"নাবিকের জীবন" জলদস্যু পর্ব ||(How to protect ship from pirates)(১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য 🦊)
"জলদস্যু পর্ব"
শুভ কামনা দিয়ে শুরু করছি। আমি আজ জলদস্যুদের আক্রমণ এবং কীভাবে তাদের থেকে জাহাজ বাঁচানো যায় সবার সাথে শেয়ার করবো। আশাকরি সবাই পড়বেন।
জলদস্যু কারা এবং তারা জাহাজে এসে কি করে
এম ১৬ রাইফেল নিয়ে আমি
যারা জাহাজ আক্রমণ করে এবং ডাকাতি করে তাদেরকে জলদস্যু বলে।
পৃথিবীতে এখন মুলত ৩ টি জলদস্যু আক্রমণের জন্য বিপদজনক এলাকা রয়েছে
১। সোমালিয়ান কোস্টঃ এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকা। সোমালিয়ায় দারিদ্র্যতা অনেক বেশি এবং তাদের ভৌগোলিক অবস্থান এর কারণে কৃষি কাজ ও সম্ভব হয় না। তাদের প্রধান জীবিকা হচ্ছে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ। সোমালিয়ায় অস্ত্র সহজে পাওয়া যায় তাই তারা অর্থের লোভে বা ভালোভাবে বাচার জন্য জলদস্যু হয়ে যায়।
তারা কিভাবে এত বড়ো জাহাজে উঠেঃ
প্রথমে তারা একটি বড় নৌকা নিয়ে মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে যায় যেখানে তারা 2/3 অত্যন্ত উচ্চ গতির নৌকা এবং প্রচুর অস্ত্র লুকায়।
যখনই তারা তাদের চারপাশে কোন জাহাজ দেখতে পায় তখন তারা সেই স্পিড বোট চালু করে এবং জাহাজগুলিকে আক্রমণ করে। যখন তারা জাহাজের কাছাকাছি আসে তখন তারা একটি বিশেষ মই দিয়ে জাহাজে আরোহণ করে
এবং তারপর তাদের অস্ত্র বাকি কাজ করে।
তারা জাহাজটি নিয়ে কি করে?
প্রথমে তারা জাহাজটিকে সোমালিয়ান অঞ্চলে নিয়ে যায় এবং জাহাজের মালামাল সরিয়ে নেয়। আপনি জেনে অবাক হতে পারেন যে আমি যে জাহাজে কাজ করি তাতে এক সময়ে বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল বহন করা হয়।
এবং তারপর তারা জাহাজের মালিকের কাছে জাহাজের ক্রুদের হত্যার হুমকি দিয়ে অনেক বেশি অর্থ দাবি করে।
২। আফ্রিকান উপকূল :
তারা সোমালিয়ার মতো বিপজ্জনক নয় এবং তারা মুলত জাহাজের মালামাল নিতে আসে। অত্যন্ত বিপজ্জনক আফ্রিকান দেশগুলো হলো- গিনি এবং নাইজেরিয়া।
৩। মালাক্কা প্রণালী এবং সিঙ্গাপুর প্রণালী যা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মধ্যে অবস্থিত :
আপনি তাদেরকে জলদস্যু না বলে ছিঁচকে চোর বলতে পারেন। তারা ডাকাতির জন্য পিস্তল, ছুরি এবং ধারালো জিনিস নিয়ে জাহাজে আসে এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন থেকে টাকা নেয়, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, জাহাজের দামী দড়ি এবং পেইন্ট নেয় এবং চলে যায়।
আমাদের জাহাজগুলোকে বাঁচাতে আমরা পাইরেসি বিরোধী কী পদক্ষেপ নিই :
১। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা যৌথভাবে জলদস্যুতা কমাতে কাজ করে। জাতিসংঘ নিযুক্ত যুদ্ধ জাহাজ ক্রমাগত আরব সাগর এবং এডেনের উপসাগর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে এবং যখনই তারা কোন সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখতে পায় তারা নৌকা চেক করার মত যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।
২। এখন আসি জলদস্যুদের আক্রমণ এড়াতে আমরা জাহাজে কি ব্যবস্থা নিই :
ক) জাহাজের চারপাশে ধারালো ক্ষুরের তারের স্তর যাতে জলদস্যুরা জাহাজে উঠতে না পারে।
খ) উচ্চ গতির জল জাহাজের চারপাশে স্প্রে করে যাতে জলদস্যুদের নৌকা জাহাজের কাছাকাছি আসতে না পারে।
গ) জলদস্যুতার আক্রমণ এড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল জাহাজে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নেওয়া। এই নিরাপত্তারক্ষীরা সাধারণত বিভিন্ন অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর নাগরিক যেমন আমেরিকান, রাশিয়ান, ইউক্রেনীয়, ভারতীয়, শ্রীলঙ্কান। এই নিরাপত্তারক্ষীরা প্রচুর ভারী অস্ত্র নিয়ে আসে এবং আমাদের প্রশিক্ষণ দেয় যাতে জরুরি অবস্থায় আমরা অস্ত্রটি ব্যবহার করতে পারি।
এই নিরাপত্তারক্ষীরা স্বাভাবিকভাবেই ৪ টি স্থান থেকে যাত্রা করে এবং নেমে যায়। ধরুন আমরা সিংগাপুর থেকে মিশরে যাচ্ছি তাই এই নিরাপত্তারক্ষীরা শ্রীলঙ্কা থেকে যাত্রা করে এবং জিবুতি থেকে নেমে যায়। এবং আবার ধরুন আমরা ইরান থেকে নাইজেরিয়া যাচ্ছি তাই এই রক্ষীরা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে যাত্রা শুরু করে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নেমে যায়। এইভাবে নিরাপত্তা রক্ষীরা আমাদের জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
নিরাপত্তারক্ষীদের আনা অস্ত্র
ঘ) জাহাজে যোগদানের আগে আমাদের দুটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোর্স সম্পন্ন করতে হয়েছিল যাতে যখনই কোন নিরাপত্তা হুমকি আসে আমরা জাহাজটি বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারি।
যদি আপনি জলদস্যুদের সম্পর্কে আরো জানতে চান তবে আমি সবাইকে "ক্যাপ্টেন ফিলিপস" সিনেমাটি দেখার পরামর্শ দিচ্ছি যা একটি বাস্তব জলদস্যুতা আক্রমণের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
ছবির বিবরণ:-
ছবির যন্ত্রঃ এম আই 9
অবস্থান ঃ মাঝ সমুদ্রে
কারিগরঃ কিছু আমি কিছু সংগৃহীত
সংযুক্তি :-
@rme
@emranhasan
@amarbanglablog
আপনি বেশ সুন্দর গুছিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।
তবে অজথা কোনো এডমিন কে মেনশন করা অপরাধ আশা করি পরবর্তীতে আপনি করবেন না।
অনেক ধন্যবাদ ভাই, পরের বার অবশ্যই মাথায় রাখবো
নাবিকের জীবন" জলদস্যু পর্ব আমি আমার পোস্ট এর অপেক্ষায় ছিলাম কখন পোস্ট করবেন আর আমি নাবিকের জীবন এর গল্প পড়বো। আমার গল্প পড়তে অনেক ভালো লাগে। জলদস্যু পর্ব আপনি অনেক তথ্য বহুল পোস্ট করেছেন যদিও আমার এসব বিষয়ে ধারণা ছিলোনা। তবে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাইয়া
সময় নিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই