স্বাধীনতায় আসক্ত মানুষ।

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17466895421837016786522499901717.jpg


সোর্স



বর্তমানে মানুষ নিজে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে বেশি পছন্দ করে। যার ফলে অন্য কোন মানুষ যদি তাদের জীবনে হস্তক্ষেপ করে বা কোন কাজ করতে বাধা দেয় সেটা তারা মোটেও পছন্দ করে না। সেটা যদি তার ভালোর জন্যও হয় তাও সে মেনে নিতে পারে না যে তাদের জীবন অন্য কারো সিদ্ধান্তে চলবে। আগেকার সময় দেখা যেত ছোটবেলা থেকেই সন্তানেরা মা-বাবা যা বলতো তাই মেনে চলত, মা বাবার সিদ্ধান্ত ছাড়া তারা কোন কাজ করত না। এবং মা-বাবা তাদের জীবনে হস্তক্ষেপ করলে তারা বিরক্তবোধ করতো না। এবং পরবর্তীতে যখন তাদের বিয়ে হত তখন তারা তাদের জীবনসঙ্গীর অর্থাৎ ছেলেরা তার বউয়ের এবং মেয়েরা তার স্বামীর কথা সবসময় মেনে চলতো এবং তারা তাদের জীবনের হস্তক্ষেপ সবসময় মেনে নিত। কিন্তু বর্তমান সময়ে পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেছে। বর্তমানে ছোট থেকেই ছেলে হোক বা মেয়ে সন্তান তারা নিজের মা-বাবার কথা শুনে চলতে পছন্দ করে না। ছোটবেলা থেকেই নিজে যা ভালো মনে করে সেটাই করতে থাকে যার ফলে তাদের মধ্যে একটা স্বেচ্ছাচারিতা মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়।


বর্তমানে এটাও দেখা যায় যে বাবা-মাও ছেলে মেয়ের জীবনে খুব একটা বেশি হস্তক্ষেপ করে না কারণ তারা তাদের নিজস্ব জীবনে অনেক বেশি ব্যস্ততার মধ্যে থাকে। তাই সন্তানের জীবনে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা দেখারও বেশিরভাগ বাবা-মার সময় হয়ে ওঠে না। বাবা-মা প্রতিনিয়ত সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অর্থ উপার্জনের ব্যস্ত থাকে। যার কারণে সন্তান কিভাবে বড় হচ্ছে বা কি মানসিকতার মধ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেটা তাদের অজানাই থেকে যায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কখনো যদি তারা সন্তানের জীবনে কোন সিদ্ধান্ত নিতে যায় তখনই বেঁধে যায় অনেক বড় ঝামেলা। কারণ ততদিনে সন্তানেরা নিজের জীবনে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই তারা সারা জীবনই নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে চাই এবং অন্যের হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না, সেটা যদি তার বাবা-মা হয় তবুও না। পরবর্তীতে যখন তাদের জীবনসঙ্গী নির্বাচনের সময় আসে তখনও তারা নিজের জীবনসঙ্গী নিজেরাই নির্বাচন করতে চায়। দেখা যায় পছন্দ সেই জীবনসঙ্গী নির্বাচনের পরেও বিবাহিত জীবনে যদি তার জীবন সঙ্গীর কোন হস্তক্ষেপ তাদের জীবনে পড়ে তাহলেও তারা কখনোই মেনে নিতে পারে না।


কারণ কিছু কিছু মানুষ এমন আছে যারা মনে করে তাদের নিজের জীবন নিজের মতন করেই চলবে। যখন যেখানে যেতে ইচ্ছা করে তখন সেখানে যেতে পারবে, কাউকে বলার প্রয়োজন নেই বা কারোর কাছে অনুমতি নেওয়ারও কোন দরকার নেই। কিন্তু বিবাহিত জীবনে পরিবারের মানুষের কাছে অবশ্যই অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় যখন কেউ বাড়ি থেকে বের হয় বা জীবনে কোন বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসে। আগেকার সময়ে এসব সমস্যা কখনোই দেখা যেত না। আগেকার সময়ে ছেলেরা মেয়েরা প্রত্যেকেই যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গুরুজনের কাছে আলাপ আলোচনা করে নিত। এমনকি বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ও গুরুজনদের অনুমতি নিয়ে বের হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে যেহেতু মানুষ একটু বেশি স্বাধীনতায় বড় হয়েছে তাই ছোটখাটো পরাধীনতাও তারা সহ্য করতে পারে না। যার ফলে এই স্বাধীনতা প্রেমী মানুষরা কখনোই অন্য মানুষের সাথে মানিয়ে চলতে পারে না। এবং দেখা যায় ছোটখাটো বিষয় নিয়েও এই সব মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বিরক্তকর ঝগড়াঝাটি এবং মনোমালিন্য চলতেই থাকে। আর এই সব কারণেই সমাজে বর্তমানে বিচ্ছেদের সংখ্যাও অনেক বেশি বেড়ে গেছে। আর এই বিচ্ছেদ প্রেম সম্পর্কেও ঘটছে আবার দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদ একটু বেশি ঘটছে।


তবে এই স্বাধীনতার কারণে মা-বাবার সাথে সন্তানেরও অনেক বেশি বিচ্ছেদ দেখা যায়। সন্তানেরা একটু বড় হলেই তাদের স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ হচ্ছে বলে মনে করে। তাই অনেক পরিবারে দেখা যায় সন্তানেরা একটু বড় হলেই আলাদা করে নিজের জন্য ঘর ভাড়া করে নেয় অথবা নিজস্ব কোন বাড়ি কিনে সেখানে মা-বাবার থেকে আলাদা বসবাস করা শুরু করে দেয়। বর্তমান সমাজে এই বিচ্ছেদের সংখ্যা অনেক বেশি পরিমাণ দেখা যায় চারিদিকে। স্বাধীনতা ভালো তবে অতিরিক্ত স্বাধীনতা মোটেও ভালো না। আমরা এই স্বাধীন জীবনযাপন করতে গিয়ে জীবনের অনেক ভালো সময় হারিয়ে ফেলছি নিজের কাছের মানুষের থেকে দূরে সরে গিয়ে। আমরা ভুলে যাই আমাদের বাবা-মা কখনোই আমাদের খারাপ চায় না, তারা সব সময় আমাদের মঙ্গল কামনা করে। কিন্তু বর্তমানে কিছু মানুষ আছে যারা বাবা মার আবেগ ভালোবাসা না বুঝে বাবা মাকেই যেন শত্রু বলে মনে করে। আর তাদের ছেড়ে দূরে গিয়ে থাকে নিজের স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য। যা কখনোই আমাদের জীবনের বা ভবিষ্যতের জন্য ভালো নয়। আমাদের সব সময় স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার করতে হবে এবং স্বাধীনতার সঠিক অর্থ বুঝতে হবে। তাহলে আমরা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন নাগরিক হয়ে উঠতে পারব।



আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Sort:  
 2 days ago 

1000042109.jpg

1000042108.jpg