পুরনো অ্যালবাম থেকে শেয়ার করলাম প্রত্যন্ত একটি গ্রামের হৈডাখান বাবাজি আশ্রমের চারপাশের ছবি।

in আমার বাংলা ব্লগ20 days ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


Onulipi_03_18_11_13_05.jpg


1000229281.png




আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



এই সপ্তাহে ফটোগ্রাফি পোস্ট করা হয়নি। আবার অনেকদিন হল কোন আর্টপোস্টও করা হয়নি। আজ বিকেলে স্কেচবুক নিয়ে বসেছিলাম কিছু যদি আঁকা যায়। এখন তো অনেকেই ম্যান্ডেলা আর্ট বানায় আমি তাই সেই দিকে না গিয়ে একটু নিজের মতো কাজ শুরু করলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আঁকাটি আমি শেষ করতে পারিনি। আসলে সংসারী মানুষদের অনেক সমস্যা থাকে৷ তায়ে এখন বাড়িতে দাদার মেয়ে এসেছে৷ সে ছোট মানুষ। পিসি কি আঁকছে সেখানে তাকেও একটু কাজ করতে হবে৷ এদিকে তার একটাই পিসি, তাই তার পিসির থেকে অনেক আদর আহ্লাদ চাই৷ রাতে আবার তারই আবদার রাখতে চিকেন বানালাম। এই সব মিলিয়েই আঁকাটা শেষ হয়নি। তাছাড়া আপনারা ভালোই জানেন আমি যেমন তেমন আঁকা পোস্ট করতে পারি না৷ একটু সুক্ষ্ম কাজ থাকেই৷ ফলে আমার ছবিগুলো শেষ করতে সময় লেগেই যায়৷

এইসব কারণেই আজ তাই ঠিক করলাম আপনাদের সাথে ফটোগ্রাফি পোস্ট শেয়ার করি। শীতকাল এইমাত্র গেল তাই বলা চলে পুরুষ শীতকাল জুড়ে নানান ধরনের ফুলের এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছি। গতবার তাজমহলের ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছিলাম। তাই আজ ভাবলাম ভারতবর্ষের অন্য কোন জায়গার ছবি শেয়ার করি। অবশ্যই এর তার থেকে ঝেপে নয় আমারি তোলা। ভ্রমণ পোস্টগুলো পড়ে আপনারা তো বুঝতেই পারছি না আমি প্রচন্ড ভ্রমন পিপাসু মানুষ। ভারতবর্ষের নানান রাজ্য এবং ভারতবর্ষের বাইরে কিছু কিছু দেশ আমার ঘোরা। পুরনো ছবি ঘাঁটতে ঘাঁটতে ভাবলাম আজ আপনাদের সাথে বেশ কিছু বছর আগে উত্তরাখন্ডের একটি গ্রামের কিছু ছবি শেয়ার করি।

একটি বিশেষ কারণবশত একবার উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল নামক জায়গা উপর দিয়ে রানীক্ষেত পেরিয়ে চলে গিয়েছিলাম চিলিয়ানওয়ালাতে। সেখানে একদিন থেকে পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি ভাড়া করে বেশ অনেকটাই পথ পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম হৈডাখান। এই জায়গাটিতে মূলত হৈডাখান বাবাজির আশ্রম রয়েছে। আদি গঙ্গার জলধারা দেখা যায়।

ক্রান্তিতে যে বিরাট জনবসতি রয়েছে এমন নয়। অনেক দূরে একটা স্কুল দেখতে পেয়েছিলাম। এখানকার ছেলেমেয়েদের অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়। এবং খাবার-দাবারের জন্য পাহাড়ি অঞ্চলেরই জমি এবং চাষের উপর নির্ভর করতে হয়। এখান থেকে শহর অনেক দূর। ফলে উন্নত জীবন যাপনের মান এখানে দেখতে পাওয়া যায় না। খুব সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবন যাপন দেখেছিলাম। যা সেই সময়ই ভারতবর্ষের অন্য কোন জায়গায় দেখতে পাওয়া যেত কিনা সন্দেহ রয়েছে। হয়তো আজও জায়গাটা ঐরকমই।

