"বর্ষার পানিতে যমুনা নদী"

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এই দেশের প্রকৃতি, জীবনযাপন আর সংস্কৃতির সাথে নদীর এক গভীর সম্পর্ক। অসংখ্য ছোট-বড় নদী বয়ে চলেছে এ দেশের বুক চিরে। তারই মাঝে অন্যতম একটি নাম যমুনা নদী। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রভাবশালী নদীগুলোর মধ্যে যমুনা নদী অন্যতম। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুবিশাল এই যমুনা নদী যেন এ শহরের জীবনের সাথে মিশে আছে। সিরাজগঞ্জ শহরের সৌন্দর্যের মূল আকর্ষণ এই যমুনা নদী। এই নদীর ঢেউ, নদীর পাড়, বালুচর আর নদীর ধারের বিকেলের হিমেল হাওয়া শহরবাসীর জীবনে এক অনন্য প্রভাব ফেলে।

বর্তমানে বর্ষা মৌসুম চলছে। নদীতে পানি বেড়ে গিয়েছে। যমুনা নদীর পানির স্রোত এখন হু হু করে বাড়ছে। নদীর বুক পানিতে থই থই করছে। নদীর এই অবস্থা দেখতে গেলে বোঝা যায় প্রকৃতি কীভাবে রূপ বদলায়। সারা বছরের অপেক্ষার পরে যখন বর্ষাকাল আসে, তখন যমুনা নদী তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পায়। নীল আকাশের নিচে দিগন্তজোড়া জলরাশি আর তার উপরে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ, এই দৃশ্য যেন একেবারে মনের মধ্যে স্থায়ী হয়ে যায়।এমন পরিবেশে নদীর ধারে বসে থাকতে কার না ভালো লাগে? আমি বরাবরই প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। যেখানে একটু খোলা প্রকৃতি, নদী, আকাশ আর দূরদিগন্তের দৃষ্টি পড়ে এমন পরিবেশই আমাকে টানে। বিশেষ করে বর্ষাকালে যমুনা নদীর এই রূপের কাছে আমি হেরে যাই। সুযোগ পেলেই বিকেলের দিকে বন্ধু-বান্ধব মিলে যমুনা নদীর পাড়ে গিয়ে বসি। নদীর পানির শব্দ, বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ আর আকাশের রঙ বদলানো দেখতে দেখতে কত যে সময় কেটে যায়, টেরই পাওয়া যায় না।

সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পাড়ের বিকেলটা যেন আলাদা এক রকমের। শহরের ব্যস্ততা, যানজট আর কোলাহল থেকে একটু দূরে যমুনার তীরে এসে বসলে মনে হয়, পৃথিবীটা থেমে গেছে। এই নদী, এই আকাশ, এই জলরাশি আর বালুচর মিলে এক অপার্থিব সৌন্দর্য তৈরি করে। বিশেষ করে যখন নদীতে পানি বেশি থাকে, তখন তার স্রোতও হয় দুরন্ত। স্রোতের শব্দ আর বাতাসের সাথে মেঘেদের খেলা, কখনো কখনো বৃষ্টির ফোঁটা এসব একত্রে মিশে তৈরি হয় এক স্বপ্নময় পরিবেশ।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেও এর চেয়ে ভালো জায়গা আর হয় না। বিকেলের দিকে হালকা নাস্তা আর গরম চা নিয়ে বসে পড়ি। কারো গল্প, কারো জীবনের নতুন ঘটনা, কেউ আবার পুরোনো স্মৃতির খাতায় ডুব দেয়। নদীর পাড়ে এই আড্ডাগুলো আমাদের দিনকে করে তোলে আরো রঙিন, আরো প্রাণবন্ত। সারা সপ্তাহের ক্লান্তি আর একঘেয়েমি ভুলিয়ে দেয় এই অল্প সময়ের প্রাণের আড্ডা। প্রকৃতির এই অনিন্দ্য সৌন্দর্যের মাঝে বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর অনুভূতিটা সত্যিই বলে বোঝানোর মতো না।

আজ আমি কয়েকটি ছবি তুলেছি যমুনা নদীর এই অপরূপ রূপের। ভাবলাম এই মুহূর্তের সৌন্দর্য আপনাদের সাথে ভাগ করে নিই। ছবিগুলোতে ধরার চেষ্টা করেছি নদীর স্রোত, আকাশের রঙ বদলানো রূপ, দূরের চর আর পানির উপর বয়ে যাওয়া নৌকার দৃশ্য। আমার বিশ্বাস, এই ছবিগুলো আপনাদের মনকেও ছুঁয়ে যাবে। ছবিগুলো দেখলে বোঝা যাবে যমুনা নদী কী অপরূপ রূপে সাজে বর্ষার দিনে।যমুনা নদী কেবল একটা নদী নয়, এটা আমাদের অনুভূতির একটা অংশ। এই নদী আমাদের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি, আমাদের জীবনের গল্পের সঙ্গী। সিরাজগঞ্জ শহরের সৌন্দর্য এই নদীকে ঘিরেই। বর্ষা এলেই যেন এই সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর সেই রূপের সাক্ষী হতে আমি সুযোগ পেলেই ছুটে যাই এই নদীর পাড়ে।

এই লেখার মধ্য দিয়ে আমি চেয়েছি যমুনা নদীর বর্ষার রূপ আপনাদের কাছে তুলে ধরতে। যারা সিরাজগঞ্জে আসেননি বা যমুনা নদীর এই রূপ দেখেননি, তারা যেন অন্তত এই ছবিগুলোর মাধ্যমে এই সৌন্দর্য কিছুটা অনুভব করতে পারেন। কারণ প্রকৃতির এই অপার্থিব সৌন্দর্য সকলের জন্য।সুযোগ হলে একদিন আপনিও চলে আসুন সিরাজগঞ্জ শহরে। বর্ষার দিনে যমুনার তীরে বসে কাটানো কিছু মুহূর্ত হয়তো আপনারও জীবনের এক দারুণ স্মৃতি হয়ে থাকবে।

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। _{আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।}