একজন নারীর ত্যাগের কাহিনী। বাস্তবিক গল্প। পর্ব 2

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17556004486052217487453152262707.jpg


সোর্স



মেয়েটির যেহেতু বাড়ির বড় মেয়ে তাই মেয়েটির মা এবং বড় দাদারাও চাইছিল তাড়াতাড়ি যেন তার বিয়ে হয়ে যায়। বড় মেয়েটির বিয়ে হলে তবে দাদারা এবং ছোট বোনেরা পরপর বিয়ে করতে পারবে। বাড়ির বড় মেয়ে হওয়া যে কত যন্ত্রণার সেটাও সেই মেয়েটি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিল। একদিকে পরিবারের দায়িত্ব অন্যদিকে আবার সে যেন বাড়ির বোঝা। ছেলেটিকে এসব কথা জানাতেই ছেলেটি বাড়িতে রাজি করানোর চেষ্টা এবং মেয়েটিকে যেন বাড়িতে বাবা মা এবং পরিবারের সকলে মিলে মেনে নেয় সেই চেষ্টাতে আরো জোর দেয়। তবে ছেলেটির বাড়িতে কেউই মেয়েটিকে মেনে নিতে চাইছিল না। দীর্ঘ কয়েক মাসের প্রচেষ্টার পর ছেলেটির বাবা অবশেষে ভেবে দেখলো যে তার একমাত্র ছেলে সন্তানের সুখে থাকাটাই তার কাছে অনেক বড় ব্যাপার আর তার ছেলের সুখ রয়েছে ওই মেয়েটির সাথে এ কথা ভেবে ছেলেটির বাবা পরিবারের সকলকে রাজি করানো এবং নিজেও মেয়েটির সাথে তার একমাত্র ছেলের বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হয়ে গেল। কিছু মাসের মধ্যেই ছেলেটি এবং মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পরে মেয়েটি ভেবেছিল যে তার জীবনে এবার একটু সুখ শান্তি আসবে তবে এমনটি ছিল শুধুই তার কল্পনা এবং ভুল চিন্তাভাবনা।


বিয়েটা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলেও বিয়ের পর থেকে শুরু হলো মেয়েটির ওপর অসম্ভব বাজেভাবে অত্যাচার। আর এই অত্যাচার ছিল শারীরিক এবং মানসিক দুই ধরনেরই। ছেলেটি বাড়ির একমাত্র ছেলে ছিল কিন্তু তার ছিল আরো দুটি বোন। অর্থাৎ ওই মেয়েটির ছিল দুটি ননদ তাও আবার অবিবাহিত ননদ। সুতরাং শাশুড়ি এবং দুই ননদ মিলে সে পরিমাণ অত্যাচার করত সেটা যে কোন সাধারণ মানুষ কল্পনা করতে পারবে না। যেসব মেয়েরা এমন অত্যাচারী শাশুড়ি এবং ননদের সংসার করেছে তারাই একমাত্র ওই মেয়েটির পরিস্থিতি একটু বুঝতে পারবে। ছেলেটির সামনে মেয়েটির সাথে তার শাশুড়ি এবং ননদ ভালো ব্যবহার করলেও যখনই ছেলেটি মেয়েটির কাছে থাকতো না অথবা বাড়িতে থাকত না তখনই মেয়েটির পড়ে খুবই খারাপ ব্যবহার করা হতো এমনকি গায়ে হাত তোলা হতো অর্থাৎ মারধর করা হতো। যেহেতু মেয়েটি ও চাকরি করতো তাই চাকরিতে যাওয়ার আগে তার সংসারের সমস্ত কাজ করে রান্না করে তবেই বাড়ি থেকে বের হতে হতো। যদি কোনদিন ঘুম থেকে উঠতে দেরি হতো বা কাজ একটু কম করত তবে শুরু হয়ে যেত মেয়েটির উপর অত্যাচার। এমনকি মেয়েটিকে তার স্বামী অর্থাৎ সেই ছেলেটির সাথেও একটু সময় কাটাতে দিত না।