গ্রামটিতে যে কয়েকটা ঘর রয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই কোন না কোন চাষ আবাদ হয়৷ মানুষজন একে অপরের থেকে ফসল এবং সবজি বিনিময় করে বেঁচে থাকে। কেউ যদি কখনো মাসে একবার বা ১৫ দিনে একবার শহরে যায় তার হাতে বিশেষ প্রয়োজনীয় যা ওখানে পাওয়া যায় না এমন জিনিসপত্র আনতে দিয়ে দেয়। কারণ এই বাবাজির আশ্রমে অনেক বিদেশি বিশেষ করে রাশিয়া জার্মান ফ্রান্স ইত্যাদি জায়গার লোকেরা খুবই আসেন। আমি যখন গিয়েছিলাম তখনো আমরা কয়েকজন বাদে বাকি প্রায় সিংহভাগ মানুষই বিদেশি। ভারতবর্ষের এমন একটি জায়গা যেখানে বিদেশীরা আসেন তাও আবার একটি আশ্রমে তা দেখি আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।

এই আশ্রমে থাকতে হলে আশ্রমের কাজকর্ম সবই কাউকে না কাউকে করতে হয়। বিদেশীরা অনায়াসেই মন্দির চত্বর পরিষ্কার কিংবা আশ্রমে রান্নাবান্না বাসন ধো য়া খেতে দেওয়া ইত্যাদি নানান কাজ স্বেচ্ছায় নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে করছেন। হয়তো বাবাজি মহারাজের ভক্ত।

যাই হোক উনার সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছু জানি না তাই বলতেও পারবো না। তবে জায়গাটি ভীষণ ভালো লেগেছিল। মোবাইলে টাওয়ার ধরে না ফলে জীবনের যানজট সবই অনায়াসে ফেলে দেওয়া যায়। কয়েকদিনের এই কংক্রিট জীবন থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি এবং প্রকৃতির কোলে প্রকৃতির সন্তান হিসেবে সুখ স্বাচ্ছন্দে বেঁচে থাকার স্বাদ পেয়েছিলাম এখানে গিয়ে।

আর বকবক না করে চলুন আপনাদের সাথে সেই দেবভুমির কিছু চমৎকার ছবি শেয়ার করে নিই।

ছবি-১

FB_IMG_1742313182634.jpg

এই ছবিটা হৈডাখান বাবাজির আশ্রমে যাওয়ার পথে তুলেছিলাম। আসলে পাহাড় তো আমার বরাবরই ভীষণ পছন্দ। তাই পাহাড় থেকে তোলার সমস্ত ছবি আমার চোখে স্বর্গীয় দৃশ্য। এই ছবিগুলো খুব একটা অ্যাঙ্গেল করে তুলতে হয় না। যেখান থেকে যেমন পেরেছি তুলেছি আর সুন্দর লাগছে দেখুন!

ছবি-২

FB_IMG_1742313166507.jpg

বাবাজির আশ্রমের পিছন দিকেই আদি গঙ্গা নদী যা প্রায় নেই। অর্থাৎ জলের পরিমাণ খুবই ক্ষীণ। সেই নদীর পাড় পুরোটাই নুড়ি পাথরের রাস্তা। সেখান দিয়ে হেটে যেতে যেতে দেখেছিলাম মাঝে এই এত বড় একটা গাছ। আর সেই সময় সূর্যাস্ত হচ্ছিল। তাই দেরি না করে ছটফট ক্লিক করেছি।

ছবি-৩

FB_IMG_1742313155439.jpg

বাবাজির আশ্রমের নদী পেরিয়ে গেলে এই মন্দির গুলো দেখতে পাওয়া যায়। এখানে মূলত লোকজন ধ্যান করে। আর পুজো আচ্ছা দিনে একবার হয়। ভেতরে রয়েছে শিবলিঙ্গ।

