একটি ফুটবল ম্যাচ, অতঃপর ...

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


কপিরাইট ফ্রি ইমেজ সোর্স : Pixabay


১৯৬৮ সালের এক শীতার্ত বিকেল । গ্রামে সেদিন হাটবার । আবার এই হাটবারেই পড়েছে এক গ্রাম্য ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ । আগেকার দিনে গাঁয়ে গঞ্জে হাটবারেই গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইভেন্ট থাকলে অনুষ্ঠিত হতো । যেমন ফুটবল ম্যাচ, কাবাডি ম্যাচ, নৌকা বাইচ, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই এসব ।

সতের-আঠারো বছরের এক নাতিদীর্ঘ কিশোর চলেছে খেলার মাঠ পানে । দ্রুত পৌঁছানো চাই । আজকে যে ফাইনাল ম্যাচ । শীতের বেলা, সন্ধ্যে নেমে যায় ঝুপ করে । আর বিশেষ করে গ্রামের দিকে সন্ধ্যা নাম খুবই দ্রুত লয়ে । ছেলেটির কিন্তু স্কুল ফাইন্যাল চলছে (এখনকার দিনে যার নাম মাধ্যমিক পরীক্ষা) । আগামীকালই অঙ্ক পরীক্ষা । কিন্তু, এই মুহূর্তে ছেলেটির মাথায় পরীক্ষার চিন্তা বিন্দুমাত্রও নেই ।

তার সমগ্র চিন্তা চেতনা জুড়ে রয়েছে আসন্ন ফুটবল ম্যাচ । বিপক্ষদলের রক্ষণভাগ যথেষ্ঠ স্ট্রং। তাদেরকে কাটিয়ে গোল দেওয়া ভারী কঠিন একটা কাজ । সে হলো একজন স্ট্রাইকার । তাই তার চিন্তাটাও একটু বেশি । আবার এ বছরের স্কুল টিমের সেই হলো ক্যাপ্টেন । তাই দুঃশ্চিন্তাটা তার দলের অন্য সবার চাইতে বেশি ।

আমতলী গাঁয়ের ছোট্ট নদীটির পাড়ে আজকে হাটবার । দূরদূরান্ত থেকে মানুষ হাটে আসছে যাচ্ছে। এ তল্লাটের সব চাইতে বড় হাট এটি । নদীর ওপর ছোট্ট একটি কাঠের পুল আছে । দারুন সুন্দর এই আমতলী নদীটি । এই নদীর পাড়ে যে হাটতলা, তার ঠিক পরেই রয়েছে আমতলী হাই স্কুল এবং স্কুল সংলগ্ন বিশাল খেলার মাঠ ।

এই মাঠেই আজকে ফুটবল ম্যাচ । যথারীতি ম্যাচ শুরু হলো এবং দারুন উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে শেষও হলো । পুরো হাট ভেঙে পড়লো খেলার মাঠে । দারুন জমাটি একটা খেলা হলো । রুদ্ধশ্বাস সেই ম্যাচে জিতলো ছেলেটির দল । ম্যাচের পুরস্কার বিতরণী হয়ে গেলো চটপট । কাপ মেডেল প্রদানের পরে টিমের সবাই মাঠের ঘাসে শুয়ে পড়লো টানটান হয়ে ।

সবারই বেশ খিদে পেরে গিয়েছে । কিন্তু কাছে তো পয়সা কড়ি কিছুই নেই । অতঃপর পরিচিত হকারদের কাছ থেকে চললো ধার নেওয়ার পালা । বাদাম, পাঁপড় আর ছোলা ভাজা কিনে গোল হয়ে সবাই বসে গেলো ভোজে । সূর্য ততক্ষনে অনেকটাই ঢলে পড়েছে পশ্চিমে । বেশ একটা হিমেল শিরশিরানি হাওয়া বইছে উত্তর দিক থেকে । মাঠের ঘাসে শিশির পড়া আরম্ভ হয়েছে । ঘাস ভিজে লাগছে । সবাই তাই দ্রুত খাচ্ছে । বাড়ি ফিরতে হবে ।

