ছোটবেলার একটি ছোট্ট মজার ঘটনা

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


Copyright Free Image Source : Pixabay


আজকে ভেবেছিলাম পোস্ট করবো না । ঘুম থেকে উঠেছিও দেরী করে আজ । ভোরবেলায় হঠাৎ করে জ্বর এলো । বুঝলাম না কেন এমন হলো ? ঘুম থেকে উঠে দেখি জ্বর কমে গিয়েছে, কিন্তু গায়ে হাত-পায়ে বেশ ব্যাথা, আর শরীর বেশ ম্যাজম্যাজ করছে । ঠান্ডা লেগেছে খুব সম্ভব । তবে, আজকে হাতে অনেক কাজ আমার । "আমার বাংলা ব্লগ" এর জন্মদিন উপলক্ষে হওয়া বিশেষ হ্যাংআউট এর বিশেষ প্রাইজ দেওয়া এখনো পেন্ডিং রয়েছে । সময়ের অভাবে প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশন করে উঠতে পারিনি । কিন্তু, আজ সন্ধ্যায় শিডিউল করা আছে পুরস্কার গুলো ডিস্ট্রিবিউট করার । শিডিউল মিস করা যাবে না । কোনোভাবেই । তাহলে আরও দেরি হয়ে যাবে । ভীষণই ব্যস্ত সময় পার করছি বেশ কয়েকদিন ধরে ।

তো এবার আসা যাক আমার ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া একটি ছোট্ট মজার ঘটনায় ।

তখন খুব সম্ভবত আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি । বাবা সন্ধ্যের দিকে কিছু ছাত্র পড়াতো । তো আমার পড়াশোনা বিকেলবেলায় কিছুই করতাম না । দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে খেয়ে ঘুম দিতাম । বিকেলে উঠে হয় খেলতাম নতুবা, গল্পের বই পড়তাম । বাবা বাজার করে ফিরতো সন্ধ্যের পরে । তো, একদিনের ঘটনা - বাবা সেদিন বিকেল বেলাতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো । সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা, স্পেশ্যাল পড়ানো ছিল খুব সম্ভব । সেদিন আবার আমাদের বাজার করা খুবই জরুরি ছিল । ভাঁড়ারে টান পড়েছে ।

ঘরে, ডিম, ডাল এসব ছিল । কিন্তু, ছিল না কোনো তরকারি । যেহেতু, বাবার বাজার করে ফিরতে হবে তাই আমাকে ডেকে বললো সামনের মুদি দোকান থেকে আলু কিনে দিতে । এই বলেই, বাবা টাকা রেখে চলে গেলো । আমিও, গল্পের বইয়ে চোখ রেখে অন্যমনস্ক ভাবে সব শুনে বইয়ের পাতা থেকে চোখ না তুলে হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিয়ে পকেটে রেখে দিলাম ।

গল্প শেষ হতে হতে সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলো প্রায় । রাস্তায় ল্যাম্পোস্টগুলো এখুনি জ্বলে উঠবে । আমি আর দেরি না করে মুদি দোকানের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলাম । দোকানদের আমাদের পূর্ব পরিচিতি । তো যখন তাকে আমি আলু দিতে বললাম সে কিন্তু আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো । আমি বললাম - "কৈ দিন !!"

দোকানদার আমায় বললো - "ঠিক করে বলো কতটুকু আলু নেবে ?" শুনে আমার তো রাগ হয়ে গেলো । বললাম - "যতটুকু বলেছি ঠিক ততটুকুই দিন ।" এবার দোকানদার হাসতে হাসতে একটি কাগজের ঠোঙায় দুটি ছোট্ট ছোট্ট আলু ওজন না করেই দিলো । আর টাকা নিলো না । আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে তাইই নিয়েই বাড়িতে ফিরলাম ।

বাড়িতে এসে ঠোঙা ভর্তি আলু দিলেই শুরু হলো চ্যাঁচামেঁচি । মাত্র দুটি ছোট আলু দিয়ে কি ভাবে রান্না হবে ? পরে আবিষ্কার হলো বাবা আমাকে দশ টাকার একটা নোট দিয়ে বলেছিলো "পাঁচশো গ্রাম আলু" এনে দিতে । আর, আমি শুনেছি "একশো গ্রাম আলু" । তখন আলুর কিলো ছিল ছ'টাকা । তো, একশো গ্রাম আলুর দর দাঁড়ায় ৬০ পয়সা । তাই, মুদি দোকানদার অমন অদ্ভুত ব্যবহার করছিলো আমার সাথে ।

বাড়িতে হাসির হুল্লোড় বইলো । এই ঘটনা আমাকে অনেকদিন যাবৎ লজ্জা দিতো । যখনি আমার ১০০ গ্রাম আলু কেনার গল্প উঠতো আমি আস্তে করে সেখান থেকে সরে যেতাম ।

