ভুল ক্ষমা করে দিতে হয় না হয় সম্পর্ক নষ্ট হয় ।
আজ -২৩য় আষাঢ় | ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বর্ষাকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
জীবনের প্রতিটা সম্পর্কে কিছু না কিছু ভুল হয়। কখনো আমরা বলার সময় শব্দ বেছে নিতে পারি না, কখনো আমরা বোঝার জায়গায় দাঁড়িয়ে শুনি না, আবার কখনো ইগো, ব্যস্ততা, অভিমান—সব মিলিয়ে সম্পর্কের ভেতর দুরত্ব তৈরি হয়। মানুষ বলে সম্পর্ক ভাঙে বিশ্বাসঘাতকতায়, কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় সম্পর্ক ভেঙে যায় শুধুমাত্র ক্ষমা না করার কারণে।
একজন ভুল করতেই পারে। কারণ আমরা কেউই নিখুঁত না। কেউ কখনো ইচ্ছা করে কষ্ট দেয় না, কেউ ভুল বোঝে, কেউ সময় দিতে পারে না, কেউ নিজের মতো ভাবতে গিয়ে বুঝে না যে তার আচরণ অন্যকে আঘাত করছে। কিন্তু সেই ভুল যদি আন্তরিকভাবে বুঝতে পারে কেউ, তাহলে তাকে ক্ষমা না করলে সম্পর্কের ভিত নড়ে যায়।
ক্ষমা চাওয়া অনেক কঠিন। সেটা যদি কেউ করে, তাহলে বোঝা উচিত, সে সম্পর্কটা ঠিক করতে চায়। কিন্তু আমরা অনেক সময় সেই সুযোগ দিই না। মনে করি, সে একবার ভুল করেছে, আবার করবে। অথবা ভাবি, এত কষ্ট দিয়েছে, ক্ষমা করে দিলে কি আমি দুর্বল হবো?
না, ক্ষমা করা কোনো দুর্বলতা না। বরং যাকে ভালোবাসো, তার জন্য তোমার ভেতরের শক্তিটা তখনই বোঝা যায়, যখন তুমি কষ্ট পাওয়ার পরও তার হাত ধরতে পারো। ভুল ক্ষমা করার মানে ভুলকে ভুলে যাওয়া না, বরং সম্পর্কটাকে ভুলের চেয়ে বড় করে দেখা।
অনেক সময় আমরা নিজের জায়গা থেকে ভাবি— সে তো আমায় বোঝেনি, কষ্ট দিয়েছে, ঠকিয়েছে। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখি, সে কি ইচ্ছা করে করেছে? সে কি এখন সত্যিই অনুতপ্ত? সে কি ফিরে এসে একটু বদলানোর চেষ্টা করছে?
ক্ষমা মানে সব ঠিক হয়ে যাবে না। কিন্তু ক্ষমা না করলে যা ছিল, সেটাও আর থাকবে না। একজন মানুষ যদি আন্তরিকভাবে তোমার কাছে ফিরে এসে বলে— আমি ভুল করেছি— তাহলে তুমি যদি তার সেই চেষ্টাটুকু বুঝতে না পারো, তাহলে একদিন তোমারও মনে হবে— আমি হয়তো একটা সম্পর্ক শুধু একটা ভুলের জন্যই শেষ করে ফেলেছিলাম।
আসলে ক্ষমা করা আমাদের ভেতরের শক্তি ও ভালোবাসার পরিপক্বতার পরিচয়। সম্পর্ক মানেই শুধু ভালো সময় ভাগাভাগি করা নয়, খারাপ সময়েও একে অপরকে ধরে রাখার নাম সম্পর্ক। আজ যদি তুমি কারো একটা ভুলে তাকে ছেড়ে দাও, কাল তোমার ভুলে সেও যদি তোমাকে ছেড়ে দেয়— তাহলে কোনো সম্পর্কই টিকে না।
একটা সময়ের পর সবাই ভুল করে, সবাই কষ্ট দেয়, কিন্তু সম্পর্ক টিকে থাকে শুধু তখনই, যখন দুজনেই বুঝতে শেখে। কেউ একটা ভুল করলে আরেকজন যদি ক্ষমা করতে জানে, তবেই সম্পর্কটা চলতে পারে।
তবে এর মানে এই না যে সব ভুল ক্ষমার যোগ্য। কেউ যদি একই ভুল বারবার করে, যদি সে তোমার আত্মসম্মানকে আঘাত করে, যদি ভুল করেও অনুশোচনা না থাকে— তবে সেটা সম্পর্ক নয়, সেটা বোঝা। কিন্তু সত্যি যদি কেউ বুঝতে পারে, ক্ষমা চায়, চেষ্টা করে— তাহলে সম্পর্কটা আবার গড়ে তুলতে হয়।
ক্ষমা করা মানে শুধু তাকে আবার জায়গা দেওয়া না, বরং নিজেকেও হালকা করে দেওয়া। অনেক সময় মনের মধ্যে জমে থাকা রাগ, অভিমান, দুঃখ— সব মিলিয়ে আমরা নিজেও ভারী হয়ে যাই। ক্ষমা করলে সেই বোঝা নামিয়ে রাখা যায়।
একটা ভুল অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত হয়, কিন্তু তার জন্য আমরা চিরতরে একটা মানুষকে হারিয়ে ফেলি। অনেক বছর পর হঠাৎ একদিন মনে হয়— সে তো আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিল, তার একটা ভুলের কারণে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম, অথচ আমি কি নিজেও কখনো ভুল করিনি?
ক্ষমা করে দিলে সম্পর্ক আবার পুরনো রূপে ফিরবে না হয়তো, কিন্তু নতুনভাবে শুরু করার একটা দরজা খুলে যায়। আর সেই নতুন শুরুটা অনেক সময় আগের চেয়েও বেশি মজবুত হয়। কারণ এইবার সবাই জানে, ভুল হয়, কিন্তু ভালোবাসা থাকলে তা শুধরানো যায়।
প্রিয় মানুষ মানেই এমন কেউ, যার একটা হাসিতে, একটা ছোঁয়ায়, একটা ভালোবাসার চোখে আমরা অনেক কষ্ট ভুলে যেতে পারি। তার যদি একটা ভুল হয়, তাহলে আমাদের উচিত হয়— সেই ভালোবাসাটাকে মনে রেখে ক্ষমা করে দেওয়া।
সবচেয়ে বড় কথা, যদি সম্পর্কটা ভেঙে যায়, তাহলে শুধু সে একা হারায় না— তুমিও হারাও। তাই কখনো কখনো ক্ষমা করতে হয়, ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, দুজনের গল্পটা শেষ না করে তাকে আবার শুরু করার সুযোগ দেওয়ার জন্য।
শেষ কথা হলো, ভুল করলেই ক্ষমা করতে হবে— এমন কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, সম্পর্ক যদি মূল্যবান মনে হয়, তাহলে ভুলটাকে পেছনে রেখে একসাথে সামনের দিকে হাঁটা যায়। কারণ অনেক সময় আমরা যে সম্পর্কটা ভেঙে ফেলি, সেটা আসলে সারানো যেত— যদি শুধু একটু ক্ষমা করতাম।
একটি ছোট্ট ভুল একটি সম্পর্ককে শেষ করে দেয়। আর আমরা হয়তো পরে সেই ভুল বুঝতে পারি। কিন্তু তখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। তাই ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত আর সম্পর্ক গুলোকে নতুন রূপ দেওয়া উচিত।