কনকনে শীতের রাতে পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সাথে খোলা আকাশের নিচে পিকনিকের মুহূর্ত।

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago

হ্যালো..!!

আমার প্রিয় বন্ধুরা,

আমি @purnima14 বাংলাদেশী,

আজ- ২৮শে জানুয়ারি, মঙ্গলবার, ২০২৫খ্রিঃ

কভার ফটো


1000018870.jpg

কয়েকটি ছবি একত্রিত করে সুন্দর একটি কভার ফটো তৈরি করে নিয়েছি।



আমি আশা করি, আপনারা সবাই সুস্থ এবং সুন্দর আছেন। আমি নিজেও ভালো আছি। আমি সবসময় চেষ্টা করি নিজেকে হাসি খুশি রাখার। আমি "আমার বাংলা ব্লগের" মাধ্যমে আপনাদের সামনে আমার ক্রিয়েটিভিটি তুলে ধরবো।আমি আপনাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট শেয়ার করে থাকি। আজ আমি হাজির হয়েছি দারুন একটি পোস্ট নিয়ে।

পিকনিক করতে আমাদের সবারই ভালো লাগে। সবাই মিলে মজা করা, হাতে হাতে কাজ করা, একসাথে খাওয়া দাওয়া করতে কা না ভালো লাগে বলুন তো। সবাই সচরাচর ডিসেম্বর মাসে পিকনিক করে থাকে। আমরা ডিসেম্বর মাসের পিকনিক করতে চেয়েছিলাম। তবে আমি এক্সাম শেষ করে বাড়ি আসতে আসতে জানুয়ারি মাস পড়ে গিয়েছিল। জানুয়ারি মাসে বাড়ি আসতেই ভাই বোনেরা বায়না ধরল সবাই মিলে পিকনিক করবে। আমিও বললাম তাহলে চলো সবাই মিলে একদিন পিকনিক করা যাক।শীতের রাতে পিকনিক করতে বেশি ভালো লাগে। গ্রামীণ পিকনিকে শীতের রাতে পিকনিক করার শেষে জ্বলন্ত চুলায় আগুন পোহানো সে কি যে মজা সেটা উপভোগ না করলে বোঝা যাবে না। জানুয়ারি মাসে বাড়ি এসে ভাই বোন,মা বাবা, পাশের বাড়ির ভাই বোন এবং পাশের বাড়ির আন্টিরা মিলে ছোটখাটো একটা পিকনিকের আয়োজন করেছিলাম।কনকনে শীতের রাতে সবাই মিলে খোলা আকাশের নিচে পিকনিকে কেমন মজা করলাম সেটা আপনাদের সাথে আজ শেয়ার করবো।



1000018875.jpg

বাড়িতে আসতেই পাশের বাড়ির মামার ছোট ছেলেটা এসে বলল দিদি চলো পিকনিক করবো। তারা আরো বললো, আমার জন্য নাকি এখনো পিকনিক করে নাই। আমিও রাজি হয়ে গেলাম।বললাম, আচ্ছা সবাই মিলে পিকনিক করা যাবে। পরের দিন বিকেল বেলা মামার ছেলেটা এবং আমার ছোট বোন মিলে প্রথমে পিকনিক করার জন্য চুলা প্রস্তুত করতে শুরু করলো।আমরা পাশের বাড়ির মামিদের মাঝ উঠানো পিকনিক করার সিদ্ধান্ত নিলাম। যেহেতু আমরা ছোটরা মিলে গ্রামীন পিকনিকের আয়োজন করেছি সেজন্য আমাদের মেনুতে ছিলো খিচুড়ি, ডিম ভুনা আর বেগুন ভাজি।

