"শৈশবে ভূত ভূত খেলার রহস্যময় গল্প"
প্রতি গ্রীষ্মের ছুটিতে আমরা সবাই মিলে নানার বাড়িতে জমায়েত হতাম। নানা বাড়িটি ছিল বিশাল, পুরনো ধাঁচের, তার চারপাশে ছিল বড় বড় গাছ, একপাশে বাঁশঝাড়, আর পেছনে একটা পরিত্যক্ত গোয়ালঘর আর বাড়ির সামনে ছিল সুবিশাল চর।সন্ধ্যা হলেই সেখানে একটা গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি হতো। আর এই জায়গাটাই ছিল আমাদের ভূত ভূত খেলার প্রধান ক্ষেত্র।একদিন বিকেলবেলা আমরা ঠিক করলাম, আজ রাতে ভূত ভূত খেলা হবে। বড়দের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমরা সবাই মিলে প্ল্যান করতে শুরু করলাম। খেলা হবে একেবারে অন্ধকারে, মোমবাতির আলোয়, আর যার ভাগ্যে ভূত হওয়া পড়বে, সে সবাইকে ভয় দেখানোর দায়িত্ব পাবে।
সন্ধ্যার পর সবাই খেয়ে নিয়ে চুপচাপ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম, যাতে বাড়ির বড়রা বুঝতে না পারে। রাত বাড়তেই আমরা সবাই লুকিয়ে পেছনের গোয়ালঘরে চলে গেলাম। মোমবাতি জ্বালানো হলো, আর ঠিক হলো যে, ছোট মামাতো ভাই ফাহাদ ভূত হবে। আমরা সবাই তাকে সাদা চাদর পরিয়ে দিলাম, মুখে ছাই মাখিয়ে একেবারে আসল ভূতের মতো বানিয়ে ফেললাম।এরপর খেলা শুরু।মোমবাতি নিভিয়ে দেওয়া হলো, আর ফাহাদ গম্ভীর গলায় বলতে শুরু করল—'হুহুহুহু... আমি এই বাড়ির পুরনো ভূত...!' সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মধ্যে কয়েকজন ভয়ে চিৎকার দিয়ে ফেলল। কিন্তু আমরা জানতাম যে এটা খেলার অংশ, তাই সবাই আরো উৎসাহ নিয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু করলাম।এদিকে, ফাহাদের ভূতের অভিনয় এতটাই ভালো হচ্ছিল যে, একসময় আমাদের খালাতো বোন মিতু সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে কেঁদে দিল! আমরা তখন সবাই দিশেহারা, এখন কী করি! নানি বা খালামণি এসে পড়লে তো সব ধরা পড়ে যাবে! তাই আমরা সবাই একসাথে মিতু বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে এটা মজা, সত্যিকারের ভূত কিছু না। কিছুক্ষণ পর সে একটু শান্ত হলো, কিন্তু বলল 'আর কখনো এই খেলা খেলব না।' আমরা সবাই হেসে ফেললাম, কিন্তু মনে মনে ঠিক করলাম, আবার খেলবোই।ঠিক তখনই, এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। হঠাৎ করে গোয়ালঘরের দরজায় 'ঠক ঠক' শব্দ হলো। আমাদের মনে হলো, কেউ যেন বাইরে দাঁড়িয়ে আছে! আমরা সবাই আতঙ্কে জড়সড় হয়ে গেলাম। ভূত সাজার দায়িত্বে থাকা ফাহাদও তখন আর ভূতের অভিনয় করতে পারছে না, সে নিজেই ভয়ে কাঁপছে।
আমরা তখন চুপচাপ, নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে আছি। এমন সময় দরজার ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো 'তোমরা এখানে কী করছো?' গলা শুনেই বুঝতে পারলাম এটা আমাদের বড় মামা! সবাই তড়িঘড়ি করে মোমবাতি নিভিয়ে ফেলে দিলাম, কিন্তু মামা ততক্ষণে ঢুকে পড়েছে।আমাদের ভূত ভূত খেলার সব রহস্য ফাঁস হয়ে গেল। মামা প্রথমে একটু রাগ দেখালেও পরে আমাদের কান্ডকারখানা শুনে হেসে ফেললেন। তিনি বললেন, 'তোমাদের দুষ্টুমি দেখে আমিও ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল।আমরাও ছোটবেলায় এভাবেই ভূত ভূত খেলতাম।'
সে রাতের পর হয়তো আমরা ভূত ভূত খেলা আর খেলিনি, কিন্তু সেই রাতের স্মৃতি আজও মনে পড়লে হাসতে হাসতে পেট ফেটে যায়। শৈশবের সেই দুরন্ত দিনগুলো সত্যিই ছিল অবিস্মরণীয়।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
X-Promotion