ভ্রমণ স্মৃতিতে ফিরে দেখা
গত পরশুদিন আমি আবার ঘুরতে গিয়েছিলাম নীলফামারীর ডিমলায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজে। আমার জন্য এ জায়গাটা শুধু একটি দর্শনীয় স্থান নয়, বরং এর সাথে জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি, অনেক অনুভূতি। আমি একজন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ, নতুন নতুন জায়গা দেখা, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা, এবং হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির মাঝে ফিরে যাওয়া—এগুলো সবসময়ই আমাকে টানে। কিন্তু তিস্তা ব্যারেজ আমার জীবনের প্রথম দীর্ঘ ভ্রমণের স্মৃতিবিজড়িত স্থান।
প্রথম ভ্রমণ: ২০১৯ সাল
২০১৯ সালের দিকে, যখন আমি আমার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথমবার এত বড় সফরে বের হই, তখন থেকেই এই ভ্রমণের নেশা জন্মায়। সেই সফরের শুরু তিস্তা ব্যারেজ থেকে, এবং জীবনের প্রথম এত দীর্ঘ যাত্রার এক অপরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিলো আমার। আমি আজও মনে করতে পারি, সেই বিশাল ব্যারেজের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা, প্রকৃতির নীরব ভাষা শোনা, আর সাথে ছিল বন্ধুদের হাসি-আনন্দ। মনে হয় যেন পুরো পৃথিবী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমবার এত দূরে যাওয়া এবং সেখানকার প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার অভিজ্ঞতা কোনো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
ফেসবুকের মনে করিয়ে দেওয়া ছবিটি, সময়কাল: ২০১৯- ৩০ মার্চ। লোকেশন: নীলফামারী ডালিয়া
কিছুদিন আগে, ফেসবুকে হঠাৎ পুরানো স্মৃতি হিসেবে একটি ছবি সামনে আসে। সেই ছবি ছিলো ডালিয়া থেকে তোলা, যেখানে তিস্তা ব্যারেজের সৌন্দর্য ধরা পড়েছিল। ছবিটা দেখেই যেন স্মৃতির দরজা খুলে যায়। সেই দিনের সবকিছু একে একে মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায় প্রথমবারের ভ্রমণের মিষ্টি মুহূর্তগুলো। তিস্তা ব্যারেজের ঠান্ডা বাতাস, বন্ধুদের কোলাহল, আর শিক্ষকদের সান্নিধ্য—এসবই যেন আবার নতুন করে হৃদয়ে ভেসে উঠলো। অনেকটা সময় কেটে গেছে, কিন্তু সেই স্থান এবং স্মৃতি এখনও আমার মনে গেঁথে আছে। এই ছবিটা আমাকে যেন সময়ের স্রোতে টেনে নিয়ে গেলো, এবং আবারও সেখানে ফিরে যাবার ইচ্ছে হলো।
ছবি ২০১৯- ৩০ মার্চ। লোকেশন: নীলফামারী ডালিয়া
সেই টানেই পরশুদিন ছুটে গেলাম ডিমলায়, তিস্তা ব্যারেজের পথে। দীর্ঘ ৫ বছর পর আবার সেই জায়গায় পা রেখে মনে হলো, যেন ফিরে এসেছি আমার শৈশবের কোনো এক প্রান্তে। অনেক কিছুই বদলে গেছে, আবার অনেক কিছু আগের মতোই আছে। প্রকৃতির রূপ কিছুটা বদলেছে, কিন্তু তিস্তা নদীর সেই শান্ত জলরাশি এখনও আমার হৃদয়ে একইরকম ছাপ ফেলে। ব্যারেজের উপরে দাঁড়িয়ে নদীর জলধারা দেখতে দেখতে মনের কোণে জমে থাকা অনেক পুরোনো স্মৃতি ফিরে এলো।
ছবি, গত পরশুদিন 8 সেপ্টেম্বর ২০২৪। লোকেশন: নীলফামারী ডালিয়া
