“অহংকার মানুষের চিন্তাকে শাসন করছে”

আজকাল মানুষের মধ্যে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখতে পাই- অহংকার। এমন না যে আগে ছিল না, তবে এখন যেন সেটা বেশি করে মাথাচাড়া দিচ্ছে। মানুষ একটু কিছু করলেই নিজেকে বড় ভেবে বসে। কেউ ভালো একটা চাকরি পেলেই মনে করে সে-ই সবার ওপরে। কারো একটু টাকা-পয়সা আসলেই সে মনে করে, এই দুনিয়ায় তার সমকক্ষ আর কেউ নেই। আর কেউ যদি সবার থেকে একটু বেশি স্মার্ট হয়, তাহলে তো কথাই নেই ভাব এমন, যেন সে-ই পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ।

সোর্স

এই অহংকার আসলে মানুষের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে চিন্তাকে গ্রাস করছে। আগে যেখানে মানুষ সহজ-সরল ছিল, যেখানে নিজেদের সীমাবদ্ধতা বুঝত, এখন সেখানে মানুষ শুধু নিজের বড়াই করতেই ব্যস্ত। একটা সময় ছিল, মানুষ পরস্পরের ভালো-মন্দে খোঁজখবর রাখত। কারও বিপদে পাশে দাঁড়াত। আর এখন? কেউ পড়ে গেলে পাশ দিয়ে হেঁটে যায়। কারণ তার মনে অহংকার, “আমি তো ভালো আছি, ও পড়ে থাকলে কি আসে যায়?”আমাদের সমাজে এই অহংকারের প্রভাব খুব ভয়ানকভাবে পড়ছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও এখন অহংকার করে। নতুন মোবাইল কিনলেই ফেসবুকে, ইনস্টাগ্রামে ছবি দিয়ে অন্যদের দেখায়, “দ্যাখো, আমার কী আছে!” কেউ ভালো নম্বর পেলেই ভাবে, “আমি-ই সেরা!” অথচ দিন শেষে সবাই মানুষ, সবারই ভুল আছে, সীমাবদ্ধতা আছে। কেউ পারফেক্ট না।

মানুষ যত বেশি অহংকার করে, তার চিন্তাভাবনা তত সংকুচিত হয়। সে ভাবে, তার মতামতই সঠিক। অন্য কেউ কী বলছে, সেটা সে শোনে না। আর এই জন্যই সে ধীরে ধীরে একা হয়ে যায়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। কারণ, কেউ-ই অহংকারি মানুষকে বেশি দিন সহ্য করতে পারে না।আবার অনেক সময় দেখা যায়, কেউ ধর্ম-কর্ম করে অহংকার করে। ভাবে, সে-ই সবচেয়ে ধার্মিক। অথচ আসল ধর্ম কখনও অহংকার শেখায় না। সত্যিকারের ধার্মিক মানুষ কখনও বলে না, “আমি ভালো।” বরং সে চুপচাপ নিজের কাজ করে যায়।এমনকি অনেকে নিজের রূপ বা গায়ের রঙ নিয়েও অহংকার করে। ভাবে, আমি সুন্দর, আমি ফর্সা, আমাকে সবাই পছন্দ করে। অথচ এগুলো ক্ষণিকের জিনিস। আজ আছে, কাল নেই। রূপ-যৌবন, টাকা-পয়সা, নাম-যশ সবই সময়ের সাথে হারিয়ে যায়। কিন্তু মানুষটার মনটা যদি ভালো না থাকে, তাহলে সে চিরকাল একা।

এই অহংকারের কারণেই মানুষ এখন শান্তি পাচ্ছে না। কারণ, যে অহংকার করে, সে সারাক্ষণ ভাবে, অন্যরা তাকে সম্মান দিচ্ছে কি না। একটু কম সম্মান পেলেই রাগে-অভিমানে ভেঙে পড়ে।তাই বলব, অহংকার থেকে যত দূরে থাকা যায় তত ভালো। জীবন খুব ছোট। এখানে অহংকার করার কিছুই নেই। কে আগে মরবে, কে পরে সেটাও আমরা জানি না। মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত, বিনয়ী থাকা।

যদি কিছু ভালো করতেও পারি, সেটা নিয়ে মাথা উঁচু করার দরকার নেই। বরং বিনয়ের সাথে বলবো, “আলহামদুলিল্লাহ” বা “ধন্যবাদ”। তাহলে মানুষ তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসবে।অহংকার একদিন মানুষের পতনের কারণ হয়। তাই অহংকার না করে মানুষ হও, ভালোবাসো, বিনয়ী থেকো। তাহলেই জীবনটা সুন্দর হবে।

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। _{আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।}