1000018876.jpg

গ্রামীন পিকনিকে রান্না করার উপকরণগুলো দোকান থেকে না কিনে বাড়ি থেকেই সংগ্রহ করা হয়। আমি একটা পাতিলে আমাদের বাড়ি থেকে এবং মামিদের বাড়ি থেকে চাউল নিয়ে আসলাম। একে একে সব উপকরণ দুই বাড়ি থেকে নিয়ে উঠানে আসলাম। আমাদের সাথে আরো কিছু ছোট ভাই বোনেরা যোগ দিয়েছিল পিকনিক করার জন্য। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো বাড়ি থেকে কিছু না কিছু নিয়ে এসেছিলো।আমরা ছোটরা মিলে সমস্ত উপকরণ এবং পিকনিক করার জায়গা প্রস্তুত করে নিয়েছিলাম।এবার কে রান্না করবে সেই নিয়ে কথাবার্তা শুরু হলো। প্রথমে পাশের বাড়ির মামি রান্না করার উদ্যোগ নিলো।রান্না বসাতে বসাতে প্রায় রাত আটটা বেজে গেলো।প্রথমেই মামি চুলাতে ডিম সিদ্ধ করে নিলো

1000018877.jpg
যেহেতু শীতের রাত তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করতে হবে সেজন্য সবাই হাতে হাতে কাজ করতে শুরু করলাম। মামি আমাকে একে একে দেখিয়ে দিলো আমি বেগুনগুলো ভেজে নিলাম। তারপর ডিম গুলো ভেজে নিলাম। তারপর মামি সমস্ত রকম মসলা বেটে দিল আমার মা এসে ডিমটা রান্না করে ফেলল। এদিকে বাচ্চার এত ভীষণ মজা করছে। বাচ্চার আমার ফোনে মিউজিক দিয়ে সবাই মিলে নাচানাচি করছে। বাচ্চাদের সাথে দিদা, মামিএবং আমার মা গান গাইতে শুরু করল। সবাই মিলে মজা করতে করতে রান্নার কাজ বেশ ভালই এগিয়ে যাচ্ছিল।

1000018874.jpg

মায়ের ডিম রান্না শেষ হয়ে গেলে মা চুলায় ভাত বসিয়ে দিল আমি জ্বাল দিতে থাকলাম। খিচুড়ি রান্না করতে করতে খিচুড়ির জল শুকিয়ে গিয়েছিল আমি বুঝতে পারিনি। তারপর অনেকটা খিচুড়ি হাড়ের তলায় লেগে গিয়েছিল। তারপর জল দিয়ে কোনোমতে বাকি খিচুড়িটা রান্না করি নিলাম। রান্না শেষ হতে হতে প্রায় সাড়ে দশটা বেজে গিয়েছিল। এতটা সময় কিভাবে পার হয়ে গিয়েছিল আমরা বুঝতেই পারছিলাম না। সবাই মিলে নাচানাচি হইহুল্লোরে দারুন মজা হচ্ছিল। যেহেতু অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল সব বাচ্চাদের ক্ষুধা লেগে গেছিলাম। রান্না শেষ হচ্ছে ততক্ষণেও বাচ্চারা নাচানাচি করছিলো।

1000018873.jpg
রান্না শেষ হতে না হতেই মামি উঠানে মাদুর পেতে দিলো।আগে থেকে ঘরে থাকা ওয়ান টাইম প্লেটে খাওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। মামার ছোট ছেলেটা প্লেটগুলো নিয়ে আসলো এবং আমি সেগুলো একে একে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিলাম। একে একে সবাই মাদুরের চারিপাশে গোল হয়ে বসে পড়লাম। আমিও তাদের সাথে বসে পড়লাম। মা এবং দিদা মিলে সবাইকে খাবার পরিবেশন করছিল। বাচ্চারা ততক্ষণে খেতে শুরু করে দিয়েছে। আমি মা এবং দিদাকে জোর করলাম আমাদের সাথে খেতে বসার জন্য। তারপর অনেক জোড়াজড়িতে সবাই মিলে একসাথে খেতে বসলাম।

