কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০২৫- আমি তো যাবই। আপনারাও আসুন।
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
[সোর্স](meta AI)
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
আর মাত্র কয়েকদিন বাকি৷ দীর্ঘ একবছর প্রতীক্ষা করার পর আবারও চলে এলো কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। আমাদের কাছে দুর্গাপূজার থেকে কম অপেক্ষার বা আনন্দের নয়। বললে চলে রোজ দিন অপেক্ষা করি কবে বইমেলায় যাব৷ কত পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা হবে। জ্ঞানজ মানুষের সান্নিধ্য পাবো। সারাবছরের একই থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড় থেকে বেরিয়ে কিছু দিন কেবল মাত্র নিজের জন্য কটাদিন বাঁচা।
জানেন কি বিশ্বের সব থেকে বড় বইমেলা জার্মানির ফ্রাঙ্কফুটে অনুষ্ঠিত হয় আবার প্রথম বইমেলাও ওখানেই হয়েছিল। সে প্রায় পাঁচশ বছর আগেকার ইতিহাস৷ বিদেশে বইমেলার প্রচলন ভালোই ছিল। তবে ভারতবর্ষে প্রথম বইমেলা হয় দিল্লীতে ১৯৭২ সালে৷ একবার ভাবুন, কলকাতা ভারতের সংস্কৃতির রাজধানী অথচ বইমেলা হচ্ছে দিল্লীতে৷ আসলে বইমেলার আয়োজক ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট(এন বি টি) কখনও ভেবেই উঠতে পারেনি কলকাতাও বইমেলার জন্য উপযুক্ত স্থান হতে পারে। কিন্তু বড় বড় শহরে বইমেলার আয়োজন দেখে ইউ এন ধর অ্যান্ড সনস প্রকাশন সংস্থার সত্ত্বাধিকারী বিমল ধর এনবিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মানে অ্যাকাডেমি চত্ত্বরে একটি ছোটখাটো বইমেলার আয়োজন করেন। আর শুরু হয় কলকাতা বইমেলার যাত্রাপথ৷ প্রথম পদক্ষেপ একেবারেই বিফলে যায়নি, বেশ ভালো পরিমান বই বিক্রি হয়েছিল এবং মানুষেরও আগমন ঘটেছিল। যা এনবিটির কলকাতা সম্পর্কে ধারণা একেবারেই বদলে দিয়েছিল। যার ফল হিসেবে পরের বছর থেকেই কলকাতায় বার্ষিক বইমেলার আয়োজন করার কথা ভাবা হয়। কেবল মাত্র ভাবা নয়, বিমল ধর প্রায় চোদ্দটি প্রকাশক ও বইবিক্রেতা সংস্থাকে নিয়ে গঠন করেন পাবলিসার্স অ্যান্ড বুক সেলারস গিল্ড। প্রথম দিকে এই সংস্থার নাম ছিল পাবলিসার্স গিল্ড। কিন্তু পাকাপাকি ভাবে সংবিধান তৈরি হওয়ার পর নাম বদলে রাখা হয় পাবলিসার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড। সেই পরিচিত গিল্ড, যেখানে বইমেলায় একটি টেবিল বা স্টলে বা মুক্তমঞ্চের আবেদনে সমস্ত প্রকাশক ও বইবিক্রেতাদের ছুটতে হয়।
১৯৭৫ এর পর কলকাতা বইমেলা নানান বছরে নানান স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। ক্রমশ প্রকাশকদের ভিড় বেড়েছে, মানুষের সমাগমও বেড়েছে। ১৯৮৪ সালে জেনেভার ইন্টারন্যাশনাল পাবলিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয়ে বইমেলার আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারে স্থান করে নেয় কলকাতা বইমেলা। তখনও কলিকাতা বই মেলা বা ক্যালকাটা বুকফেয়ারি বলা হত৷ তবে ২০০১ সালে যখন মহানগরীর নাম বদলে (Calcutta-Kolakta) কলকাতা করা হল তখন থেকে বইমেলার নাম বদলে কলকাতা পুস্তকমেলা বা কলকাতা বুকফেয়ার রাখা হয়৷
নানান ঘাত প্রতিঘাত এলেও কলকাতা পুস্তক মেলা প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এই কলকাতা বইমেলার অনুপ্রেরণায় বর্তমানে জেলায় জেলায় বইমেলা দেখা যায়৷ শুধু তাই নয় লিটিল ম্যাগাজিন ও ছোট ছোট প্রকাশকদের নিয়ে নানান জায়গায় ছোট করে হলেও লিটিল ম্যাগাজিন মেলা হয়। কলকাতা যে সংস্কৃতিপ্রিয় স্থান তা এসবই বলে দেয়।
আজকাল ইন্টারনেটের যুগ হয়ে আমরা ভাবি বই বোধহয় কেউই কেনে বা বা পড়ে না৷ বিশ্বাস করুন বইমেলায় এক একদিন প্রতিষ্ঠিত বুকস্টলগুলোতে লাইন দিয়ে ঢুকতে হয়। যা দেখে মন ভরে যায়।
এ তো কেবল বইয়ের মেলা তা নয়, লেখক পাঠকদের মিলন প্রাঙ্গন৷ জানেন তো বাঙালিদের মতো এতো বইপ্রিয় আমি অন্য কোথাও অনেক কম দেখেছি। আজও আইটির যুগে দাঁড়িয়ে যেখানে মানুষ কেবল টাকার পেছনে ছুটছে আরামের দিন কাটাবে বলে সেখানে সাহিত্যকে ভালোবেসে কত মানুষেই দিনরাত কাগজ কলম আর বইয়ের মধ্যে কাটিয়ে দেয়৷ কে যে আসলেই বোকা তা হয়তো সময়ই জানে।
যাইহোক আগামী আঠাশে জানুয়ারি ২০২৫ সাল থেকে কলকাতা পুস্তকমেলা শুরু হবে আর চলবে ফেব্রুয়ারি ৯ পর্যন্ত৷ চলে আসুন। দেখা হবে আড্ডা হবে। টাকা পয়সা জীবনের দৌড়ের বাইরে খানিক সাধারণ হয়ে অতিব সাধারণ হয়ে মাটিকে ছুঁতে পারার সুযোগ। তবে বই কি বিনামূল্যে পাওয়া যায়? একেবারেই না, খাবার স্টলে তো দ্বিগুণ দাম। তাই সারাবছরের কামাইএর কিছুটা পকেটে নিয়ে আসুন, বইয়ের জন্য খরচা করুন। জীবন জ্ঞান অর্জনও সুখ এনে দেয়। ফিরে গিয়ে তো আবার সেই থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়। হা হা হা।
পোস্টের ধরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
কলমওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1879232053532832005?t=mVFsvVKu-QHyOO7KCsTgZQ&s=19
কলকাতা বইমেলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। এটি শুধু বইপ্রেমীদের জন্য একটি আনন্দের উৎস নয়, বরং একে অপরকে জানার, শিখতে এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচন করার এক অসাধারণ সুযোগও। বইয়ের প্রতি আপনার ভালোবাসা এবং মেলার প্রতি আগ্রহ সত্যিই দারুণ।
ধন্যবাদ দাদা। বইমেলায় আসলেই রোজ যাই। মাঝে হয়তো এক আধদিন যেতে পারি না। নিজের বই থাকে এছাড়াও পত্রিকা থাকে। সেগুলো বিক্রি করতে লাগে৷ সব মিলিয়ে বইমেলা আমার কাছে তো বেশ জমজমাট অনুষ্ঠান।