ছবি-৪

FB_IMG_1742313145288.jpg

আশ্রমের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা গ্রামের ভেতর দিয়ে উঠে গেছে অনেকটা উপরে। সেখানেও ছিল একটা শিব মন্দির যার সামনে রয়েছে বিরাট ঘন্টা। সেই মন্দিরে উঠে গিয়ে উপর থেকে নদীর ছবি তুলেছিলেন। নদীর মাঝখানে একটা ছোট্ট ঘর। এমন উঠেছে বলুনতো ছবিটা। এই ছবিগুলো কিন্তু সবই আমার ডি এস এল আরে তোলা। কোথাও কোন এডিটের গল্পই নেই।

ছবি-৫

FB_IMG_1742313137611.jpg

হৈডাখান বাবাজির আশ্রমে যাওয়ার পথে তোলা অনেক ছবির মধ্যে এটি আরেকটি। ভারতবর্ষের এই অপূর্ব জায়গাগুলো আমালে বার বার টানে। ভাবি আবার কবে যাবো।

ছবি-৬

FB_IMG_1742313134529.jpg

পাহাড়ি পথে যখন শেষমেষ পৌঁছেই যাচ্ছিলাম। তখন উঁচু থেকে কিছুটা নিচে নামতে হচ্ছিল। গাড়ি দাঁড় করিয়ে এই ছবিটা তুলেছিলাম। এতো ভালো লেগেছিল আমার যেন এখনো মনে হয় এইতো ঘুরে এলাম।

ছবি-৭

FB_IMG_1742313130320.jpg

গ্রামের ভেতর যখন হাটাহাটি করছিলাম আপনি এই ছবিটা তুলেছি। গ্রামের মেয়েরা মাথায় ভর্তি করে গম কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এই অঞ্চলে ধান খুব একটা বেশি হয় না তবে যে কটা মাঠ দেখেছিলাম সেখানে গমের চাষ ভালোই ছিল।

ছবি-৮

FB_IMG_1742313126486.jpg

একটু আগে বললাম না? আশ্রমের পাশ দিয়ে ওপরে উঠে গেলেই একটি শিব মন্দির। সেখান থেকেই তোলা আরও একটি ছবি।

ছবি-৯

FB_IMG_1742313121761.jpg

ওই মন্দিরের পাশেই রাখা এই এতো বড় ঘন্টা। একজন লোকাল লোক বলেছিলেন সকাল সন্ধে এই ঘন্টা বাজিয়ে সকাল বা সন্ধের সময় জানান দেওয়া হয় এছাড়াও কোন বিপদ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ লক্ষ্য করলে ঘন্টাটি অনবরত বাজিয়ে গ্রামবাসীকে সজাগ করা হয়।

কী অদ্ভুত তাই না? এতো উন্নত দুনিয়ার মাঝে থেকেও ভারতবর্ষে এমন গ্রাম এখনও আছে এটা জানলেই কেমন যেন মনে হয়। তবে আছে। ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এখনও অনেক আলোই প্রবেশ করেনি। আপনারা জানলে অবাক।হবেন যে এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে আজও মানুষ গাছের পাতা খেয়ে ভেঁচে থাকে। উন্নয়নের উ-টুকুও পৌঁছোয়নি তাঁদের জন্য।

তাহলে বলুন তো বন্ধুরা আজকে আমার এই ফটোগ্রাফি পোস্ট আপনাদের কেমন লাগলো? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আবার আসব আগামীকাল। আজ এপর্যন্তই থাক।

টাটা।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণফটোগ্রাফি পোস্ট
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমআইফোন ১৩
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, ইনশট, অনুলিপি
লোকেশনhttps://what3words.com/backpacks.glitters.harmonious


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iQGmyQQJSx2MHvcyqq4XNg2FZiGWRBYf81wDThEM4xYuSUhFAaApJDQJ4jasjkg5ytiwdfqpnm4.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iPd641dngTZWiHQnQEPdqjssU4iUaDNENLp3ya2FLLZtRJxQVSjNRtygbo7NF4dXTAMoiWedMnN.png

![1000205505.png](