"শৈশবে গ্রামের বন্ধুদের সাথে নিয়ে জলপাই চুরি করে জলপাইয়ের আচার তৈরি করে খাওয়ার মজার ঘটনা"
আমার বন্ধুদের মধ্যে ছিল আকাশ, সুমন, জুয়েল আর শাফি। আমরা সবাই এক পাড়াতেই থাকতাম। গ্রামে একে অপরের বাড়ি এত কাছাকাছি ছিল যে প্রতিদিনই আমাদের দেখা হতো। আমাদের গ্রামের পাশেই ছিল বড় একটি জলপাই গাছ। গাছটি ছিল গ্রামেরই এক কাকুর। গাছটি এতই বড় ছিল যে তার ছায়া পুরো উঠোন ঢেকে রাখত। কাকু এই গাছটি নিয়ে খুব গর্ব করতেন এবং আমাদের সবসময় নিষেধ করতেন জলপাই পাড়তে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার মাধুর্য যেন তখন আরও বেশি লোভনীয় হয়ে উঠত।
একদিন দুপুরবেলা, যখন বড়রা সবাই নিজেদের কাজকর্মে ব্যস্ত, তখন আমরা পরিকল্পনা করলাম জলপাই চুরির। আকাশ ছিল দলে সবচেয়ে সাহসী। ও-ই আমাদের নেতৃত্ব দিত। আমরা গাছের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম। শাফি আর জুয়েল ছিল পাহারাদার। সুমন আর আমি ছিলাম গাছে চড়ার দায়িত্বে। গাছে চড়ার অভিজ্ঞতা তখন ছিলো অনেক, তাই কোনো ভয় কাজ করছিল না।জলপাই গাছের ডালে চড়ে সুমন আর আমি মনের আনন্দে জলপাই পাড়তে শুরু করলাম। আমাদের হাতে থাকা ছোট ব্যাগগুলো দ্রুতই ভরে উঠল টকটকে সবুজ জলপাইয়ে। নিচে দাঁড়িয়ে আকাশ আর শাফি আমাদের উৎসাহ দিচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ দূর থেকে কাকুকে আসতে দেখে জুয়েল আমাদের সঙ্কেত দিল। আমরা তখন প্রায় শেষ মুহূর্তে। ব্যাগ নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে সবাই দৌড়ে পালালাম। আমাদের হৃদয় তখন উত্তেজনায় ধুকপুক করছিল।
বাড়িতে ফিরে সবাই মিলে আচার বানানোর জন্য প্রস্তুতি শুরু করলাম। আকাশের মায়ের পুরনো মশলার বোতল ছিল আমাদের রেসিপির প্রধান উপকরণ। লবণ, মরিচগুঁড়ো, সরিষার তেল—সবকিছুই ছিল আকাশের ঘরে। আমরা সবাই মিলে বসে জলপাইগুলো প্রথমে ধুয়ে কেটে নিলাম। এরপর তাতে লবণ মিশিয়ে রোদে রেখে দিলাম। এক সপ্তাহ পরে আমরা আবার একত্র হলাম আচার বানানোর চূড়ান্ত ধাপের জন্য। তখন তাতে সরিষার তেল আর মরিচগুঁড়ো মিশিয়ে কাঁচের জারে ভরে ফেললাম। আচার বানানোর সময় আমাদের ছোটখাটো ঝগড়াও হয়েছিল—কে বেশি জলপাই পেয়েছে, কে বেশি কাজ করেছে, এসব নিয়ে। কিন্তু সেসব মজার ঝগড়া আমাদের বন্ধুত্বের মধুরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।
আচার তৈরি হয়ে গেলে আমরা সবাই মিলে আচার খেতে বসে গেলাম। সে কি টক-মিষ্টি স্বাদ! মনে হচ্ছিল যেন স্বর্গীয় কোনো খাবার খাচ্ছি। সবাই একমত হয়েছিলাম যে এই আচার আমাদের সবার যৌথ প্রয়াসের ফল এবং এর স্বাদ আমাদের সেই দুঃসাহসিক অভিযানেরই মিষ্টি পুরস্কার।তবে কাকু আমাদের অভিযানের কথা জানতে পেরে একটু রাগ করেছিলেন। কিন্তু যখন আচার থেকে তাকে একটা বাটিতে খেতে দিলাম, তখন তিনি হাসতে হাসতে বললেন, “তোমাদের দুষ্টু পোলাপাইন বলে কথা!”
