প্রথমবার ভূত দেখার গল্প (পর্ব ২)

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

শৈশব থেকে ভূতের গল্প শুনতে আমার ভীষণ ভালো লাগত। দাদার মুখে শোনানো শিউরে ওঠা সব কাহিনি আমাকে একই সাথে ভয় আর কৌতূহলে ভরিয়ে দিত। কিন্তু সেসব কাহিনি সবসময়ই “শোনা কথা” ছিল, নিজের চোখে দেখা নয়। তাই মনে মনে ভাবতাম একদিন যদি সত্যিই ভূত দেখতে পাই, তাহলে কেমন হবে!

প্রথমবার ভূত দেখার গল্প (পর্ব ১) পড়ে আসুন

IMG-20250813-WA0030.jpg

সেদিনের ঘটনার পর আমরা চার বন্ধু একেবারেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। রাতটা ঘুম আসেনি, শুধু সেই সাদা শাড়ি পরা ছায়ামূর্তির কথা মাথায় ঘুরছিল। সকালে উঠেই আমরা কেউ কারও চোখের দিকে তাকাতে চাইনি। সবাই যেন বুঝে গিয়েছিল আমাদের সঙ্গে সত্যিই কিছু ঘটেছে।কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে দুপুরে আমরা আবার মিলিত হলাম। রনি প্রথমেই বলল, বিশ্বাস কর, ওটা মানুষ ছিল না। আমি একদম স্পষ্ট দেখেছি, তার পা মাটিতে লাগছিল না।জামিল যোগ করল, শুধু তাই না, যখন ও আমাদের দিকে আসছিল, চারপাশের কুয়াশা যেন হঠাৎ ঘন হয়ে যাচ্ছিল।

আমরা চুপ করে রইলাম। মনে হচ্ছিল ভয়ের সঙ্গে এক অদ্ভুত কৌতূহলও কাজ করছে। সত্যিই কি ভূত ছিল, নাকি আমাদের চোখের ভুল? শেষ পর্যন্ত সোহেল প্রস্তাব দিল, আজ রাতেই আবার যাব। ভয় পেয়ে পালিয়ে আসলে তো সত্যি-মিথ্যে জানা যাবে না।আমরা অনেক ভেবেচিন্তে রাজি হলাম। যদিও মনে মনে সবাই ভয় পাচ্ছিলাম, তবুও সেই ঘটনার আসল রহস্য জানার ইচ্ছেটা আমাদের টেনে নিচ্ছিল।সেদিন রাত দশটার দিকে আমরা চারজন হাতে টর্চ নিয়ে বের হলাম। চাঁদ নেই, শুধু ঘন অন্ধকার আর শীতল হাওয়া। শ্মশানের পথে যতই এগোচ্ছি, বুকের ভেতর ধুকপুকানি বাড়ছে। দূরে সেই পেয়ারা গাছটাকে দেখা যাচ্ছে নিস্তব্ধ, কালো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে।

আমরা ধীরে ধীরে কাছে যেতেই হঠাৎ ঠাণ্ডা একটা বাতাস বয়ে গেল। মনে হল পুরো পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ টর্চের আলোয় দেখা গেল গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আছে সেই একই সাদা ছায়ামূর্তি! লম্বা চুল, মুখ ঢাকা, শাড়ি দুলছে বাতাসে।আমাদের গলা শুকিয়ে গেল। রনি কাঁপতে কাঁপতে বলল, দেখেছিস! আবার এসেছে!ঠিক তখনই অদ্ভুত কিছু ঘটল। হঠাৎ করে ওটা কাঁদতে শুরু করল। নিঃশব্দ রাত ভেদ করে সেই কান্নার আওয়াজ আমাদের হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিল। মনে হচ্ছিল কান্নার মধ্যে এক অজানা যন্ত্রণার গল্প লুকিয়ে আছে।আমরা সাহস করে আরেকটু কাছে এগোলাম। এবার টর্চের আলো সরাসরি তার মুখে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ভয় পেয়ে পেছনে সরে গেলাম। কারণ ওর মুখটাই নেই, শুধু এক কালো ফাঁকা গর্ত!

চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে আমরা আর দাঁড়াতে পারলাম না। জামিল প্রথমে দৌড় দিল, তারপর আমরা বাকিরাও। প্রাণপণে দৌড়াতে দৌড়াতে গ্রামের এক প্রবীণ লোকের বাড়ির সামনে এসে থামলাম। তিনি ছিলেন গ্রামের হাফেজ সাহেব। আমাদের হাঁপাতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন কী হয়েছে।সব শুনে তিনি গভীরভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন,
আমি জানতাম তোমরা ওখানে গিয়েছিলে। বহু বছর আগে এই গ্রামের এক মেয়ের বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল। অপমান সইতে না পেরে সে ওই গাছের নিচে আত্মহত্যা করে। তারপর থেকেই প্রায়ই মানুষ তাকে দেখে। আসলেই ওর আত্মা শান্তি পায়নি।আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। হাফেজ সাহেব বললেন,
তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কাল আমি কোরআন খতমের আয়োজন করব। তোমরা ওখানে যেয়ো না আর। মৃতের জন্য দোয়া করবে, তাহলেই ওর আত্মা শান্তি পাবে।

সেদিন রাতে আমরা আর কিছু বলিনি। শুধু মনে হচ্ছিল, ভয়ের আড়ালে সেই আত্মার গভীর বেদনা লুকিয়ে আছে। হয়তো সত্যিই পৃথিবীর বাইরে আরেক জগত আছে, যেখানে অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো ভেসে বেড়ায়।

এভাবেই প্রথমবার ভূত দেখার অভিজ্ঞতার দ্বিতীয় অধ্যায় আমাদের জীবনে অমলিন স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Posted using SteemX