|| জেনারেল রাইটিং: এক সংগ্রামী বৃদ্ধ মহিলা ||
নমস্কার বন্ধুরা
আজ আমি আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি আবারও নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আমার আজকের পোস্টটি এক বৃদ্ধ ঠাকুমাকে নিয়ে, যাকে আমি প্রায় ট্রেনের কামরায় দেখে থাকি। চলুন তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
সপ্তাহে কম করে ৪-৫ দিন ট্রেন জার্নি আমার হয়েই থাকে। আগে অবশ্য বাঁধাধরা ৭ দিনই ট্রেনে চড়া পড়তো। তখন থেকেই চিনি এই ঠাকুমাকে। চিনি বলতে শুধু মুখ দেখেই চিনতাম, তবে ব্যক্তিগতভাবে একেবারেই চিনতাম না। তবে গত সোমবার দিন আবার তার দেখা পেলাম সেই দিন অবশ্য তাকে শুধু মুখ দেখেই চিনলাম না তার সম্পর্কেও কিছু কথা জানলাম।
কলেজে থাকাকালীন যখন অশোকনগরে টিউশন পড়তে যেতাম , তখন ফেরার পথে বিকাল ৪:৫৩ এর বনগাঁ - শিয়ালদা লোকালে বিকাল প্রায় ৫:৩০ নাগাদ গুমা স্টেশন থেকে দেখা হতো প্রায় ৭৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ মহিলার সাথে।" দিদিভাই, চাউমিন আছে পাঁপড় আছে নেবে নাকি?" এই সুরেই তার সাথে প্রথম দেখা। প্রথম দেখাতেই খুব অবাক হয়েছিলাম, এত বৃদ্ধ একজন মানুষ দুই হাতে দুটো বড় বড় ব্যাগ যার এক একটিতে দশ কেজি করে জিনিসপত্র তো আছেই। যেমন অবাক হলাম, তেমনি দেখেই খুব খারাপ লাগলো সেই বৃদ্ধ মানুষটিকে। এত বেশি বয়সেও এতটা পরিশ্রম করতে হয় তাকে ,এটা ভেবেই মনের মধ্যে একটা মায়া কাজ করছিল।
বেশ কিছুক্ষণ তার দিকেই তাকিয়ে থাকলাম, খুব বেশি মানুষ যে তার কাছ থেকে জিনিস কিনছিল তা কিন্তু নয় ,আসলে সবার প্রয়োজন তো সবসময় সব জিনিসের থাকে না ,সেই জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া মানুষ সবসময় কেনই বা কিনবে ! তবে তাকে দেখে আমি তার থেকে এক প্যাকেট চাওমিন নিয়েছিলাম। প্রতি সপ্তাহে রবিবার করে আমি যখন পড়তে যেতাম ঠিক একই ট্রেনে একই সময়ে তার সাথে আমার দেখা হতো। আর আমি তখন তার থেকে এক প্যাকেট করে চাওমিন কিনতাম। খুব বেশি লোকে না কিনলেও মোটামুটি খারাপ বিক্রি তার হতো না।
অনেক প্রশ্ন ছিল মনের মধ্যে, কিন্তু কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি। এই ভাবেই প্রায় চার মাস আগে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে গেছে তাই ওই ট্রেনে আর খুব বেশি দরকার থাকে না বলে আর যাওয়াও হয় না আর এই চার মাস তার সাথে দেখাও হয়নি। কিন্তু গত সোমবার যখন ওই একই ট্রেনে করে ফিরছিলাম বনগাঁ থেকে , ঠিক তখনই গুমা স্টেশন থেকে আবারও ওই একই ডাক শুনতে পেলাম। পিছন ঘুরে তাকাতেই আগের সেই বৃদ্ধ মানুষটিকে দেখতে পেয়েই খুব খুশি হলাম নিজের মনেই। আমাদের দিকে আসতে না আসতেই, আর একজন বৃদ্ধ মহিলা তার কাছে জিজ্ঞেস করল, "এত বৃদ্ধ বয়সেও আপনি এত বোঝা নিয়ে কিভাবে চলাফেরা করেন ?কষ্ট হয়না! "
