ক্রাইম এখন মানুষের কাছে সমাধান মনে হয়।

কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।

সোর্স

আমরা যতই উন্নত সমাজের দিকে পা বাড়াচ্ছি ততই আমাদের মধ্যে মায়া-দয়া ভাব ভালোবাসা দ্বিগুণ গতিতে কমে যাচ্ছে। মানুষ বর্তমানে সহজ রাস্তা ছেড়ে কঠিন রাস্তা বেশি পছন্দ করে। অল্প একটু কষ্ট করলেই যে কাজটি হয়ে যায় সেই কাজ করতেও মানুষের যেন অনেক বেশি কষ্টকর মনে হয়। মানুষ দিন দিন এমনই হয়ে যাচ্ছে যে সহজ পথ অবলম্বন না করে জটিল পথে হাঁটতে ভালবাসে। সেই জন্যই আমাদের সমাজে বর্তমানে ক্রাইম অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে। কারণ মানুষ এই সহজ পথ অবলম্বন না করে কঠিন পথ বেছে নিচ্ছে। মানুষের ইগো এতটাই মানুষের মস্তিষ্ক চালনা করছে যে তাদের মস্তিষ্ক কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল সেটা বোঝার ক্ষমতা হারাচ্ছে। তাই মানুষ প্রতিনিয়ত সঠিক কাজটি না করে ভুল কাজটি বেশি করা শুরু করেছে। যেখানে সহজেই কথাবার্তার মাধ্যমে একটা সমাধান করা যায় সেখানে মানুষ ক্রাইম করে ফেলছে। আমাদের সমাজের এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে মানুষ নত হতে রাজি নয় কিন্তু ক্রাইম করতে রাজি হয়। বাবা মাকে নিজের ভালোবাসার মানুষের কথা বলায় যদি মা-বাবা রাজি হয়তো ভালো আর যদি না রাজি হয় তাহলে মা-বাবাকে রাজি করার তত বেশি চেষ্টা না করে তাকে মেরে ফেলাই যেন সহজ রাস্তা বলে সন্তানের মনে হয়। তেমনি সন্তান যদি কোন ভুল কাজ করে বাবা মা তাকে সঠিক কাজটি বোঝানোর থেকে সন্তানকে মেরে ফেলা সঠিক বলে মনে করে।

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হলে একসাথে থাকা সম্ভব না হলে বা ভালোভাবে সংসার করতে না পারলে অথবা সংসারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হলে একে অপরের সাথে কথা বলে সেই সমস্যার সমাধান করতে বর্তমানে যেন স্বামী-স্ত্রী কেউই আগ্রহী হয় না। কিন্তু তার পরিবর্তে এসব সমস্যার সমাধান যেন বেছে নিচ্ছে একে অপরের হত্যা। আসলে একে অপরকে হত্যা করলে কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? এ কেমন সমাজ ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে? চারিদিকে শুধু হত্যা আর ক্রাইমে ঘিরে রয়েছে সমাজ। ইগো এতটাই মানুষের মস্তিষ্ক কন্ট্রোল করছে যে কেউ কাউকে কোন অপমানজনক কথা বললেই অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাকে হত্যা করে দিচ্ছে। এর থেকে তুচ্ছ ক্রাইম হয়তো আর দুনিয়ায় হয় না কিন্তু এটাও বর্তমানে হতে দেখা যাচ্ছে। আমরা খবরের চ্যানেল দেখলেই প্রতিদিন এত ভয়াবহ হত্যার ঘটনা, একে অপরকে মেরে ফেলার ঘটনা দেখতে পাই যা দেখলেই আমাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়ে যায়। সামান্য থেকে অতি সামান্য ব্যাপারেও মানুষ মানুষকে খুন করতে দ্বিধাবোধ করে না। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে মাদকদ্রব্য খাইয়ে মেরে ফেলছে, অপরদিকে স্ত্রী পরকীয়ার ফাঁদে পড়ে স্বামীকে মেরে ফেলছে, আবার স্বামী পরকীয়ায় পড়ে স্ত্রীকে খুন করছে। বাবা মা প্রেমিকের সাথে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় সন্তান বাবা মাকে মেরে ফেলছে। এসব খবর দেখলে নিজের পরিবারের প্রতি বিশ্বাস যেন নিমেষেই উঠে যায়।

