সিন্ধুদেশের রাজা জয়দ্রথ
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
[সোর্স](মেটা AI)


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
মহাভারতের মহা-নির্মাণ (জয়দ্রথ)
------------------------------------------------------ নীলম সামন্ত
বাঙালির ঘরে ঘরে একটি প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে,' জন জামাই ভাগ্না/ তিন নয় আপনা'। এই কথাটা কেন বললাম?
মহাভারতের কেন্দ্রবিন্দু রাজ্য হস্তিনাপুরের একমাত্র জামাই, ধৃতরাষ্ট্র এবং পান্ডুর একশ'এক কৌরব এবং পাঁচ পাণ্ডব মিলিয়ে একশ'ছয় ভাইয়ের পর সবচেয়ে কনিষ্ঠা ভগিনী দুঃশলার স্বামী, জয়দ্রথ। মহাভারতে বর্ণিত সিন্ধু রাজ্যের রাজা বৃদ্ধাক্ষত্র'র একমাত্র পুত্র হলেন জয়দ্রথ,যিনি খুব অল্প বয়সেই সিন্ধু প্রদেশের রাজ সিংহাসনের অধিকারী হয়েছিলেন। তবে রাজা হলেই যে সে মহান হবে বা তার চিন্তাভাবনায় উন্নত সমাজ ও সভ্যতা গড়ে উঠবে এমনটা বোধহয় সব সময় হয় না। মানুষের মধ্যেই তো দেবতা ও অসুর দুই থাকে যার চিন্তাভাবনা যেদিকে বয়ে যায় তার কর্মকাণ্ডও সেরকমই হয়ে থাকে।
কোন অপরাধী যখন অপরাধ করে তখন সে কিন্তু কাজটা কে অপরাধমূলকভাবে ব্যাখ্যা করে করে না। তার দৃষ্টিভঙ্গিতে সেটাই ঠিক মনে হয় তাই করে। হয়তো তার লোভ পূরণের জন্য কিংবা প্রতিশোধ স্পৃহার জন্য কিংবা কাম ক্রোধ ইত্যাদির ওপর বশবর্তী হয়ে করে। তবে তার বোধ বা বুদ্ধি নেই এ চিন্তা ভাবনা একেবারেই সঠিক নয়। হয়তো তার বোধ সমাজের অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গিতে সামাজিক নয়। হয়তো তার কাজগুলো সামাজিকভাবে নৈতিক নয়। তাও বলবো, একটি বুদ্ধিদীপ্ত মানুষই কিন্তু প্রতিনায়কের ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত হলেই যে প্রতিনায়ক হবে এমন না। একটি অসংগঠিত শুভশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য কোন সংগঠিত অশুভশক্তি একা থাকে না। তার পাশে থাকার জন্য আরও বেশ কিছু মাথা থাকে। যারা জোটবদ্ধ হয়ে শক্তি বৃদ্ধি করে। মহাভারতে আমরা এরকম ধরনেরই অনেক মাথা দেখতে পাই। যেমন কৌরবদের পক্ষে যে সমস্ত রাজারা যোগদান করে গৌরবদের শক্তি বৃদ্ধি করেছিল তারা প্রত্যেকেই কোন না কোন রাজ্যের শক্তিশালী রাজা। শুধু যুদ্ধই নয়, গোড়া উপর দুর্যোধনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কেউ না কেউ ছিলেন। যদি আমরা পাশা খেলার কথা ধরে নেই, দূর্যোধন কিন্তু নিজে সরাসরি পাশা খেলেনি পান্ডবদের হারিয়ে যাওয়ার জন্য। খেলেছিলেন শকুনি। আবার সেই সভায় দূর্যোধনকে মানসিক বল বৃদ্ধির জন্য নানান রাজ্যের রাজা ছিলেন। আবার এও দেখি মতান্তর থাকা সত্ত্বেও তাদের পারিপার্শ্বিক বয়ঃজ্যেষ্ঠরাও ছিলেন। হয়তো মৌখিক কোন প্রতিবাদ করেনি বা পক্ষপাতও করেননি কিন্তু উপস্থিত থেকে দেখিয়ে দিয়েছেন কৌরব ও পান্ডবদের মধ্যে কার পাল্লা ভারী। কৌরবদের দলে এমনই একজন পাল্লা ভারী করার রাজা যাকে প্রত্যক্ষ সহচর না বলেও হৃষ্টপুষ্ট সমর্থক বলা চলে তিনি হলেন হলেন সিন্ধুদের রাজা জয়দ্রথ- হস্তিনাপুরের একমাত্র কন্যা দুঃশলার স্বামী।
সিন্ধুদের বললাম এই কারণে, সিন্ধু দেশে যারা থাকতেন তারাই সিন্ধু বা সৈন্ধব। প্রাচীন ভারতবর্ষের সিন্দুদের অবস্থান বলতে যে অঞ্চলটুকু সিন্ধু নদীর জলে পরিপুষ্ট। বর্তমানে পাকিস্তানের সিন্দ অঞ্চলটিকে বলা যায় সে যুগের সিন্ধু রাজ্য। ভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নিম্ন সিন্ধু উপত্যকাটি মুলতান শহর থেকে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল যা বর্তমানের সম্পূর্ণ ‘বালুচিস্তান’কে নিয়ে মূলতান থেকে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল। মহাভারতে এই অঞ্চলটিকে সিন্ধু-সৌবীর অঞ্চল বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। জয়দ্রথ ছিলেন এই নিম্ন সিন্ধু-সৌবীর রাজা৷ তার রাজনৈতিক শক্তি কিংবা নিজস্ব শক্তি ও মাহাত্ম্যের বিচারে তিনি কখনোই মহাভারতের প্রধান কোনো চরিত্র কিংবা প্রতিনায়েকের ভূমিকায় বসবেন এমনটা নয়। যে কারণেই তিনি একটি সামান্য পার্শ্ব চরিত্র। অথচ সময় বুঝে, মানুষ বুঝে প্রধান প্রতিনায়কের সাথে থেকে তার অভীষ্ট বিষয়গুলোকে পরিনতি দেওয়াও কর্তব্য হিসেবে কাঁধে নিয়ে নিয়েছেন।
দ্রোনপর্বে বলা হয়েছে তিনি পরোক্ষভাবে জাম্বের পুনর্জন্ম। আর এইজন্মের পরিচয়টুকু তো আগেই দিলাম। হস্তিনাপুরের একমাত্র রাজকন্যা দুঃশলার সাথে তাঁর বিবাহের হেতু খুব একটা বিস্তৃতভাবে ব্যাসদেব বর্ণনা না করলেও একথা স্পষ্ট, সিন্ধু প্রদেশের সাথে সখ্যতা বজায় রাখা। আসলে তৎকালীন সমাজে রাজবাড়ীর ছেলেমেয়েদের বিবাহগুলো এরকমই হয়ে থাকতো। তবে একমাত্র রাজকন্যার স্বামী হিসেবে জয়দ্রথ যে স্বভাব চরিত্রও খুব ভাল ছিল তা কিন্তু নয়। কারণ সে যুগের বহুবিবাহের প্রচলন থাকা সত্ত্বেও জয়দ্রথের কামুক মনের পরিচয় আমরা পেয়ে থাকি।
চলবে।

পোস্টের ধরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | মেটা এ আই |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1901030720736555019?s=46
প্রাচীন সিন্ধু প্রদেশের বর্তমান অবস্থান সম্বন্ধে সুন্দর একটি ধারণা দিলি এই পোস্টে। জয়দ্রথ মহাভারতের এক বীর চরিত্র। তাকে নিয়ে এত সুন্দর করে প্রবন্ধ লিখে ফেললি যা পড়লে মহাভারতের একটি অংশের সম্যক ধারণা জন্মাবে। মহাভারতের গল্পগুলোকে এমন সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করলে পড়তে ভীষণ ভালো লাগে।
তোমার উৎসাহ ছিল বলেই এভাবে লিখতে পেরেছি৷ তাই তোমার মন্তব্যে অনেকটা আপ্লুত। এভাবেই পাশে থেকো।
অজানা একটি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম, এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ, দিদি। জয়দ্রথের চরিত্র ও সিন্ধু প্রদেশের ইতিহাস নিয়ে আপনার লেখা সত্যিই আকর্ষণীয়। মহাভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরেছেন, যা আমার কাছে নতুন ও শিক্ষণীয় ছিল।
আমি এরকম অনেক চরিত্র নিয়েই আলোচনা করেছি। আস্তে আস্তে এখানে পোস্ট করব। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আসলে এই সব পোস্ট সাধারণত কেউ পড়ে না৷ আপনি পড়লেন দেখে ভালো লাগল।