নববর্ষের মেলার স্মৃতি
Creative Commons License, Under Fair Usage Policy: Source Wikimedia
ছোটবেলায় নববর্ষের মেলার বেশ কিছু মধুর স্মৃতি রয়েছে আমার । আমাদের গ্রামে চৈত্র মাস যাওয়ার দিনে চড়ক পূজা বা নীল ষষ্ঠী পুজো হতো । আর এই চড়ক পুজো উপলক্ষে প্রায় এক সপ্তাহ ব্যাপী বিশাল এক মেলা বসতো । নববর্ষের মেলা তাই আর আলাদা করে হতো না । চড়ক পুজো আর নববর্ষ দুটি উৎসব উপলক্ষে এই মেলা বসতো ।
আমাদের গ্রামের পশ্চিম দিকে ছিল বিশাল একটা বহু পুরাতন মিষ্টি জলের দীঘি । এই দীঘির নাম ছিল ঠাকুরানী দীঘি । দীঘির উত্তর পাড়ে শতাব্দী প্রাচীন এক বুড়ো বটগাছের তলে ছিল এক বহু পুরোনো শিব মন্দির । এই শিব মন্দিরেই হতো নীল পুজো বা চড়ক পুজো । আর পুজোর দিনে এবং পরের দিন নববর্ষ উপলক্ষে বিশাল এক মেলা বসতো দীঘির উত্তর-পশ্চিম পাড় জুড়ে । দীঘির পাড় ছিল যেমন উঁচু তেমনি প্রকান্ড । আর দিঘীটাও ছিল অনেক বড় । পায়ে হেঁটে দীঘির চারটে পাড় ঘুরে আসতে সময় লেগে যায় প্রায় ১৫-২০ মিনিট ।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে একবার আমরা দীঘির পাড়ে ঘুরে আসতাম । এই সময়টাতে মেলার প্রায় সব দোকানই বন্ধ থাকতো, খোলা থাকতো শুধুমাত্র মিষ্টির দোকান । গরম গরম জিলিপি ভাজা হতো তখন । আমরাও ছোটরা ভোরবেলা জিলিপির লোভেই যেতুম মেলায় ।
এরপরে বেলা পড়ে এলে সেজেগুজে দলবেঁধে মেলায় হাজির হতুম আমরা সবাই বন্ধুবান্ধব মিলে । ততক্ষণে মেলা ভীষণ জমে গিয়েছে । হাজার হাজার মানুষ মেলায় গিজগিজ করছে । একদম ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সাথেই মেলায় যেতুম । একটু বড় হয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যেতুম । আমার এখনো মনে আছে শিব মন্দিরের পেছন দিকটাতে দীঘির পুরো উত্তর-পূর্ব পাড় জুড়ে মাটির বিভিন্ন জিনিসের মেলা বসতো । মাটির হাঁড়ি-পাতিল-কলসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হরেক রঙের মাটির খেলনা পুতুল উঠতো মেলায় । মাটির কত যে পুতুল উঠতো মেলায় তার ইয়ত্তা নেই । আমি কিনতাম মাটির বাঘ, সিংহ, হাতি, গরু, ঘোড়া, বৌ, স্প্রিং আঁটা ঘাড় নাড়া বুড়ো, মাটির রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, পেঙ্গুইন, ময়ূর আর কত কী !
একবার তো মাটির একটা নৌকা কিনেছিলাম, আর সেটা জলে ভাসাতে গিয়ে টুপ্ করে ডুবে গিয়েছিলো । একবার মাটির একটা ইলিশ মাছ কিনেছিলাম । বেশ বড় সাইজের ইলিশ । মাথার উপরে একটা চ্যাপ্টা ছিদ্র । ওই ছিদ্র দিয়ে পয়সা ঢোকাতে হতো । ইলিশটা আসলে ছিল টাকা জমানোর ঘট ।
বৈশাখী এই মেলায় প্রচুর তালের পাখা বিক্রি হতো । গাঁয়ে তো তখন বিদ্যুৎ ছিল না, তাই গরমে তালের পাখাই ছিল গ্রামের মানুষের নিত্যসঙ্গী । খাবারের দোকানের মধ্যে বেশি ছিল বাদাম, ছোলা-ঘুগনি, তেলেভাজা আর পাঁপরের দোকান । আর ছিল ঘষা বরফ, আইসক্রিম, লেমোনেড আর পানের দোকান । এছাড়া প্রচুর মিষ্টির দোকান আসতো মেলায় । পাওয়া যেত জিলিপি, রসগোল্লা, পান্তুয়া, লেডিকেনি, ছানার জিলিপি, সাদা জিলিপি, রাজভোগ, গজা, বোঁদে, সন্দেশ প্রভৃতি ।
খেলনা আর ছবির দোকানও আসতো প্রচুর পরিমাণে । আমার প্রিয় ছিল খেলনা বন্দুক-পিস্তল । কিনতামও প্রচুর । এছাড়াও প্লাস্টিকের গাড়ি, স্প্রিঙের দম দেওয়া খেলনা গাড়ি আর পুতুলও কেনা হতো । মেলায় সব চাইতে বেশি যে দোকানগুলো আসতো তা হলো মেয়েদের কসমেটিক্স এর দোকান । মেলার বারো আনা ঐসব জিনিসের দোকানেই ভর্তি হতো । আমরা অবশ্য ওদিকপানে যেতুম না কখনো ।
