কৃতজ্ঞতাবোধ শব্দটি বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

gratitude-1251137_1280.png
Copyright Free Image: PixaBay


বর্তমানকালে "কৃতজ্ঞতাবোধ" শব্দটির অপমৃত্যু ঘটে গিয়েছে । কারণ, এই শব্দটির ব্যবহার এখন প্রায় নেই বললেই চলে । কি ভাবে প্রয়োগ হবে, এখন তো কেউই উপকারীর কৃতজ্ঞতাবোধ করে না কখনো । উপকারীর উপকার স্বীকার করে কৃতজ্ঞ এখন আর কেউই থাকতে চায় না । ছোটবেলায় আমরা বাংলা ব্যাকরণ বইতে "এক কথায় প্রকাশ" অনুচ্ছেটিতে পড়তাম -

"উপকারী উপকার স্বীকার করে যে" - কৃতজ্ঞ
"উপকারীর উপকার স্বীকার করে না যে" - অকৃতজ্ঞ
"উপকারীর অপকার করে যে" - কৃতঘ্ন

বিশ্বাস করুন এই শেষের শব্দটি আমার মনেই থাকতো না ভালো করে । "কৃতঘ্ন" । কী খটোমটো নাম । বাংলা ভাষায় এই শব্দের প্রয়োগ ছিল কম । মূলতঃ এটি সংস্কৃত শব্দ । আমাদের ছোটবেলায় কৃতঘ্ন শব্দটির প্রয়োগ কম ছিল তার কারণ মানুষ এখনকার মতো এতো অমানুষ হয়ে যায় নি তখনো । উপকারীর উপকার স্বীকার না করুক তার ক্ষতি করতো না সেভাবে তেমন কেউ । তাই প্রয়োগও করা পড়তো না ।

ইংরেজিতে শুধুমাত্র দুটি ওয়ার্ড আছে - "Grateful" আর "Ungrateful" - "কৃতজ্ঞ" আর "অকৃতজ্ঞ" । বিশ্বাস করুন, কৃতঘ্ন শব্দটি এতো রেয়ার ছিল একসময় যে বাংলা ভাষা এমনকি ইংরেজিতেও অপ্রচলিত ছিল । হিন্দিতেও অকৃতজ্ঞ বোঝাতে "নিমকহারাম" বা "বেঈমান" প্রচলিত ।

দুনিয়ায় কৃতঘ্ন হওয়ার মতো এতো নিকৃষ্ট পাপ আর কিছুতেই নেই । এক জনকে খুন করা আর কৃতঘ্ন হওয়া প্রায় সেইম ।

আমাদের ফ্যামিলিতে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এই কৃতঘ্ন হওয়া বহুবার দেখেছি জীবনে । মানুষ কী করে এতটা নিচে নামতে পারে তা আমার ধারণার বাইরে । দু'একটা ঘটনার কথা বলি খুব সংক্ষেপে -

০১. অকৃতজ্ঞতা - এক এতিম বাচ্চাকে ফুটবল মাঠ থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এসে নিজের পরিবারে ঠাঁই দিয়ে তাকে ছোট ভাইয়ের আসনে বসিয়েছিলো আমার বাবা । সেই ছেলেটির পড়াশোনা থেকে শুরু করে চাকরি-বিয়ে অব্দি সবই করেছিল আমার বাবা । সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে আমাদের পরিবারে লালিত পালিত হয়ে সেই লোকটা যখন নিজের পরিবার নিয়ে পৃথক হয়ে গেলো তখন আমার বাবার অসুস্থতার সময়ে বিন্দুমাত্র কোনো হেল্প করেনি । সেই লোকটার মেয়ের বিয়েতেও আমার বাবাকে নিমন্ত্রণ অব্দি করেনি । এর চাইতে অকৃতজ্ঞতা আর কি হতে পারে !

