প্রথমবার ভূত দেখার গল্প (পর্ব ১)

in আমার বাংলা ব্লগ8 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

শৈশব থেকে ভূতের গল্প শুনতে আমার ভীষণ ভালো লাগত। দাদার মুখে শোনানো শিউরে ওঠা সব কাহিনি আমাকে একই সাথে ভয় আর কৌতূহলে ভরিয়ে দিত। কিন্তু সেসব কাহিনি সবসময়ই “শোনা কথা” ছিল, নিজের চোখে দেখা নয়। তাই মনে মনে ভাবতাম একদিন যদি সত্যিই ভূত দেখতে পাই, তাহলে কেমন হবে!

IMG-20250813-WA0030.jpg

ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগের। তখন আমি ক্লাস সিক্স অথবা সেভেনে পড়ি, আর পড়াশোনার চেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, মাছ ধরা বা নদীর ধারে ঘোরাঘুরি করতেই বেশি আনন্দ পেতাম। আমাদের গ্রামে শীতের রাতগুলো ছিল একদম শান্ত, শুধু দূরের শিয়ালের ডাক আর বাতাসের শব্দ শোনা যেত। সেই শীতে একদিন গ্রামের পুরনো শ্মশানের কাছে এক অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি হলাম যা আজও ভোলার নয়।সেদিন বিকেলে আমাদের চার বন্ধু আমি, সোহেল, রনি আর জামিল ঠিক করলাম রাতে শ্মশানের পাশ দিয়ে শর্টকাট রাস্তায় বাজার থেকে ফিরব। গ্রামে সবাই বলে ওই পথটা রাতে না যেতে, নাকি সেখানে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমরা তখনকার ছেলেমানুষি সাহসে হেসে উড়িয়ে দিলাম।

রাত আটটার দিকে বাজার থেকে ফিরছি। চারপাশে হালকা কুয়াশা, চাঁদের আলোয় রাস্তা আধো-অন্ধকার। শ্মশান ঘেঁষা পথটা একেবারে নিঃশব্দ, শুধু শুকনো পাতার খসখস শব্দ। হঠাৎ করেই ঠাণ্ডা বাতাস যেন হাড় ভেদ করে ঢুকে গেল। সোহেল মজা করে বলল,দেখেছিস, ভূতের প্র্যাকটিস শুরু হয়ে গেছে!আমরা হেসে উঠতেই আচমকা রনি থেমে গেল। তার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে, ঠোঁট শুকিয়ে গেছে।ওদিকে… দেখ…আমরা তাকাতেই দেখি, পুরনো এক পেয়ারা গাছের ডালে সাদা শাড়ি পরা কিছু একটা ঝুলছে। চুল এত লম্বা যে মুখ ঢাকা পড়ে গেছে। চাঁদের আলোয় শাড়িটা হালকা দুলছে, যেন বাতাসে ভাসছে। প্রথমে মনে হল হয়তো কাপড় শুকাতে কেউ রেখেছে। কিন্তু পরের মুহূর্তেই সেটা আস্তে আস্তে ডাল থেকে নেমে মাটিতে দাঁড়িয়ে গেল!

আমাদের বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। জামিল তো প্রায় চিৎকার করে ফেলল, কিন্তু আমরা চুপ করিয়ে দিলাম। সাদা শাড়ি পরা সেই ছায়ামূর্তিটা ধীরে ধীরে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তার পায়ের শব্দ নেই, শুধু কুয়াশার মধ্যে এক অদ্ভুত ঠাণ্ডা গন্ধ ভেসে আসছে।আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল শরীর জমে গেছে, নড়াচড়া করতে পারছি না। সোহেল আমার হাত চেপে ধরল, ফিসফিস করে বলল, দৌড়… না হলে শেষ!আমরা আর এক মুহূর্ত দেরি করলাম না। প্রাণপণে দৌড়াতে শুরু করলাম। পেছনে তাকানোর সাহস কারও নেই, শুধু মনে হচ্ছিল সেই ছায়াটা ঠিক আমাদের পেছনেই আছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল, কানে শুধু নিজের হৃদপিণ্ডের শব্দ।

অবশেষে যখন বাড়ির কাছে পৌঁছালাম, তখন থামলাম। চারজনেই হাঁপাচ্ছি, মুখে কথা নেই। কিন্তু সবার চোখে একই প্রশ্ন আসলে ওটা কী ছিল?পরে শুনলাম, বহু বছর আগে ওই পেয়ারা গাছের নিচে এক মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। গ্রামের লোকজন নাকি মাঝে মাঝেই তাকে দেখতে পায়, বিশেষ করে শীতে, কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে।সেদিন থেকে আমার বিশ্বাস হয়ে গেছে পৃথিবীতে এমন কিছু আছে, যা আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি না। আর সেই প্রথম ভূত দেখার অভিজ্ঞতা আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ের রাত হয়ে আছে এখনো।

(চলবে…)

পর্ব ২-এ সেই ভূতের আসল পরিচয় ও পরে ঘটে যাওয়া আরও ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো শেয়ার করবো, ইনশাআল্লাহ।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Posted using SteemX

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 8 days ago 

🎉 Congratulations!

Your post has been manually upvoted by the SteemX Team! 🚀

SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem ecosystem.

🔗 Visit us: www.steemx.org

✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5

banner.jpg