ফিরতি পথের কিছু অভিজ্ঞতা ও গল্পকথা

in আমার বাংলা ব্লগ8 days ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


IMG-20250213-WA0022.jpg








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



সহযাত্রীগুলো বড্ড বেশি বিছানাকাতুরে। মাঝের বার্থের ভদ্রলোককে একপ্রকার দাদাগো বাবাগো বলেই নিচে নামতে বাধ্য করলাম।সেই রাত ন'টা থেকে শুয়েছে। তার আগেও বার্থ তোলাই ছিল। এদিকে শুয়ে শুয়ে আমার ঘাড়ে কোমরে জং ধরে গেল। আর ট্রেনের কথা নতুন করে নাইবা বললাম।মহাশয় ছেড়েইছেন প্রায় ১৫ ঘন্টা লেটে। দীর্ঘদিন এ বিলম্বে আমার ভারতীয় রেলের প্রতি আস্থা একেবারেই উঠে গেছে। তবু উপায় বা সামর্থের বাহুল্য নেই বলেই ট্রেনে যাতায়াত করি।

এখন বেলা ১০.৩৮। ট্রেনটি সিগন্যালের অভাবে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছে এবং তা খুবই স্বাভাবিক। সময়ে না এলে সব কিছুই ঘেঁটে যায়। আজকাল ট্রেনে বসলে মায়ের একটা কথা মনে পড়ে "সময়ের কাজ সময়ে করো"। মা যদি এই কথাটা ভারতীয় রেল ডিপার্টমেন্টকেও বনি পড়ার মতো করে শেখাত তাহলে হয়তো আমাদের ভোগান্তি খানিক কম হত।

IMG-20250213-WA0021.jpg

সে যাইহোক ট্রেনটা আবারও দাঁড়তে পর্দা সরিয়ে জানালায় মুখ রাখলাম। চোখে পড়ল এই হাড়মাস ভর্তি পলাশ। বিরক্তি আর অধৈর্য্যের মাঝে হঠাৎ করেই কে যেন দোলা দিয়ে গেল। এইটুকুই বোধয় ঈশ্বর। যা চাইলেই পাওয়া যায় না আবার না চাইলেও পাওয়া যায়।

কোন কোন মুহুর্ত এমন হয় আমরা কি চাই তা নিজেরাই বুঝি না। কিন্তু চাওয়া মানেই মায়া। যেই জালে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকি। গায়ে চাকা চাকা দাগ পড়ে যায় তবু মায়া ছেড়ে যায় না, উল্টে ভেতর ভেতর অবিদ্যাগত প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেয়। অদ্ভুত তাই না? যেই মানুষগুলোর জন্য একদিন কত ছোটাছুটি তারাই শত্রু হয়ে যায়, তাদের দেখাতে কত আয়োজন। এদের থেকে গাদাগাদি করে ভিড় করা পলাশ ঢের ভাল। ট্রেন বোঝাই মানুষ সামনে থেমে আছে দেখেও কোন বিশেষ ভ্রুক্ষেপ নেই ,না আছে নিজের ক্ষমতা জাহির করার আপ্রাণ চেষ্টা। আসলে যে গুড় মিষ্টি সে মিষ্টিই হয়। আর গাছ তো গাছই। মানুষ গাছ হতে চাইলেও কি আর পারে? পারে না। গাছের মতো পাতা বিছিয়ে হেমবর্ণের রোদ মিহি করে তোলে ঠিকই কিন্তু সং সাজতে মানুষের জুড়ি মেলা ভার। ভাগ্যিস লেবেদেভ নাটক বয়ে এনেছিলেন নইলে এসবের নাম কি দিতাম তাই নিয়ে দীর্ঘ মাথাব্যথা থেকেই যেত।

বহু বইতে পড়েছি বা কবিতাতেও মানুষ গাছের মতো হতে চায়। সামান্য একা থাকলেই মনে করে গাছ হয়ে উঠেছে। সত্যিই কি তবে এতো সহজ? কই মানুষ তো গাছের মতো নিঃস্বার্থ আশ্রয়দাতা নয়! আজকাল দেখি পরভোলানি মানুষগুলো বড্ড হাসিখুশি। দেখে বোঝাই যায় না মুখ আর মুখোশে তাদের মহাসাগর প্রমান তফাৎ। এমন অনেকেই আছেন আমার বন্ধু পরম বন্ধু হতে চেয়েছেন। আমিও জায়গা দিয়েছি। কিন্তু তৎক্ষনাৎ ঠিক ছোবল মেরেছে। এই সব ভেবে এক একসময় কান্না পেত। ভাবতাম এরা এমন কেন। কিন্তু আজ সেসব মনে হয় না৷ খারাপ লাগার রেসটুকু থেকে গেছে। আমি নিজে এমন ভাবতে পারিনা তো তাই হয়তো এমন।

জানেন প্রতিবার ট্রেনে কত রকমের সহযাত্রী হয়। এবারেও হয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা অত্যন্ত খারাপ। আমি অপেক্ষা করছি নেমে যাওয়ার। হয়েছে কি একটি ছেলে আমার সামনের সিটে বসে রয়েছে। তার ওজন হয়তো দেড়শ কেজি বা তারও বেশি। বুঝতেই পারছেন চেহারার আকার। এহেন অবস্থায় সবই ঠিক ছিল কিন্তু তার গা থেকে ভয়ঙ্কর বোঁটকা গন্ধ। একটু নড়াচড়া করলেই গন্ধে চারপাশ ভরে যাচ্ছে। আমার গা গুলিয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে এখনই নেমে যাই। উপায় তো নেই। তাই নিজেই বেশি বেশি করে বডিস্প্রে মেখে নিয়েছি। তাতে কোন লাভ হয়নি। কি আর করা যাবে এভাবেই ফিরতে হবে বাকি পথ।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণক্রিয়েটিভ রাইটিং
কলমওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNq11oNEiVHeYi1dFPZdD9DtfDnLSeGtLw3tXF7pNDf1KxPvxfffo2xboPm7wR8jPkKYie3LXrW.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iQSBbshXsaBma59uahG3EZgK1iDXVoywUGGxx1xjvsB7gc2x2aoAvMJQKdwPc9f7Bh4cuj9tdr6.png

1000205505.png