একজন নারীর ত্যাগের কাহিনী। বাস্তবিক গল্প। শেষপর্ব।

in আমার বাংলা ব্লগ10 days ago


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17567193140601086595074253879385.jpg


সোর্স



মেয়েটির শ্বশুর বাড়িতে বিয়ে করে এসেছিল জীবন একটু শান্তি পেতে, কিন্তু এখানে এসে খুব একটা শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারছিল না। শ্বশুরবাড়ির চাপে পড়ে একটার পর একটা কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে গেছে মেয়েটি শুধুমাত্র একটি পুত্র সন্তানের আশায়। যদিও পুত্র সন্তানটির চাহিদা ছিল মেয়েটির শ্বশুর বাড়ির লোকের। কিন্তু এমনটা নয় যে মেয়েটির স্বামী সেটা চাইত না। মেয়েটির স্বামী ও প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যেত যে তার যেন একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। আগেকার সমাজে যেহেতু পড়াশোনা খুব একটা কেউ করত না এবং অবৈধ ছিল অধিকাংশ মানুষ তাই পুত্র সন্তানের জন্ম এবং কন্যা সন্তানের জন্ম যে ছেলেদের ওপরই নির্ভর করে সে সম্পর্কে তারা জানতো না, সুতরাং মেয়েটির উপরেই প্রতিনিয়ত প্রেসার ক্রিয়েট করা হতো এবং মেয়েটিকেই দোষারোপ করা হতো। পরপর চারটি কন্যা সন্তানের জন্মের পর মেয়েটি এবং তার স্বামী সিদ্ধান্ত নিল যে তারা আর সন্তান নেবে না। মেয়েটিকে সারা জীবন পুত্র সন্তানের জন্য যেমন কথা শুনতে হতো তেমন বিভিন্ন ধরনের শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার তার ওপরে করাই হতো। তার প্রাণের প্রিয় স্বামী যে তাকে ভালোবেসে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছিল সেও দিনে দিনে তার প্রতি অবহেলা এবং অবিচার শুরু করে দিয়েছিল।


যেহেতু মেয়েটি এবং মেয়েটির স্বামী দুজনেই চাকরি করতো তাই দু'জনকেই অফিসে যেতে হতো, কিন্তু বাস্তব এতটাই কঠিন যে মেয়েটির স্বামী অফিস থেকে এসে একটু বিশ্রাম করেনি তো যে সারাদিন তার অনেক খাটাখাটনি এবং পরিশ্রম হয়েছে, কিন্তু মেয়েটিকে অফিস থেকে বাড়িতে আসার পরেও তার সন্তানদের দেখাশোনা করা, রান্নাবান্না করা এবং সংসারের যাবতীয় সব কাজকর্ম দেখতে হতো। বিশ্রাম বলে মেয়েটির জীবনে কিছুই ছিল না এমনকি শান্তিও ছিলনা। মেয়েটিকে বোঝার মত একটি মানুষও সেই পরিবারে ছিল না এমনকি তার স্বামী ও তাকে একটুও বুঝতো না তার কষ্টটা অনুভব করত না। মেয়েটি ধীরে ধীরে বাস্তবের আঘাত পেয়ে হাসতে ভালো থাকতে পুরোপুরি ভুলে গেছিল। সব সময় পরিবারের কথা ভাবতে গিয়ে এবং সন্তানের কথা চিন্তা করতে গিয়ে এবং সারাদিন বিশ্রামহীন পরিশ্রম করতে করতে নিজের প্রতি একটু খেয়াল রাখতেই ভুলে গিয়েছিল এবং শরীরের যত্ন একদমই নেয়া হতো না মেয়েটির। ধীরে ধীরে মেয়েটির বয়স বাড়তে লাগলো, তার মেয়েদের একে একে বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু তার মেয়েরা প্রতিনিয়ত পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধ মা-বাবার অর্থাৎ মেয়েটির আর মেয়ের স্বামীর যত্ন নিতে থাকতো।


সেই মেয়েটি কখনোই তার শ্বশুরবাড়ির অযত্নের কথা কখনোই ছোট মেয়েদের বলতো না তবে যখন মেয়েরা বড় হল এবং বিয়ে করে সংসার কি জিনিস সেটা বুঝতে শিখলো তখন সেই মেয়েটি তার মেয়েদেরকে জীবনের কষ্টের কথা একটু একটু করে শেয়ার করতো। কতটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছে সেই মেয়েটি তার শ্বশুরবাড়িতে এবং তার স্বামী অর্থাৎ মেয়েগুলোর বাবা কতটা অবহেলা করেছে তার পুরো জীবনে এবং কতটা অযত্নে রেখেছে সেটা মেয়েটি তাদের বলতো। আসলে হয়তো মেয়েটি কখনোই তার মেয়েদের তার জীবনের দুঃখের দিনগুলোর কথা কখনোই বলতো না বলার কারণ হলো সেই মেয়েটির অনেক বড় রোগ ধরা পড়েছিল এবং বিভিন্ন ছোট ছোট রোগ মেয়েটির শরীরে দেখা দেয়। যার ফলে মেয়েটির আয়ু একদমই কমে আসে অপরদিকে মেয়েটির স্বামী একদম সুস্থ এবং সতেজ রয়েছে যেন তার বয়সী হয়নি অর্থাৎ বৃদ্ধ বয়সে সে পাই দেয়নি এতটাই সক্ষম ছিল মেয়েটির স্বামী। আসলে বইয়ের পরে অযত্ন করলেও নিজের শরীরের অনেক বেশি যত্ন করত সেই মেয়েটির স্বামী। ভীষণ স্বার্থপর প্রকৃতির, নিজে ভালো থাকা, নিজে ভালো খাওয়া দাওয়া করা অর্থাৎ নিজেকে নিয়েই প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকতো সেই মেয়েটির স্বামী।


নিজেকে ছাড়া পরিবারের মানুষের দিকে একটুও খেয়াল ছিল না সেই মেয়েটির স্বামীর যার কারণে স্ত্রী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তার খেয়ালই ছিল না সে ছিল নিজের খেয়ালে ব্যস্ত। মেয়েটিকে সারা জীবন কোন গহনা গাটি বা একটা ভালো শাড়ি পড়তে কখনো দেয়নি তার স্বামী। উপরন্তু প্রতিনিয়ত মেয়েটির শখ সৌখিনতা নষ্ট করতেই যেন ব্যস্ত ছিল তার স্বামী। মেয়েটির ইচ্ছা আশা আকাঙ্ক্ষা কখনোই পূরণ করতে পারেনি নিজে উপার্জন করা সত্ত্বেও। কারণ প্রতি মাসে মাইনে পেলেই পুরোটা ধরে দিয়ে দিতে হতো তার স্বামীর হাতে। অনেক কষ্ট, অবহেলা এবং ত্যাগের মধ্য দিয়ে সারা জীবনটা কাটানোর পর এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েক মাস অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছিল মেয়েটি। যদিও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তার মেয়েরা যথাসম্ভব তার সেবা যত্ন করেছিল এবং পাশে থাকার চেষ্টা করেছিল। কারণ তার মেয়েরা তাকে ভীষণ ভালোবাসতো। অবশেষে অবহেলা অনেক কষ্ট নিয়ে সারা জীবন ত্যাগ করে শেষবারের জন্য পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সে পরলোকে গমন করল। সারাটা জীবন মেয়েটি কখনো কোনো ভালো একটি জিনিস ব্যবহার করতে পারল না, ভালোভাবে বাঁচতেও পারল না, শুধুমাত্র ত্যাগ করেই জীবন কাটিয়ে দিল এবং অন্যদের ভালো রাখার চেষ্টাতেই জীবনটা কেটে গেল মেয়েটির।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।