আজ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। জেনারেল রাইটিং

in আমার বাংলা ব্লগ17 days ago

প্রিয় ব্লগবাসী



আশা করি আপনারা বেশ ভালোই আছেন, আমিও ঈশ্বরের কৃপায় ভালো আছি। পরম করুনাময়ের কাছে আপনাদের সুস্থ ও সুন্দর জীবন কামনা করে সুর করছি আজকের ব্লগ।

Onulipi_09_12_11_12_33.jpg

সোর্স

একটু আগেই ফিচার পোস্ট দেখে মনে পড়লো আজ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। ইমন ভাইয়ের ব্লগটা পড়তে গিয়ে চোখ থামল সেই বিখ্যাত শব্দবন্ধে "আদর্শ হিন্দু হোটেল"। জানেন যখন নতুন কবিতা লিখতে আসি তখন এক অগ্রজ কবি আমাকে বলেছিলেন আদর্শ হিন্দু হোটেল এ কথাটার মধ্যে ভুল কোথায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাই ভুল থাকতে পারে এ হতেই পারে না। তাই বলে দিয়েছিলাম যে কোন ভুলই নেই। পরে উনি যখন বলেছিলেন আদর্শ হিন্দু বলতে কিছু হয় না তখন বিষয়টা মাথায় খেলল। সত্যিই তো আদর্শ হিন্দু হোটেল কথাটার মধ্যে হোটেলটাকি আদর্শ হল নাকি আদর্শ হিন্দুদের জন্য হোটেল। যদি আদর্শ হিন্দুদের জন্য হোটেল হয়ে থাকে তবে আদর্শ হিন্দুর সংজ্ঞা কি! নাকি কথাটা হবে হিন্দুদের আদর্শ হোটেল। প্রচন্ড গোলমেলে না বিষয়টা? আজ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনের দিন এই কথাটাই আমার প্রথম মনে পড়ল।

তবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেই আমাদের যে দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠে তাহল অপুর পাঁচালীর বিখ্যাত দৃশ্য যেখানে অপু দুর্গার হাত ধরে ট্রেন দেখতে গিয়েছিল। গল্প আর সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনা মিলে এ যেন চোখের উপর লেগে থাকা অদ্ভুত কালজয়ী দৃশ্য। জানেন আজও যখন মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে আর ফটো ফোঁটা বৃষ্টি এসে মুখ ভিজিয়ে যায় তখন নিজেকে দুর্গা বই অন্য কিছু মনে হয় না। আনমনে ভাবি এই তো 'নাকছাবিটি হারিয়ে গেছে'। আমাদের তো কত প্রিয় জিনিসই হারিয়ে যায়। কিন্তু প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার আনন্দই অন্যরকম। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস গুলো পড়লে প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার এক অদ্ভুত পথ রয়েছে। যার রসাস্বাদন করতে মাঝে মাঝে হারিয়ে যেতে হয় বৈকি! নইলে চাঁদের পাহাড়ে গিয়ে অন্ধকার রাতে অন্ধকার গুহায় আলভারেজের দেহ আগলানোর সময়তে কতবার শিহরিত হয়েছি। আর যখন মিছিলের স্লোগান রাতের বেলায় কানে গম গম করে তখন ভাবি অ্যাডভেঞ্চার কত রকমের হয়। জীবনে যে এক ভয়ানক অ্যাডভেঞ্চার তা প্রকৃতি প্রেমিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টিতে খুঁজে পেয়েছি বারবার৷ অপু যখন অপরাজিত হয়ে উঠল, কোথাও কি আমি।আছি? কোন এক জ্যোৎস্না রাতে আমাদের কড়িবরগার ঘরে...

প্রথমবার যখন জানলাম ইচ্ছেমতী নদীর কথা, কত কষ্ট পেয়েছি এই ভেবে যে আমার কোন ইচ্ছেমতী বন্ধু নেই। আমার আজও বন্ধু নেই। বন্ধু কারও হয় না৷ যাদের বন্ধু ভাবি তারা প্রত্যেকেই সাথী৷ দূর্গা যখন মরে গেল, সব ফেলে গেল৷ দূর্গার আর সেসব মনেও রইল না, জীবনে কি চেয়েছিল, কী পাওয়ার আশা করেছিল। পৃথিবীর প্রকৃতিতে এসে আবার বিলীন হয়ে গেছে৷

