গল্প-মন গহীনে||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে অনেক ভালো লাগে। তাই আজকে আমি একটি ছোট্ট গল্প আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবো। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।
মন গহীনে:
Source
শতরূপা এখন অনেক বদলে গেছে। সেই দুরন্ত মেয়েটি এখন সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। মেয়েটা বড্ড চঞ্চল ছিল। সজলকে ভালোবেসে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল মেয়েটা। শতরূপার দুরন্তপনায় মেতে থাকতো পুরো ক্যাম্পাস। ভার্সিটির ক্যাম্পাসে পা রাখার সাথে সাথেই যেন তার হাসি মুখটা আরও বেশি হাসি উজ্জ্বল হয়ে উঠতো। সবাইকে মাতিয়ে রাখত মেয়েটা। জিন্স প্যান্ট আর টিশার্ট পড়তে শতরূপার বেশি ভালো লাগতো। সেই দুরন্ত মেয়েটা ধীরে ধীরে সজলের প্রেমে পড়েছিল।
ভালোবাসি কথাটি বলতে পারেনি। সজলের সাথে তার অনেক বন্ধুত্ব ছিল। সজল ছিল সাদামাটা একটি ছেলে। পাঞ্জাবিতে দারুন লাগতো তাকে। সব সময় হালকা রঙের পাঞ্জাবি পড়তো সজল। শতরুপার জীবনের সাথে একদমই বেমানান ছিল সজল। তবুও তাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল। সজল আর শতরূপার বন্ধুত্বে কোন খাদ ছিল না। দুজনে মিলে চুটিয়ে আড্ডা দিতো। সজলের তেমন কোন বন্ধু ছিল না। শতরুপাই তার একমাত্র বন্ধু ছিল। সজল চুপচাপ থাকতে পছন্দ করতো। কারো সাথে খুব একটা কথা বলতো না।
এভাবে কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। সময়ের সাথে সাথে শতরূপা সজলের সরলতায় আরো বেশি মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়েছিল। কখন যে গভীরভাবে ভালোবেসেছিল বুঝতেই পারেনি। বন্ধুত্বটা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রূপ নিয়েছিল। কিন্তু ভালোবাসি কথাটি বলতে পারেনি। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। সজল এক দিন শতরূপাকে এসে বলে সে একটি মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছে। শতরূপা প্রথমে ভেবেছিল হয়তো তার কথাই বলবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর জানতে পারে তাদের ডিপার্টমেন্টের এক জুনিয়র মেয়েকে সজলের ভালো লেগেছে। মেয়েটাও ঠিক সজলের মতোই সাদামাটা। মেয়েটি যখন তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল তখন সজল অবাক নয়নে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। হালকা রঙের শাড়ি আর খোলা চুলে মেয়েটিকে দেখতে দারুন লাগছিল। শতরূপা সজলের চোখে মেয়েটির জন্য যে ভালোবাসা দেখেছি তা নিজের জন্য কখনো দেখেনি।
শতরূপা ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করলো। শতরূপা আর সজলের মাঝে দূরত্ব তৈরি হতে লাগলো। সজলের সাথে মেয়েটির ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। দুজনে একসাথেই আড্ডা দিত সব সময়। শতরুপা তাদের মাঝখানে আর যেতে চাইতো না। দূর থেকেই তাদেরকে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতো। তার ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে যেতে দেখে তার ভেতরটা একদম শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তাই শতরূপা দেশের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও এই সুযোগটা তার জীবনে অনেক আগেই এসেছিল। কিন্তু সজলের জন্য সে ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে পারেনি। কারণ সে সজলকে অনেক ভালোবাসতো। এখন যখন ভালোবাসার মানুষটি চোখের সামনে অন্য কারো হয়ে গেছে তখন সে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কাউকে কিছু না জানিয়ে শতরূপা সজলের থেকে অনেক দূরে চলে যায়। সজলের সাথে তার খুব একটা যোগাযোগ নেই। আজ অনেক বছর পর শতরূপা দেশে ফিরছে। দীর্ঘ পাঁচ বছরের ব্যবধানে শতরূপা নিজেকে বদলে নিয়েছে। সেই চঞ্চল মেয়েটি এখন আর আগের মত নেই। সাদামাটা বাঙালি মেয়ে হয়ে গেছে। পরনে তার হালকা রঙের শাড়ি আর খোঁপায় জড়ানো বেলি ফুল। সব কিছু মিলিয়ে যেন শতরূপা নিজেকে একদম বদলে ফেলেছে। অনেক বছর পর সজলের সাথে তার দেখা হবে। হয়তো নিজের অনুভূতি কখনো বলতে পারবে না। তবে মন গহীনে তার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা সারা জীবন ধরে থেকে যাবে।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
https://x.com/Monira93732137/status/1885335122242920506?t=IQOIS7-GzHFJ9Zk_MgiwnA&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অসাধারণ একটি গল্প শেয়ার করেছেন আপু। আসলে কাউকে গভীর ভালোবাসার পরেও যদি না বলা যায়, তাহলে ভীষণ কষ্ট লাগে। শতরূপার উচিত ছিলো কোনো কিছু না ভেবে সজলকে মুখ ফুটে সবকিছু বলা। তাহলে হয়তোবা কিছু একটা হতে পারতো। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।