কিন্তু একটা জিনিস ছিল যা আর নেই—আমার ছোটবেলার খেলার সাথীরা, আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষকরা। তারা সবাই সময়ের স্রোতে কোথাও না কোথাও ভেসে গেছে। সেই সময়ে যাদের সাথে আমি এত আনন্দে ভ্রমণ করেছিলাম, তারা আজ আর আমার সাথে নেই। সবাই যার যার জায়গায় ব্যস্ত, কেউ কেউ হয়তো দূরে চলে গেছে, আর হয়তো দেখা হবে না। পৃথিবীর নিয়মই এমন যে, সময়ের সাথে সাথে সবকিছু বদলে যায়। কিছু কিছু জিনিস যেমন একই থাকে, তেমনি কিছু স্মৃতি হারিয়ে যায়। জীবনও বোধহয় এমনই, সময়ের হাত ধরে একদিন সবকিছু ভেসে যায় দূরে।
তিস্তা ব্যারেজে গিয়ে একটা বিষয় অনুভব করলাম, সময়ের সাথে কত কিছু বদলে গেছে। অনেক নতুন উন্নয়ন হয়েছে, জায়গাটার সৌন্দর্য বেড়েছে, কিন্তু কিছু কিছু জায়গা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিমলার প্রকৃতি, নদীর জলরাশি, আর আশেপাশের মানুষগুলো—সব কিছুই এক অন্যরকম অনুভূতি জাগিয়েছে আমার মধ্যে। জীবনের নানা পরিবর্তন সত্ত্বেও এই জায়গার নিরব শান্তি আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেল।
ছবি, গত পরশুদিন 8 সেপ্টেম্বর ২০২৪। লোকেশন: নীলফামারী ডালিয়া
এবারের ভ্রমণটা ছিলো এক ধরনের স্মৃতির পুনর্জাগরণ। ২০১৯ সালের সেই দিনগুলোর কথা ভেবে যেমন ভালো লেগেছে, তেমনি বাস্তবের রূপও আমাকে কিছুটা ভাবিয়েছে। জীবনের পথে সবকিছুই বদলায়, কিন্তু কিছু স্মৃতি থেকে যায় মনের গভীরে। আর এই তিস্তা ব্যারেজ আমার কাছে সেই স্মৃতির পথ।
আমি রিদওয়ান হোসাইন। পরিবারের শেষ সন্তানটি আমি। পড়াশোনা করছি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি নিয়ে। ভ্রমণ করা, গান গাওয়া ও শোনা এবং ফটোগ্রাফি করা আমার খুবই পছন্দ। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে লেখা শুরু করি, তাই "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব, আমার ভালোবাসা। নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানে নিজের মনের ভেতর জমে থাকা হাজারো কথা তুলে ধরা যায়।
সেই ২০০৯ সালে আমিও তোমাদের সাথে একবার গিয়েছিলাম এই ডালিয়া ব্রিজের মধ্যে। এখন দেখছি এই ব্রিজের অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ভাই তুমি এই জায়গার মধ্যে ঘুরতে গিয়েছিলা, দেখে বেশ ভালো লাগলো।আর তোমার ওই ফটোগ্রাফি গুলো দেখে আমার ২০০৯ সালের শিক্ষা সফরের কথা মনে পড়ে গেল।
খুব সুন্দর একটা মুহুর্ত ছিলো ভাই সেই ২০১৯। তবে তুমি ২০১৯ লিখতে গিয়ে ভূল করে ২০০৯ লিখে ফেলেছো
আসলে ভাইয়া ভ্রমণ করা ভালো। ভ্রমণ করলে জ্ঞান বৃদ্ধি হয়। অজানা জিনিস সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। তাই আমি বলব যখনই সুযোগ পাবেন এমন করার চেষ্টা করবেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দেখবেন এতে মন্ত্র করলে হবে এবং অনেক কিছু ধারণা পাবেন।
খুব সুন্দর করে বলেছেন আপু! ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সত্যিই অমূল্য। জ্ঞান বাড়ে, আর মনের দিগন্তও প্রসারিত হয়। আমি অবশ্যই নতুন নতুন জায়গা ঘুরতে চেষ্টা করবো