০২. কৃতঘ্ন - আমার বাবার আপন মেজো ভাইয়ের পরিবারের কোনো বড় খরচ সব সময় আমার বাবাই বেয়ার করতো - "বিয়ে, শ্রাদ্ধ, পরিবারের কারো অসুখের চিকিৎসা, অপেরেশন" ইত্যাদি । এ ছাড়াও কত অজস্র উপলক্ষ করে যে আমার বাবার কাছ থেকে টাকা আনতো তার সীমা ছিল না । সেই বাবার মেজ ভাই ও তার ছেলে-মেয়ে একটা সময় আমার বাবা-মায়ের সাথে খুবই দুর্ব্যবহার করেছিল । বাবার ব্যাংকের চেকবুক লুকিয়ে রাখা, পৈতৃক সম্পত্তি যাতে বেদখল করতে পারে সে জন্য দলিল লুকিয়ে রাখা - প্রভৃতি জঘন্য কাজের সাথে দুর্ব্যবহার তো ছিলই । তবে, মৃত্যুর আগে তিনি ক্ষমা চেয়ে গিয়েছিলেন বাবার কাছে তাঁর কৃতকর্মের জন্য ।

০৩. অকৃতজ্ঞ - বাবার এক বোন সাংসারিক অশান্তি সইতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে । সৌভাগ্যবশত দড়ি ছিঁড়ে পড়ে বেঁচে যায় । তারপরে বাবাই তার সেই বোন আর ভাগ্নীকে বাড়ি নিয়ে এসে আশ্রয় দেয় । তারাও বাবার অন্নে লালিত পালিত । বাবার সেই বোন আর কখনো স্বামীর বাড়ি ফেরত যায়নি । তার মেয়েকে খুব ছোট থেকে লালিত পালিত করেছে আমার বাবাই । পড়াশোনা, চাকরি এবং বিয়ের পর সেই মেয়ে একদিন বাবার সাথেই সব চাইতে বড় বেইমানি করলো । বাবার বোন এবং সেই ভাগ্নী শুধুমাত্র টাকার লোভে বাবার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করলো ।

০৪. অকৃতজ্ঞ - আমার এক জেঠতুতো বড় বোনের চাকরির জন্য আমি টাকা দিয়েছিলাম । বেশ মোটা অংকের টাকা । ধার হিসেবে দিয়েছিলাম যদিও, তবে টাকা ফেরত নেওয়ার ইচ্ছে ছিল না আমার । তো চাকরি পাওয়ার পর আমার সেই বোন নানান রকম ফন্দি-ফিকির করা শুরু করলো যাতে ওই টাকাটা আর ফেরত না দেয়া লাগে । আমার নামে আর কি দুর্নাম করবে, তাই আমার বাবা-মায়ের সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করা শুরু করলো । ব্যাপারটা সহ্যের সীমা অতিক্রম করছে দেখে আমি একজনের মাধ্যমে বলে পাঠালাম যে সে যদি এমন খারাপ ব্যবহার করে আমার বাবা-মায়ের সাথে তবে ওই টাকা আমি ফেরত নেবো এবং কি ভাবে নেবো সে পথ আমার জানা আছে । যাই হোক এরপরে সে নিজেকে শুধরে নিয়েছিল । তবে দীর্ঘ ১৩ বছর পরেও সেই টাকা কিন্তু আমি আজও পাইনি, অবশ্য পাওয়ার আশাও করিনি কখনো ।

০৫. কৃতঘ্ন - একদম লেটেস্ট একটা ঘটনা শেয়ার করেই আজকের লেখা এখানেই সমাপ্ত করছি । মাত্র সপ্তাহ দু'য়েক পূর্বে আমাদের পরিবারের খুব বিশ্বস্ত একজন চরম বিশ্বসঘাতকতা করলো আমাদের ফ্যামিলির সাথে । এই লোকটা সুদীর্ঘ তেইশ বছর ধরে আমাদের ফ্যামিলি থেকে নানান সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছে । বলতে গেলে তার ফ্যামিলিই চলতো আমাদের টাকায় । যাকে আমরা অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম সেই লোকটা আমার মায়ের চেক জালিয়াতি করে ছ'লক্ষ টাকা তুলতে গিয়ে কোমরে দড়ি পরেছিলো । ব্যাংকের ম্যানেজার পুলিশে হ্যান্ডওভার করার ঠিক আগের মুহূর্তে ফোন করে আমরা তাকে জেলে যাওয়া থেকে বাঁচাই । জেলের হাত থেকে বাঁচানো হলেও তার সঙ্গে আমাদের পরিবারের সমস্ত সম্পর্ক ছেদ করেছি । চরম কৃতঘ্ন এই লোকটাকে পুলিশে দেইনি শুধু তার দু'টো বাচ্চার জন্য । একটার বয়স মোটে ৬ বছর ।


