“আব্বুর ব্যাগের ভেতর লুকানো ঈদের আনন্দ”

in আমার বাংলা ব্লগyesterday

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

ছোটবেলার ঈদ মানেই ছিল সীমাহীন উচ্ছ্বাস, অপেক্ষার প্রহর গোনা, আর ঈদের নতুন পোশাকের জন্য দুরন্ত এক আনন্দ। আজ যখন পেছনে ফিরে তাকাই, মনে হয় যেন কোনো এক রূপকথার গল্প ছিল সেই সময়টা। বিশেষ করে আমার জন্য ঈদ মানে ছিল আব্বুর ঢাকা থেকে কেনাকাটা করে নিয়ে আসা নতুন জামা-কাপড়।

এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে, ঈদের দুই দিন আগে আব্বু যখন বাসায় ফিরতেন, আমি আর আমার ছোট বোন অধীর আগ্রহে বসে থাকতাম,কী এনেছে আব্বু আমাদের জন্য। সেই স্বর্ণালী অতীতের আনন্দময় মুহূর্তের গল্প আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে আসলাম।যা আপনাদের শৈশবেরও এই বিশেষ আনন্দময় মুহূর্তের কথা মনে করিয়ে দেবে।চলুন তাহলে শুরু করি...

1000060363.jpg

সোর্স

যখন ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়তাম, তখন ঈদের আগের রাতটা ছিল ঘুমহীন এক আনন্দের রাত। আব্বু ব্যাগ থেকে একে একে আমাদের জন্য কেনা পোশাক বের করতেন, আর আমরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে তা হাতে নিয়ে দেখতাম। জামাগুলো পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের দেখে কত যে খুশি হতাম, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। মনে হতো ঈদের আনন্দের প্রথম ধাপটা সেখান থেকেই শুরু। নতুন পোশাকের ঘ্রাণ, ভাঁজ খুলে পরার অনুভূতি, আর আব্বুর ভালোবাসায় মোড়ানো উপহারগুলো আমাদের শৈশবের ঈদকে সত্যিকার অর্থেই রঙিন করে তুলেছিল।আজ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সময় বদলে গেছে, আমিও বড় হয়ে গেছি। এখন আর সেই ছোটবেলার ঈদের অনুভূতিটা খুঁজে পাই না। ঈদের আগে এখন আর আব্বু আমাদের জন্য পোশাক কিনে আনেন না, বরং টাকা পাঠিয়ে দেন নিজেদের পছন্দমতো কিনে নিতে বলেন। আব্বু হয়তো ভাবে, আমরা বড় হয়ে গেছি, আমাদের নিজেদের পছন্দ আছে, তার কেনা পোশাক হয়তো আমাদের ভালো নাও লাগতে পারে। অথচ ছোটবেলায় এ বিষয়টা নিয়ে কখনো ভাবতাম না, তখন যা-ই আনতেন, সেটাই ছিল আমাদের কাছে শ্রেষ্ঠ উপহার।

নিজের পছন্দমতো পোশাক কেনা মানে স্বাধীনতা, কিন্তু সেই স্বাধীনতার মাঝে নেই সেই শৈশবের ঈদের উচ্ছ্বাস। বন্ধুদের সঙ্গে বাজারে গিয়ে পোশাক কেনা, আব্বুর টাকা খরচ করে সব ঠিকঠাক করলেও সেই বিশেষ অনুভূতি আর আসে না। মনে হয় যেন ঈদের আনন্দের একটা বড় অংশ কোথাও হারিয়ে গেছে।সময় আমাদের বড় করে তোলে, অনেক কিছু শেখায়, কিন্তু বিনিময়ে কেড়ে নেয় শৈশবের সেই নির্মল আনন্দ। একসময় ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা-কাপড়, আতর-মিশানো মিষ্টি ঘ্রাণ, সকালবেলা মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া, আর আত্মীয়স্বজনের ভালোবাসায় সিক্ত হওয়া। এখন ঈদের সকাল আসে, নামাজ পড়ি, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়, ছবি তুলি, খাওয়া-দাওয়া হয়, কিন্তু মনটা কেন যেন খালি খালি লাগে। সেই আগ্রহ, সেই প্রতীক্ষা, সেই অদ্ভুত এক রকমের সুখ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।

শৈশবের ঈদ কেবল পোশাকের জন্য ছিল না, বরং তা ছিল একটি অনুভূতির নাম। নতুন পোশাকের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল ভালোবাসা, আবেগ, পরিবারের সান্নিধ্য। ছোটবেলায় হয়তো বুঝতাম না, কিন্তু এখন মনে হয়, ঈদের পোশাকের আনন্দটা ছিল শুধুই বাহ্যিক; আসল আনন্দ ছিল পরিবারকে কাছাকাছি পাওয়া, তাদের ভালোবাসার উষ্ণতায় নিজেকে মুড়ে ফেলা।

আজ জীবন অনেক বাস্তবমুখী হয়ে গেছে। পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, ভবিষ্যতের চিন্তায় ঈদের দিনও যেন আগের মতো মুক্তভাবে উপভোগ করা যায় না। সময়ের প্রবাহ আমাদের বড় করে তোলে, কিন্তু একইসঙ্গে অনেক মূল্যবান কিছু কেড়ে নেয়। তবুও, এই কঠিন বাস্তবতার মাঝেও খুঁজে নিতে হয় ঈদের আনন্দ, খুঁজে নিতে হয় জীবনের অর্থ। হয়তো ছোটবেলার মতো আর কখনো ঈদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো না, কিন্তু স্মৃতির পাতায় সেই দিনগুলো অমলিন থাকবে চিরকাল।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif