আমাদের বাড়িতে ঘুঘু পাখির জীবনের দুর্ঘটনা।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
অনেক আগে আমি বলেছিলাম যে আমাদের বাড়িতে একটা ঘুঘু পাখির দম্পতি বাসা করেছে। এবং তাদের দুটি সন্তানও হয়েছিল। আর সেই সন্তান দুজন বেশ বড় হয়ে তারপর খোলা আকাশে উড়ে চলে গেছিল। তার কিছুদিন পর আবার সেই ঘুঘু দম্পতি ফিরে এসে তাদের বাসা যেহেতু একটু অগোছালো হয়ে গেছিল তাই আবার ঠিকঠাক করে গুছিয়ে নিয়ে আবার সেখানে বসবাস শুরু করছিল। এবং তার বেশ কিছুদিন পর তাদের আরো দুটি সন্তান পর্যায়ক্রমে হতে দেখা যায়। অর্থাৎ সেই ঘুঘু পাখিটি দুটি ডিম পাড়ে। বেশ কিছুদিন ধরে ঘুঘু পাখিটি সেই দুটি ডিমে তাপ দিয়ে যাচ্ছিল। তবে এবার দেখা যায় একটি ঘুঘু পাখি তাপ দিয়ে যাচ্ছিল এবং সে যখন খাবার সংগ্রহ করতে অথবা অন্য কোন কাজে বাইরে যেত তখন ঐ ছোট ছোট ডিমগুলো একাই থাকতো। পুরুষ ঘুঘু পাখিটা এসে আগের মত পর্যায়ক্রমে ডিমগুলোকে দেখাশোনা করত না। তাদেরকে যদিও আমরা নিয়মিত পাখির খাবার এবং জল দিয়ে রাখতাম যেন তাদের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন না হয়। এবং সেই ঘুঘু পাখির খিদে পেলে সেই খাবার এবং জল খেতে পারে। তারপরও সেই ঘুঘু পাখিকে মাঝেমধ্যেই বাইরে যেতে দেখা যেত।
এমন ভাবেই চলতে চলতে কয়েকদিন পর সেই ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে আসতে দেখা গেল ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা দেখতে খুবই সুন্দর লাগতো। আর তখন ওদের পরে মায়া লাগতো যে ওর বাবা আসতো না আর ওর মা ওদের এভাবে রেখে চলে যেত। তারপর আবার এত ঠান্ডা পড়েছে যে ওরা কিভাবে থাকতো ভগবানই জানে। বেশ কয়েকদিন ধরে দেখতে পাওয়া গেল সেই বাচ্চা দুটি বেশ ভালোভাবেই ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দেখতে পেলাম দুটি পাখির মধ্যে পাশে একটি পাখিকে কেমন অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে। তখন আশঙ্কা করলাম যে সে হয়তো আর বেঁচে নেই। ভালো করে দেখে নিশ্চিত হলাম যে হ্যাঁ সত্যি সে আর বেঁচে নেই। সেই দিন বিকালের দিকে দেখতে পেলাম ঘুঘু পাখি খুব ডাকাডাকি করছিল হয়তো তার বাচ্চাকে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সে এত বেশি ডাকাডাকি শুনেও ঘুম থেকে না ওঠায় ঘুঘু পাখির মা হয়তো বুঝতে পেরেছে যে তার বাচ্চা আর বেচে নেই তাই সে সেই বাসা থেকে তার বাচ্চাকে ফেলে দিয়েছে। একটি বাচ্চা মারা যাওয়ার এক দুদিন পরই দেখতে পেলাম আরেকটি বাচ্চা সেই পাখির বাসার ভেতরেই কেমন জড়োসরো হয়ে বসে আছে।
প্রথমে ভেবেছিলাম পাখিটার হয়তো ঠান্ডা লাগছে তাই ওইভাবে বসে আছে কিন্তু আর একটু ভালো করে যখন খেয়াল করলাম যে সে নিশ্বাস নিচ্ছে কিনা বা তার হার্টবিট চলছে কিনা, তখন দেখতে পেলাম যে সে একটুও নাড়াচড়া করছে না এবং তার হার্টবিট চলছে না। অর্থাৎ সেও মনে হয় মারা গেছে। আমি দুপুরবেলা এই ঘটনা দেখতে পেলাম কিন্তু তারপরও কোনো ওই বাসাতে হাত না দিয়ে চলে এসেছি। রাতে খাবার পর যখন বারান্দা দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলাম তখন দেখলাম যে ওই ঘুঘু পাখির মা তার ওই একটি বাচ্চাকে