১০ ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে হঠাৎ গোয়া যাবার গল্প
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
গত সপ্তাহে একটা ব্লগে লিখেছিলাম আমার গোয়া যাবার কথা।
আপনারা অনেকেই জানেন আবার অনেকেই হয়তো জানেন না ২০২৩ সালে আমি গোয়াতে ছিলাম। খুব বেশিদিনের জন্য নয়, বছরখানেক ছিলাম। সেই সময় আমার মেয়ে গোয়ার আলমিডা স্কুলে পড়াশুনো করত। মোটামুটি সব দিক থেকেই আমরা এখনও গোয়ার সাথে বেশ জুড়ে আছি। আসলে আমার তো বার বারই মনে হয় ভারতবর্ষে গোয়া এবং কেরালার মতো সব দিক থেকে ভালো রাজ্য আর দুটি নেই। হয়তো আছে কিন্তু আমার জানা এবং অভিজ্ঞতার মধ্যে।
যাইহোক আলমিডাতে পড়াকালীন আমার মেয়ে মানে অরিপ্রা বেশ কিছু ট্যালেন্ট টেস্টে রাজ্যে ভালো ফলাফল করেছিল। কিন্তু সাথে সাথে তো আর পুরষ্কার বিতরণ হয় না৷ তাই সেই সবই ওর ক্লাস টিচারের কাছে জমা ছিল। এছাড়াও ওই একবছরে আমার মেয়ে ওই শিক্ষিকার বেশ প্রিয় হয়ে উঠেছিল। উনি ওনার মেয়ের মতনই দেখতেন। তাই পুনেতে চলে আসার সময় ওনার বেশ মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণে আমি বলেছিলাম আমি নিয়ে যাবো মেয়েকে ওনার সাথে দেখা করাতে।
এবছর পরীক্ষার পর থেকেই বলেছিলাম যে কোথাও একটা যাবো, কারণ পরীক্ষা কয়েকদিন খুবই চাপে কেটেছে আমাদের৷ তো কোথায় যাবো কোথায় যাবো ভাবতে ভাবতেই ঠিক।করলাম গোয়া যাবার কথা। কারণ গোয়া গেলে একটু বেড়ানোও হবে সাথে মেয়ের সাথে তার শিক্ষিকারও দেখা হবে। আর সাথে ওর পাওয়া পুরষ্কারগুলোও নিয়ে নেওয়া যাবে৷ যেই ভাবা সেই কাজ। এদিকে আমরা গোয়া যাবো শুনেই আমার হাসব্যান্ডের কলিগরাও জুড়ে গেল।
প্রথমে ভেবেছিলাম নাইট সারভিস বাসে চলে যাবো। কিন্তু ওরা সকলেই বলল রোডে গাড়ি নিয়ে যাবে৷ আমাদের সঙ্গে ছিল আমার বৌদি আর ভাইঝি। আর ওরা ছয় জন। সব মিলে এগারোজন। এই এগারোজনের দু'জন যেহেতু বাচ্চা তাই আমাদের দুটো গাড়িতে হয়ে গিয়েছিল।
হোলির দিন আমরা ভোর রাতে এই ধরুন পাঁচটার দিকে শুরু করেছিলাম। মাঝে একবার জলখাবার খেতে আর তারপর আখের রস খেতে দাঁড়িয়েছিলাম। ব্যস সোজা গোয়া৷ পুনে থেকে গোয়া যেতে হলে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার একটা ঘাট অর্থাৎ পাহাড় পেরোতে হয়। সেই আঁকাবাঁকা রাস্তায় আমার ভাইঝি তো মোটামুটি বমি করে করে ক্লান্তই হয়ে পড়েছিল। তবে তাকে আমরা সকলেই বেশ মাতিয়ে রেখেছিলাম। এই রোড ট্রিপ আমি আগেও করেছি। সব থেকে ভালো লাগে সারা রাস্তা বোগেনভিলিয়াতে সাজানো আর পাহাড়ে উঠে গেলে ঘন সবুজ গাছের ছায়া।
বিকেল তিনটের দিকে পৌঁছে গিয়েছিলাম। তারপর অল্প খাওয়া দাওয়া করে একটু রেস্ট নিয়ে ফ্রেশ হয়ে সোজা বেনাউলিয়াম বিচ৷ গোয়ার সব থেকে প্রিয় বিচ হল বেনাউলিয়াম বিচ৷ সেরকম ভারতীয়দের ভিড় থাকে না৷ বেশি বিদেশীরাই থাকে। ফলে প্রোটকলগুলো বেশ ভালো হয়। এছাড়াও এখানের রজারস বলে একটি রেস্টুরেন্ট আছে যার খাবার আমার বেশ পছন্দের৷
ওইদিন সমুদ্রে ঘোরাঘুরির পর রজারসেই খাওয়া দাওয়া করে গল্প আড্ডা দিয়ে হোটেলে ফিরেছি অনেক রাতে। ওহ বলে রাখি আমরা হোটেলে ছিলাম না একটা ঘর ভাড়া নিয়ে নিয়েছিলাম। পরের দিন সকালে কোলভা বিচে গেলাম। প্রাতঃরাশ সেরে সেখানে এক দল গেল ওয়াটার স্পোর্টস করতে আর আমরা বাচ্চাদের নিয়ে বিচে। অনেক সময় ধরে স্নান করে আমরা খেতে গেলাম আবারও রজারসে। কারণ সকালের খাবার কারওরই ভালো লাগেনি।
