বাতাসে পোড়া গন্ধ|| লস অ্যাঞ্জলসের ভয়াবহ দাবানল- বিপন্ন সভ্যতা||
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
অনেকখানি সময় লেগেছিল ড্রাইভ করে স্টকটন থেকে লস অ্যাঞ্জেলস পৌঁছোতে। তবে ক্লান্তি আর ক্লান্তি ছিল না যখন দেখেছিলাম স্বপ্নের মতো সাজানো গোছানো এই শহর। কোথাও কোন নোংরা বা অতিরিক্ত দমবন্ধ করা পরিবেশ কিচ্ছু নেই। অদ্ভুত ছবির মতো সাজানো সব কিছু৷ যেখানে এলোমেলো করে দেওয়ার মতো একটি মানুষও নেই। অবাক হয়েছিলাম সব কিছু দেখে। এই জন্যই বোধহয় হলিউড। গত কয়েকদিন যখন খবরের কাগজ থেকে শুরু করে সোসাল মিডিয়া ও নানান রিলসে দেখছি দাউদাউ করে জ্বলছে বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল।
আসলে ক্যালিফোর্নিয়া জায়গাটাই দাবানল প্রবণ। আগেও হয়েছে তবে এবারের ভয়াবহতা যেন অনেক বেশি ও ধ্বংসাত্মক৷ একবার এক প্রফেসরের কাছে শুনেছিলাম ক্যালিফোর্নিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে যে সমস্ত জঙ্গল রয়েছে সেখানে শুকনো পাতার নিচে আগুনের স্রোত বয়৷ সেও এক ধরণের দাবানল। ছোট বেলায় দাবানলের কথা বইতে পড়েছি কিন্তু এভাবে দেখিনি কোনদিন৷
আমি যখন ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকতাম তখন একবার ইয়োসিমিটি গিয়েছিলাম। সেখানেই একটা বোর্ডে পড়েছিলাম বিশাল জঙ্গল যার মধ্য দিয়ে রাস্তা ও আমরা সকলেই যাচ্ছি সেই জঙ্গল পুড়ে গেছে দাবানলে। ভালো করে দেখলাম প্রতিটা গাছের কান্ড কালো ও পাতাগুলো আগুন রঙের৷ বেশিরভাগই পাইন গাছ৷
এবার প্রকোপ পড়ল হলিউডে৷ প্রায় চল্লিশ হাজার একরের বেশি জায়গা পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে৷ কিছু মানুষ মারাও গেছেন। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যপ্রাণীদের জীবন। তারা যে কত সংখ্যক মারা গেছেন তা হয়তো এখনও সঠিক জানা যায়নি৷ তবে দেশটা যেহেতু আমেরিকা তাই প্রযুক্তির ব্যবহারের কোন ত্রুটি নেই৷ তাছাড়া ওখানকার পুলিশরাও অনেক বেশি তৎপর। তাই আপ্রাণ চেষ্টা করছেন যাতে বন্যপ্রাণীদেরও সাহায্য করা যায়।
এতো সব কিছুর পরেও প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বোধহয় কারও নেই। কেন? তার কারণ ঝোড়ো হাওয়া। এই তীব্র আগুন এতো দ্রুতগতিতে ও ভয়াবহ ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে কেবলমাত্র হাওয়ার কারণেই। আর এই হাওয়ার জন্যই সেই ভাবে প্রযুক্তি এঁটে উঠছে না। হেলিকপ্টার উড়ছে না। শুনেছি এই দাবানলের পূর্বাভাস ছিল। কারণ বেশ কিচ্ছুদিন যাবৎ একেবারেই বৃষ্টি হয়নি। এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়েদার কিন্তু প্রচন্ড শুকনো। রোদের তাপও বেশ থাকে৷ ফলত দাবানলের জন্য যেন প্রকৃতি নির্মম ভাবেই সেজে ওঠে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্যই যে এই তীব্র তাপমাত্রা সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ তবে এতে করে আপমর জনসাধারণের বিশেষ কিছু যায় আসে না। কারণ তারা প্রত্যেকেই নিজের নিজের চেয়ার, গদি, ব্যক্তিগত সম্পত্তি উন্নয়ন নাম যশ ইত্যাদি বাঁচাতে ব্যস্ত। কেউ আর কোনভাবেই প্রকৃতির জন্য ভাবার সময় বার করে না৷ প্রকৃতিই বা কি করবে, বেলুনে অতিরিক্ত বাতাস দিলে তা তো ফাটবেই৷
একবার একটু গভীর ভাবে চিন্তা করা দরকার৷ কেন জানেন? লস অ্যাঞ্জলসের এই আগুন নেভানোর জন্য এতো পরিমান জল ব্যবহার করা হয়েছে যে ওখানকার বড় বড় নর্দমাগুলো এখন জল শূন্য। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কোন কাজে আসছে না। আগুনের কাছে প্রকৃতির লীলার কাছে আজ সব কিছুই পরাস্ত৷ এটাই কি স্বাভাবিক নয়? নীরব বলে তার প্রতিক্রিয়া নেই র ভাবা বোধহয় মনুষ্য প্রজাতির সব থেকে বড় আহাম্মকি। মানুষ তার নিজেরই লেখা বিখ্যত প্রবাদ ভুলে যায় তা হল, 'স্যাঁকরার ঠুক ঠুক কামারের এক ঘা'। প্রকৃতি আমাদের কাছে সেই কামার৷ আরও কোথায় কোথায় কি হবে জানি না৷ তবে যেভাবে প্রকৃতি অত্যাচারিত অঘটিন বা দূর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে৷