আজকের দিনে বসে যখন শৈশবের এই স্মৃতিগুলো মনে করি, তখন মনে হয় সেই দিনগুলো ছিল জীবনের একেকটা মধুর অধ্যায়। তখন কোনো চিন্তা ছিল না, শুধু আনন্দ আর খেলার মধ্যেই দিন কেটে যেত। বন্ধুত্বের বাঁধন এতটাই শক্ত ছিল যে একসঙ্গে দুষ্টুমি করেও আমরা একে অপরের পাশে থাকতাম। জলপাই চুরি করে আচার বানানোর সেই গল্প আমাদের শৈশবের নির্মল আনন্দের প্রতীক। এখন শহরের ব্যস্ত জীবনে এই ধরনের ছোটখাটো ঘটনা প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে। কিন্তু সেই গ্রামের গাছ, আমাদের দুষ্টু অভিযান, আর বন্ধুত্বের বন্ধন—এসব কিছুই আজো মনের গভীরে এক অনন্য জায়গা দখল করে আছে।
এই স্মৃতিগুলোই তো আমাদের জীবনের সম্পদ। যখনই একাকীত্বে ভুগি বা জীবনের কোনো জটিলতার মুখোমুখি হই, তখন এইসব শৈশবের গল্প মনে করে হেসে উঠি। আর মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দগুলোই হয়তো লুকিয়ে থাকে এরকম সাধারণ আর সরল স্মৃতির মধ্যে।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
https://x.com/mohamad786FA/status/1857880498619691209?t=-4zI3cxJuHjzdo-lNnonsg&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনাদের দলে সবথেকে সাহসী লোক ছিল আকাশ। আকাশ আপনাদের নেতৃত্ব দিত ।আর আপনারা দুজন কাছে উঠতেন। ছোটবেলায় আমরাও অনেক ফল চুরি করে খেয়েছি ।আপনার আজকের জলপাই চুরি করার গল্পটি পড়ে আমার শৈশবের সেই কথাগুলো মনে পড়ে গেল।
চুরি করে কিছু খাবার আনন্দই আলাদা জানেন তো। আপনার জলপাই চুরি করার গল্প সেটাই মনে করিয়ে দিল। ছেলেবেলার এইসব স্মৃতিগুলো পরে ভীষণ মনে পড়ে। তবে চুরি করে আচার খাওয়ার পর আপনার আচারের স্বাদ আরো বেশি লাগবে না? হা হা হা। দারুন মজার একটি গল্প আমাদের সঙ্গে শেয়ার করলেন।
শৈশবের স্মৃতিগুলো সব সময় দারুন হয়। বন্ধুরা সবাই মিলে জলপাই চুরি করে আচার করেছেন সেটা জানতে পেরে বেশ ভালো লাগলো। আমার নানার বাড়িতেও পাশের বাড়িতে একটা জলপাইগাছ ছিল। আমরা বেশিরভাগ সময় চলে যেতাম ছাদের উপরে জলপাই নিয়ে আসার জন্য। এই মুহূর্তগুলো সবার কাছেই প্রিয়। কিন্তু বর্তমানে সেই মুহূর্তগুলো শুধুমাত্র স্মৃতি হয়েই রয়ে গেল। আর কখনো এই সময়ের ফেরা সম্ভব নয়।
চুরি করে যে কোন জিনিস খেলে তার স্বাদ চতুর্গুণ বেড়ে যায়। ছোটবেলায় আমরাও এরকম অন্যের গাছ থেকে কাঁচা আম তেতুল পেয়ারা এসব চুরি করে আনতাম। আর আপনাদেরই মতন চুরির শেষের দিকে বুকটা ধুকপুক করত। আসলে আমাদের এই শৈশবগুলো আজীবন কাল টাটকা হয়ে থেকে যাবে। খুবই ভালো লাগলো আপনার শৈশবের জলপাই চুরির গল্প পড়ে।
ছোটবেলায় আমরাও অনেক আম চুরি করে খেয়েছি। আপনার জলপাই চুরির গল্পটি পড়ে ছোটবেলার আমচুরির স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল।এইসব ফলগুলো চুরি করে খাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। চুরি করা ফল গুলোর যেন স্বাদও অনেক বেশি পাওয়া যায়। আপনার মজার গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।