ছুটন্ত আমি পথপ্রান্ত অনন্তদিনে ।
অনেকদিন হলো আপনাদের সাথে ফটোগ্রাফি শেয়ার করা হয় না। ফটোগ্রাফি আমার অন্যতম শখ গুলোর মধ্যে একটি। বিশেষ করে গ্রামীণ দৃশ্য গুলো ক্যামেরাবন্দি করতে আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। অনেকদিন ফটোগ্রাফি না করার কারণে কাল হঠাৎ মনে হল বিকাল টাইমে সময় করে ফটোগ্রাফি করতে বেরোতে হবে। প্লান করেই আমার বন্ধুদেরকে মেসেঞ্জারে নক দিলাম। দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে আমরা বের হব প্ল্যান করলাম। 3:30 বাজার আগেই আমি রেডি হয়ে গেলাম। এরপর আমার বাসার পাশে যে বন্ধুটির বাসা ওকে ফোন দিলাম রেডি হওয়ার জন্য। কিন্তু ও একটু ব্যস্ত থাকার কারণে লেট হয়ে গেল। ও ফ্রি হয়ে বাইরে আসার পর আমিও বাসা থেকে বের হলাম। দুইজন বাজারের দিকে গেলাম, ওখানে বাকি সবাই ছিল।
বাজারে যখন সবার সাথে দেখা হল তখন আমরা ডিসিশন নিলাম আমাদের পূর্বদিকে অবস্থিত একটি সুন্দর জায়গা আছে, যেখানে বিকাল টাইমে অনেক সুন্দর টাইম কাটানো যেতে পারে। যদিও মেইন উদ্দেশ্য ছিল ফটোগ্রাফি করার। কিন্তু কোথায় যাবো সেই বিষয়ে তেমন একটা ডিসিশন নিতে পারছিলাম না। ফাইনালি আমরা যেখানে যাওয়ার চিন্তা করলাম ওখানে এমনিতেই আড্ডা দেওয়ার জন্য বা সময় কাটানোর জন্য পারফেক্ট। কিন্তু ফটোগ্রাফি করার জন্য তেমন একটা উপযুক্ত নয়। তবুও গেলাম, দেখা যাক কি হয়।
আমরা প্রায় একঘন্টা বাইক চালিয়ে ওই জায়গাটিতে পৌঁছে গেলাম। আমরা যখন ওখানে পৌছালাম তখন ঘড়িতে বাজে ৪:৩০। ঐ জায়গাটা এমনিতেই আমার খুব ভালো লাগে। কারণ একেবারেই সরু নদী বয়ে গেছে। আর দুই পাশে অপরূপ গ্রামবাংলা আর চরের সৌন্দর্য। এখন তো পানি নেই বললেই চলে। তবুও দূরে দেখতে পেলাম জেলেরা মাছ ধরার চেষ্টা করছে। এই সময় অবশ্য মাছধরা টা বেশি সুবিধার হয়ে যায়। কারণ পানি অল্প থাকে, আর অল্প পানিতে তুলনামূলক বেশি মাছ থাকে। মনে করুন এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি নদীর পানি শুকিয়ে ১০০ মিটারে এসে পৌঁছেছে। এক কিলোমিটার নদীতে যে পরিমাণ মাছ ছিল, পরবর্তীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর সব মাছ ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের নদীর পানিতে এসে জড়ো হবে। এজন্য পানি কমে গেলে এসব অঞ্চলে মাছ মারার ধুম পড়ে যায়। যখন পানি অনেক বেশি থাকে তখন জেলেদের বড় বড় দল জাল নিয়ে মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু এখন অনেক বড় প্রস্তুতি দেখা যায়না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেষ্টা সবসময় লেগেই আছে। এসব দৃশ্যগুলোই কয়েকটা ক্যামেরাবন্দি করলাম। যদিও বেশি একটা ছবি তুলতে পারিনি। যে ছবিগুলো তুলেছিলাম ওগুলো পরে একটি ফটোগ্রাফি পোস্টে শেয়ার করব।
কিছু ফটোগ্রাফি করার পর আমরা চিন্তা করলাম আর একটু সামনে এগিয়ে ঐদিকে সুন্দর একটা জায়গা আছে ওখানে যেয়ে একটু বসা যেতে পারে। এজন্য আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে একটি জায়গায় গিয়ে পৌঁছালাম। ওখানে বেশ নিরিবিলি। সামনে বালি উত্তোলন করার মেশিন, সাইডে আখ ক্ষেত, তার ওপাশে নদী। আর আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে পাকা রাস্তা। রাস্তার দু'পাশ দিয়ে সারি সারি তালগাছ । এতক্ষণে সূর্য প্রায় ডুবতে বসেছে। পশ্চিম আকাশটা লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। রাস্তার বাম দিকে যে মাঠগুলো ছিল মাঠগুলোতে এখনো পানি জমে আছে। আকাশের লাল বর্ণ টা যেন পানির মধ্যেও নেমে এসেছে।