এমন সময় ক্যাপ্টেন লক্ষ করলো দশ-এগারো বছরের একটি ছোট ছেলে তাদের থেকে একটু দূরে ঘাসের উপরে বসে করুন চোখে তাদের খাদ্যবস্তুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । বেশ মায়া হলো ক্যাপ্টেন এর । ইশারা করে ডাকলো ছেলেটিকে । কাছে এলে তার হাতে ধরিয়ে দিলো ক্যাপ্টেন এর ভাগের খাবার টুকু । গোগ্রাসে খেতে থাকলো ছেলেটি ।

তার খাওয়ার ভঙ্গি দেখেই বোঝা গেলো কতটা ক্ষুধার্ত সে । খাওয়া শেষ হতে ছেলেটিকে কাছে ডাকলো ক্যাপ্টেন । নাম ধাম সব জিজ্ঞেস করলো । বেরিয়ে এলো এক করুন ইতিহাস । ছেলেটির মা মারা গিয়েছে জন্মের মাত্র এক মাস পরে । আর বাবা এক বছর পরে । সৎ মা আছে । কিন্ত, কেমন যত্ন আত্তি করে সেটা তো তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে । পিতৃ মাতৃহীন অনাথ ছেলেটির এক বেলা কোনোরকমে এক মুঠো ভাত হয়তো জোটে কিন্তু তাতে ক্ষুধা নিবৃত হয় না কোনোভাবেই ।

অনাথ হওয়ার কারণে অক্ষরজ্ঞানও হয়নি তার । দশ-এগারো বছরের এতবড় ছেলে একেবারেই নিরক্ষর । আত্মীয় শরিকেরা তাকে একটা গবেট হিসেবে ভবিষ্যতে দেখতে চাইছে যাতে পিতৃ সম্পত্তির সঠিক দাবী না করতে পারে । ক্ষুধাক্লিষ্ট অসহায় একটি বালকের মলিন মুখখানির দিকে কিছুক্ষন অপলক নয়নে তাকিয়ে রইলো ক্যাপ্টেন ছেলেটি ।

দু'মিনিট কি জানি ভাবলো সে । অতঃপর অসহায় ছেলেটির কাঁধে একটা হাত রেখে বললো -
"আমরা পাঁচ ভাই চার বোন, আজ থেকে হলাম ছ'ভাই । তুমিও আমার আরেকটি ভাই । বাড়ি চলো । আজ থেকে আমার বাড়িও তোমারই নিজের বাড়ি বলে জানবে । আমার মা তোমারই মা । চলো ।"

ছেলেটিকে নিয়ে কিশোর ক্যাপ্টেন বাড়ির পথ ধরলো । সূর্য তখন পশ্চিমাকাশে সম্পূর্ণভাবে ঢলে পড়েছে । আঁধার নেমেছে গাঁয়ের পথে ঘাটে। কিন্তু, সেই আঁধারে আলো খুঁজে পেলো অনাথ বালকটি । অসহায় সেদিনের ছেলেটি এক অন্য জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হতে দেখলো তার নিকষ কালো আঁধারের পথটি । বাঁচার স্বপ্নে বিভোর হয়ে সে পা বাড়ালো তার সদ্য পাওয়া বড় ভাইয়ের সাথে তার নিজেরই বাড়িতে ।

বি : দ্রঃ আকাশের মতো বিশাল হৃদয়ের সেই ক্যাপ্টেন আর কেউ নয়, আমার বাবা । সেই অসহায় ছেলেটিকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে নিজের ভাইয়ের মর্যাদা দান করেছিলেন এবং তাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন ।


পরিশিষ্ট


প্রতিদিন ২৫০ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ২য় দিন (225 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 02)


trx logo.png



সময়সীমা : ২৮ অগাস্ট ২০২২ থেকে ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত


তারিখ : ২৯ আগস্ট ২০২২


টাস্ক ৪৪ : ২৫০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

২৫০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : 268f96588c6285aefac36dcf3dfaa60c9ff5bb3f9dd97b12d00d0cf867121c41

টাস্ক ৪৪ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png

Sort:  

