ঈশ্বরের নিজের দেশ - কেরালা পর্ব - ৫ (কোভালাম বীচ ও আজিমালা মন্দির)

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


Onulipi_01_23_08_17_40.jpg






আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



IMG-20250302-WA0023.jpg

আগের পর্বে ন্যাপিয়ার মিউজিয়ামের জু-এর গল্প শেয়ার করেছিলাম আপনাদের সাথে। সেখানে একটি আর্ট মিউজিয়ামও আছে যার কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছি তবে আজ আর সেগুলো শেয়ার করব না, আজ চলে যাব ওইদিনেরই দ্বিতীয় পর্বে।

IMG-20250302-WA0022.jpg

প্রায় বারোটার মধ্যে আমাদের জু এবং আর্ট মিউজিয়াম দেখা হয়ে গেলে আমরা উবের (ক্যাব বুকিং অ্যাপ) ব্যবহার করে একটি গাড়ি ভাড়া করে চলে গেলাম কোভালাম বীচে৷ কোভালাম বীচ থিরুভানান্থাপুরামের আশেপাশে অবস্থিত সব থেকে নাম করা বীচ। আসলে এই বীচটি পর্যটকদের জন্য বহু বছর আগে সাজানো হয়েছিল। যেহেতু আরব সাগরের পশ্চিমের বীচ আর সাদা বালি, নীল জলরাশি। ফরেন বা বিদেশীদের উদ্দেশ্য করেই এই সাজসজ্জা, তবে বর্তমানে দেশী লোকেদের যা ভিড় দেখলাম তা নিয়ে আর কি বলব।

IMG-20250302-WA0018.jpg

বিদেশীদের জন্য বীচ তৈরির একটা বিশেষ কারণ আছে৷ আসলে ট্যুরিজম এমন একটি সেক্টর যেখানে দেশের অর্থনীতি অনেকখানি নির্ভরশীল৷ এখানে বিদেশীরা মূলত ডিসেম্বরে আসে, ঘুরে বেড়ায়। আমি নিজেও দেখেছি বিদেশীদের কেরালার প্রতি একটা আলাদাই আগ্রহ। যেহেতু কোচি তে ভাস্কোদাগামা প্রথম এসেছিলেন আর ভারতবর্ষ কোচি থেকেই প্রথব আবিষ্কার হয়েছিল তাই এখানকার ইতিহাস ও বৈদেশিক বানিজ্য নিয়ে গল্প অনেক।

IMG-20250302-WA0017.jpg

কোভালামে বিদেশীরা থাকলেও বেশি দেখেছিলাম ভারকালা বীচ তা নিয়ে পরের পর্বে বলব। এই পর্বে কোভালামের গল্প শুনুন।

IMG-20250302-WA0016.jpg

কোভালাম বীচে যখন পৌঁছোলাম মাথার ওপর গনগনে রোদ আর ২৫শে ডিসেম্বরের ছুটি কাটাতে আসা লোকজনের কালো কালো মাথার ভিড় ওপর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল সমুদ্রের পাড়ে কালো কার্পেট বিছানো রয়েছে৷ ওপর থেকে কেন বললাম? রোড সাইড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার খাড়াই ঢাল বেয়ে নিচে নামলেই কোভালাম বীচে পা দেওয়া যাবে৷ এই এতো ভিড়ের মধ্যে স্যাক পাওয়া কী দুষ্কর হয়ে গিয়েছিল। তাও সাথে বয়স্ক মহিলারা আছেন দেখিয়ে একখানা স্যাক ভাড়া করতে পেরেছিলাম৷ এক ঘন্টার জন্য। কিন্তু সেই এক ঘন্টা পর আমরা যখন ওপরে আসব তখন দেখলাম বীচের পাশেই অটোস্ট্যান্ড। কিন্তু কোন অটো সেখান থেকে আমাদের নিয়ে যাবে না কারণ তারা প্রত্যেকেই বুকিং নিয়ে এসছে৷ সে এক বীভৎস ঝামেলা। কিভাবে ওপরে উঠব সকালে জু দেখে সবারই পায়ের অবস্থা খারাপ এদিকে মা মাসিদের হাঁটুর সমস্যা আছে। সাত পাঁচ ভেবে আমি ওখানকার পুলিশদের সাথে কথা বললাম। আর একজন সজ্জন পুলিশকেও পেয়ে গেলাম, তিনি পর পর দুটো অটো ঠিক করে দিলেন। তবে এসব করতে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিল৷

