ট্রেনের জানালায় ক্ষণিকের বন্ধু, আমার সহযাত্রীরা ।

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


InShot_20250511_223816287.jpg







আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



ট্রেনের কামরা যেন এক চলন্ত গ্রহ — যেখানে প্রত্যেক স্টেশনে চড়ে বসে কিছু অচেনা মুখ, নামহীন যাত্রী, আর নামিয়ে যায় কিছু অসমাপ্ত গল্প। ট্রেনজীবন যেন সময়ের এক অন্তর্বাহিনী, যেখানে সহযাত্রীরা হয়ে ওঠে কিছুক্ষণের সহচর। তাদের কারো সঙ্গে ভাগ হয় টিফিনবক্সের লুচি-আলুর চপ, কারো সঙ্গে জীবনের কাঁচা-পাকা গল্প। নাম জানি না, ঠিকানা জানি না — তবু বিশ্বাস করি, সে মানুষটা এই মুহূর্তে আমারই মতোই পথচলার ক্লান্তিতে একটুকরো কথা খুঁজছিল।

তরুণী মেয়েটি জানালার ধারে বসে বই পড়ছে, পাশের আসনে বসে থাকা বয়স্ক মানুষটি বললেন, “এই লেখকটাকে আমিও পড়েছি, খুব ভালো লেখেন।” দুজনের মধ্যে শুরু হল বইয়ের পাতা ঘেঁটে ভাবনার আদানপ্রদান। কিংবা হয়তো কলেজের ছাত্র ছেলেটি ট্রেনে ওঠা এক কর্মরত পেশাজীবীর কাছে শুনছে জীবনের বাস্তব পাঠ — “ডিগ্রি নয়, শিখে নাও যোগাযোগের ভাষা।”

এসব মানুষদের সঙ্গে হয়তো আর দেখা হবে না, ফোন নম্বর বা ফেসবুক অ্যাডও হয় না। তবু তারা থেকে যায়। হয়তো কোনো এক সন্ধ্যায় হঠাৎ মনে পড়ে, “আচ্ছা, সেই লোকটা কি শেষমেশ ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাতে পেরেছিল?” অথবা মনে পড়ে, “সেই মেয়েটা কি প্রেমিককে ক্ষমা করে দিয়েছিল, যে কথা বলছিল পাশের বার্থে?”

ট্রেনের আলাপ একধরনের মুক্তি। এখানে কেউ কাউকে বিচার করে না। পেশা, ধর্ম, জাত, রাজনৈতিক মত — সব পেছনে ফেলে, মানুষ শুধু মানুষ হয়। আর ক্ষণিকের সেই বন্ধুত্ব, বহুদিন পরেও মনের জানালায় ঝলমলে রোদের মতো এসে বসে।

ঠিক এমনটাই আমার সাথেও ঘটে। প্রতিবার কত নতুন নতুন বন্ধু হয়। এবার এই খুদে বাচ্চাটির সাথে জমিয়ে খেলাধুলো করে বাড়ি এলাম। রাত্রি সাড়ে বারোটায় যখন ট্রেন প্লার্টফর্মে এলো তখন আমাদের তাড়াতাড়ি করে লাগেজ সেট করে শোয়া ছাড়া বিশেষ কোন কাজ নেই। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার একটু পর থেকেই এক ভদ্রলোক তার পুচকে বাচ্চা কাঁধে শুধুই পায়চারি করছেন। একটু থামলেই বাচ্চা কাঁদছে৷ সত্যিই এক বিশ্রী পরিস্থিতি। সারারাতই ঘুমোয়নি। আমরাও ঘুমোতে পারিনি। সকালে ব্রাশ করে এসে যখন বসলাম বাচ্চার মা বাচ্চাটিকে নিয়ে আমাদের বার্থের দিকে আসতে অল্প আলাপ পরিচয় করলাম। বলল বাচ্চা তার কিছুই খায়নি, জলও না। আমি ভাবলা দেখি আমার হাতে খায় নাকি৷ একটা চিকেন নাগেটস অল্প কেটে দিতে দেখলাম খুব মনে ধরেছে৷ আবার আমার মেয়ের জলের বোতলটাও মনে ধরেছে। অনেকটা জল খেল। মন একটু ভালো করলাম নানান কথা বলে। তার কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটি অবশেষে পটি করল আর একটু ঘুমোলোও। ও মা বার বার বলছিল, দিদি বড় উপকার করলে। আমার কথাটায় বেশ লজ্জাই লাগছিল। বললাম উঠলে কালো নো আবার খেলব।

পুরো দেড় দুই দিনের জার্নি এই বাচ্চাটার সাথে খেলতে খেলতে দারুণ কেটে গেল। সামনে এভাবে আরও একটা পরিবারের সাথে পরিচয় ঘটেছিল তার কথা আগামীকাল বলব।

জানেন বন্ধুরা এই পুচকে বাচ্চাটির বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে সামান্যই দূরে৷ পুনে তে বাচ্চার বাবা কেক ফ্যাক্টরিতে কেক বানায়৷ বাচ্চা ছোট বলে রেখেছে৷ বড় হয়ে স্কুলে পড়ানোর সময় দেশে পাঠিয়ে দেবে। আরও কত গল্প শুনলাম।

বাচ্চাটি যখন ট্রেন থেকে নেমে চলে যাচ্ছিল, আবার বুকটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠেছিল। আপনাদের এমন হয়?

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণক্রিয়েটিভ রাইটিং
কলমওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNq11oNEiVHeYi1dFPZdD9DtfDnLSeGtLw3tXF7pNDf1KxPvxfffo2xboPm7wR8jPkKYie3LXrW.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iQSBbshXsaBma59uahG3EZgK1iDXVoywUGGxx1xjvsB7gc2x2aoAvMJQKdwPc9f7Bh4cuj9tdr6.png

1000205505.png