আসলে মেয়েটিকে যেহেতু তার শ্বশুরবাড়ির কেউ পছন্দ করত না তাই তার সব কাজের মধ্যেই ক্ষুধ ধরতে থাকতো তার শাশুড়ি এবং ননদেরা। মেয়েটি তার শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের কথা যদি তার স্বামীকে বলে দেয় সেই ভয়ে শ্বশুরবাড়ির কেউ তার স্বামীর সাথে তার মেলামেশা একদমই পছন্দ করত না। এছাড়াও মেয়েটিকে অনেক বেশি কষ্ট সহ্য করতে হতো খাওয়া দাওয়ার জন্য। মেয়েটিকে কখনো ভালো কোন খাবার খেতে দেওয়া হতো না। ভালো খাবার রান্না হলে এছাড়াও ভালো মাছের টুকরো এমনকি ভালো মাংসের পিস তুলে ছেলেমেয়ে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য রেখে দিত এবং মেয়েটির কপালে জুটতো অবশিষ্ট অংশ বা সবার অপছন্দের অবশিষ্ট পড়ে থাকা মাছের টুকরো বা মাংসের টুকরো। ভালো খাবার বলতে গেলে তার কপালে ছিলই না। মেয়েটির শাশুড়ি প্রতিনিয়ত মেয়েটিকে বোঝাতে চাইতো যে এইটুকু খাবার সে খেতে পারছে সেটাই তার সৌভাগ্য। মেয়েটি কোন ভালো খাবার যেমন খেতে পারতো না তেমনি কোন ভালো কাপড় জামা পড়তে পারতো না। মেয়েটির যেন জীবন থেকে ভালো জিনিস পাওয়া বা নিজেকে পরিপাটি রাখা, ভালো জিনিস খাওয়া, শখ সৌখিনতা জীবন থেকে মুছে গেছিল। কিছু বছরের মধ্যেই মেয়েটির চাকরির পোস্টিং দূরে হয়ে গেল।


ছেলেটি এবং মেয়েটি বাবার বাড়ি ছেড়ে যেখানে চাকরির পোস্টিং পড়েছিল তার কাছাকাছি একটি বাড়িতে ভাড়া চলে যায়। ভাড়া বাড়িতে মেয়েটি একটু শান্তিতে জীবন যাপন করতে লাগলো এবং অত্যাচার থেকে এবং অত্যাচারী শাশুড়ি এবং ননদের থেকে কিছুটা রক্ষা পেল। তবে মাঝেমধ্যেই সপ্তাহের ছুটিতে তাদের শশুর বাড়িতে যেতে হতো মেয়েটির শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে দেখা করতে। সেই সময়ও মেয়েটির শ্বশুরবাড়ির লোক শাশুড়ি এবং ননদরা তাকে কটুকথা শোনাতে বা অত্যাচার করতে একটুও পিছুপা হত না। মেয়েটি বিয়ের পর কয়েক বছরের মধ্যেই একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিল। কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার কারণে শুরু হয়ে গেল তার প্রতি আরো বেশি অত্যাচার। কন্যা সন্তান নাকি পরের ঘরের সম্পত্তি আর পুত্র সন্তান বংশের প্রদীপ। তাই বংশ এগোতে গেলে পুত্র সন্তান জন্ম দিতে হবে, এবং যেহেতু ছেলেটি বাড়ির একমাত্র পুত্র সন্তান তাই বংশের প্রদীপ আনার দায়িত্ব অর্থাৎ বংশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার দায়িত্ব সেই মেয়েটিরই। এইসব কথা প্রায়ই শুনতে হতো মেয়েটির তার শাশুড়ির কাছে এবং পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য অনেক বেশি প্রেসার ক্রিয়েট করা হত মেয়েটির উপর।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Sort:  
 2 days ago 

আসলে কিছু মেয়েদের জীবনটাই এমন। তবে যে মেয়ে গুলো শান্তশিষ্ট এবং সবাইর কথা শুনে চলার চেষ্টা করে সেই মেয়েগুলোই এরকম কষ্টে সব থেকে বেশি পড়ে। যাই হোক চাকরির সূত্রে যেহেতু ছেলেটির অন্য জায়গায় পোস্টিং হয়েছে সেহেতু বর্তমানে একটু হলেও শান্তিতে থাকতে পারবে। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে এরকমটা অনেকই ঘটতেছে।

Loading...