সেদিন রাতে আমরা একবার নর্থ গোয়া গিয়েছিলাম। সবার কিছু কিছু কেনাকাটা ছিল। আমি ভবঘুরের মতো ঘুরেছি। কারণ আমি কি কিনব ভাবিনি৷
এভাবেই শনিবার দিন ঘুরে ঘুরে কেটে গেল। রবিবার সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিলাম ফোন্ডার উদ্দেশ্যে। সেখানেই আমরা আগে থাকতাম। দিদিমনির বাড়ি পৌঁছে দেখি এলাহি ব্যবস্থা করেছেন। কত খাবার দাবার সাথে গোয়ার ট্র্যাডিশনাল।পদ্ধতিতে আমাদের বরণ করে নেওয়া বস্ত্রদান করা৷
এসবের মাঝেই সেরে নিলেন ছাত্রীর সাথে গল্পগুজব ও পুরষ্কার প্রদান। উনি আমার মেয়েকে এতো ভালোবাসেন এটা দেখে বড় আনন্দ পাই৷ শিক্ষাগুরুদের থেকে ভালোবাসা পাওয়া সহজ কথা নয়৷ তাও আবার এতো অল্প সময়ে৷
অনেক গল্প হল কথা হল। বহুদিন পর আমার মেয়ে তার দিদিমনিকে দেখে বাকরূদ্ধ হয়ে গেছিল। চুপ চাপ শুনছিল৷ আসলে ছোট তো তাই কি বলবে সেসব হয়তো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। উনি মেয়েকে আশির্বাদ করলেন।
আপনারাও আশির্বাদ করুন মেয়ে যেন সর্বত্র এভাবেই নিজের জায়গা করে নিতে পারে।

পোস্টের ধরণ | লাইফস্টাইল ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1904217563959328834?t=M1rv0zk4VZ2kYM-OHlJlCg&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1904218824892940560?t=CdgMxkmVb6_UELZcgdqEPw&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1904219959733186893?t=edSSzG62LhZ7zg7WadPaCQ&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1904222111134064744?t=xmhRXqUOGJVazrbR-zzkCA&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1904223948700786759?t=U0ygq1prb9JANmOGXxIV2g&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1904225287312977931?t=fPMvtcZH5IR698pW0KmlmA&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1904224786395586694?t=Me1MieQdfInSBDyvQ_ZyxA&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1904244213065379865?t=uYFIryYeFaXoqY73Lyt2rg&s=19
বেশ ভালো লাগলো আপনার ব্লগটি পড়ে। আসলে শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পাওয়াতো ভাগ্য। ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক যখন এমন হয় তখন পাঠ দান ও গ্রহন দুটো বেশ ভালো হয়।শিক্ষকে দেখতে পেয়ে আপনার মেয়েও বেশ আনন্দিত দেখেই মনে হচ্ছে। বেশ ভালো কিছুটা সময় কাটালেন গোয়ায়। সুন্দর মুহূর্গুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
হ্যাঁ আপু, মেয়ে খুবই খুসবি হয়েছিল। আসলে এই দিদিমনিকে মেয়ে খুব ভালোবাসে। এখানে চলে আসার পর খুব কাঁদত। দুজনেই দুজনের কাছে আশ্রয়ের মত।
ধন্যবাদ আপু। ব্লগটা পড়লেন, ভালো লাগল।
গোয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দারুণ লাগলো! বিশেষ করে আপনার মেয়ের শিক্ষককে দেখে আবেগপ্রবণ হওয়ার অংশটি ছুঁয়ে গেল। শিক্ষকের ভালোবাসা সত্যিই অমূল্য। এছাড়া রোড ট্রিপ, সমুদ্রস্নান, আর গোয়ার খাবার-দাবারের বর্ণনাও মন ছুঁয়ে গেল। সুন্দর ব্লগটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর মন্তব্য করলেন আমার পুরো ব্লগটা যে পড়েছেন সেটা বোঝাই যাচ্ছে। ধৈর্য ধরে এতটা লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।