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 2 years ago 

আপনার বাবা নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ ছিলেন। একজন অপরিচিত মানুষকে নিজের ভাই করে তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।এজন্য সৃষ্টিকর্তা তাকে অনেক ভালো রাখবেন তিনি যেখানেই থাকুন না কেন।আর আপনিও অনেক ভাগ্যবান তাকে বাবা হিসেবে পেয়েছেন।আজকের দিনে এরকম মানুষ পাওয়াটা দুষ্কর। ধন্যবাদ আপনাকে দাদা এতো সুন্দর একটি লেখা শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার বাবা একটি ছেলেকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে নিজের ভাইয়ের মর্যাদা দিয়েছেন জেনে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো। সত্যি তিনি অনেক ভালো মনের একজন মানুষ। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেয়ে একজন ভালো মানুষ হওয়া সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বাবা একজন ভালো মানুষ। তাইতো নিজের ভাগের খাবার তাকে দিয়েছেন এবং নিজের ভাইয়ের সম্মান দিয়েছেন। আপনার বাবার জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা রইলো দাদা।

 2 years ago 

লেখার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ছোটো মুখে যাই বলি, সব কিছুই কম হয়ে যাবে। তবুও একটা কথা বলতেই হয় সেই মানুষটিকে শত সহস্র প্রণাম। 🙏🏽

Your father has a huge heart and great courage.

আকাশের মতো বিশাল হৃদয়ের সেই ক্যাপ্টেন আর কেউ নয়, আমার বাবা । সেই অসহায় ছেলেটিকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে নিজের ভাইয়ের মর্যাদা দান করেছিলেন এবং তাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন ।

প্রথম থেকে গল্পটা পড়া শুরু করার পর থেকে আমার মনের ভিতর শুধু একটা কৌতুহল হচ্ছিল, তাহল এই মহান ক্যাপ্টেন ব্যক্তিটি কে। তবে গল্পের শেষে এসে সাসপেন্স এর পরিসমাপ্তি ঘটলো। দাদা তোমাকে দেখেই বোঝা যায় আমাদের জেঠু কেমন হতে পারে। অন্তরের অন্তস্থল থেকে এই মানুষটির জন্য শত কোটি প্রণাম।

 2 years ago 

দাদা আপনার বাবাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। মনুষত্বই আসল ধর্ম। কোটি কোটি প্রণাম জানাই আপনার বাবার মানবতাকে। মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য।। বেঁচে থাক মানবতা আজীবনের জন্য। শুভকামনা দাদা আপনার জন্য।

 2 years ago 

মানবিকতা পেয়েছেন ভাই পিতৃ সূত্রে এই জন্যই সবাইকে খুব সহজেই আপন করে নিতে পারেন। হয়তো আপনার গঠিত বাংলা ব্লগের আশ্রয়ে আমরাও আশ্রিত । বেঁচে থাকুক জীবন গুলো , মানবিকতা ছড়িয়ে যাক সর্বত্র।

মাঝরাতে লেখাটি পড়ে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম ভাই । আপনার বাবার জন্য, নিরন্তর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রইল।

 2 years ago 

মানুষ কথায় বলে,কিছু ব্যাপার মানুষ পরিবার থেকেই নিয়ে আসে।আপনাকে দেখলেও তা বুঝা যায় দাদা।আপনি আপনার বাবার মনোভাবেই নিজেকে বড় করেছেন।

 2 years ago 

প্রিয় দাদা পৃথিবীতে একজন ভালো মানুষই হলো শ্রেষ্ঠ মানুষ। আমি মনে করি আপনার পিতা ছিলেন পৃথিবীর অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ। আপনার পিতার মহানুভবতা সত্যি দাদা আমাকে মুগ্ধ করেছে। রাস্তা থেকে একটি ছেলেকে কুড়িয়ে নিয়ে এসে নিজের ভাইয়ের মর্যাদা দিয়ে তাকে সযত্নে বড় করাটাই হলো মহৎ মানুষের কাজ। দাদা আপনার পিতার হৃদয়টা ছিল আকাশের মতোই বিশাল। আর এমন মহৎ এবং আকাশের মতো বিশাল হৃদয় সম্পন্ন মানুষের সন্তানকে আমাদের প্রিয় দাদা হিসেবে পেয়ে আমরা সত্যিই ধন্য হয়ে গেছি।

follow me please @ALBK