সবশেষে আমাদের নিজেদের কিছু ফটোগ্রাফি করে আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে আসলাম। আসার সময় মাঝে একটা বাজার পাওয়া যায়। ওই বাজার থেকে আমরা বাইকে কিছু তেল লোড দিলাম আর একটা বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং এর দোকান থেকে কিছু টাকা উত্তোলন করলাম। আবার গাড়িতে উঠবো সেই সময় দেখলাম পাশেই একটা দোকান, যেখানে ডিমের চপ আর আলুর চপ বিক্রি করছে। সবগুলো একদম গরম। মাত্রই ভেজে ভেজে উপরে রেখে দিচ্ছে। ওখানে গিয়ে আমরা সবাই ১ টি করে ডিমের চপ খেলাম, আরো দুইটি করে আলুর চপ খেলাম। ভাজাপোড়া খাওয়া আগের তুলনায় অনেক কমিয়ে দিয়েছি । কিন্তু এই যে এই সব মুহূর্তে অল্পস্বল্প খেতে ভালই লাগে। যাই হোক আমরা চপ খেয়ে আবার বেরিয়ে পরলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আমরা কিন্তু বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি না। আমাদের প্লান আমরা একটা কফিশপে যাব। যে কফিশপ টি নদীর পাশেই অবস্থিত। কফিশপ টি অনেক ফেমাস। ওখান থেকে কপি নিয়ে নদীর পাড়ে বসে খাওয়ার মধ্যে অন্যরকম একটা ফিলিংস আছে।
কফিশপে যাওয়ার মেইন রাস্তাটা বাদ দিয়ে আমরা ভেতরের একটা নতুন রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করলাম। এই রাস্তা দিয়ে আগে কখনো আসিনি। রাস্তাটি একদমই সরু। শুধুমাত্র পায়ে হাঁটার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু আমরা বাইক নিয়েই প্রবেশ করলাম। রাস্তাটির ডান সাইডে নদী আর বাম সাইডে আখ ক্ষেত। গোটা রাস্তা জুড়ে আখ ক্ষেত ছিল না। মাঝেমধ্যে ফাকা জায়গা ছিল বামদিকে । ৮ থেকে ১০ মিনিটের রাস্তা পাড় দিয়ে অবশেষে কফিশপে পৌছালাম। কফিশপে পৌঁছে আমরা পাঁচ জনের জন্য পাঁচটা কফির অর্ডার দিলাম আর নদীর সামনে খোলা জায়গায় বসলাম। যদিও কফিশপের সামনে চেয়ার রাখা আছে , ওখানে বসতে ভালো লাগে না। কারণ এই সময় অনেক মানুষ থাকে। আমরা একটু দূরে গিয়ে ফাঁকা জায়গায় নদীর পাড়ে ঘাসের উপর বসলাম।
পরিবেশটা অনেক ঠান্ডা ছিল। কিন্তু শরিলে শীতের প্রটেকশন ছিল। এজন্য তেমন একটা শীত লাগছিল না। নদীতে মাঝেমধ্যেই বড় বড় নৌকা যাচ্ছিল। আর সেই নৌকা যাওয়ার ফলে সৃষ্ট ঢেউ পাড়ে যখন আছড়ে পড়ছিল তখন শব্দগুলো খুবই সুন্দর লাগছিল। আর সাথে কফি, সবমিলিয়ে দুর্দান্ত একটা পরিবেশ। ওখানে আমরা প্রায় ২০ মিনিট মতো বসেছিলাম। এরপর ওখান থেকে উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। একটু পরেই সবাই ব্যাডমিন্টন খেলবে। কিন্তু আমি আজকে ব্যাডমিন্টন খেলব না ডিসিশন নিয়েছি। কারণ কমিউনিটিতে আমার কিছু কাজ আছে, যেগুলো রাতের মধ্যেই করতেই হবে। তো যাই হোক এরপর সোজা বাড়িতে চলে আসলাম । আর কোথাও দাঁড়াইনি। এটাই ছিল আজকে আমার ফটোগ্রাফির উদ্দেশ্যে ঘুরতে যেয়ে তেমন একটা ফটোগ্রাফি না করে, ঘুরে চলে আসার গল্প।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
কফি হাউজে যে রাস্তা দিয়ে গিয়েছেন আমার তো দেখে ভয় করছে। এতো সরু পথ দিয়ে বাইক চালালেন কীভাবে 😳। এবং ফটোগ্রাফি অসাধারণ হয়েছে। ফটোগ্রাফিতে একটি প্রত্তন্ত সবুজ গ্রাম তার পাশে বয়ে চলা জলরাশি এর একটা প্রভাব বুঝায় যাচ্ছিল। এবং বন্ধুবান্ধব সবাই একসঙ্গে কোথাও যেতে গেলে দেরী হবেই। কারণ একজন না একজনের সমস্যা বেধে যাবেই।