বর্তমান যুগে প্রেম ভালবাসা করে বিয়ে হোক বা পারিবারিকভাবে বিয়ে সবেতেই ভয় জড়িয়ে রয়েছে। বর্তমান যুগ তো এমন এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে দেখা যায় প্রেমিক বা প্রেমিকার মধ্যে যে কোন একজনের সম্পর্কে আর থাকতে ভালো না লাগলে অন্যজনকে এই সাধারণ ছাড়াছাড়ির বা ছেড়ে যাওয়ার কথাটা বলতে না পারায় বা বলা সত্ত্বেও প্রেমিক বা প্রেমিকা ছাড়তে চাইছে না জোরাজোরি করছে যে কারণে তাকে হত্যা করে ফেলা হচ্ছে। আবার ভাই বোনের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে কাড়াকাড়ি করার জন্য একে অপরকে হত্যা করার নির্মম পরিকল্পনাও বর্তমান যুগে হচ্ছে। এমনকি এই সম্পত্তির কারণে বাবা-মা এবং সন্তানের মধ্যেও খুন-খুনি হতে দেখা যায়। এমন জঘন্য কারণ একটা মানুষের প্রাণ নেওয়ার জন্য হতে পারে সেটা ভাবাই যায় না। বর্তমানে কারোর প্রাণ অতীব তুচ্ছ একটি জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন ঘরের ময়লা নোংরা ফেলার মতন। যখন তখন যে কোন মানুষের সাথে না পোষালেই সেই মানুষকে মেরে ফেলা যায়। আর এইসব জঘন্য কাজ বেড়ে চলেছে সঠিক শাস্তির ব্যবস্থা না থাকার জন্য। বিকৃত মস্তিষ্ক মানুষেরা এইসব চিন্তাভাবনা করতে পারে। আসলে আমরা সমাজে চারিদিকে দেখতে পাই খুবই জঘন্য অপরাধ করে মার্ডার করে, বড় বড় ক্রাইম করেও অনায়াসে শাস্তি না পেয়ে ঘুরে বেড়ায় আমাদের চারপাশে। আর এইসব অপরাধীর শাস্তি দেওয়াও এত বেশি কষ্টকর আইন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে।

কারন আমার মনে হয় আমাদের দেশের আইন ব্যবস্থা অনেক বেশি দুর্বল। এজন্যই অনায়াসে এসব বিকৃত মস্তিষ্ক মানুষেরা নির্দ্বিধায় ক্রাইম করে আর আমাদের সমাজের বুকেই আরামে বসবাস করে। এইসব বিকৃত মানুষেরা বুঝে গেছে যে ক্রাইম করলেও ছাড়া পাওয়া যায়। যার ফলে এরা প্রতিনিয়ত ক্রাইম করে চলেছে এবং নিজের সাথে সাথে অন্যদেরও প্রতিনিয়ত ক্রাইমের পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যার ফলে আমাদের সমাজের প্রতিনিয়ত ক্রাইম বেড়ে চলেছে। সুস্থ মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনা বর্তমানে যেন মানুষ ভুলতে চলেছে। সহ্য করা, ধৈর্য ধরা, ভালো পথে চলা এবং সর্বদা সৎ কর্ম করা এই সব যেন বর্তমান মানুষের জানাই নেই। তবে আমাদের হেরে গেলে চলবে না আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে হবে এইসব বিকৃত মস্তিষ্ক মানুষদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার। আমাদের সমাজকে ভালোভাবে ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে, যেন আমাদের সমাজটা অনেক ভালো দিকে এগিয়ে চলে এবং সুস্থ মস্তিষ্কের সুস্থ চিন্তাভাবনার অধিকারী হয়। শিক্ষার আলোতেই একমাত্র আমাদের সমাজ আলোকিত হতে পারবে। তাই সঠিক শিক্ষা দিতে হবে যাতে আমাদের সমাজের ক্রাইম বন্ধ হতে পারে এবং সমাজের মানুষ মিলে মিশে সুখে শান্তিতে একসাথে ভালো ভাবে চলতে পারে।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।