প্রকৃতির নিরাবরণ মুক্ত রূপের স্পর্শে…অনুভূতি খোলে। সুপ্ত আত্মা জাগ্রত হয় চৈত্র দুপুরের অলস নিমফুলের গন্ধে। জ্যোৎস্নাভরা মাঠে, আকন্দ ফুলের বনে, পাখীর বেলা-যাওয়া উদাস গানে, মাঠের দূর পারে সূর্যাস্তের ছবিতে, ঝরা পাতার রাশির সোঁদা সোঁদা শুকনা শুকনা সুবাসে। প্রকৃতি তাই আমার বড় বিশল্যকরণী— মৃত, মূর্ছিত চেতনাকে জাগ্রত করতে অত বড় ঔষধ আর নাই।’

মৌরিফুল, নিমফুল... এক একদিন এক একটা ফুল হয়ে উঠি। আর কবিতায় প্রকৃতির সাথে নিবিড় হয়ে ভাবি প্রেমের আদর্শ উপহার যদি নাকছাবি হয় তা যেন অবশ্যই নিমফুল বা মৌরিফুলের মতো দেখতে হয়। বাকি গন্ধ প্রেমিকা নিজেও খুঁজে আনতে পারে।

দিনলিপি যে সাহিত্য হতে পারে তা রবিঠাকুরের লেখা থেকে শিখেছি। আর দিনলিপি যে যাপন দর্শন হতে পারে তা বিভূতিভূষণ পড়ে। আজ যেখানে জীবন শুকনো নদীর মতো খটখটে হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিকে শূন্য করে মানুষের উল্লাস বেড়ে যাচ্ছে সেখানেও বিভূতিভূষণ প্রাসঙ্গিক। আমার মতো বাকিরাও যদি এমন প্রকৃতিপ্রেমে ডুবে যায় তবে জীবন হয়তো অনেক রঙিন হবে৷ 'স্মৃতিরেখা' বিখ্যাত দিনলিপিতে তিনি লিখেছেন,

আজ বসে বসে অনাগত দূর ভবিষ্যতের ছেলেমেয়েদের কথা মনে পড়ছে… আমার সেই সব অনাগত শিশু প্রপৌত্র, বৃদ্ধ-প্রপৌত্র ও অতিবৃদ্ধ প্রপৌত্রদের জন্যে কি রেখে যাব তাই ভাবছি।’

প্রকৃতির ভেতর হারিয়ে যাওয়া মানুষটি প্রজন্মের কথা ভাবছেন। এইটেই তো মুক্ত মন। এই মন আর প্রকৃতি উভয়েই হেরে যাওয়া মানুষের দুঃখ কষ্ট জমিয়ে রাখে৷ নিজের ভেতর, হৃদয়ের ভেতর। এভাবেই মানুষ ভালো থাকে। হাসে৷

যাইহোক আজকের ব্লগটি এখানেই শেষ করব৷ তাঁকে জন্মদিনের শ্রদ্ধা জানাই৷ বাংলা সাহিত্য তাঁকে পেয়ে আলোকিত৷

বন্ধুরা, আপনারা ভীষণ ভালো থাকবেন৷ আবার আগামীকাল আসব অন্য কিছু নিয়ে। আজ
টা টা

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণজেনারেল রাইটিং

|লোকেশন|পুণে,মহারাষ্ট্র|
|ব্যবহৃত অ্যাপ|ক্যানভা, অনলিপি|


1000216466.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


Drawing_4.png

1000205458.png

InShot_20240910_100928804.jpg

Black White and Yellow Digital Glitch Money YouTube Thumbnail_20240908_111517_0000.png

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 16 days ago 

আপু আপনার পোস্ট দেখে জানতে পারলাম কবি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর জন্মদিন। সত্যিই পোস্ট টা দারুন ছিল। তবে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে এটা আবার মাথায় এলো তার জন্মদিনে তার জন্য আমার পক্ষ থেকে অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো। পরপারে সে যেন ভালো থাকে। ধন্যবাদ পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 13 days ago 

বিভূতিভূষণ বাংলা সাহিত্যের ভূষণ৷ তাঁকে সম্মান জানাতে পেরে আমিই কৃতজ্ঞ৷ আপনি পড়লেন, আপনাকে ধন্যবাদ জানাই৷

 15 days ago 

অসাধারণ লাগল আপু। আপনার লেখাটা পড়ে সত্যি আমার খুব ভালো লেগেছে। আমার প্রিয় লেখক কে এতো সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন সত্যি এটা প্রশংসনীয়। তবে আদর্শ হিন্দু হোটেল নিয়ে যে গোলমেলে ব‍্যাপার টা আপনি বললেন এটা আমাকেও ভাবালো কিছু সময়। কিন্তু ঐটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। চমৎকার ছিল আপনার লেখাটা।

 13 days ago 

আসলে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় এরকম অনেক শব্দ বন্ধ আছে যেগুলো আসলেই ভুল নয় কিন্তু মনে হয় যেন অন্যরকমটা হলে আরো ভালো হতো বা সঠিক হতো।