IMG-20250302-WA0015.jpg

তাও এতো দূর এসেছি এখানের বিখ্যাত আজিমালা মন্দির দেখব না তা কিভাবে হয়। তবে গাড়ির সমস্যা হতে পারে সেটা ভাবিনি। ওপরে এসে দুটো অটো বুক করে আমরা চলে গিয়েছিলাম আজিমালা মন্দিরে৷ সেখানেও বেশ ভিড় ছিল। কিন্তু বিশাল শিবের মুর্তি দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সমুদ্রের পাশে এমন মুর্তি রাতের অন্ধকারেও যেন কী স্পষ্ট।

IMG-20250302-WA0014.jpg

বেশ কিছু ছবি তুলেছিলাম। কিন্তু ইতিমধ্যে মারাত্মক খিদে পেয়ে গেছিল সবাইকেই৷ কারণ আপিনারা লক্ষ্য করবেন আমি কোথাও খাওয়ার গল্প করিনি। আসলে লাঞ্চটাই করা হয়নি। টুকটাক ফল, জুস এসব খেয়েই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু সন্ধেতে খিদে আর বাঁধ মানছিল না৷ আজিমালা মন্দিরের পাশেই একটি ঢাল দিয়ে নেমে গেলে একটি খাবার দোকান আছে। সেখানে অল্প খাবার কথা ভেবে সকলেই ধোসা ইডলি ইতুয়াদি খেয়ে পেট ভরিয়ে নিয়েছি।

IMG-20250302-WA0011.jpg

এদিকে গাড়িগুলো সবই বেরিয়ে গেছে। আর উবের থেকেও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না৷ অগত্যা গুটি গুটি পায়ে ওপরের উঠে আসছিলাম এক পাঞ্জাবি ভদ্রলোক আমার তিন মা মাসিকে লিফট দিলেন। অনেক বড় পাওয়া হল সেদিনের৷ আমরা হেঁটে এলাম।

IMG-20250302-WA0012.jpg

এই মন্দিরে জানেন কোন ছবি তোলা যায় না ওই বড় শিবমূর্তি ছাড়া৷ এদিকে মন্দিরের ছবি আমি তুলব। কিন্তু কিভাবে? চলে এলাম বাইরে। ফাঁকা জায়গা থেকে ফটোগ্রাফি করলাম ভালো অ্যাঙ্গল পাইনি তাও করেছি। কারণ কি জানেন? এই মন্দির সত্যিই অপূর্ব দেখতে। সারা দেওয়াল জুড়ে আমাদের দেবদেবীদের গল্পগুলো ছবির আকারে আঁকা আছে। আর কী রঙিন সব কিছু।

সেদিন বাড়ি ফেরার সময়ও অনেক কষ্ট করেই গাড়ি পেয়েছিলাম। আসলে ২৫ শে ডিসেম্বরে সকলেই ভাড়ার গাড়ি চায় তাই ক্রাইসিস তো হবেই৷ এভাবেই কেটে গেল থিরুভানান্থাপুরামের দ্বিতীয় তথা শেষ দিন। তবে এখানে অনেক কিছু দেখার৷ আমরা সময়ের অভাবে দেখলাম না৷ আবারও আসতে হবে। পরের দিন আরেক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল৷ আগামী পর্বে বলব সেই গল্প।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণভ্রমণ ব্লগ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমআইফোন ১৪
লোকেশনhttps://what3words.com/tentacles.snipe.exonerate, https://what3words.com/poky.certifiable.hens
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNq11oNEiVHeYi1dFPZdD9DtfDnLSeGtLw3tXF7pNDf1KxPvxfffo2xboPm7wR8jPkKYie3LXrW.png

5q1knatRafuz9XwMuuEKUktArqLQpY9ERHvTUkr4H3M7EJa5zmYjd88Mgg7ucDLaoRyBbuk6ZDoBxSEqGcM8f9gtL5ff3dELA5FFXhfdJMy3CLVqCeBiUcuHt1GpdcrweUGxxxmGTC4nBtUhD1QWuxAAkWX8iy55cDyLQMmixxBjRCHLY6iMvDqgWQXyeinoLTe3.png

1000205505.png