বৃদ্ধা ঠাকুমা , একটা মুচকি হাসি দিয়ে তার কপালে হাত দিয়ে দেখালো। তারপর বলল , "একটাই মেয়ে ছিল আমার প্রায় পাঁচ বছর আগে বিয়ে দিয়েছিলাম, জামাই বেশ ভালোই কাজ করতো, প্রায় তিন বছর আগে মেয়ের দুটো যমজ বাচ্চা হয়েছে, তারপর হঠাৎ করেই মেয়ে খুব অসুস্থ হয়ে গিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই মারা গেল দুটো যমজ বাচ্চাকে আমার কোলে দিয়ে। জামাইয়ের হার্টের অসুখ ধরা পড়েছে তার কিছুদিনের মধ্যেই, তাই সে আর কাজ করতে পারেনা। বাড়ির লোকেরা তার চিকিৎসা করছে। কিন্তু যমজ ওই দুধের শিশু দুটোকে তো দেখার কেউ নেই, তাই বাধ্য হয়েই ওদের মুখে দুটো খাবার যোগাড় করার জন্য, আমি এরকম ট্রেনে করে খাবার জিনিস বিক্রি করতে বের হয়েছি। খুব কষ্ট হয়, বাড়ির সমস্ত কাজ সেরে বিকেলের দিকে ট্রেনে করে বের হতে এই ভারী বোঝা নিয়ে কিন্তু ছেলে মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে বাধ্য হয়ে বের হই এই বয়সেও।"
ঘটনাটা শোনার পর মনে মনে অনেক খারাপ লাগছিল, আমার আশেপাশে থাকা কয়েকজন মানুষেরও হয়তো ঠিক এরকমটাই হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল অল্প কিছু হলেই আমরা ভেঙে পড়ি, মনে করি জীবন কত কঠিন ,কিন্তু জীবন যে আসলে কতটা কঠিন তা এইরকম সংগ্রামী মানুষেরাই জীবনের প্রতি পদে পদে টের পাচ্ছে। ভগবান এইসব মানুষদেরকে সুস্থ রাখুক পরিশ্রম করার ক্ষমতা দিক এটাই কামনা করি।
পোস্ট বিবরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|
অনেক সুন্দর একটি গল্প জানতে পারলাম বৃদ্ধ মহিলার জীবনী নিয়ে। আসলে অনেক মানুষ রয়েছে এভাবেই সংগ্রাম করে নিজেকে টিকিয়ে রাখে দুনিয়ার বুকে। হয়তো বৃদ্ধ হয়ে গেছে তারপরেও জীবন জীবিকার নির্বাহের জন্য এই বৃদ্ধ বয়সে অনেক কিছু বিক্রয় করে বেড়াচ্ছেন। যাইহোক আপনার পোষ্টের মাধ্যমে শুধু মহিলার জীবন নিয়ে নয়, আপনার অনেক কিছু জানার সৌভাগ্য হলো সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
গল্পটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম ভাই। অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
আসলে জিবন কতোটা কঠিন তা ঠাকুমার মতো মানুষকে না দেখলে বোঝা যায় না।আর এমন কাউকে দেখলে নিজের প্রতি নিজের জিবনের প্রতি আর কোন অভিযোগ থাকে না।ঠাকুমার মেয়ে দুটো জমজ বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর না ফেরার দেশে চলে গেছে। জামাই অসুস্থ আর এই ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে এই বয়সে এসে ঠাকুমাকে এমন কঠিন জিবন সংগ্রামের পথে নামতে হয়েছে। গায়ের লোম কাটা দেয়ার মতো পোষ্টি আপনার দিদি।ভালো থাকুন ঠাকুমা ও ঠাকুমার পরিবার এই কামনা করি।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু, ঠাকুমার মতো এরকম কারো জীবন দেখলে নিজের জীবনের প্রতি আর কোনো অভিযোগ থাকে না।
আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের জীবন বড়ই কঠিন। এক সংগ্রামী বিদ্য মহিলার গল্প আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন, যেটা পড়ে আমার সত্যি অনেক খারাপ লেগেছে। নিজের নাতি এবং নাতিনের জন্যই এত কষ্ট করছেন তিনি। নিজের মেয়ের দুটো জমজ বাচ্চাকে রেখে মা মারা গিয়েছে এটা জেনেও খুব খারাপ লেগেছে। তাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য এখন তিনি এত ওজনের জিনিসপত্র নিয়ে সেগুলো বিক্রি করছে। এরকম মানুষগুলোর জন্য দোয়া করি যেন তারা ভালো থাকে এবং সুস্থ থাকে।
পোষ্টটি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
আসলে প্রত্যেক মানুষের জীবনে সংগ্রাম আছে। তবে এই বৃদ্ধ মহিলার কাহিনী জেনে সত্যি অনেক খারাপ লাগলো। নিজের মেয়ের দুটো জমজ সন্তানকে লালন পালন করার জন্য সে অনেক কষ্ট করতেছে। ভাগ্য খারাপ দুটো সন্তান রেখে তার মেয়ে মারা গেল। এবং মেয়ের হাজবেন্ড ও সুস্থ। এত বৃদ্ধ মহিলা তার মেয়ের বাচ্চা নিয়ে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। বাস্তব একটি গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
পোষ্টটি পড়ে অনেক সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য,অনেক ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
আমি দুই থেকে তিনবার ট্রেন জার্নি করেছিলাম এবং আমার ট্রেন জার্নি করতে ভীষণ ভালো লাগে বাসের থেকে। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি এত পরিশ্রম করতেছেন। আসলে বাস্তবতা অনেক কঠিন। ঢাকা শহরে আমি দেখতাম এরকম দৃশ্য। ভীষণ খারাপ লাগতো মায়া লাগতো। ঘটনাটি আমার খুবই খারাপ লাগলো যে তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল এবং মেয়েটাও মারা গেলে এবং জমজ বাচ্চার দায়িত্ব তাকে দেয়া হলো। জামাইটা অনেক অসুস্থ তারও চিকিৎসা করা হচ্ছে। তিনি এই বৃদ্ধ বয়সে দুটি খাবার জোয়ার জন্য কত সংগ্রাম পরিশ্রম করছে। এগুলো সত্যি বলতে অনেক মায়া লাগে অনেক। আমি গল্পটি শুনে খুবই কষ্ট পেলাম ও মনের ভিতর ব্যতীত হলাম। আমি মন থেকে দোয়া করি সে যেন অনেক সুন্দর ভাবে সকলে মিলে জীবন যাপন করতে পারে যে কয়টা দিন তিনি বেঁচে থাকবেন। আপনি ঠিক বলেছেন আমরা একটু কিছু না পেলেই কত কিছু ভেবে ভেঙে পড়ে কিন্তু মানুষের জীবন কতটা কঠিন সংগ্রামী। আমাদের নিজ নিজ অবস্থানে আমাদের শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
এরকম দৃশ্য গুলো দেখলে আসলেই অনেক দুঃখ আর মায়া লাগে। যাইহোক, ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দায়িত্ব মানুষকে অন্যরকম করে দেয়। ট্রেনে যাতায়াত করার সময় এই বৃদ্ধ মহিলাটি আপনি চেনেন। এবং মহিলাটি এই বয়সে রেলস্টেশনে দেখেন। আলাপ করে জানতে পারলে মহিলাটির একটিমাত্র মেয়ে তার দুটি সন্তান দেখে মারা গেল। আসলে মেয়ের আমানতগুলো বৃদ্ধ মহিলাটি শত কষ্ট করে লালন পালন করার চেষ্টা করতেছে। আসলে দায়িত্বটা এতই বেড়ে গেল মহিলাটির এই শরীরেও সে তাদের খাওয়া দাওয়া যোগানোর জন্য চেষ্টা করতেছে। বাস্তব একটি গল্প শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাই, পোষ্টটি পড়ে একটি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।