তাই বলি, যেভাবে মানুষজনের ঘর বাড়ি পুড়ে যাচ্ছে, সাধারণ জীবন আজ বিপন্ন, আমরাও যেন সেই ভয়াবহতার মুখোমুখি না পড়ি তার জন্য সবারই উচিত সামান্য হলেও প্রকৃতির জন্য ভাবা৷ নিজেকে ইকোফ্রেন্ডলি করে তোলা। নইলে আমরাও খুব দ্রুতই কোন একদিন দাবানল বা সুনামিতে চাপা পড়ে থাকব। বাতাসে তখন কেবল মাংস পোড়ার গন্ধ আর মাটিতে ভিড় জমাবে কাঠকয়লার স্তুপ।
ভবিষ্যৎ কঠিন হবে বলে যে বর্তমান সহজ তা নয়। লস অ্যাঞ্জেলস তথা হলিউডের জিডিপি কিন্তু যথেষ্ট ভালো। এবং এখানকার অর্থনীতি বাকি আমেরিকাকেও যথেষ্ট সাপোর্ট দেয়। কারণ লস অ্যাঞ্জেলস হল ভারতের মুম্বাই। অর্থাৎ প্রাণ। এখানেই বড় বড় হলিউড তারকারা থাকেন। যারা বেশিরভাগই নিজেদের ঘর ছাড়া। এই পোড়া শহর যে অর্থনৈতিক ভাবে বাকিদের বেশ খানিকটা ধ্বসের মুখে ফেলেছে তা অনস্বীকার্য৷ দেখা যাক বর্তমান দেশের নেতারা কিভাবে সমস্ত কিছুর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এবং সব কিছু সুস্থ ও স্বাভাবিক করে দিতে পারেন। আমরা প্রত্যাশা করতে পারি এবং ভালো টা মন থেকে চাইতে পারি। বলতে হয় বলছি এমন না৷
আগামী কি হয় তাই দেখার অপেক্ষায় তবে তার আগে বিপন্ন মানুষ পশু পাখি সকলে বাঁচুক এবং ছন্দে ফিরে আসুক এই কামনা করি।
আজকের নিবেদন এই ছিল। লস অ্যাঞ্জেলস দাবানলের আলোচনার সাথে সাথে আমাদেরও যে প্রকৃতির কথা ভেবে চলতে হবে এটা শিখতে হবে এবং বুঝতেও হবে৷ কি বন্ধুরা ঠিক বলছি? অবশ্যই উত্তর দেবেন। সেই অপেক্ষা করে শেষ করছি আজকের ব্লগ।
টা টা
পোস্টের ধরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
কলমওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
|![1000373697.jpg
https://x.com/neelamsama92551/status/1878506386881130800?t=pZaJtxqRFtvjBXhevi4vCw&s=19
লস এঞ্জেলসে যে ভয়ানক দাবানল লেগেছে তা দেখে সত্যিই বুক ছ্যাঁক করে উঠছে। এই ভয়াবহ দাবানলের ছবি চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে বন্যপ্রাণ ভীষণভাবে বিপন্ন। মানুষ তো পালিয়ে বাঁচতে পারে অথবা নতুন জায়গায় বাসস্থান নির্মাণ করতে পারে। কিন্তু পশুদের কথা ভাবলে ভীষণ কষ্ট হয়। এই অবলা প্রাণীগুলিকে সংরক্ষণ করা ভীষণ প্রয়োজন।
করছে সংরক্ষণ। কিন্তু প্রসাশনের সাহায্য পৌঁছোনোর আগেই অনেক বেশি ক্ষয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। যা একেবারেই কাম্য নয়। খুব দুঃখজনক পরিস্থিতি।।
শুধুমাত্র একটা বার এইটা ভাবুন আপু। এতোশত টেকনোলজি। আমরা অন্য গ্রহে চলে যাচ্ছি অথচ এক দাবানলের আগুন নেভানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রকৃতির কাছে আমরা কতটা অসহায়। দাবানলের ভয়াবহতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
প্রকৃতির কাছে আমরা আসলে কিছুই না। বিজ্ঞানের উন্নয়ন নিয়ে অনেক মাতামাতি করি ঠিকই। কিন্তু এক চুটকিতে আমরা নিঃশেষ হয়ে যেতে পারি, আর তারই ট্রেলর দেখাচ্ছে প্রকৃতি।
লস অ্যাঞ্জেলস এর অবস্থা খুবই ভয়াবহ! মিলিয়নিয়ারদের ঘরবাড়ি পুড়ে নিমিষেই ছাই! আমাদের এখনি প্রকৃতি নিয়ে ভাবা উচিত। নয়তো সামনে আমাদের জন্যও ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে।
আমরা কি আদৌ ভাবি? নাকি ভাবব? আমরা যা করি তা কেবল সাময়িক ভালো থাকা ও আত্মতৃপ্তির কথা ভেবে করি। কারও জন্য ভাবার ফুরসত নেই। প্রকৃতির মারের কোন প্রতিকার নেই তাও ভুলে গেছি।
আপনি কমিউনিটি রুলস ভঙ্গ করেছেন। আপনি নিজের ফটো অথবা কঁপিরাইট ফ্রী ফটো ছাড়া আপনার পোষ্টের মধ্যে ব্যবহার করতে পারবেন না।
কমিউনিটির নিয়মাবলী :
https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-16-aug-22
যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।
Discord server link: https://discord.gg/ettSreN493
Source : https://www.istockphoto.com/photo/forest-fire-wildfire-at-night-time-on-the-mountain-with-big-smoke-gm1266552048-371313667
pixbay থেকেই নিয়েছি৷ ওই ওয়াটার মার্ক দেওয়া ছবিগুলো নেওয়া যাবে না তাই না? বুঝতে পারিনি। এখুনি বদলে দিচ্ছি৷