মেলায় নাগরদোলাও আসতো । কিন্তু, আমি জীবনেও কোনোদিন নাগরদোলায় উঠিনি । কারণ, ভয় করতো আমার ।
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
এই যুগ আর সেই যুগ বর্তমান পার্থক্য কতটা তাহলে উপলব্ধি করলেই বুঝতে পারা যায়। যখন ছোট্ট সময় আমরা মেলায় যেতাম মাটির তৈরি বিভিন্ন ঘোড়া আপনার বর্ণনায় সেই ইলিশ মাছ কি সুন্দর রং করে ডিজাইন করা হয়েছে। সেগুলো দেখলেই মনে হতো যেন সব বাড়িতে নিয়ে যাই। দুই একটা কিনতাম সেই অনুভূতি সেই আনন্দটা খুবই মিস করি । সেই উৎসব মুখর পরিবেশ কম বেশি এখনো আছে কিন্তু আধুনিক হয়ে গিয়েছে ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে দাদা।
বেশ ভালো লাগলো দাদা আপনার আজকের ছেলেবেলার মেলার স্মৃতিচারন। আসলে আমার কাছে মনে হয় ছেলেবেলার মেলা গুলোই যেন সুন্দর ছিল। আর এখনকার মেলা গুলো তে আর তেমন স্বাদ নেই। তবে সত্যি বলতে কি দাদা আপনার পোস্ট পড়ে কিছু সময় হারিয়ে গিয়েছিলাম সেই ছেলেবেলায়। ধন্যবাদ দাদা এমন সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 100 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
দাদা, আপনার নববর্ষের মেলার স্মৃতি পড়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম। চট্রগ্রামের লালদীঘির পাড়ের ঐতিহাসিক বৈশাখী মেলা ও জব্বরের বলি খেলা। কত স্মৃতি সেই মেলা ঘিরে। ছোটতে বাবার হাত ধরে মেলায় যেতাম! কত স্মৃতি। এখনো চট্রগামে বৈশাখী মেলা ও জব্বরের বলি খেলা হয় কিন্তু কতদিন যাওয়া হয়না!! আপনার লেখাটি খুব ভালো লেগেছে দাদা। আমাদের দেশেও বিভিন্ন জায়গায় চৈত্রসংক্রান্তিতে মেলা ও বৈশাখী মেলা হয়। তবে আগের মত আর জৌলুস নেই। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করে পড়বার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।
মেলার স্মৃতি পড়ে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পরে গেলো।আগে আমিও মেলায় যেতাম বাবার সাথে তখন মাটির ফলগুলো কিনতাম।আর একটু বুঝ হওয়ার পর মেলায় যাওয়া হয়নি অনেক ভীড় হয় তাই।আসলে ছোট বেলার স্মৃতি ভুলার নয়। ভালো লাগলো।ধন্যবাদ
বলেন কি দাদা,নাগরদোলায় চড়তে তো আমার অনেক ভালো লাগে। ছোটবেলায় প্রচুর নাগরদোলায় চড়েছি এবং কয়েকমাস আগেও নাগরদোলায় চড়েছিলাম। যাইহোক আমাদের বাসার পাশে বছরে বেশ কয়েকবার মেলা বসতো এবং ছোটবেলায় মেলা থেকে আমরাও অনেক পিস্তল-বন্দুক কিনতাম ও পুঁতির গুলি মারতাম অন্য মানুষের শরীরে। সপ্তাহ ব্যাপী বিশাল মেলায় তো আপনারা বেশ মজা করতেন দেখছি। মাটির তৈরি জিনিসপত্র গুলো দেখতে আসলেই খুব ভালো লাগতো দাদা। পোস্টটি পড়ে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। যাইহোক এতো চমৎকার স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
হাহাহাহা নাগর দোলায় ভয় করতেন দাদা। আপনার নববর্ষের মেলায় যাওয়া ঘোরাঘুরি কেনাকাটার গল্পগুো খুব ভালো লাগলো।মাটির নৌকা কিনে তা জলে দেয়ার কারণে টুপ করে জলে ডুবে গেছে জেনে হাসি পেলো।ধন্যবাদ দাদা ছোটবেলায় মেলার স্মৃতিচারণ করে সুন্দর পোস্ট টি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
This is a nice post you have made, this post contains so many memories that you have shared.
Thanks for sharing with us Dada ☺️❤️❤️❤️
দাদা মেলা থেকে মাটির বউ কিনে আনতেন,তাহলে প্রত্যেক বছর একটি করে আপনার নতুন মাটির বউ হতো, হা,হা,হা। এতগুলো বউকে কিভাবে সময় দিতেন দাদা....। নাগরদোলায় আমিও জীবনে উঠি নাই, আমিও এই জিনিসটা খুব ভয় পাই। ধন্যবাদ দাদা।