মানুষ চাপে পড়ে সব কিছু শেষ করে দেয়।

in আমার বাংলা ব্লগ18 days ago

আজ -২৮ য় আষাঢ় | ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বর্ষাকাল |


আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।

ChatGPT Image Jul 17, 2025, 02_35_39 AM.png



আমরা সবাই নিজের মতো করে জীবন চালিয়ে যাই। কাজ, পরিবার, সমাজ— সব কিছু মিলিয়ে প্রতিদিন একরকম চাপের মধ্যে বাঁচি। কেউ অফিসের চাপ সামলায়, কেউ সংসারের দায়িত্ব, কেউ সম্পর্কের টানাপোড়েন, কেউ নিজের মানসিক যুদ্ধ। বাইরে থেকে হয়তো কাউকে দেখে কিছু বোঝা যায় না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে অনেকেই ভাঙছে।

মানুষ কখনো একদিনে শেষ হয়ে যায় না। একটু একটু করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, চাপ সহ্য করতে করতে এক সময় ভেতরটা নিঃশেষ হয়ে যায়। আর তখনই হয় বড় ভুল। তখন আর কোনো কিছু ধরার ইচ্ছা থাকে না, তখন মানুষ ভাবে, সব শেষ করে দিই।

আমরা অনেক সময় বাইরে থেকে কাউকে বিচার করি— ভাবি, সে কেন এমন করল? কেন হঠাৎ সব ছেড়ে দিল? কেন পরিবার, কাজ বা সম্পর্ক সব থেকে দূরে চলে গেল? অথচ আমরা জানি না, সেই মানুষটা কত দিন ধরে কষ্ট জমিয়ে রেখেছিল। কত রাত নিঃশব্দে কেটেছে তার, যখন সে কাউকে কিছু বলতে পারেনি।

চাপটা সবসময় বড় কোনো ঘটনা থেকে আসে না। ছোট ছোট বিষয়, না বলা অনুভূতি, প্রতিদিনের ক্লান্তি— এগুলো জমে গিয়ে এক সময় পাহাড় হয়। তখন মানুষ চায় একটু আশ্রয়, একটু বোঝা, কারো পাশে একটু সময় কাটানো। কিন্তু সেই সময়টুকুও যদি না পায়, তাহলে সে নিজের ভেতরেই ডুবে যায়।

অনেকেই হয়তো দেখে, একদিন হঠাৎ করে সম্পর্ক ভেঙে গেল, কেউ হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিল, কেউ পরিবার থেকে আলাদা হয়ে গেল, কেউ কথাবার্তা কমিয়ে দিল— এইসব কিছুই এক দিনে হয় না। এর পেছনে দিনের পর দিন জমে থাকা চাপ কাজ করে।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমাদের সমাজ এখনো চাপ বুঝতে শেখেনি। আমরা ভাবি, চুপ থাকা মানে দুর্বলতা। কেউ কথা না বললে তাকে অবজ্ঞা করি। কেউ কাঁদলে বলি, এতো আবেগী হয়ে লাভ নেই। অথচ অনেক সময় সেই চুপ থাকা মানুষটাই ভেতরে প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকে।

মানুষ নিজের প্রতি যতটা কঠোর হয়, ততটা হয়তো কারো প্রতি না। সে নিজেকে বলেই যায়— “আরেকটু চেষ্টা করি”, “সব ঠিক হয়ে যাবে”, “এটা সামলে নিতে হবে”। এই “আরেকটু” করতে করতেই একসময় সে ভেঙে পড়ে। তখন আর চেষ্টা করার ইচ্ছাটুকুও থাকে না। তখন মনে হয়, সব কিছু ছেড়ে দিলেই শান্তি।

কিন্তু সত্যি বলতে, সব কিছু ছেড়ে দিলেও শান্তি আসে না। বরং ভেতরের কষ্টটা আরও তীব্র হয়। তাই শেষ করে দেওয়ার আগে দরকার একটা থামা, দরকার কারো সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা, দরকার নিজের কাঁধ থেকে কিছু ভার নামিয়ে ফেলা।

আমাদের সমাজে কেউ কাউকে সত্যি করে শুনতে চায় না। সবাই চায়, তুমি হাসো, চুপ থাকো, কাজ করো, আর কোনো অভিযোগ করো না। কিন্তু মানুষ তো রোবট না। তারও অনুভূতি আছে, দুর্বলতা আছে, একা লাগা আছে। তাই চাপের সময় পাশে থাকা মানুষ দরকার হয়— যাকে বলা যাবে, “আমি আর পারছি না।”

আমরা যদি নিজের চারপাশে একটু খেয়াল করি, তাহলে দেখতে পাবো, অনেকে হাসছে ঠিকই, কিন্তু চোখে ক্লান্তি। অনেকে কাজে যাচ্ছে, কিন্তু ভেতরে একটুও শান্তি নেই। অনেকে ভালোবাসার সম্পর্কে থেকেও একা। এরা সবাই হয়তো কোনো না কোনো চাপে পিষ্ট।

এই চাপে পড়ে কেউ কেউ চুপ করে যায়, কেউ কেউ রেগে যায়, কেউ কেউ একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কেউ আবার এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়, যেটা পরবর্তীতে আর ফিরে আনা যায় না।

তাই নিজেকে ভালোবাসা শিখতে হবে। সময় থাকতে থেমে যেতে হবে। নিজের কষ্ট কাউকে বলা শিখতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, অন্যের কষ্টকেও বুঝতে শিখতে হবে। কারণ কেউ হয়তো কিছু বলছে না, তাতে বোঝা যায় না সে ভালো আছে।

চাপ জীবনের অংশ, কিন্তু সেটা যখন সহ্যসীমার বাইরে চলে যায়, তখন সেটা ধ্বংস ডেকে আনে। সম্পর্ক ভেঙে যায়, পরিবার ভেঙে পড়ে, স্বপ্ন থেমে যায়, আর কেউ কেউ নিজের জীবন নিয়েই বড় ভুল করে ফেলে।

তাই সময় থাকতে একটু খেয়াল রাখা দরকার— নিজের প্রতিও, কাছের মানুষদের প্রতিও। কেউ চুপ করে থাকলে একটু জিজ্ঞেস করা দরকার, “তুই ঠিক আছিস তো?” কেউ বদলে গেলে দূরে ঠেলে না দিয়ে কাছে টেনে নেওয়া দরকার। কারণ অনেক সময় একটা প্রশ্ন, একটা মনোযোগ, একটা বোঝাপড়া কাউকে চাপ থেকে বের করে আনতে পারে।

শেষ কথা হলো, চাপ তো থাকবেই। জীবনটাই চাপের মধ্যে গড়া। কিন্তু সেই চাপ যদি কাউকে শেষ করে দেয়, তাহলে সেটা শুধু তার ক্ষতি না— চারপাশের অনেক কিছু ভেঙে পড়ে। তাই আগে বোঝা শিখি, বুঝতে দেওয়া শিখি, এবং সাহায্য চাওয়া শেখাই।


সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।

1000038736.webp


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png