তাপ দেওয়ার জন্য বাসায় তার ওপরে বসে আছে, যেন তার বাচ্চার ঠান্ডা না লাগে। তবে এই অবস্থা দেখে আমার মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল কারণ সেই ঘুঘু পাখিটি হয়তো এখনো অবধি বুঝতে পারেনি যে তার বাচ্চা মারা গেছে। না বুঝেই সে তার বাচ্চাকে তাপ দিচ্ছে এবং তার ঘরে বসে আছে। আসলে পাখি হলেও সে তো মা। আর মায়েরা এমনই হয় তারা বিশ্বাসই করতে পারেনা বা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনা যে তারা বেঁচে থাকতে তাদের সন্তানের কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে বা তাদের সন্তান মারা যাবে। আমি ওই অবস্থা দেখে মন খারাপ করে ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পর দেখতে পেলাম ওই বাচ্চা ঘুঘু পাখির মা বাবা অর্থাৎ বড় দুটো ঘুঘু পাখি পুরো বারান্দা দিয়ে ডাকাডাকি করছে এবং মাঝেমধ্যে সেই ঘুঘু পাখির বাসায় গিয়ে বসছে আবার কখনো বারান্দার পর্দার ওপর আবার কখনো বারান্দার পাখার ওপর বসে ডাকাডাকি করছে। হয়তো তারা নিজের সন্তানের মৃত্যু সহ্য করতে পারছে না তাই এটাই তাদের দুঃখ প্রকাশ করার প্রক্রিয়া। এভাবেই হয়তো তারা কান্নাকাটি করে বা ডাকাডাকি করে দুঃখ প্রকাশ করে। তবে এই বাবা-মা ঘুঘু পাখিকে দেখে খুবই খারাপ লাগছিল যে তাদের দুটো সন্তানই এক এক করে মারা গেল। হয়তো তারা এই ঠান্ডায় খুবই কষ্ট পেয়ে মারা গেছে। আমি এতদিন মনে করতাম যে প্রকৃতির নিয়মে প্রতিটি পাখির হয়তো গরম কালে গরম থেকে রক্ষা পেতে এবং শীতকালে শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে তাদের শরীরে সেই ভাবে কিছু সিস্টেম থাকে। জানিনা এটা সত্যি কিনা তবে আমাদের সকলকেই পরিবেশের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়। এবং প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে আমাদের সেটা মোকাবেলা করতে হয়। এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখার প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে হয়। কিন্তু হয়তো ওই পাখি দুটি পরিবেশের সাথে লড়াই করতে গিয়ে হেরে গেছে। যার ফল স্বরূপ তারা মৃত্যুবরণ করেছে।
ক্যামেরা পরিচিতি : Realme
ক্যামেরা মডেল : realme narzo 60 pro
ক্যামেরা লেংথ : 26 mm
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
আপনার ঘরে তো দেখছি ঘুঘু পাখির সম্পূর্ণ সংসার তৈরি হয়েছে। আর আপনি সেই ঘুঘু পাখির সংসার নিয়ে দারুন সুন্দর গল্প আমাদের সঙ্গে শেয়ার করলেন। দুই ঘুঘু পাখি এবং তার সন্তান সন্তানাদি নিয়ে একেবারে সুখে শান্তিতে বাস জুড়েছে আপনার ঘরে। তাহলে আপনার আর ঘরে একা নয়, সঙ্গে এতজন প্রতিবেশীও থাকে। ঘুঘু পাখির বাচ্চার ঘটনাগুলি শুনে ভালো লাগলো।
চোখের সামনে থাকা পাখিগুলো হঠাৎ যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে খুবই কষ্ট লাগে। আমার ঘরের সামনে একটি গাছে ঘুঘু পাখি বাসা করেছিল। একদিন দেখলাম একটি পাখিতে সেই বাচ্চা টেনে টেনে ছিঁড়ছে এটা দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছিল। এরপর দেখেছিলাম সেই বাচ্চা মারা গেছিল। আসলে এইগুলা অন্যরকম ভালোলাগা আর মায়ার বিষয়।