Sort:  
 3 years ago 

সত্যিই দাদা "একশো গ্রাম আলু" কেনার গল্পটি পড়ে মজা লাগলো।ছোটবেলায় মানুষ কত বোকা থাকে আর বড়োরা হেসে উড়িয়ে দেয় ।সেই সময়ের কথা ভাবলে আপন মনে ও হাসি পেয়ে যায়।ছোটবেলায় আমার কথা বলা নিয়ে অনেকেই খেপাতো।এখন খুব হাসি পায় তখন আবার রাগ হতো।যাইহোক সকলের ছোটবেলাগুলি এইরকমই হয় দাদা।প্রে করি দ্রুত আপনার সুস্থতার জন্য।।

Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

দাদা আপনার ছোটবেলার সব মেমোরি গুলোই খুব সুন্দর। আপনার ছোটবেলা নিয়ে কোনো পোস্ট আপনি শেয়ার করলে আমি অবশ্যই সেটা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। বই পড়ার প্রতি আপনার প্রবল আগ্রহ ছোটোবেলা থেকেই ছিল এই পোস্ট পড়ে সেটা বুঝতে পেরেছি। আগের কালের মানুষগুলো প্রচন্ড রকম খেতে ভালোবাসতো তাই 500 গ্রাম আলু দিয়ে তরকারি হতো না। তবে কলকাতার মানুষ এখন 100 গ্রাম আলু দিয়ে নির্বিঘ্নে একটি সাজ চালিয়ে দেয়।

 3 years ago 

গল্পের বইয়ের মধ্যে এমন ডুবে ছিলেন যে ঠিক মত শুনতেই পারেননি কি বলেছে। আর সেই আপনি এখন এক সাথে কত কাজ করেন। চার পাঁচটা কাজতো অনায়াসেই করেন কোন ভুল ত্রুটি ছাড়া।
দাদা আপনার ইদানিং খুব ঘন ঘন জ্বর আসছে। ভালো একজন ডক্টর এর কাছে যান। আপনার দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।

 3 years ago 

দাদা প্রথমেই আমি আপনার সুস্থতা কামনা করছি। আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আসলে ছোটবেলায় আমাদের এরকম অনেক স্মৃতি রয়েছে যেগুলো মনে পড়লে আজও হেসে ফেলি। ১০০ গ্রাম আলু কেনার গল্প দারুন লেগেছে আমার কাছে। দাদা আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।♥️♥️♥️♥️

 3 years ago 

দাদা বেশ কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করছি আপনি মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। আপনার উচিত দ্রুত একজন ভালো ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা। যাই হোক আপনি যে একজন বইপোকা তা আগেই জেনেছি। আসলে ভালো কোন বই পড়তে গেলে এমন অবস্থাই হয়। সব মনোযোগ চলে যায় বইয়ের মধ্যে। আহ 6 টাকা কিলো আর কখনোই এই দিন ফিরে আসবে না। দারুন লাগলো আপনার ছোটবেলার ঘটনা

 3 years ago 

কেন দাদা আবার হঠাৎ করে জ্বর কেন আসলো সেই দিন না জ্বর হলো ঘন ঘন জ্বর যে কেন আসছে ঘন ঘন জ্বর আসা কিন্তু ভালো না দাদা ভালো একজন ডাক্তার দেখাইয়েন। আপনার শরীর খারাপ হলে আমাদের কি ভাল লাগে বলেন।
আপনার গল্পটি পড়ে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম যে আপনি চোখ না তুলেই টাকার বদলে হয়তো কোন কাগজ টাগজ পকেটে ভরে রেখেছেন পরে দেখলাম যে আপনি শুনতে ভুল করেছেন। গল্পের বই আপনাকে এত টাই টানে যে একেবারে বইয়ের ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলেন আসলেই এরকম হলেই কোন কিছু পড়ে মজা পাওয়া যায় ।সত্যি হাসির ছিল গল্পটি । এইরকম গল্পগুলো বেশ ভালো আরো শুনতে চাই।

 3 years ago 

দারুণতো দাদা, খুব মজা পেলাম সাথে বেশ হাসিও ছিলো, হি হি হি।
এই জন্য ব্যাটা দোকানদার বুঝে উঠতে পারছিলোনা কি করবে, তাই আপনার ভয়ে দুটো ফ্রিতে দিয়েছিলো।

হয়তো বা ঠান্ডার কারনে এমন হচ্ছে দাদা, তাছাড়াও আপনিতো রাতও জাগেন অনেক। খুব বেশী প্রেসার যাচ্ছে আপনার উপর দিয়ে। দোয়া করি সুস্থ্য থাকেন সব সময়।

 3 years ago 

আপনার পুরোপুরি সুস্থতা কামনা করছি। হা হা গল্প পড়ে আমি হাসতে হাসত শেষ।একশো গ্রাম আলু।ভালো ছিলো।ধন্যবাদ