1000018872.jpg
সবাই মিলে একসাথে খেতে খেতে গল্প করতে ভীষণ ভালো লাগছিলো।রান্না গুলো বেশ ভালো হয়েছিল। আমি খিচুড়ি রান্না করতে গিয়ে যদিও একটু সমস্যা করে ফেলেছিলাম। খিচুড়ি দেখতে খুব একটা ভালো না হলেও খেতে বেশ ভালোই লাগছিল। সবাই মিলে গল্প আড্ডায় খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম। বাচ্চারা তো খেয়ে দেয়ে শীতে কাঁপতে থাকলো।আমি গরম চুলার পাশে বসে পড়লাম ওরা আমার সাথে সাথে এসে বসে পড়লো

1000018874.jpg
শীতের রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে এই চুলার পাড়ে আগুন পোহানোর কি যে মজা উপভোগ না করলে বোঝা যাবে না। বাচ্চাদের সাথে বেশ মজা করে আগুন পোহাচ্ছিলাম। তারপর মামার ছোট ছেলেটা কিছু খড়কুটো এবং খড়ি দিয়ে চুলার মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিলো।জোরে জোরে আগুন জ্বলতে থাকল। আমরা সবাই চাইপাশে বসে আগুন পোহাতে থাকলাম।

1000018871.jpg
বেশ কিছুক্ষণ আমরা আগুন পোহালাম। রাত তখন অনেক হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকটি বাচ্চার চোখে ঘুম চলে এসেছে। বড়দের থেকে বাচ্চারা বেশি মজা করেছে। নাচে গানে ভরিয়ে রেখেছিল পুরো সময়টা। বাচ্চাদের ঘুম চলে আসায় সবাই ঘুমোনোর জন্য যে যার বাড়ি চলে গেল। ততক্ষণে বড়রা সবাই বাসনপত্র পরিষ্কার করে ফেলেছিল। তারপর সবাই মিলে বাড়িতে চলে আসলাম।
গ্রামীণ পিকনিকের মজাদার একটা সময় কাটিয়েছিলাম সেদিন। খুব ভালো লেগেছিল বাচ্চাদের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত। সবাই মিলে এরকম মুহূর্ত কাটালে মুহূর্তটা স্মরণীয় হয়ে থাকে। গল্প, গান, আড্ডা এবং খাওয়া দাওয়াই দুর্দান্ত মুহূর্ত ছিলো।কনকনে শীতের রাতে, রাতের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, চারিপাশে কুয়াশা, মাঝ উঠানে পিকনিক করার মজাই আলাদা।
আজ এই পর্যন্তই।



ছবির বিবরণ

ডিভাইস: গুগল পিক্সেল ৭ প্রো
ক্যামেরা: ৫০ মেগাপিক্সেল
তারিখ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫খ্রিঃ
লোকেশন:কুষ্টিয়া



প্রিয় বন্ধুরা,আমার আজকের ব্লগটি কেমন হয়েছে আপনারা সবাই কমেন্টের মাধ্যমে অবশ্যই মন্তব্য করবেন, সামান্য ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সুপরামর্শ দিয়ে সবসময় পাশে থাকবেন। আবার দেখা হবে নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে শীঘ্রই, ততক্ষণে সবাই সুস্থ ও সুন্দর থাকবেন।



আমি কে !

Screenshot_20231102_205038_Facebook-01.jpeg

আমি পূর্ণিমা বিশ্বাস, আমার ইউজার নেম @purnima14। আমি আমার মাতা-পিতা এবং নিজের মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে ভালবাসি। আমি হৃদয় থেকে ভালবাসি সৃষ্টিকর্তা ও তার সকল সৃষ্টিকে। আমি বর্তমানে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সিভিল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে লেখাপড়া করছি। আমি ভ্রমণ করতে, কবিতা লিখতে ও আবৃত্তি করতে, গান শুনতে, যেকোনো ধরনের রেসিপি তৈরি করতে ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের ফটোগ্রাফি করতে অনেক পছন্দ করি। "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটিতে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত



সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
@purnima14



VOTE@bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png
OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

standard_Discord_Zip.gif

Sort:  
 2 days ago 
1000019132.png1000019145.png1000019146.png

Daily task

 2 days ago 

শীতকালে কিন্তু এরকম পিকনিক করার মজাই আলাদা। নিঃসন্দেহে আপনারা দারুন সময় উপভোগ করেছেন। আর রান্নার পর আগুন পোহাতে পারাটা আরো মজার ব্যাপার।

 2 days ago 

আপনার অপেক্ষায় বাকিদের পিকনিক হয় নি তবে ডিসেম্বরে! শীতের রাতে সকলে মিলে পিকনিক করার মজা আসলে অন্য কিছুর সাথে তুলনায় চলে না। ডিম ভুনা, বেগুন ভাজি আর খিচুড়ি - আর কি লাগে! তবে ব্যাপার না, তলায় লেগে কিছুটা এক্সট্রা ফ্লেভার এড করেছে আর কি! তবে বেশ গান,হাসি আর মজা করেছেন বোঝাই যাচ্ছে। বেশ ভালো লাগলো।

 2 days ago 

আসলে পিকনিকের আয়োজনটা শীতের রাতে বেশি ভালো মানায়। গরমের সময় তো রান্না কাজ সম্ভব নয়। তাই আমরা সবাই শীতের সময় পিকনিকের আয়োজনটা একটু বেশি করতে পছন্দ করি। ঠিক তেমনি আপনাদের সুন্দর এই পিকনিক দেখে ভালো লাগলো। চমৎকার আয়োজন করেছেন আপনারা।

 2 days ago 

আসলে ছোটবেলায় যখন আমি গ্রামে বসবাস করতাম তখন প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিলেমিশে এই ধরনের পিকনিক করতাম। কিন্তু এখন শহরে জীবন হয় এই ধরনের প্রতিবেশীদের যেমন পাই না ঠিক এই পিকনিক গুলোকে অনেক মিস করি। আজ আপনার পোস্টটি পড়তে পড়তে সেই আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। এত সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 days ago 

আপু আপনার পিকনিকের ফটোগ্রাফি দেখে কিছুদিন আগের কথা মনে পড়ে গেলো। আমিও এবার গ্ৰামে গিয়ে সবাইকে নিয়ে এমনি একটি পিকনিকের আয়োজন করেছিলাম। কনকনে শীতের রাতে সবাই মিলে এই আনন্দ করাটা খুবই ভালো লাগে। বিশেষ করে রান্নার শেষে সবাই মিলে বসে একসাথে খাওয়া দাওয়া করতে খুব ভালো লাগে। বাড়িতে সবাই মিলে পিকনিক করলে বাচ্চারাই সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায়। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য।

 2 days ago 

শীতকালে খিচুড়ির পিকনিক আমাদের কাছে তো একেবারেই নস্টালজিয়া। ঠিক এভাবেই পিকনিক টি সম্পন্ন হয় যেমন কিছুটা আপনার মা কিছুটা আপনি কিছুটা আপনার মা কিছুটা মামি মিলে রান্না করেছেন। তারপর সকলে মিলে একসাথে পাত পেড়ে বসে খাওয়া তার আনন্দই আলাদা। পিকনিকের গল্প পড়ে যত না ভালো লেগেছে সত্যি কথাই আপু আপনার ছবিগুলো অসাধারণ।

 2 days ago 

আসলে মাঝে মাঝে পরিবারের সাথে এরকম মুহূর্ত উপভোগ করা উচিত। যেটা অনেক আনন্দের হয়ে থাকে। আমরা প্রতিনিয়ত পিকনিক করে থাকি যেটা হয়তো একসময় মিস করব। এই মুহূর্তগুলো দেখলে অনেক ভালো লাগে।

 yesterday 

শীতের রাতে সবাই মিলে পিকনিক করার মজাটাই আলাদা। পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সাথে পিকনিক করেছিলেন শুনে অনেক ভালো লাগলো। নিশ্চয়ই অনেক ভালো মুহূর্ত কাটিয়েছিলেন। আমার কাছে তো এটা দেখে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। আপনাদের পিকনিক করার পুরো মুহূর্তটা সুন্দর করে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই।