পৃথিবীর ও ভারতের প্রথম মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস সম্পর্কে দু'চার কথা।

in আমার বাংলা ব্লগ6 days ago (edited)

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


Onulipi_10_09_10_31_15.jpg








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



আজকের ব্লগে বলব পৃথিবীর ও ভারতের প্রথম মসজিদ নিয়ে সামান্য কিছু গল্প। দেখুন পড়তে কেমন লাগে।

পৃথিবীর প্রথম মসজিদ


মসজিদ বললেই আমাদের সব চেয়ে পরিচিত নাম যেটা মনে আসে তা হল সৌদি আরবের মক্কা। কারণে মক্কাতেই রয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত মসজিদে হারাম। কিন্তু জানেন কি এই মসজিদ তৈরি হওয়ার অনেক আগেই মদিনার কুবা নামক এক জায়গায় তৈরি হয়েছিল মসজিদে কুবা। সালটা ৬২২ সি ই। অর্থাৎ ৭ম খ্রীস্টাব্দ। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা পরিত্যাগ করে মদিনাতে চলে আসার পর নিকটবর্তী স্থান কুবা তে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন৷ মক্কাতে তখনও কোন মসজিদ ছিল না৷ হিজরতের প্রথমদিন যখন কুবাতে অবস্থান করেছিলেন, সেই দিনই ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন৷ প্রথম মসজিদ নির্মাণ হয়েছিল মাটি, পাথর খেঁজুর পাতা ও খেঁজুর ডাল দিয়ে৷ আরব দেশগুলিতে যে খেঁজুর গাছের বাহুল্য রয়েছে তারই উপযুক্ত ব্যবহার মনে হয়৷ তবে দিন বদলের সাথে সাথে এই মসজিদ বেশ কয়েকবার সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ হয়েছে৷ ১৯৮৬ খ্রীস্টাব্দে শেষবারের মতো হাত পড়ে৷ এই মসজিদটি তৈরি হয়েছিল হযরত কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.)-এর খেজুর শুকনো করার পতিত জমিতে। ঈশ্বরের উপাসনালয় হিসেবে একটি জমির সঠিক ব্যবহার৷ কি বলেন আপনারা?

cuba-3723174_1280.jpg
সোর্স

মসজিদটির নাম মসজিদে কুবা কেন জানেন? যেখানে মসজিদটি তৈরি হয়েছিল সেই গ্রামে একটি বিখ্যাত কূপ ছিল যার নাম কুবা৷ এই কূপকে ঘিরেই ধীরে ধীরে জনবসতি গড়ে ওঠে আর কূপের নাম হিসেবেই জায়গারও নাম হয়ে যায় কুবা৷ মসজিদ টি এই এলাকার বলেই নাম হয়েছে মসজিদে কুবা৷ তবে বিশ্বের প্রথম মসজিদ হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে এই মসজিদ সফলতা ও মর্যাদাসম্পন্ন মসজিদের প্রথম তিনে স্থান পায়নি। এটি রয়েছে চতুর্থ স্থানে। প্রথম তিনটি হল যথাক্রমে মক্কার বিশ্বখ্যাত মসজিদে হারাম, মদিনার মসজিদে নবাবি (কুবা থেকে সামান্যই দূরে), জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা।

কাদামাটি ও পাথর দিয়ে ভিত্তি স্থাপন হলেও কুবা মসজিদটি বর্তমানে নিতান্ত ছোট না৷ প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ এক সাথে নামাজ পড়তে পারে। তবেই ভেবে দেখুন নব নির্মাণ একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে৷ শুকনো আরব দেশে এই দর্শনীয় স্থানগুলো আছে বলেই দেশটা ইতিহাসের অনেকখানি পাতা জুড়ে আছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এই মসজিদকে কেন্দ্র করে কুবাও আজ অনেক উন্নত আর্থিক দিক থেকে ও স্থাপত্যশিল্পের দিক থেকে৷ আর এই সবই কিন্তু যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর পরিবর্তন দেখছে প্রতিবাদহীন নীরব দর্শক হয়ে।


এবার বলব ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ নির্মাণের গল্প।

ভারতের প্রথম মসজিদ


ভারতবর্ষের এমন একটি জায়গায় প্রথম মসজিদ স্থাপন হয়েছিল যেখানে ওই মসজিদ স্থাপনের কয়েক বছর আগেও একটিও মুসলমানের বাস ছিল না৷ হয়তো মানুষ জানতই না ইসলাম বলে কোন ধর্মের নাম। কোন জায়গাটা জানেন? কেরালা। হ্যাঁ কেরালার কোদুঙ্গাল্লুর জেলায় প্রথম নির্মান হয়েছিল ভারতবর্ষের তথা সমগ্র উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ চেরামান জুমা মসজিদ৷ মসজিদে কুবা নির্মাণের কিছু বছরের মধ্যেই৷ সালটা ৬২৯ খ্রীষ্টাব্দ।

কেরালার কোদুঙ্গাল্লুর জেলার পাশেই ছিল বিখ্যাত বন্দর মুজিরিস। যে সমস্ত জাহাজ ভারতবর্ষ সহ শ্রীলঙ্কা বা এদিকের দেশগুলিতে বানিজ্য করতে আসত পশ্চিমের দেশগুলি থেকে তাদের জন্য এই বন্দরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দূরপাল্লার জাহাজগুলো এখানে নোঙর ফেলত, আবার ভারতে ব্যবদা করার জন্যও নোঙর ফেলত। তাই সেই যুগে বলা হত এই বন্দরটি বিশ্ববাণিজ্যের অন্যতম প্রধান বন্দর ছিল৷ হরপ্পা সভ্যতার সময় থেকেই চেরা রাজ্যের ব্যবসায়ীরা মধ্যপ্রাচ্য সহ ইউরোপের নানান দেশের বণিকদের সাথে সহজের ব্যবসা করত৷ বিক্রি করত এদেশের দামী কাঠ, গোলমরিচ, আদা, কাপড় ইত্যাদি৷ এমন শোনা যায় মিশরের ফারাও রামেসিসের মমিতে ঠাসা ছিল ভারতীয় গোল মরিচ৷ আরও অনেক উদাহরণ আছে৷ তো এমত দিনগুলিতে যখন রমরমিয়ে ব্যবসা চলছে। ষষ্ঠ শতকে আরব দেশের মানুষরাও সুদক্ষ বণিক হয়ে উঠেছিল। তাদের আবিষ্কারে ছিল নানান বানিজ্যিক পথ৷ তার মধ্যে এই বন্দরটিও উল্লেখযোগ্য৷ ব্যবসায়িক সম্পর্ক সুন্দর করে তুলতেই আরবের বণিকরা চেরা রাজ্যের রাজার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। এই বণিকদের হাত ধরেই চেরারাজ্যে প্রচলিত হয়েছিল ইসলাম ধর্ম।

চেরা রাজ্যের রাজা চেরামান পেরুমাল রামা ভার্মা কুলাশেখারা একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন যা হুবহু নবী মোহাম্মদ (সা:) এর এক অলৌকিক ক্ষমতার সাথে মিলে যায়। পরবর্তীতে এই সপ্নের কথা তিনি বণিকদের বলেন আর তাদের হাত ধরেই রাজা চলে গেলেন আরব দেশে৷ এবং ঠিক করেছিলেন নবী মোহাম্মদ (সা:) এর সাথে দেখা করে ধর্মান্তরিত হবেন৷ হাদিস অনু্যায়ী রাজা চেরামান নবীর সাথে দেখা করে ধর্মান্তরিত হন এবং একেবারে হজ্ব সেরে সমুদ্র পথে গৃহ-অভিমুখে যাত্রা করেন। তবে এই যাত্রায় তিনি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিজের প্রান সংকট দেখে সন্তানদের উদ্দেশ্যে চিঠি লেখেন। যেখানে উল্লেখ ছিল চেরা রাজ্যে মসজিদ নির্মাণের। বাড়ি ফেরার আগেই নিতি মারা যান৷ আর ছেলেরা বাবার শেষ ইচ্ছা রাখতেই এই মসজিদের নির্মান ঘটান৷ এই কাহিনী নিয়ে অনেক ইতিহাসবিদের অনেক প্রশ্ন ও উত্তর আছে। আমি সেসব বিতর্কে গেলাম না৷

তবে বর্তমান কেরালা তথা মালায়ালম মানুষদের হৃদয় অনেক বড়৷ তারা সমস্ত ধর্মাবলম্বী জাতপাত নির্বিশেষে মানুষদের এখানে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়৷ সেই যুগ থেকে আজ পর্যন্ত এই মসজিদটির যে বিশাল নির্মাণ কাজ হয়েছে তা নয়। তবে এতো পুরনো ঐতিহ্য রাজ্য সরকারের মুজিরিস হেরিটেজ প্রকল্পের আওতায় আসার ফলে সংস্কারের কাজ চলছে৷

চেরামান জুমা মসজিদ আরব দেশের বা অন্যান্য মসজিদের মতো দেখতে নয়। এটি টালির চাল দেওয়া কেরালার সংস্কৃতির আওতায় পড়া ঘরবাড়ির মতো। যদিও দালান ঘর পেরনোর পরেই ছোট সাইজের গুম্বুজ সমেত চারটে মিনার দেখতে পাওয়া যায়৷ কখনও কেরালা গেলে অবশ্যই এখানে যাবো আর অনেক কথাও জানতে পারব। তা আপনাদের সাথে পরে অবশ্যই শেয়ার করব৷

আজ তবে এই পর্যন্তই থাক। আবার আসব আগামীকাল। কেমন পড়লেন আজকের পোস্ট তা জানাতে ভুলবেন না৷ আমার কাছে চেরামান জুমা মসজিদের কোন ছবি নেই। আর ফ্রি সাইটগুলিতে পাইও নি। তাই পরের অংশে কোন ছবি দিতে পারিনি। তাও ছবি ছাড়া এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নির্মাণ ইতিহাস কেমন লাগল অবশ্যই জানাবেন৷ আসি?

টা টা


1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণঐতিহাসিক আলোচনা
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি


1000216466.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

Untitled_design_-_18.png

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 days ago 

সুন্দর একটা পোস্ট ছিল আপু। খুবই চমৎকার লিখেছেন। প্রথম ঘটনা জানলেও পরবর্তী টা একেবারেই জানতাম না। এটা বেশ কৌতূহলের বিষয়। আমাদের ভারতবর্ষে এত পূর্বে মসজিদ স্থাপিত হয়েছিল।

 5 days ago 

হ্যাঁ। কেরালার স্থাপত্যশিল্পের ধরণেই তৈরি। গুগুলে দেখবেন ছবি আছে। এখানে যাবার ইচ্ছে আছে। আমি আসলে এরম পুরনো পুরনো জায়গায় যেতে ও জানতে খুব ভালবাসি।

 3 days ago 

দারুন তথ্য বহুল পোস্ট ছিলো, অনেক কিছু নতুন কিছু তথ্য জানতে পারলাম, ধন্যবাদ।

 2 days ago 

পড়লে, খুশি হলাম। ভালো থেকো।