সন্তানের সঠিক শিক্ষা।

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17586866523408562031673651949385.jpg


সোর্স



আগেকার সময়ে গুরুজনেরা সব সময় বলতো যে সন্তান জন্ম দেওয়া অনেক সহজ কিন্তু সন্তানকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং মানুষের মতো মানুষ গড়ে তোলা অনেক বেশি কঠিন কাজ। গুরুজনদের সেই কথা বাস্তবে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে বাবা মায়ের কারণেই সন্তানেরা নষ্ট হয়ে গেছে অর্থাৎ কুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজ শিখেছে। অনেক বাবা মায়েরা বুঝতেই পারেনা যে তাদের সন্তানদের বর্তমানে তারা যেমন শিক্ষায় শিক্ষিত করছে তাদের বার্ধক্যকালে তারা সেই শিক্ষাই ফিরে পাবে। অনেক ক্ষেত্রেই বাবা-মা মনে করে আমার সন্তান এখন ছোট রয়েছে এখন কিছু বলবো না বড় হলে নিজে থেকেই বুঝতে পারবে। বাবা মায়ের এই চিন্তাভাবনা কতটা ভুল তারা নিজেরাও বোঝে না কারন ছোটবেলা ছোট বাচ্চাদের মন থাকে সাদা কাগজের মত সেখানে যেমন ছবি আঁকবে তেমনি তার মন তৈরি হবে তাকে যেমন শিক্ষা দেওয়া হবে তেমন শিক্ষা এসে শিক্ষিত হবে। ছোটবেলা থেকে যদি সন্তানকে আমরা কোনো খারাপ কাজ করতে বাধা না দিয়ে থাকি তবে সন্তানেরা সেই খারাপ কাজ থেকে সঠিক বলে মনে করে এবং প্রতিনিয়ত করতে থাকে।


বড় হয়ে সন্তানেরা কখনোই ভালো খারাপ নতুন করে বোঝেনা, আসলে প্রত্যেকটা মানুষের গঠন ছোটবেলা থেকেই হতে থাকে এবং মানসিক চিন্তাভাবনা কোনটা সঠিক কোনটা ভুল সেটাও ছোটবেলা থেকেই তৈরি হতে থাকে। আমরা ছোটবেলা থেকে যে জিনিসটা বারণ করব সন্তানদের ধারণা তৈরি হবে যে সেই জিনিসটা করা তাদের জন্য উচিত নয় আর যে জিনিসটা করতে তাদের উৎসাহ দেব এবং তাদের প্রশংসা করবো সেই জিনিসটাই তারা আরও ভালোভাবে করার চেষ্টা করবে। তাই প্রতিনিয়ত তাদের ভালো কাজে উৎসাহ দিতে হবে এবং খারাপ কাজে বাধা দিতে হবে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাবা মায়েরা এই জিনিসগুলি বোঝেনা এবং তারা খারাপ কাজ করলে বাবা-মায়েরা বাধা দেয় না। এছাড়া অনেক বাবা-মা সন্তানদের সবার সাথে মিলেমিশে চলা, ভাগ করে সবাইকে দিয়ে খাবার খাওয়া, সবার সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলা এবং আচার-আচরণ করা, প্রত্যেকটা মানুষকে সম্মান জানানো এসব বিভিন্ন জিনিস শেখানোর প্রয়োজন মনে করে না। বাবা মায়েরা ভাবে বড় হতে হতে এরা হয়তো নিজে থেকেই শিখে যাবে। কিন্তু সন্তানেরা বাবা-মায়ের আচরণ এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেই শিক্ষা পায়। তাই তাদেরকে ছোটবেলা থেকেই সব ভালো শিক্ষা দিতে থাকতে হয়।


আমাদের বর্তমান সময়ে মানুষের খারাপ হওয়ার অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে এবং বিভিন্ন দিক রয়েছে এমনকি বিভিন্ন খারাপ মানুষ রয়েছে যাদের সাথে একটু সময় কাটালেই তারা এমনভাবে আকৃষ্ট করে যে মানুষ খারাপ কাজ করাকে সঠিক কাজ বলে মনে করতে বাধ্য হয়ে পড়ে। কারন এইসব খারাপ মানুষ তাদের ভালো চিন্তাশক্তিকে একদম নষ্ট করে ফেলে। তাই বাবা-মায়ের প্রতিনিয়ত তার সন্তানের প্রতি নজর রাখতে হবে এবং তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে যেন সন্তানেরা তাদের প্রত্যেকটা ভালো খারাপ সুবিধা অসুবিধা এবং কষ্টের সময় বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে ভাগ করে নিতে পারে, আর বাবা মায়েরা তাদের সন্তানের প্রতি সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত এবং ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। আসলে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাবা-মায়ের সন্তানদের মানুষ করা এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে উঠেছে, কিন্তু তারপর যদি বাবা-মায়েররা নিজেরাই সন্তানদের খারাপ শিক্ষা দেয় তবে সন্তানরা খারাপ হতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। সন্তানদের মন থেকে প্রতিনিয়ত হিংসা মনোভাব দূর করার চেষ্টা করতে হবে এবং মানুষকে ভালোবাসা এবং সুন্দরভাবে মিলেমিশে থাকা শেখাতে হবে দিলে তাদের ভবিষ্যৎ কখনোই ভালো হবে না।


সন্তানদের সঠিক শিক্ষায় মানুষ করতে না পারলে শুধুমাত্র সন্তানদের যে ভবিষ্যৎ খারাপ হয় এমনটা নয় বাবা-মায়েরও বার্ধক্য বয়সে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হতে পারে। আমার বর্তমানে দেখতে পাই চারিদিকে সন্তানেরা বাবা মার পরে অত্যাচার করছে, বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে অথবা বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে এবং রাস্তাঘাটে বৃদ্ধ বয়সে বাবা মায়েরা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে। এগুলো শুধুমাত্র সন্তানেরই দোষ সেটা কিন্তু কখনোই নয়। বাবা মায়েরা এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সে সন্তানকে যেমন ভাবে তৈরি করেছে এবং যেমন শিক্ষা দিয়েছে সে সন্তান তেমনি শিক্ষা পেয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় বাবা মায়েরা তার বাবা মা এদের বৃদ্ধ বয়সে দেখে না এবং সেই শিক্ষাটাই তার সন্তানেরা পেয়ে যায়। সন্তানরা যখন নিজের চোখে দেখে যে তার বাবা-মা তার দিদা দাদু বা দাদু ঠাকুমাকে বৃদ্ধ বয়সে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে অথবা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে তখন সন্তান সেটাকেই সঠিক বলে মনে করে এবং সেও বড় হবার পর তার বাবা-মাকে তেমনি বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তাই আমাদের প্রতিনিয়ত নিজে কি কর্ম করছি সেটাও ভেবেচিন্তে করা উচিত। কারণ আমরা যেমন কর্ম করবো সেটা দেখেও আমাদের সন্তানেরা শিক্ষা গ্রহণ করবে। তাই সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হলে নিজেকেও সঠিক কর্ম করতে হবে এবং প্রতিনিয়ত সন্তানকে সঠিক জিনিস এবং সঠিক কর্ম করা শেখাতে হবে।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।