------- ধন্যবাদ -------


পরিশিষ্ট


আজকের টার্গেট : ৫৫৫ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 555 trx)


তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

টাস্ক ৪৫১ : ৫৫৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

৫৫৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : 0c8faae6d2d0b562013ab1294e6e5198073a07f98f3f9f37d08d05425d00816b

টাস্ক ৪৫১ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png


steempro....gif

»»——⍟——««

Sort:  
 11 months ago 

আজকে আবারো হাজির হয়ে গিয়েছি আমার আরো দুইটি NFT আর্ট নিয়ে । "আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায় লুকোচুরির খেলা রে ভাই, লুকোচুরির খেলা ।" ঠিক তাই ধানের ক্ষেতে তৎকালীন বাংলার এক রাজকন্যা দাঁড়িয়ে দেখছে ধান রোপনের দৃশ্য । এটিই আমার আজকের NFT আর্টের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ।

তাহলে, চলুন দেখে নেওয়া যাক আমার আজকের NFT আর্ট দুটি -


"ধানের ক্ষেতে তৎকালীন বাংলারএক রাজকন্যার বিচরণ চিত্র"

Screenshot 2023-12-24 000234.png

০১. Indian Princess

০২. Indian Princess

Hello, your two works of art are eminently very striking and valuable, your eyes shine when you see such art, God bless you... from my country Venezuela.

 11 months ago 

এই দুটির মধ্যে ফুল মাথায় দেয়া প্রথম ছবিটি আমার কাছে বেশি ভাল লেগেছে।

Dada amadr kobe shikhaben ato sundor sundor art?

Amr mone hoi protita poribar e asob manush thake jara asole chorom level er okritoggo and okritogno. Sobai kom besi aii manush gulor sathe porichito aii jnno ajkal sahajjo baperta society theke chole jacche. Manush r kaoke bisas korte parena. Mulotoh okritoggota suru hoi poribar theke. Kintu din sas e eder amadr valor jnnoi maf kore deya lage, shudhu somporko gulo sas hoye jai.

 11 months ago 

উপকারীর অপকার করে যে" - কৃতঘ্ন

আসলেই দাদা এই শব্দটির সাথে আমরা শুধু বইয়ের মধ্যেই পরিচিত। তবে এর বাইরে তেমন একটা মনে পড়ে না। শুধু কৃতজ্ঞতা ও অকৃতজ্ঞতা এ দুটো জিনিস মাথায় আসে। তবে দিন দিন অকৃতজ্ঞের সংখ্যা বেড়েই চলছে। অন্যের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করে কৃতজ্ঞতা বোধ পর্যন্ত করে না। যাইহোক দাদা আপনার পরিবারের সাথে যেরকম অকৃতজ্ঞ লোকের ছোঁয়া ছিল, এ ধরনের অকৃতজ্ঞ লোক সমাজেও অনেক রয়েছে। আর সেদিনকার ঘটনা অবশ্যই মনে রয়েছে, যেদিন আপনার মায়ের ব্যাংকের চেক জালিয়াতি করে টাকা হাতানোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। সর্বোপরি দাদা কৃতজ্ঞতার কথা আসলে আমরা সকলেই আপনার প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।কারণ এই কমিউনিটির মাধ্যমে আমরা সুন্দর সুশৃংখলভাবে নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 11 months ago 

