একটি কম্পিউটার সায়েন্স পত্রিকা বের করে আনলেন । নিয়মিত তার বড়ছেলে শহর থেকে এই পত্রিকা তাঁকে এনে দেয় । ক্ষিপ্র হাতে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে তিনি একটি ছবি বের করে ফেললেন ।

তারপরে সেটি আর সবাইকে দেখালেন । সবাই অবাক এবং হতভম্ব । হরনাথবাবু এক জন চাকরকে জিনিসটা পুকুর থেকে ধুয়ে আনতে বললেন ।

এর মধ্যে কুকুরটি আবার মাথা নাড়তে শুরু করেছে , সাথে ল্যাজও নাড়াচ্ছে ।ক্ষিপ্র হাতে ক্ষতস্থানগুলি ভালো করে ডেটল জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল বাবুলাল । রক্তপাত আগেই বন্ধ করা গেছিলো । এখন বেটাডিন এন্টিসেপটিক ভালো করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে । প্রতিদিন একবার করে ড্রেসিং করে আবার বেটাডিন লাগালে দিন দশেকের মধ্যে কুকুরটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে বলেই তার ধারণা - বললো বাবুলাল ।

ইতিমধ্যে রক্তমাখা চিপটি পরিষ্কার করে এনেছে রামু নামের চাকরটি । টেবিলের উপরে ঠিক আলোর নিচে জিনিসটা রেখে সবাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন ।

এক ইঞ্চির মাত্র চার ভাগের এক ভাগ ক্ষুদ্র গোলাকার একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট । অনেকটা ট্রান্সিস্টারের মতো দেখতে । তবে সার্কিট বোর্ডের ভিতরের যন্ত্রাংশ এতোই ক্ষুদ্র যে ম্যাগনিফাইং গ্লাস লাগবে দেখতে ।সার্কিটটার অভ্যন্তরেই কোথাও অজানা বিদ্যুৎ শক্তির যোগান আছে । কারণ, হঠাৎ-ই চিপটির এক প্রান্তে একটি লাল LED একবার দপ করে জ্বলে উঠেই নিভে গেলো ।

সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে কুঞ্জবাবুর মাথায় একটি জিনিস খেলে গেলো । তিনি হঠাৎ করে বলে উঠলেন -

"সর্বনাশ !!!"


[ক্রমশ:]

Sort:  
 3 years ago 

দাদা,অনেকদিন পর আপনার এই কুঞ্জবিহারীর নিকুঞ্জের পর্ব পড়লাম।আমার কাছে এই রহস্যময় গল্প পড়তে খুব বেশি ভালো লাগে।আমি পূর্বের সব পর্বই পড়েছিলাম,যা অনেক ভালো লেগেছিল।আমি অবশ্যই চেষ্টা করব পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার।দাদা আর দেরী না করে পর্বগুলো দিয়ে দিবেন,প্লিজ😇😇

 3 years ago 
হরনাথ বাবু, কুঞ্জবাবু, গায়ের একমাত্র আলোপ্যাথ ডাক্তার বাবুলাল মিত্তির আর হারান মাস্টার ।

দাদা আজ বহুদিন পর এই চরিত্রগুলোর কথা মনে পড়ল। আবারো রহস্য ঘেরা গল্পগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করা শুরু করলেন। এই গল্পটির আগের অংশগুলো সম্পূর্ণ ভুলে গেছি তাই গল্পটি পড়ে পুরো মাথার উপর দিয়ে গেল। তবে চারটি গুলি দেহ ভেদ করে বেরিয়ে যাওয়ার পরও কুকুরের মৃত্যু হল না বিষয়টা সন্দেহজনক।আবার কুকুরের পেটে মাইক্রোচিপস থাকাটা আরো বেশি সন্দেহের।এদিকে কুকুর মাথা নাড়াচ্ছে ।সব মিলিয়ে অনেক দিন পর আপনার রহস্য ঘেরা গল্প ভরে ভালো লাগল দাদা ।পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা .....

চমৎকার গল্প লিখেছেন দাদা। সত্যি আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে আপনার এই গল্প গুলো। তবে আগের গল্প গুলো পড়া হয়নি। তাই একটু অসুবিধা হচ্ছে।ধন্যবাদ দাদা এতো সুন্দর গল্প গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল দাদা। 💞💞💞

অনেকদিন পর এই পর্বটি লিখলেন দাদা। এই ধরনের গল্প পড়তে আমার বরাবরি ভালো লাগে। এখন পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

 3 years ago 

"কুঞ্জবিহারীর নিকুঞ্জ" অনেকদিন পরে আবারও নতুন পর্ব পেয়ে আমরা অনেক খুশি হয়েছি দাদা। দাদা আপনি যখন নতুন কোন পর্ব শেয়ার করেন তখন আমরা অনেক আনন্দ পাই। কারণ আপনার লেখাগুলো পড়তে ভালো লাগে। আপনার লেখাগুলোর মাঝে সব সময় অনেক শিক্ষণীয় বিষয় থাকে এবং অনেক ভালো লাগে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আপনার লেখাগুলো যখন পড়ি তখন কখন যে চোখের নিমেষেই শেষ লাইনে চলে আসি তা বুঝতেই পারিনা। আজকের পর্ব পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আশা করছি খুব শীঘ্রই পরবর্তী পর্ব পেয়ে যাবো। দাদা আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। 💝💝💝💝

 3 years ago 

দাদা বেশ অনেকদিন পর "কুঞ্জবিহারীর নিকুঞ্জ" গল্পের পঞ্চম পর্ব পড়ার সুযোগ পেলাম। এই গল্পের আগের সবগুলো পর্ব আমি পড়েছি, প্রতিটি পর্বে রয়েছে রহস্য। যেমন আজকের পর্বটি চিপটির বিশাল বড় রহস্য নিয়ে শেষ হলো, সত্যি দাদা পরবর্তী গল্প জানার জন্য আর তর সইছে না। এ ধরনের রহস্যময় গল্প পড়তে আমার সবসময়ই খুব ভালো লাগে। পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম দাদা। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

সত্যিই দুঃখজনক গল্প

দাদা আপনার গর্পটি বেশ দারুন,পড়তে অনেক ভালো লাগলো্।আগের পর্বের ন্যায় এখনকার পর্বের গুলো অনেক সুন্দর আর উওজেনাময় লাগছে।অনেক ধন্যবাদ দাদা।

 3 years ago 

দাদা কতোদিন পর।😍😍😍
আহা,পড়েই আরাম পেলাম।
কি সর্বনাশ হলো তাই দেখার পালা এবার।
দাদা এবার থেকে এটা কনটিনিউ করে শেষ করবেন কিন্তু প্লিজ।আমার যা ভালো লাগে এই রহস্য গল্প গুলো পড়তে।

Hello @rme, I hope you are doing okay. Kindly consider supporting @Campusconnectng with any amount of steempower delegation.

Campus connect is a growing community of college students around the world. We are focused on promoting steemit on campus and creating a community space for students. We are seriously interested in building our community curation power to at least 100kSP, we appreciate steem power delegations and would offer 0.5Steem/1KSP daily on curation rewards.

We will also appreciate some form of paternship betwwen Campus Connect and your community.

We kindly request your support.

CC @whitestallion