সুন্দর কমেন্ট। পড়ে ভাল লাগল। একদিন এদিকে ঘুরতে আসলে জানাবা । লোকেশন বলে দেব। ওখানে অনেক সুন্দর জায়গা।
গেছিলাম ভাই গত শুক্রবার। আবার পরীক্ষার পরে গেলে আপনাকে জানাব ইনশাআল্লাহ।
সব সময় অসাধারণ ছবি তুলেন ভাইয়া। আপনার ক্যালকুলেশন অনুযায়ী আপনার বন্ধু তেমন লেট করেছে বলে মনে হচ্ছে না। যেহেতু ৩.৩০ বের হবার কথা,বাইক চালিয়েছেন ১ ঘন্টা তার মানি ৪.৩০ এ যেয়ে পৌছানোর কথা। আর আপনারা ঠিক ৪.৩০ এই পৌছেছেন ভাইয়া।❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️
3:30 এ বের হতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার বন্ধুকে 3:10 রেডি হতে বলেছিলাম। প্লান করার পরে আবার আগে আগেই যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আগের প্লান অনুযায়ী যেতে হয়েছিল।
আচ্ছা এবার বুঝেছি ভাইয়া। ভালোবাসা রইল প্রিয় ভাই আমার।
আপনার ফটোগ্রাফি সম্পর্কে কি আর বলবো।যে কেউ এক বাক্যে বলতে বাধ্য অসাধারণ ফটোগ্রাফি।
সেই সঙ্গে আর্টিকেলটিও কম নয়।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
আপনার পোস্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনি নদীকেন্দ্রিক এলাকায় বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক সুন্দর সময় পার করেছেন। আপনার কাটানো সুন্দর মুহূর্ত গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
হুম।।। পুরোটাই।।
সত্যি ভাইয়া অনেকদিন আপনার ফটোগ্রাফি দেখি নাই আসলে আপনি খুব গ্রামীণ জীবনের সুন্দর মুহূর্ত তুলে ধরেন। আজকে পাটকাঠি গুলো খুবই সুন্দর লাগছে। সূর্যাস্তের ছবি এবং রাতের কফি অনেক ভাল ছিল ভাইয়া।
দাদার দিনতো দেখি বেশ যাচ্ছে। হঠাৎ এভাবে ঘোরা ফেরা আর ফটোগ্রাফি করা বেশ ভালই লাগে। পড়ন্ত বিকেলের ছবিটা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। লেখাগুলো যখন পড়েছিলাম তখন মনে হচ্ছিল কি যেন ঘাটতি আছে, কিন্তু সবশেষে কফির কাপটা দেখে সে ঘাটতিটা মিটে গেল। ভালো থাকুন সবসময়।
ভাইয়া আপনার ফটোগ্রাফি গুলো সত্যিই খুব অসাধারণ হয়েছে। সবগুলো ছবি আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে ।তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে বিকেল বেলা সূর্য অস্ত যাওয়ার ছবিটা। এত সুন্দর সুন্দর ছবি গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
দাদা আপনার ফটোগ্রাফি গুলোতে প্রকৃতি সুন্দর ভাবে ফুটে ওঠে। নদীর পানি মনে হয় শুকিয়ে যাচ্ছে। মানে শুষ্ম মৌসুম চলে এসেছে। আপনার ফটোগ্রাফির নতুন করে প্রসংশা করার আসলে কিছু নেই ভাইয়া তবে শেষের যে গোধূলির সময় তোলা পিক আমার কাছে মনোমুগ্ধকর লেগেছে।আর গরম গরম আলুর আর ডিমের চপ খেলেন এখন আমার খেতে ইচ্ছা করছে। ধন্যবাদ ভাইয়া সব থেকে বেশি ভালো লাগে আপনার ভ্রমণকাহিনী সাথে ফটোগ্রাফি করার ব্যাপারটা।
ছবিগুলি খুবই চমৎকার হয়েছে ভাই। আমি এমনিতেই আপনার ফটোগ্রাফির ভক্ত। তবে পোস্টটা পড়ে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময়ের কথা মনে পড়ে গেল। বহুবার এমন হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাইয়া আপনার ফটোগ্রাফি মানেই রিয়েল কিছু ভাবো। আপনি বরাবরই অনেক সুন্দর ফটোগ্রাফি করে থাকেন। যা শুধু সুন্দর বললেই নয় প্রতিভা জনক। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল অবিরাম।