এই যে ৩টা অনুচ্ছেদ সবটাই মুখস্ত। কিন্তু ঐ যে বললেন কৃতঘ্ন শব্দটার কথা,সেটা বারবার মুখস্ত করতাম।তবে এটা ঠিক পূর্বেকার সময়ে এই শব্দটা ব্যবহৃত হতো না।কারণ তখনকার মানুষ কৃতজ্ঞ আর অকৃতজ্ঞ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।আর বর্তমানে উপকার কারীর পিছনেই লেগে যায় সে মানুষগুলো যাদের উপকার করে এসেছিল।আমি নিজেও এমন মানুষ দেখেছি,দেখছি আমাদের নিজেদেরই মানুষ তারা।তাদের উপকার করে এসেও এখন সেই উপকারের দাম নেই, সামান্যতম কৃতজ্ঞতাবোধ তাদের নেই। আপনার পরিবারে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা কাহিনী পড়ে বেশ খারাপ লাগলো।সবার জন্য এতকিছু করার পরও তারা এমন করতে পারলো।আসলেই মানুষ এমন কেন বুঝিনা,যার ভালো চাই সেই উলটো ছুরি মেরে বসে।

This article profoundly reflects the lack of gratitude in contemporary society, where the values of gratitude between individuals seem to be diminishing. It's regrettable to witness that the once-prized virtue of gratitude is gradually fading away, with people forgetting to express appreciation to those who once helped them. This evokes a sense of sorrow and prompts reflection on human nature. While there are still touching stories of kindness in this indifferent world, there is a pressing need to revive the buried sentiment of gratitude in people's hearts. Let's strive to spread warmth and rediscover the importance of gratitude.

 11 months ago 

খুব দুঃখজনক ঘটনা দাদা। বারবার আপনাদের সাথে জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। আপনজন হয়ে,আশ্রিত হয়েও এমন দূরব্যবহার করেছে মেশ মশার সাথে।আসলে উপকারীর উপকার স্বিকার করাতো দূরের কথা উল্টে আপনাদের পরিবারের সাথে জঘন্য ব্যাবহার করেছেন এবং ক্ষতি করে গেছেন তবুও আপনারা বরাবরই ক্ষমা করে দিয়েছেন। আসলে ক্ষমাই মহৎ গুণ এটাই প্রকাশ পেয়েছে আপনার পোস্ট।

 11 months ago 

দাদা আপনার এই পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে বুঝতে পারলাম আপনার বাবার সব আদর্শ আপনি ধরে রেখেছেন। বর্তমানে যতো দিন যাচ্ছে ততই মানুষের কৃতজ্ঞতা বোধ কমে যাচ্ছে। আপনার বাবা নিঃস্বার্থভাবে সবার উপকার করেছে কিন্তু কখনো এর প্রতিদান চাইনি তারপরেও এমন খারাপ ব্যবহার করোরই আসলে করা উচিত হয়নি। এই পৃথিবীর সব থেকে বড় আপনজন হলেন যে ব্যক্তি অন্ন দান করে আর সেই অন্যকেই মানুষ বেঁচে থাকে। সৃষ্টিকর্তা বলে একজন আছেন তিনি কর্ম গুণের সবাইকে কর্মফল দেবেন।

Posted using SteemPro Mobile

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 11 months ago 

এধরনের ঘটনাগুলো আসলেই বেশ দুঃখজনক, দাদা। তবে যে টা বুঝতে পারলাম, আপনার বাবাও একজন মহান এবং উদার মনের মানুষ। তাই তো এতবার করে ঠকে যাওয়ার পরেও অন্যের বিপদ দেখলে চুপ করে না থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সবসময়। আপনাদের কর্ম, আপনারা করেন দাদা। বাকিরাও তাদের কুকর্ম অনুযায়ী ফল অবশ্যই পাবে! কারণ উপর থেকে সবকিছুর হিসেব একজন ঠিকই রাখছেন!

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

দাদা আপনার ফ্যামিলির সঙ্গে ঘটে যাওয়া, সর্বশেষ ঘটনাটা আপনি হ্যাংআউটে বলেছিলেন, তবে উপরের ঘটনাগুলো জানতাম না। তবে এটা জানতাম যে, আপনার বাবা একজন ছেলেকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে এসে বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছিল। তবে এত বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা যে আপনাদের পরিবারের সঙ্গে ঘটেছে, তা একদম জানা ছিল না। আসলে লেখাটা পড়ে, কি মতামত করব তাই বুঝতে পারছি না ভাই, সত্যিই ব্যাপারগুলো বেশ দুঃখজনক।