স্কুল জীবন আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর, নির্ভেজাল ও স্মৃতিময় সময়। এই সময়টাতেই আমরা জীবনের প্রথম বন্ধুত্ব, প্রথম স্বপ্ন, আর প্রথম সাফল্যের স্বাদ পাই। আমার স্কুল জীবনের দিনগুলো এখনো মনে পড়লে হাসি চলে আসে। বন্ধুদের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত যেন রঙিন ছবির মতো মনে ভেসে ওঠে।

প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময়ই শুরু হতো আমাদের আনন্দ। স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই একে একে একত্র হতাম। কেউ বলত, আজ স্যার না আসলেই ভালো হতো! সবাই হেসে উঠতাম। ক্লাস শুরু হতেই দুষ্টুমির পরিকল্পনা চলত গোপনে। কেউ পেছন থেকে খাতা টানছে, কেউ আবার বন্ধুর ব্যাগে চক বা কলম লুকিয়ে রাখছে। এই ছোট ছোট দুষ্টুমি যেন আমাদের বন্ধুত্বকে আরও গভীর করেছিল।

বিরতির ঘণ্টা বাজলেই যেন মুক্তির সঙ্গীত বাজত। আমরা সবাই মাঠের দিকে ছুটে যেতাম। কেউ ক্রিকেট খেলত, কেউ ফুটবল, কেউ আবার বেঞ্চে বসে গল্প করত। আমি আর আমার বন্ধু রাহাত মিলে প্রায়ই চোর-পুলিশ খেলতাম। কখনও হেরে গেলে বন্ধুরা ঠাট্টা করত, কিন্তু সেই হাসি-মজার মধ্যেই ছিল আসল আনন্দ। টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়ার সময়টাও ছিল বিশেষ। কারও মায়ের বানানো পরোটা, কারও আলুভাজা, আর কারও চকোলেট সবকিছুই ভাগাভাগি করে খেতাম। সেই টিফিনের স্বাদ আজও অন্য কোনো খাবারে পাই না।

স্কুলে নানা অনুষ্ঠানও ছিল আনন্দের উৎস। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, নববর্ষ, বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবকিছুর জন্যই আমরা দারুণ উচ্ছ্বসিত থাকতাম। আমি একবার কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম, বন্ধুরা সারাদিন আমাকে অনুশীলনে সাহায্য করেছিল। পুরস্কার পেলে ওরা আমার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছিল। সেই আন্তরিক বন্ধুত্ব আজও হৃদয়ে রয়ে গেছে।

একদিন বিদায় অনুষ্ঠানের সময় সবাই কেঁদে ফেলেছিলাম। মনে হচ্ছিল, এত বছরের হাসি-খুশির দিনগুলো হঠাৎ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম,এই বন্ধুত্ব কখনো ভুলব না। এখনো মাঝে মাঝে দেখা হলে সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায়, হাসির সঙ্গে একটু কষ্টও লাগে।

স্কুল জীবনের সেই বন্ধুত্ব, সেই হাসি, সেই খেলাধুলা,সবই আমার জীবনের অমূল্য সম্পদ। সময় চলে গেছে, কিন্তু সেই দিনগুলোর স্মৃতি আজও মন ভরিয়ে রাখে। জীবনের প্রতিটি ক্লান্ত দিনে যখন মন খারাপ হয়, তখন চোখ বন্ধ করলেই দেখি,আমরা সবাই স্কুলের মাঠে ছুটছি, হাসছি, মজা করছি। সত্যিই, বন্ধুদের সাথে স্কুল জীবনের সেই আনন্দময় মুহূর্তগুলো কখনো ভুলবার নয়।